সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

ILLITERATE শব্দটি হুজুরপাক (সাঃ)-এর শা'নে যায় কি?

'Illiterate' ইংরেজি শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো— নিরক্ষর, অশিক্ষিত, পঠনাক্ষম, পড়িতে জানে না এমন, বর্ণজ্ঞানহীন, গোমূর্খ, জাল্ম, অনক্ষর, নিরক্ষর ব্যক্তি, পঠনাক্ষম ব্যক্তি, অশিক্ষিত ব্যক্তি। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো দু'অর্থে উক্ত শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়— ১). বিশেষণে– নিরক্ষর, অশিক্ষিত, পঠনাক্ষম, পড়িতে জানে না এমন, বর্ণজ্ঞানহীন, গোমূর্খ, জাল্ম; এবং ২). বিশেষ্যে– অনক্ষর, নিরক্ষর ব্যক্তি, পঠনাক্ষম ব্যক্তি, অশিক্ষিত ব্যক্তি। 

"নাবিয়্যুল উম্মী"-র অর্থ ও বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তথাকথিত এক শ্রেণীর ওয়াজেরিয়ান আজকাল হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শা'নে 'Illiterate' শব্দটি ব্যবহার করছেন; তথাকথিত কিছু শিক্ষিতরা আবার এ নিয়ে মহা তর্ক জুড়ে দিচ্ছেন! কেমনে কি??
 
আপনাদের জ্ঞাতার্থে আজ আমি "নাবিয়্যুল উম্মী"-র প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা তুলে ধরতে চেষ্টা করবো। লেখা যত বড়ই হউক না কেন চেষ্টা করবো সম্পূর্ণরূপে পবিত্র  কুর'আন ও হাদিসের আলোকে এ বিষয়টি সম্বন্ধে আমার জানা সবকিছু আপনাদের চোখের সামনে তুলে ধরতে। অত:পর সঠিক বা বেঠিক বলার চিন্তা-চেতনা ও  বিচার-বিবেচনা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্বভার সম্পূর্ণটাই আপনাদের উপর ছেড়ে দেবো; কারণ, বিচার বুদ্ধি বিবেচনা বিশ্লেষণ ও ফলাফল যার যার।  

ওহ! আরেকটি কথা, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর শা'ন এবং মান সম্বন্ধে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা কতটা সচেতন– তা দেখার জন্য পবিত্র কুর'আনুল কারীমের  সুরা বাকারা-র ১০৪ নাম্বার আয়াতটি আমি সকল মু'মিনদের কোড করছি; কষ্ট করে এর অর্থ ও তাফসীর দেখে নেবেন। আর আমি লেখা শুরু করতে যাচ্ছি পূর্ববর্তী বুজুর্গানে দ্বীন আলেম-ওলামাগণের প্রতিষ্ঠিত একটি মতামত দিয়ে— 'আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখতেন এবং লেখার ব্যাপারে তালীমও দিতেন'।

হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত ইলমের অধিকারী; সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখন ওঁনার মু’জিযা। মুয়াল্লিম হিসেবে তিনি সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-গণকে আক্ষরিক জ্ঞান শিক্ষা দিতেন। তিনি অবশ্যই আমার আপনার মতো পৃথিবীর কোন মানুষের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেননি; তবে কি করে? পবিত্র কুর'আনুল কারীমের দিকে একটু তাকান— "যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন—"  –(সূরা আ'লাকঃ– ৪) 
অর্থাৎ— হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা লিখার যাবতীয় ইলম্ দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন—"তিনি শিক্ষা দিয়াছেন কুর'আন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ।"  –(সূরা আর রহমানঃ ২,৩) 
তাফসীরে মাযহারীর একাদশ খন্ডের ২২১ নং পৃষ্ঠায়  উল্লেখ করা হয়েছে— 'আ'ল্লামাহুল বায়ান' বলে এখানে বোঝানো হয়েছে, মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ)-কে তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুর'আন। 
তাছাড়াও তাফসীরে মাআলিমুত তানযীল-এর ২য় খন্ডের ৩১২ নং পৃষ্ঠায় بيان এর তাফসীর করা হয়েছে— 'যা সৃষ্টি হয়েছে এবং হবে। অর্থাৎ, পূর্ব ও পরবর্তী সব ঘটনার জ্ঞান।' এখান থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায়, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সমস্ত কিছুর জ্ঞান দান করেছেন। যেমন— হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জ্ঞান দান করা হয়েছে।"
হাদীসে আরো ইরশাদ হয়েছে, রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "আমাকে (শুরু হতে শেষ পর্যন্ত) সমস্ত ইলিম প্রদান করা হয়েছে।” –(বুখারী ও মুসলিম)

অতএব, এতেই প্রমাণিত হয় যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলমের অধিকারী; আর, লিখাও ইলমের একটি অংশ। লিখা যে ইলমের অংশ তা সূরা আ'লাক-এর ৪নং আয়াতের– "তিনি (আল্লাহ পাক) উনাকে কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।"– দ্বারাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়। কারণ, علم (আল্লামা) শব্দটির مصدر (মাছদার) বা ক্রিয়ামূল হচ্ছে تعليم (তা’লীম) বা শিক্ষা দেয়া। অতএব, স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা যাঁকে লিখার উপকরণ তথা কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি লিখতে জানতেন না বা লিখতে পারতেন না, এ ধারণাটি পোষণ করা ভুল, বরং মিথ্যা অপবাদ দেয়া; যা কুফরীর নামান্তর।

মূলতঃ আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা  তাঁর হাবীব হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে যে লিখতে শিখিয়েছেন; এবং তিনি যে লিখতে জানতেন, এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস বর্ণনা করছি— হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে (ওহী) লিখতেন। অতঃপর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অক্ষর লিখার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ করেন, দোয়াত এভাবে রাখো, কলম এভাবে ঘুরাও, با (বা)-কে এ'ভাবে সোজা করে লিখো, سين (সীন)-কে পৃথক করো, আর মীম ميم (মীম)-কে বাঁকা করোনা। 
অথচ, তিনি দুনিয়াবী কোন কাতিবের (লিখকের)-এর নিকট থেকে লিখা শিখেননি, আর কোন প্রাচীনকালীন কিতাব থেকেও তা পড়েননি। —(ফতহুল বারী লি শরহে বুখারীঃ ৭/৫০৪; আস শিফা বিতারীফি হুকমিল মুস্তফাঃ ১/৩৫৮; কিতাবু জামিউল কুরআনঃ ১/১৪১; তাফসীরে কুরতুবীঃ ১৩/৩৫৩)

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লিখার কোন প্রয়োজন হতো না। কারণ, মানুষ লিখে থাকে– লিখে না রাখলে ভুলে যাবে তার জন্য। কিন্তু, রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য এসব লিখে রাখার প্রয়োজন নেই; কারণ, তিনি কিছুই ভুলতেন না। তিনি সব কিছুই লওহে মাহফুজ থেকে দেখে নিতেন; তাঁর মুয়াল্লিম স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা। সুতরাং তাঁর লিখা বা পড়ার কোন প্রয়োজনই ছিল না। তাছাড়া তিনি যদি লিখা-পড়া করতেন তাহলে আজকের বাতিলপন্থীরা যেমন সন্দেহ করছে তেমনই তখনকার কাফের মুশফিক ও বাতেলরা মেনে নিত না, আজকের মতো এমনই করতো!

পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে আখিরী নবী ও রাসূল হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আবির্ভাবের পরিচয় দেয়া ছিল কয়েকটি; যেমন– তিনি হবেন ‘উম্মী’ (অর্থাৎ– নবীগণের মূল) এবং সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখবেন। কিন্তু পার্থিব ওস্তাদের কাছে তিনি লিখা-পড়া করবেন না, কোন বই-পুস্তক পড়বেন না। যেমন, এ সম্পর্কে পবিত্র কুর'আনুল কারীমেই ইরশাদ হয়েছে— "তুমি তো ইহার পূর্বে কোন কিতাব পাঠ কর নাই এবং স্বহস্তে কোন কিতাব লিখ নাই যে, মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করিবে।'—(সূরা আনকাবুত/৪৮)
এই আয়াতের ব্যাখায় বিখ্যাত মুফাসসির হযরত ইসমাঈল হাক্কী (রঃ) বলেছেন— 'হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখতে জানতেন এবং অপরকেও জানাতেন।' —(তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৬/৬১০)

আর তিনি যে লিখতে জানতেন এ প্রসঙ্গে 'সহীহ বুখারী'-র ‘কিতাবুল ইলম্’-এর ‘বাবু কিতাবাতিল ইলমে' অধ্যায়ের একটি হাদিস উল্লেখ করছি— হযরত আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি উপস্থিত সাহাবীদের বললেন, তোমরা এক টুকরো কাগজ নিয়ে এসো, আমি তোমাদের জন্য কতিপয় উপদেশ লিখে দিবো, যাতে তোমরা পরবর্তীতে পথভ্রষ্ট না হও। —(বুখারীঃ ৮/১৩: হাদীস ৪৪৩২; মুসলিমঃ ১৬৩৭; মিশকাতঃ ৫৯৬৬)

উক্ত হাদীস থেকে এটি স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, হুজুর পাক (সাঃ) লিখতে জানতেন। আর সে কারণেই তিনি খাতা কলম নিয়ে আসার জন্য বললেন, যাতে তিনি উপদেশ লিখে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি কিন্তু এটা বলেননি যে– কাগজ কলম এনে তোমরা লেখ, আমি বলি; বরং তিনি বলেছেন , তোমরা এক টুকরো কাগজ নিয়ে এসো, আমি তোমাদের জন্য কতিপয় উপদেশ লিখে দেবো। যার প্রমাণ সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্  মুসলিমেই বিদ্যমান। 

হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিলক্বদ মাসে ওমরাহ্ করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু মক্কাবাসী তাঁকে মক্কায় প্রবেশ করতে দিতে রাজী ছিল না; যতক্ষণ না তিনি তাদের সাথে এ মর্মে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হন যে, তিনি সেখানে (মক্কা শরীফে) তিনদিনের অধিক অবস্থান করবেন না। অতঃপর যখন সন্ধিপত্র লিখার উপর ঐক্যমত হলো, তারা লিখলো ‘এতদ্বারা মুহম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে সন্ধি করলেন।’ অতঃপর মক্কার কাফিররা বললো, 'আমরা এটা মানিনা, কারণ যদি আমরা আপনাকে আল্লাহ্-র রাসূল হিসেবে মেনে নিয়ে থাকি তাহলে আমরা আপনাকে তো কোন রকম বাঁধাও দিতাম না; বরং আপনি হলেন, মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ্। সুতরাং এটাই লিখতে হবে।' তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "আমি আল্লাহ পাক-এর রাসূল এবং আমিই আব্দুল্লাহ্-র পুত্র।" তারপর তিনি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, “'রাসূলুল্লাহ' শব্দটি কেটে দাও।” 

হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, না, আল্লাহ পাক-এর কসম! আমার পক্ষে (আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত্ব) আপনার (গুণবাচক) নাম কাটা সম্ভব নয়। অতঃপর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত চুক্তিপত্রখানা হাতে নিলেন। তাঁর নিজ হাতে লিখার ইচ্ছা ছিলনা, তবুও সুন্দরভাবে লিখলেন,
هذا ما قاضى محمدبن عبد الله.
“এতদ্বারা চুক্তি করলেন মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।” —(মুসনাদে আহমদ– ১৮৬৫৮; সুনানে কুবরা বায়হাকী– ৭/৪২: হাদীস ১৩৬৬৮; দালায়েলুন নবুওওয়াত– ৪/৩৩৮; সুনানে দারেমী ২৫০৭; ফতহুল বারী– ৭/৫০৩; তাফসীরে ইবনে কাছীর– ৭/৩৫৯; তাফসীরে বাগবী– ৭/৩১৭; রুহুল মায়ানী– ১১/৬)

কুর'আনুল কারীমে এবং হাদীসে বর্ণিত النبى الامى. দ্বারা মুহাদ্দিসীনে কিরাম (রঃ)-গণ এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে, রাসূল পাক (সাঃ) যেহেতু দুনিয়ার কোন শিক্ষক কর্তৃক লিখা-পড়া শিখেননি, সেহেতু তিনি 'নাবিয়্যুল উম্মী' লক্ববে অভিহিত; যা তাঁর শ্রেষ্ঠ নবী এবং রসূল হওয়ার প্রমাণ। কিন্তু তার পরেও তিনি যে লিখতেন সে'টা ছিল তাঁর মু’জিযা। যেমন, বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা কিরমানী (রঃ) লিখেছেন, 'এখানে উম্মী মানে এ লিখাটা হচ্ছে তাঁর মু’জিযা।' —(বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড)

