তিলোত্তমা ঢাকা এখন প্রায় পুরোপুরি একটি মৃত্যুপুরী; চতুর্দিকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীতে সয়লাব। তাই করোনায় আক্রান্তের ভয় আমাদের প্রত্যেককেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে; যে কেউ যে কোন মূহুর্তে নিজের অজান্তেই হয়তো আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি! এতে ভাবনার কিছু নেই। আক্রান্ত হলেই যে মরে যাবো- এমনতো নয়? বিশ্বাস রাখুন— মৃত্যু তখনই হবে যখন উপরওয়ালার হুকুম হবে; এক সেকেন্ড আগেও নয় এক সেকেন্ড পারেও নয়। বরং আমি বলি কি— করোনা নিয়ে উদগ্রীব উৎকন্ঠিত বা আতংকিত না হয়ে বরং নিজেকে প্রস্তুত করুন পরকালের জন্য। মৃত্যুকে ভয় নয় জয় করার চেষ্টা ও পরিকল্পনা করুন; বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার করুন এবং নিরাপদে থাকুন, অন্য থেকে নিরাপদ দূরত্বে।
মৃত্যু আসলে কি? –মৃত্যু হলো জাগতিক জীবনের পরিসমাপ্তি এবং পরবর্তী জীবনের সূচনা, আখিরাতের প্রবেশদ্বার হলো মৃত্যু। অন্যভাবে বললে বলতে হয়, মৃত্যু হচ্ছে জাগতিক দেহ হতে আত্মার পৃথকীকরন। আত্মা আমাদের দেহ ছেড়ে জাগতিক দুনিয়া হতে যখন আখিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে তখন আর আমি আপনি মানুষ নামে বিবেচিত হবো না, হয়ে যাবো 'লাশ'। একজন মুসলিম হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেরই স্মরণ রাখা উচিত— মৃত্যু হচ্ছে চলমান জীবন প্রক্রিয়ার একটি পরিবর্তনীয় অবস্থা মাত্র। সকল জীবিত প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে; এবং এটাই চিরন্তন সত্য।
মালাকুল মউত যখন কোন ব্যক্তির রুহ বা আত্মা শরীর থেকে বের করে নিয়ে যান তখন তার সাথে আরও অন্যান্য অনেক ফেরশতারা থাকেন। মৃত ব্যক্তির জাগতিক জীবনাচারের ওপর ভিত্তি করে তার মৃত্যুর আয়োজন ঠিকঠাক করা হয়। সৎপথে চালিত মু'মিন ব্যক্তির জন্য ফেরেশতারা খুবই দয়ালু হন এবং কোমল আচরন করেন; তার মৃত্যু হয় অপেক্ষাকৃত কম কষ্টদায়ক। অপর দিকে অসত্ অবিশ্বাসী মোনাফেক ব্যক্তির প্রতি ফেরেশতারা খুবই কঠোর আচরন করেন; এবং তাদের মৃত্যু হয় অপরিসীম যন্ত্রনাদায়ক। মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পাদনের পর পরই তার নিকট মুনকার-নকীর নামের নীল চোখ এবং কালো গাত্রবর্ন বিশিষ্ট দু'জন প্রশ্নকারী ফেরেশতা আসেন। তাঁরা মৃত ব্যক্তির ঈমান পরীক্ষার জন্য তাকে প্রশ্ন করে থাকেন। সৎ বিশ্বাসী ব্যক্তি তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর ঠিকই প্রদান করতে পারবে এবং তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে শান্তিতে বসবাস করেতে থাকবে। কিন্ত অসৎ অবিশ্বাসী ব্যক্তি প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই দিতে পারবে না; ফলে ফেরেশতারা তাদের জন্য কঠিন শাস্তির আয়োজন করবেন।
মৃত্যুর পরবর্তী এই জীবনের শুরু হতে পুনরুত্থান কালীন সময় পর্যন্তকে বলা হয় 'বরযখ'। বরযখী জীবনটা কিন্তু নেহায়েত ছোট নয়, দুনিয়া তো মাত্র দু'দিনের! আত্মহত্যা, কিংবা হত্যা ইসলামে অত্যন্ত ঘৃনিত এবং নিষিদ্ধ কাজ; কবিরা গুনাহ বা বড় ধরনের অপরাধ হলো আত্মহত্যা। বাঘকে সামনে দেখলে নিশ্চিত আপনি পালাবেন? করোনা থেকে তবে কেন নয়?? বাঘের সামনে পড়ে পালাবার চেষ্টা না করা আত্মহত্যার সামিল। ঠিক করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদে না থাকার গোয়ার্তমি করাও আত্মহত্যার প্রচেষ্টা। তাই, ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
চুরি-ছ্যাচড়ামি এখন বন্ধ করুন। অনেক তো করেছেন, আর কত? খারাপ কাজ ছাড়ুন না এখন; তওবার সুযোগ আর না-ওতো পেতে পারেন? তাই, এখনই খাঁটি তওবা করুন। কম খান, বেশি বশি আমল করুন, গরীব দুঃখী মানুষকে সাহায্য করুন; মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে কৃত গুনাহর জন্য মাফ চান, কান্নাকাটি করুন। আজ একটি পবিত্র রজনী— শা'বান মাসের মধ্যরজনী; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষায়- 'লাইলাতুন নিসফি মিন শা'বান'। নফল এবাদত নিয়ে খামাখা বিতর্ক না করে এই রাতটাকে আসুন না আমরা সবাই কাজে লাগাতে চেষ্টা করি; ঘরে ঘরে আল্লাহ-কে স্মরণ করি। দেখবেন, আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আমাদের মাফ করে দিয়ে- ঠিকই হেফাজত করবেন।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ
৯ এপ্রিল, ২০২০.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন