ওহাবীজমের ইতিহাস একটি ক্যানভাসের মতো, যার সমস্তটা জুড়েই রয়েছে উগ্র সহিংসতার বিচিত্র সব দৃশ্যপট; মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব নাজদী যে ইতিহাসের জনক। তার মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র বাবার সেই সহিংস ধারা আরো চরমভাবে অব্যাহত রাখেন। প্রকৃতপক্ষে আজকের এই সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ বিন সউদের সন্তানরা ওহাবী মতবাদ প্রচারের মিশন সার্থক করেছেন এবং তাদের অধীনস্থ সমস্ত ভূখণ্ডে ওহাবী মতবাদের বিস্তার ঘটিয়েছেন; এক্ষেত্রে আব্দুল আজিজের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি এবং সর্বক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
আব্দুল আাজিজ ওহাবী মতবাদ বিস্তারে এমন কোন জঘন্যতম প্রন্থা নেই যা গ্রহণ করেননি, প্রয়োজনে গণহত্যা চালিয়ে ব্যাপক ত্রাস সৃষ্টি করতেন। আব্দুল আজিজ ও তার ছেলে সাউদ জাজিরাতুল আরবের পবিত্র শহরগুলোতে নৃশংস রক্তপাত ঘটিয়েছিলেন এবং ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলো এবং সাহাবী (রাঃ)-দের মাজারসহ সকল ধর্মীয় নিদর্শনাদি একে একে নির্দয়ভাবে ধ্বংস করেছেন, মক্কা-মদিনা ও কারবালার অসংখ্য স্মৃতিবিজড়িত মুসলিম স্থাপনা ধ্বংস করেছেন। প্রথম ধাক্কায় কারবালায় হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)-র মাজার ধ্বংস করার পর তারা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পবিত্রতম ভূমি মক্কা দখল করতে চেয়েছিলেন।
পবিত্র কারবালা ও নাজাফ শহরে হামলা চালানোর পর ওহাবীরা ১২১৭ হিজরিতে হেজাজের গুরুত্বপূর্ণ শহর তায়েফে হামলা চালায়। আব্দুল আজিজের সময় তার ছেলে সাউদ ছিলেন ওহাবীদের সেনা অধিনায়ক। তার নেতৃত্বে পরিচালিত সেই হামলা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম একটি হামলা। এ সম্পর্কে ইরাকের বিখ্যাত মনীষী কবি জামিল যাহাভি লিখেছেন, 'ওহাবীদের নোংরাতম কাজগুলোর একটি হলো তায়েফের গণহত্যা। ছোটোবড়ো কারো উপরেই কোনোরকম দয়া করেনি তারা। এমনকি দুধের শিশুকেও মায়ের কোলে মাথা কেটে হত্যা করেছে। ঘরে যখন আর কেউ বাকি ছিলো না তখন মসজিদে, বাজারের দোকানে দোকানে গিয়ে লোকজনকে হত্যা করেছে। কোর'আন পড়া অবস্থায়, এমনকি নামাজরত অবস্থায়ও মানুষকে হত্যা করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বইপুস্তক কোর'আন শরীফ হাদিস গ্রন্থ বোখারী-মুসলিম শরিফসহ হাদিস ও ফিকাহর অন্যান্য কিতাবাদিও বাজারের অলিগলিতে ফেলে পদদলিত করেছে।'
তায়েফে এই গণহত্যা চালানোর পর ওহাবীরা মক্কার আলেমদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে ওহাবী মতবাদের প্রতি আনুগত্যের আমন্ত্রণ জানায়। ‘হিন্দি’ নামে পরিচিত শাহ ফজলে রাসুল কাদেরি তাঁর 'সাইফুল জাব্বার' গ্রন্থে লিখেছেন, 'মক্কার আলেমগণ কাবার পাশে সমবেত হয়েছিলেন ওহাবীদের পত্রের জবাব দেওয়ার জন্যে। এরই মাধ্যে গণহত্যাদুর্গত তায়েফের একদল লোক মাসজিদুল হারামে এসে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানালো। মক্কার জনগণের মাঝে তখন শোরগোল পড়ে গেল— ওহাবীরা খুব শীঘ্রই মক্কায় হামলা চালাবে। এতে করে তাদের মাঝে ভীতিকর এক অবস্থার সৃষ্টি হলো।
অন্যদিকে হজ্ব পালনের জন্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আলেমগণ, সুন্নিদের চার মাজহাবের মুফতীগণ তৎক্ষনাৎ ঘোষণা করলেন যে, ওহাবীরা কাফের এবং অমুসলিম, তাদের সাথে জেহাদ করা ওয়াজিব। তাঁরা মক্কার আমিরের প্রতি আহ্বান জানালেন ওহাবীদের মোকাবেলায় সবাই এক হয়ে লড়াই করার জন্যে। কিন্তু ওহাবীদের সাথে যুদ্ধ করতে আলেমসমাজ সম্মত হলেও মক্কাবাসীরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিল না। ওদিকে সাউদও মক্কায় একটি চিঠি লিখে হুমকি দেন, 'তিন দিনের মধ্যে কাবাঘর জিয়ারতকারী সবাইকে ওখানটা ছেড়ে চলে যেতে হবে, ত্যাগ করতে হবে অত্রদাঞ্চল।'
মক্কার গভর্নরসহ আরো অনেক আলেম সাউদের কাছে গিয়ে মক্কাবাসীদের নিরাপত্তা চাইলেন, সাউদও একটি চিঠিতে সবাইকে নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। ১২১৮ হিজরিতে সাউদ বিনাযুদ্ধে মক্কায় প্রবেশ করেন এবং কাবা জিয়ারত করে লোকজনকে সমবেত করে তাদেরকে ওহাবী মতবাদের দাওয়াত দিয়ে বাইয়াত গ্রহণ করতে বলেন। সেইসাথে সবাইকে বলেন ওহাবী সিপাহীদের সাথে মক্কা শহরে যেতে এবং ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক মূল্যবান সব নিদর্শন ধ্বংস করে দিতে।
মক্কা দখল করার পর ওহাবীরা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের নিদর্শনগুলো একে একে ধ্বংস করে দেয়; নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মস্থানের স্মৃতিবিজরিত স্থাপনা, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-র জন্মস্থানের স্মৃতিবিজরিত সবকিছু, হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ)-এর স্মৃতিময় নিদর্শনগুলো ধ্বংস করে দিয়ে সবকিছু মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। ওহাবীরা এইসব পবিত্র স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার সময় তবলা বাজিয়ে গান গেয়ে নেচে নেচে উল্লাস করতো। ওহাবীদের এই জঘন্য কর্মকাণ্ডে তখন মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়; অনেকেই এ বিষয়ে বহু বইপুস্তক লিখেছেন।
কুয়েতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ডক্টর রেফায়ি 'ওহাবী ভাইয়ের প্রতি পরামর্শ' নামক বইয়ে ওহাবী আলেমদের উদ্দেশ্যে লিখেন, 'তোমরা নবীজী (সাঃ)-এর প্রথম হাবীবা সহধর্মিনী উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ)-র ঘর ধ্বংস করার অনুমতি দিয়েছো এবং কোন রকম প্রতিক্রিয়া দেখাওনি। অথচ ঐ ঘরটি ছিলো কোর'আন, তথা ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পবিত্রতম স্থান। ............কেন তোমরা আল্লাহকে ভয় করছো না এবং পয়গাম্বর কারীমের ব্যাপারে লজ্জা করছো না। ........তোমরা নবীজী (সাঃ)-এর জন্মস্থানটিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তাকে পশু বেচাকেনার স্থানে পরিণত করেছো; যাকে কিছু নেককার ও ভালো মানুষ ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে তোমাদের ওহাবীদের ছোবল থেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, গ্রন্থালয়ে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেছে…..'
ওহাবীদের ভয়াবহতম এবং ন্যক্কারজনক আরেকটি কাজ, যে কাজের ক্ষতি মুসলমানের জন্য সবসময়ই বহমান থাকবে; আর তা হলো— মক্কার 'আলমাকতাবুল আরাবিয়া' নামের বিশাল লাইব্রেরিটি আগুন দিয়ে ধ্বংস করা। এই কুতুবখানায় দুর্লভ ও মূল্যবান ষাট হাজার কিতাব ছিল এবং চল্লিশ হাজারেরও বেশি হাতে লেখা অনন্য অদ্বিতীয় পাণ্ডুলিপি ছিল; যেগুলোর মাঝে সেই জাহেলি যুগের, ইহুদিদের, কুরাইশ কাফেরদেরও হাতে লেখা বহু নিদর্শন মজুদ ছিল। বিশাল এই গ্রন্থাগারে আরো ছিল প্রাচীন কোর'আন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ), হযরত ওমর ফারুক (রাঃ), হযরত আলি (রাঃ), হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ), হযরত তারেক বিন যিয়াদ (রাঃ)-সহ নবীজী (সাঃ)-এর আরো বহু সম্মানিত সাহাবী (রাঃ)-গণের হাতে লেখা অনন্য সব নিদর্শন।
'আলমাকতাবুল আরাবিয়া' লাইব্রেরিতে আরো যেসব মূল্যবান নিদর্শন মজুদ ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, ইসলাম আবির্ভাবকালে যেসব মূর্তির পূজা করা হতো (লাত, উযযা, মানাত, হুবাল) সেসব। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের বর্ণনায় এসেছে, ওহাবীরা কাফেরদের সাথে সংশ্লিষ্ট নিদর্শনগুলো এই গ্রন্থাগারে মজুদ থাকার অজুহাত দেখিয়ে তাতে আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করে দেয়।
পূর্বপুরুষদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করা এবং প্রাচীন ইতিহাস সংরক্ষণ করা যে কোন সমাজের সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত হয়। কেননা এইসব নিদর্শন থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত থেকে করণীয় ঠিক করার জন্যে এসব সংরক্ষণ করার গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই বিভিন্ন দেশ ও সরকার এ ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এবং কাউকে সেখানকার ছোট্ট একটি মৃৎপাত্রও কিংবা সামান্য একটি প্রস্তর লিখনও নিয়ে যেতে দেয়া হয় না।
নিঃসন্দেহে ইসলামী সভ্যতা বিশ্বের উন্নত সভ্যতাগুলোর অন্যতম একটি এবং মুসলমানরা ইসলামী শিক্ষার আলোকেই এই সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছিলেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর সঙ্গীসাথীগণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিদর্শন সমৃদ্ধ এই সভ্যতার উত্তরাধিকার ও অংশ। তাই এইসব নিদর্শন সংরক্ষণ করা এবং সেগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করা ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতির গোড়াপত্তনকারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরই প্রতীক। পক্ষান্তরে এগুলোকে ধ্বংস করা মূর্খতা ও জাহেলি কুসংস্কার তথা গোঁড়ামির শামিল। ভ্রমণকাহিনী আর ইতিহাসের বহু গ্রন্থে বর্ণিত আছে ইসলামী দেশগুলোসহ ওহী'র দেশে পূণ্যবানদের শত শত মাজার ছিল, যেগুলোর অধিকাংশই ওহাবীরা শেরেক আর কুফরির অজুহাতে বিনষ্ট করে ধূলিস্মাৎ করে দিয়েছে।
সাউদ বিন আব্দুল আজিজ মক্কা মোকাররমা দখল করার সময় বহু আলেম ওলামাকে বিনা কারণে শহীদ করেছে এবং মক্কার বহু সম্ভ্রান্ত লোককে কোনোরকম অভিযোগ ছাড়াই ফাঁসি দিয়েছে। মুসলমানদের যেকেউ যদি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসের উপর স্থির থাকতে চাইতো, তাদেরকে বিভিন্নভাবে বাদশাহ শাস্তির হুমকি দিত। সে সময় হাটে-বাজারে অলিতে গলিতে সাউদের ঘোষকেরা হাঁক মেরে ঘোষণা করতো, 'হে লোকজন! সাউদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হও এবং তার বিস্তৃত ছায়ার নীচে আশ্রয় নাও!'
ওসমানী সরকারের নৌ-বাহিনীর উচ্চতর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক রিয়ার এডমিরাল আইয়ুব সাবুরি সে সময় লিখেন,
'আব্দুল আজিজ বিন সাউদ বিভিন্ন গোত্রের শেখদের সমাবেশে দেওয়া তার প্রথম বক্তৃতায় বলেন— আমাদের উচিত সকল শহর নগরকে আমাদের অধীনে নিয়ে আসা। আমরা আমাদের আকিদা বিশ্বাসগুলো তাদেরকে শিক্ষা দেবো। আমাদের এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে নিরুপায় হয়ে নবীজীর সুন্নাত তথা মুহাম্মাদি শরিয়াতের অনুসরণের দাবিদার আহলে সুন্নাতের আলেমদেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে...… বিশেষ করে নামকরা আলেমদেরকে; কেননা এরা যতদিন বেঁচে থাকবে ততোদিন আমাদের আকিদা বিশ্বাস হাসির মুখ দেখবে না। তাই যাদেরকে আলেম বলে মনে হবে প্রথমে তাদেরকে নির্মূল করতে হবে।'
সাউদ বিন আব্দুল আজিজ মক্কা দখল করার পর আরব উপদ্বীপের অন্যান্য শহরও দখল করার চিন্তাভাবনা করেন, তাই এবার হামলা চালায় বন্দর নগরী জেদ্দার উপর। ওহাবী লেখক ইবনে বুশর তাঁর 'নাজদীর ইতিহাস' নামক বইয়ে লিখেন— সাউদ মক্কায় বিশ দিনেরও বেশি ছিলেন; তারপর জেদ্দা দখল করার জন্যে মক্কা ত্যাগ করেন। সাউদ জেদ্দা অবরোধ করে ঠিকই, কিন্তু জেদ্দার শাসক গোলা নিক্ষেপ করে বহু সংখ্যক ওহাবীকে হত্যা করে এবং তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়। ওহাবীরা এভাবে পরাজিত হওয়ার পর মক্কায় ফিরে না গিয়ে বরং তাদের মূল ভূখণ্ড নজদে ফিরে চলে যায়; কেননা তারা শুনতে পেয়েছিল ইরান থেকে একদল সেনা নজদে হামলা করেছে। এই পরিস্থিতির কারণে সুবর্ণ একটি সুযোগ এসে যায় ওহাবীদের হাত থেকে মক্কা শহরকে পুনরায় উদ্ধার করার।
মক্কার গভর্নর শারিফ গালিব ওহাবীদের হামলার পর জেদ্দায় লুকিয়েছিলেন, তিনি এখন জেদ্দার শাসকের সহযোগিতায় প্রচুর সেনা নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওনা হলেন। তাদের সেনাদের কাছে কামান-গোলার মতো অস্ত্রশস্ত্র ছিল, যার ফলে তারা ওহাবী সেনাদের উপর হামলা চালিয়ে পুনরায় মক্কা বিজয় করতে সক্ষম হয়।
কিন্তু ওহাবীরা এরপরেও বিশ্বমুসলমানের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান মক্কাকে পুনরায় দখল করার পাঁয়তারা করে। শেষ পর্যন্ত ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে ওহাবীদের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক হিসেবে পরিচিত সাউদের আদেশে পবিত্র মক্কা শহরটিকে আবারো অবরোধ করে দখল করে নেয়। দখল করার পর সাউদ মক্কার জনগণের ওপর এত কঠোর আচরণ করতে থাকে যে, শহরের বহু লোক ক্ষুধা তৃষ্ণায় মারা যায়। সাউদের আদেশে মক্কা শহরের প্রবেশদ্বার এবং বের হবার পথ সবই বন্ধ করে দেয়। সে সময় যে-ই মক্কা থেকে পালাতে চেয়েছিল তাকেই হত্যা করা হয়েছিল; তাদের হাত থেকে শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। অবস্থা ভীষণ বেগতিক দেখে শেষ পর্যন্ত মক্কার গভর্নর শারিফ গালিব ওহাবীদের সাথে হাত না মিলিয়ে পারেননি।
ওহাবীরা মক্কা অবরোধ করার সময় গভর্নর তাদের সাথে ভালো আচরণ করেছিল, এমনকি ওহাবী আলেমদেরকে মূল্যবান সব উপঢৌকনও দিয়েছিল প্রাণে বেঁচে থাকার জন্যে। মক্কা দখল করার পর ওহাবীরা ইরাকি হজ্বযাত্রীদের জন্যে চার বছর, সিরিয়ানদের জন্যে তিন বছর এবং মিশরীয়দের জন্যে দুই বছর হজ্বের মতো আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ সকল ইবাদাত ও আনুষ্ঠানিকতার উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে।
সাউদ তখন কেবল হজ্বের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেই ক্ষান্ত হয়নি, এরপর সে নজর দিয়েছে মদিনাতুন্নাবীর দিকে। মদীনা শহরও সে অবরোধ করে ফেলে। কিন্তু মদিনাবাসীরা যেহেতু ওহাবী আকিদা এবং তাদের সহিংসতা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, সেহেতু তাঁরা ওহাবীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন। প্রায় বছর খানেক এই প্রতিরোধ সংগ্রামের পর অবশেষে ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে সাউদ মদিনা শহরটিকেও দখল করে নেয়। ওহাবীরা নবীজী (সাঃ)-এর হেরেমের মূল্যবান সকল জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। তবে মুসলমানদের গণবিরোধিতার ভয়ে না-কি অন্য কোন কারণে রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পবিত্র রওজা ধ্বংস করতে গিয়েও কেন যেন তা আর করতে পারেনি।
সাউদ বিন আব্দুল আজিজ মদিনা মনোয়ারা দখল করার পর সকল শহরবাসীকে মাসজিদুন নববীতে সমবেত করান, এবং তাদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দেন; সেদিনের দেওয়া সেই বক্তব্যটি তিনি শুরু করেন এভাবে— 'হে মদিনার জনগণ! আল কোর'আনের পবিত্র আয়াত- আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দীনাকুম অর্থাৎ আজ তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্যে পরিপূর্ণ করে দিলাম এর ভিত্তিতে তোমাদের ধর্ম ও বিধিবিধান আজ পূর্ণতায় পৌঁছেছে, ইসলামের নিয়ামতে তোমরা মর্যাদাবান হয়েছো, একক অদ্বিতীয় সত্ত্বা আল্লাহ তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট ও খুশি হয়েছেন। তোমাদের পূর্বপুরুষদের বাতিল ধর্মগুলো ছেড়ে দাও এবং কক্ষনো তাদেরকে ভালো মানুষ হিসেবে মনে করো না। তাদের ওপর দরুদ বা রহমত প্রেরণ করা কঠোরভাবে পরিহার করবে, কেননা তাদের সবাই শেরেকি নীতির মধ্যেই মারা গেছে।' পর্যায়ক্রমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর মুসলিম সাম্রাজ্যের মূল ভূখণ্ডের নাম 'জাজিরাতুল আরব' পাল্টিয়ে সাউদের নামানুসারে 'সাউদি আরব' নামকরণ করা হয়।
সাউদ তার সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে বহু গণহত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। সে সময়ে তার এবং তার অনুসৃত ওহাবী ফের্কার ভয়াবহ সহিংসতা আরবের জনগণকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। অবস্থা এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল যে মৃত্যুর ভয়ে হজ্ব এবং জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করতেও কেউ সাহস করতো না। মক্কার শাসক নিজের জীবনের ভয়ে সাউদের ইচ্ছায় আদেশ দিতে বাধ্য হয়েছিল, মক্কা ও মদিনায় সাহাবী (রাঃ)-দের ও ইমামদের যতো মাজার আছে এবং এ ছাড়াও আরো যতো পবিত্র স্থাপনা আছে সকল স্থাপনা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ওহাবী ফের্কাকে তখন মাজহাব হিসেবে হেজাজে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ওহাবীদের চাওয়া অনুযায়ী আজান থেকে ইসলামের মহান নবী হুজুর পাক (সাঃ)-এর উপর দরুদ সংক্রান্ত অংশটিও বাদ দেওয়া হয়েছিল।
এখন জানা যাক আদ্দুরারুস সানিয়্যাহ— পৃষ্ঠা - ৪২ ও ৪৭; আত্তাওয়াস্সুল বিন্নাবিয়্যি— পৃষ্ঠা-১ কৃত- আবূ হামিদ মারযূক; ওহাবী মাযহাবের হাক্বীক্বত— পৃষ্ঠা - ১১১ও ১২৫ মতে কে এই মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নাজদী? খ্রিষ্ট্রিয় অষ্টাদশ শতাব্দির গোড়ার দিকে ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে, তথা ১১১১ হিজরীতে আরবের নজদে- হাদীসের ভাষায় ‘শয়তানের শিং’ এবং ইসলামী জগতে ‘ভূমিকম্প’ স্বরূপ জন্মগ্রহণ করেছিল মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী।
কৈশোরে, কুখ্যাত খারেজী সম্প্রদায়ের অনুসারী শায়খ ইবনে তাইমিয়া ও তার শিষ্য ইবনে ক্বাইয়্যূম জৌজী-র কয়েকটি মাত্র কিতাব পড়ে যৌবনে পদার্পণ করে তাদেরই অনুসরণে ‘ওহাবী মতবাদ’ প্রতিষ্ঠা করেছিল তথাকথিত শায়ক খ্যাত এই নাজদী; দ্বিতীয় সুলতান মাহমূদ খানের শাসনামলে তার জন্ম।
আক্বীদা ও কর্মকাণ্ডের দিক দিয়ে নিঃসন্দেহে মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব তার সকল অনুসারীসহ খারেজী সম্প্রদায়েরই অনুসারী। তার আক্বীদা, কথা ও কাজ তাকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দিয়েছে। নবী-রাসূল, অলি-আওলিয়া ও আল্লাহর নেককার বান্দাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেয়াই ছিল তার মূল কাজ; আর এই বদচিন্তা থেকেই সে ওহাবী মতবাদ প্রবর্তন করে। অথচ তাঁদের মানহানি করা ইমাম চতুষ্ঠয়ের মতে কুফর; এর উপর ইজমাও প্রতিষ্ঠিত।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক গোলাম আহমদ মোর্তজা রচিত 'চেপে রাখা ইতিহাস' বইয়ের ১৮০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে— 'প্রথমে ওহাবী জিনিসটা কি সে সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করছি- আরবদেশে ১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দে আব্দুল ওহাবের ছেলে মুহাম্মদের জন্ম। আরব দেশের নিয়মানুযায়ী এ নাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব বলে বর্ণিত হয়। তার জন্মস্থানের নাম ছিল নজদ। ওহাবী আন্দোলনের নায়কের নাম আসলে মোহাম্মদ।'
নাম বা জন্মসাল যা-ই হউক যে'টাই হউক না কেন এই নাজদী যে ইসলামের নামে দুনিয়াতে এক মহা ফেতনার বীজ রোপণ করে গেছে তা নিশ্চিত; এক কথায় জঘন্য! নাজদী সম্বন্ধে জানার জন্য অসংখ্য বই পড়েছি, ইসলামের ইতিহাস নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করেছি; যা বুঝতে ও জানতে পেরেছি— মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নাজদী আরবের নাজদ প্রদেশের (বর্তমান রিয়াদ) অধিবাসী। সেখানকার 'হুরাইমিলা' নামক স্থানে ১১১১ হিজরী সনে (১৬৯৯ খ্রি) জন্ম গ্রহন করেন, এবং ১২০৬ হিজরী (১৭৯২ খ্রি.) সনে মারা যান। নজদ প্রদেশটির প্রতি রাসূল (সাঃ) খুবই অসন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি অন্যান্য এলাকার জন্য দোয়া করেছেন বটে, কিন্তু নজদ এলাকার জন্য কখনো দোয়া করেননি। 'হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্নিত আছে যে, রাসূল পাক (সাঃ) বলেন - হে আল্লাহ! আমাদের শাম (সিরিয়া) ও ইয়েমেন দেশে বরকত দান কর। উপস্থিত সাহাবাগণ 'নজদ' দেশের জন্য পর পর ৩ বার দোয়া করতে আবেদন করলেন, রাসূল পাক (সাঃ) বললেন, নজদ দেশে নবতর ফেতনা রয়েছে এবং নজদ হতে শিংযুক্ত শয়তান বের হবে।' –(বোখারী )
রাসূল পাক (সাঃ)-এর হাদীস কিছুতেই মিথ্যা হতে পারে না। পরবর্তীকালে 'নজদ' প্রদেশ হতে মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নামে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে, যিনি বিধর্মীদের চক্রান্তের শিকার হয়ে ইসলামের মধ্যে এক চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে গেছেন। আসলে, ওহাবী মতবাদের জনক ইবনে আব্দুল ওহাব নাজদী ব্রিটিশ গোয়েন্দা অফিসার 'হামফ্রে'-র সৃষ্টি এবং তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু। 'হামফ্রে' তুরস্কের শায়খ আফিন্দির নিকট ছদ্মবেশী মুসলমান সেজে কোর'আন ও হাদীস চর্চা করে, পরে ইবনে আব্দুল ওহাব নাজদীর একান্ত বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে পরিগণিত হয়। ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে যে আলোচনা হয় তা 'হামফ্রে' তার 'হামফ্রেজ মেমোরিজ' নামক ডায়েরিতে বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা অফিসার 'হামফ্রে'-র ডায়েরিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন জার্মানীর হস্তগত হয়, তখন জার্মান পত্রিকা 'ইসপগিল' তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে; এতে ব্রিটিশদের বিশ্ব সমাজে অনেক লজ্জিত হতে হয়। ডায়েরিটি সেসময় ফরাসী পত্রিকায়ও ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল; জনৈক লেবাননী বুদ্ধিজীব তখন তা আরবীতে অনুবাদ করেন। আরবী থেকে পরে বাংলা করেন জনাব লোকমান আহমদ আমিনী। আগস্ট-সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ সংখ্যায় মাসিক তরজুমান পত্রিকায় আব্দুল ওহাব নাজদী এই প্রসংগটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। নিবন্ধটি তখন 'হামফ্রেজ মেমোরিজ' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। তা থেকে আজ আমি এর কিয়দাংশ হুবাহুব এখানে তুলে ধরছি। (তাছাড়া হামফ্রের ডায়েরিটি এখন বাংলা ভাষায়ও মুদ্রিত হয়েছে, বাজারেও পাওয়া যাচ্ছ।)
হামফ্রে লিখেছেন - আমি যখন তরখানের কাজে নিয়োজিত ছিলাম তখন একজন লোকের সাথে আমার সাক্ষাত হয়, তিনি সেখানে যাতায়াত করতেন এবং তুর্কী, ফারসী এবং আরবী ভাষায় কথা বলতেন। তিনি দ্বীনি তালেব ইলমের পোশাক পরিধান করতেন। তার নাম হলো মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব। তিনি উচ্চাভিলাষী, সম্মানাকাংখী এবং ধোপ দুরস্ত লোক ছিলেন। উসমানী সরকারের প্রতি তিনি অত্যন্ত ঘৃনা পোষণ করতেন ও সর্বদা তার সমালোচনা করতেন। কিন্তু ইরান সরকারের সাথে তার কোন যোগাযোগ ছিলনা।
তরখান আব্দুর রেজার সাথে তার বিশেষ সম্পর্কের কারণ হলো উভয়েই উসমানী খলিফাকে নিজের পরম শত্রু মনে করতেন। কিন্তু এটা আমার বোধগম্য হয়নি যে, তিনি কি কারণে আব্দুর রেজার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুললেন, কারণ দুজন ছিলেন দুই মতাবলম্বী (একজন শিয়া আরেকজন সুন্নী)। আমি এটাই জানতে পারিনি তিনি ফার্সী ভাষা কোথায় শিখলেন। অবশ্য বসরায় শিয়া সুন্নীরা এক ছিল। সেখানে আরবী ও ফার্সী উভয় ভাষার প্রচলন ছিল।
আব্দুল ওহাবের সাথে মেলামেশা ও সাক্ষাতে বুঝতে পারলাম যে, ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্যাবলীকে কার্যকর করার জন্য এ ব্যক্তি অত্যন্ত উপযোগী হবে। তার উচ্চ বিলাস , খ্যাতি কামনা, অহংকার দ্বারা উলামায়ে কেরাম, মাশায়েখে ইসলাম ও সাহাবায়ে কেরামের এমনকি খোলাফায়ে রাশেদিন পর্যন্ত সমালোচনায় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। কোর'আন হাদীস থেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসীলই তার উদ্দেশ্য ছিল।
আমি চিন্তা করলাম কোথায় এ অহংকারী যুবক আর কোথায় ইস্তাম্বুলের সেই আহামদ আফেন্দী। হানাফী মাযহাবের অনুসারী সে বৃদ্ধ ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-র নাম নেওয়ার আগে ওযু করে নিতো। আর আব্দুল ওহাব আবু হানিফা (রঃ)-কে তুচ্ছ জ্ঞান করে। তিনি বলতেন আমি আবু হানিফার চেয়ে বেশী জানি, এবং সহীহ বোখারী বেহুদা কিতাব বৈ কিছু নয়।
আব্দুল ওহাবের সাথে হামফ্রের বন্ধুত্ব লাভ— হামফ্রে বলেন, যাহোক আমি আব্দুল ওহাবের সাথে গভীর সম্পর্ক করে নিলাম এবং আমি বার বার তাকে এ কথা শুনাতাম, আল্লাহ আপনাকে হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ)-এর চাইতে বেশী উপযুক্ত করে বানিয়েছেন। আপনি যদি রাসূল (সাঃ)-এর সমসাময়িক লোক হতেন, তাহলে রাসূল (সাঃ)-এর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারতেন। আমি সবসময় আশা ভরা সুরে তাকে বলতাম, আমি চাই ইসলামে যে বিপ্লব সাধিত হবে তা আপনার দ্বারাই হোক। আপনি এমন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক যে, আপনিই ইসলামকে অবনতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।
আমি ইবনে আব্দুল ওহাবের সাথে ঠিক করলাম যে আমরা দুজন মজলিসে বসে উলামা, মুফাসিরীন, মাযহাব ও সাহাবাদের থেকে ভিন্ন পন্থায় নতুন চিন্তা ধারার ভিত্তিতে কোর'আন মজীদ নিয়ে আলোচনা করবো। আমি কোর'আন পড়তাম আর আয়াতের অর্থ নিয়ে মতামত প্রকাশ করতাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, যে কোন প্রকারে তাকে ইংরেজ উপনিবেশবাদী সংস্থার ফাঁদে জড়িয়ে দেয়া। আমি ক্রমে ক্রমে এ উচ্চাভিলাষী লোকটিকে জড়িয়ে ফেলতে লাগলাম, এমনকি তিনি বাস্তবতার উপর স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন।
একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম জেহাদ করা কি ওয়াজিব? তিনি বললেন অবশ্যই। আল্লাহতায়ালা বলেছেন - কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর। আমি বললাম - আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, কাফের ও মুনাফেক উভয়ের সাথে যুদ্ধ করা ওয়াজিব; তাহলে রাসূল (সাঃ) কেন মুনাফিকদের সাথে যুদ্ধ করেন নি? আব্দুল ওহাব - জেহাদ শুধু যুদ্ধের ময়দানে নয় বরং রাসূল (সাঃ) নিজ চলাফেরা কথাবার্তার দ্বারা মুনাফেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আমি বললাম - তাহলে এ অবস্থায় কাফেরদের সাথেও কথাবার্তা ও চলাফিরার দ্বারা যুদ্ধ করা ওয়াজিব। তিনি বললেন - না, রাসূল (সাঃ) যুদ্ধের ময়দানে তাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। আমি রাসূল (সাঃ) কাফেরদের সাথে প্রাণ বাঁচাতে যুদ্ধ করেছেন; কেননা কাফেরগণ তার জানের দুশমন ছিল। আবদুল ওহাব এ কথার উপর মাথা নাড়লেন, আমি বুঝতে পারলাম আমার কাজে আমি সফল হতে চলেছি।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা হামফ্রে আরো বলেন, আমি একদিন মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীকে একটি মিথ্যা স্বপ্নের কথা বয়ান করলাম, তা হলো এই— আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামকে কুরসীর উপর বসা অবস্থায় দেখলাম। বড় বড় আলেম ও বুজুর্গানে দ্বীন যাঁদেরকে আমি চিনি না, তাঁর চারদিক থেকে তাঁকে তারা ঘিরে রেখেছেন। তখন আমি দেখলাম আপনি সেই মজলিশে প্রবেশ করছেন। আপনার চেহারা থেকে রৌশনি বের হচ্ছে। যখন আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর সামনে পৌঁছলেন, তখন মাথা নাড়িয়ে আপনাকে সম্মান প্রদশর্ন করলেন। আপনার মাথায় চুমু খেলেন এবং বললেন, হে আমার একই নামের অধিকারী মোহাম্মদ! তুমি আমার এলেমের ওয়ারিশ মুসলমানদের দ্বীন দুনিয়াকে সামাল দেওয়ার জন্য তুমি আমার যথার্থ খলিফা। এ কথা শুনে আপনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকের কাছে এলেম জাহির করতে আমার ভয় হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বললেন, মনের মধ্যে ভয়কে স্থান দিও না।
হামফ্রে বললেন, মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী আমার মনগড়া স্বপ্ন শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। তিনি আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন, ভাই! তোমার স্বপ্ন কি সত্য হয়? আমি তাকে এই ব্যাপারে সান্তনা দিতে থাকি। আমি লক্ষ্য করলাম স্বপ্নের আলোচনার পর তার মনোভাব এক নতুন মাজহাব সৃষ্টির জন্য দৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে কাজ শুরু করে দিল।
এই হলো ওহাবী নাজদীদের আসল ইতিহাস ও প্রকৃত পরিচয়ের আসল খবর। ব্রিটিশ গোয়েন্দা অফিসার মিষ্টার হামফ্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এককভাবে ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা নিযুক্ত ছিলেন তুরস্ক, ইরাক, ইরান ও অন্যান্য আরব দেশসমূহে; আর তার ডাকবাংলা ছিল বসরার তরখানে। এক গভীর ব্রিটিশ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের ফসল এই ওহাবীজম। বর্তমান মুসলিম দুনিয়ায় যা মুসলমানদের মহামূল্যবান সম্পদ ঈমান নষ্ট করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলছে। না জেনে না বুঝে অনেকেই শুধুমাত্র দুনিয়ার লোভে সে দলের সদস্য হয়ে অনন্ত জীবনের পরম সুখকে পদদলিত করছে।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার লক্ষ্য ছিল ইসলাম ধর্মের উপর আঘাত হেনে মুসলিম জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। সার্থক ব্রিটিশ ষড়যন্ত্র, সার্থক হয়েছে হামফ্রে এবং মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নাজদী! আজকের ওহাবী সালাফি নামধারীরা এসবের কতটুকু কি জানে??
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
আসসালামু’আলাইকুম,
উত্তরমুছুনমোহাম্মদ ওয়ালিউল্ল্যাহ্ ভাই, ওহাবীজম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সূযোগ পেলাম। ধন্যবাদ ভাই.
ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া বারাকাতুহ! জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মুছুন