উম্মি শব্দটি আরবি ‘উম্মুন’ ধাতুর সঙ্গে সম্পৃক্ত। উম্মুন শব্দের অর্থ হচ্ছে মা বা কোনো জিনিসের মূল বা আসল। যেমন মক্কা নগরীকে ‘উম্মুল কুরা’ অর্থাৎ দুনিয়ার সব নগরীর উৎসমূল; এ'ভাবে সূরা ফাতিহাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বা কোর'আনুল কারীমের মূল বলা হয়। আসলে আরবি ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি ভাষা; আরবি একটি শব্দের অনেকগুলো অর্থ হয়। তাই প্রতিটি বাক্যের ভাবধারা অনুযায়ী শব্দের অর্থও করতে হয়। অন্যথায় অনুবাদ বা অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। উম্মি শব্দের অর্থ যেমন মূল বা আসল, তেমনি তার অর্থ নিরক্ষর, লেখাপড়াহীন, মূর্খ ইত্যাদিও হয়। কিন্তু সূরা আরাফের ১৫৭, ১৫৮ নং আয়াতে যেখানে নবী করিম (সাঃ)-এর কথা উল্লেখ আছে সে সব আয়াতে নিরক্ষর লেখাপড়াহীন অর্থ নেয়াটা একেবারে মূর্খতারই পরিচায়ক।

প্রকৃতপক্ষে যারা গন্ডমূর্খ বা নবী বিদ্বেষী বা দুরভিসন্ধি যাদের আছে একমাত্র তারাই হুজুরপাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শা'নে ব্যবৃহৃত ‘উম্মি’ শব্দটিকে নিরক্ষর, লেখাপড়াহীন অর্থে ব্যবহার করতে পারে। অথচ উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে ‘উম্মি’ শব্দটি নবী করিম (সাঃ)-এর একটি বিশেষ বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অতএব, হুজুর পাক (সাঃ)-এর শা'নে ব্যবহৃত 'উম্মি' শব্দটির অর্থ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত; বিশেষ করে মুসলমানের।

এবার আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো পবিত্র কোর'আনুল কারীমে উল্লিখিত ‘নবী ও রাসূল-ই-উম্মি’ শব্দের প্রকৃত অর্থ কী?
মুলতঃ النبى الامى এখানে امى অর্থ সাইয়্যিদ, মূল, অভিভাবক, প্রধান, শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি। অর্থাৎ যিনি সমস্ত নবী-রসূল (আঃ)-গণের মূল বা যাঁকে ব্যতীত কোন নবী-রাসূল (আঃ) সৃষ্টি হতেন না, তিনিই النبى الامى (নাবিয়্যূল উম্মী) লক্ববে ভূষিত। উপরোক্ত অর্থ ছাড়াও অভিধানে امى শব্দটি ভিন্ন অর্থেও ব্যবহৃত হয়; কিন্তু তা আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা-র হাবীব হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শা'নে কোনভাবেই প্রযোজ্য নয়।

একজন মুসলমানকে অবশ্যই এ কথাটি স্মরণ রাখতে হবে যে, নবী-রাসূল (আঃ)-গণের ক্ষেত্রে কুর'আনুল কারীম এবং হাদীসের এমন কোন তাফসীর, অনুবাদ, ব্যাখ্যা করা যাবেনা, যার কারণে তাঁদের শা'ন ও মানের খেলাফ হয়। তাদের শা'নে 'Illiterate' বা এমনতর কোন শব্দ ব্যবহার করার অর্থই হচ্ছে তাঁদের শা'ন ও মান খর্ব করা, বিরোধিতা করা। আর তাঁদের বিরোধিতা করা হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা-র বিরোধিতা করা। অতএব, সেসব লোকদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া আর অন্য কোন পথ খোলা আছে কি? তাছাড়া, যারা এমন আকিদা পোষণ করে তারা নিশ্চিত কুফরি করে, এবং নিসন্দেহে তারা কাফের। 

"নাবিয়্যুল উম্মী"-র  বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আজকাল যে শ্রেণির আলেম নামের জালেম ও তথাকথিত ওয়াজেরিয়ানরা আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে Illiterate/ নিরক্ষর বিশেষণে বিশেষায়িত করছে; অথবা না বুঝেই যারা সেই হারামজাদাদের সাপোর্ট করছে! তাদেরকে সাবধান করে বলছি— মরনকে ভয় কর। ওরে হারে হারামজাদা হারামির দল!  তোরা তো হুজুর পাক (সাঃ)-এর শা'ন মান নিয়ে জঘন্য ভাবে তামশা করছিস; তোরা আবার নিজেদের মুসলমান হিসেবে দাবী করিস কি করে??

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
১৩ অক্টোবর, ২০১৯.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন