সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

আলো আসবেই!


ঢাকা শহরে গাড়ির হর্ন নেই, কালো ধোঁয়া নেই, শব্দদূষণ নেই, ভাবা যায়? জনমানব শূন্য খাঁ-খাঁ চারপাশ। ফাঁকা রাস্তায় নেমে পড়েছে শালিক, কাক, চড়ুই। চতুর্দিকে শান্ত-নিবিড় পরিবেশ। মানুষের কোলাহল নেই, আছে কাকের কা কা আর চড়ুই শালিকের কিচিরমিচির। মনে হচ্ছে এ যেন দূষণমুক্ত এক নির্মল নগরী! করোনা আতঙ্কে মানুষ ঘরে বন্দী, আর প্রকৃতি তার বন্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছে। শত অত্যাচার হতে মুক্ত হয়ে প্রকৃতি তার নিজেস্ব রঙ ঠিকই ছড়াতে শুরু করেছে।

এমন নীরব-নিস্তব্ধতায় চড়ুইয়ের চিঁ চিঁ, দোয়েলের শিস, কোকিলের কুহু, কাঠবিড়ালীর ছোটাছুটি, পাখির কিচিমিচির এসব শহরে দেখিনি বেশ কয়েক যুগ। মনেই হয় না এই সেই যান্ত্রিক নগরী ঢাকা! তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি, আথচ নেই কোনো ভ্যাপসা গরম! নির্মল বায়ু, ঝলমল রোদে প্রকৃতি যেন জেগে উঠেছে।

এ যান্ত্রিক শহরে এতো পাখপাখালির অবাধ বিচরণ কল্পনা করা যায়? সুবেহ-সাদিকের আগে এ নগরীতেও আজ কানে বাজে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। ঘুম ভাঙছে পাখির কিঁচিমিঁচির শব্দে। চিরচেনা সেই ঢাকা আজ নতুন রূপ ধারণ করেছে। করোনা আতঙ্কে আমরা ঘরবন্দি, আর প্রকৃতি উন্মুক্ত। এ সুযোগে পাল্লা দিয়ে কমছে দূষণের মাত্রা। নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছে প্রকৃতি।  

টিভি নিউজে দেখলাম বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে বাসা বেঁধেছে লাল কাঁকড়া, সাগর লতা, গাঙ কবুতর; রাজত্ব করছে সামুদ্রিক কাছিম, ডলফিন ও শামুক-ঝিনুক। পাল্টে গেছে বান্দরবনসহ অন্যান্য বনের চেহারাও। মানুষের আগ্রাসনে পাহাড় ও বনের পশু-পাখিরা বাঁচার পরিবেশ হারিয়ে ফেলেছিল। পাহাড়-বন আবার আগের রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে।

করোনা তুমি অনন্যা, বন্ধ করে দিয়েছো প্রকৃতির ওপর মানুষের সকল অনাচার। বন্ধ করেছো কলকারখানা, গাড়ির চাকা, জাহাজের ইঞ্জিন। কমিয়ে দিয়েছো জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর মহারত। থমকে দিয়েছো পার ক্যাপিটা-জিডিপি, আর পৃথিবীর সর্বস্ব দখলের অর্থনীতি। বাহ্ করোনা বাহ্! নাসার স্যাটেলাইট চিত্র থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারছি কিছুটা হলেও বিশ্বের শহরগুলো দূষণমূক্ত হচ্ছে। 

সভ্য মানুষের কাছ থেকে পৃথিবী তার দখল কেড়ে নিয়ে পুন জাগরিত হচ্ছে। পাখি, সমুদ্রের প্রাণী, বন্য প্রাণী ও গাছপালা শতাব্দীর ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে। অতিষ্ঠ খাল-বিল নদী-নালা বন-বনানী আকাশ কিছুটা হলেও মুক্তি পেয়েছে। একটু একটু করে ধরণী তার অপূরণীয় ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মানুষের নিঃশ্বাস নিতে আর তেমন একটা কষ্ট হবে না। 

আলো আসবেই! আলোকে আসতেই হবে। আলো আসে; কোন ভাবেই তাকে থামানো যায় না, ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়! সূর্যের আলোর মতো আসুন আমরাও সবাই ছড়িয়ে দেই প্রত্যেকের মনের আলো; মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হই। একে অন্যকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই।

বিষাক্ত এ পৃথিবী আবারও ফিরে পাক প্রাণচাঞ্চল্য। মেঘ কেটে রোদ উঠুক। আকাশ আরো বেশি নীল হউক। ভাল থাকুক আগামী প্রজন্মসহ পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী।। 

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
১৯ এপ্রিল, ২০২০.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন