সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

অলি-আওলিয়া নিয়ে কিছু কথা:


পবিত্র কুর'আনুল কারীমে ও হাদীসে অসংখ্য বার  'অলি'  এবং  ' আউলিয়া '  শব্দ  দু'টোর ব্যবহার  আছে ;  'আউলিয়া'  শব্দটি 'অলি’-র বহুবচন ।  'অলি'  শব্দটি  একটি আরবি শব্দ; যার    অর্থ   অভিভাবক  বা   মুরুব্বী ,  বন্ধু । ইসলামিক    ফাউন্ডেশন   বাংলাদেশ    কতৃক প্রকাশিত    আরবী-বাংলা   অভিধানে   লেখা আছে -   ‘অলি’  অর্থ  বন্ধু , মিত্র বা অনুসারি; কখনো  শব্দটির  অর্থ হয় শাসক, অভিভাবক বা  কর্তা ।  প্রসিদ্ধ  আরবী-ইংরেজী  অভিধান ' আল  মাওয়ারিদ ' অনুসারে  ' অলি ' শব্দের অর্থ -   guardian ,   patron ,    friend companion ইত্যাদি...। 

যেমন - পবিত্র কুর'আনুল কারীমে আছে, "আলা ইন্না আওলিয়া আল্লা-হি লা-খাওফুন ‘আলাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহ্‌য্বানূন। আল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া কা-নূ ইয়াত্তাকূন। লাহুমুল্ বুশ্‌রা-ফিল্ হায়া-তিদ্ দুন্ইয়া ওয়াফিল্ আ-খিরাতি; লা-তাব্‌দিলা লিকালিমা-তিল্ লা-হি; যা-লিকা হুওয়াল্ ফাওযুল  ‘আজীম।" (সূরা ইউনুস, আয়াত, ৬২-৬৪) "আলা (সাবধান!) ইন্না- (নিশ্চই) আউলিয়া আল্লাহি, (আল্লাহ্-র ওলিগণ বা বন্ধুগণ); অর্থাৎ- 'নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই, আর তারা পেরেশানও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে; তাদের জন্যই রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তন নেই; এটিই মহাসফলতা।'

এবং "ইন্নামা- ওলিয়্যুকুমুল্লা-হু অ-রাসূলুহূ অ-ল্লাযীনা আ-মানুল্লাযীনা ইয়ুক্বীমূনাছ্ ছলা-তা অইয়ুতূনায্ যাকা-তা অহুম্ রা-কি‘ঊ ন্। অমাইঁ ইয়াতাঅল্লা-হা অরাসূলাহূ অল্লাযীনা আ-মানূ ফাইন্না হিয্বাল্লা-হি হুমুল্ গা-লিবূন্।" অর্থাৎ- 'নিশ্চয়ই তোমাদের ওলি হলেন আল্লাহ এবং তাঁর রসুল আর ঈমানদার লোকেরা- যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দিয়ে দেয়, এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকে। যারা অলি মানে আল্লাহকে এবং আল্লাহর রসুলকে আর ঈমানদার লোকদেরকে, তারাই আল্লাহর দল এবং আল্লাহর দলই থাকবে বিজয়ী।' -(সূরা আল মায়িদা,আয়াত-৫৫-৫৬)  

অন্যত্র এসেছে, 'ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মু মিনীন' – আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক। -(সূরা আলে ইমরান : ৬৮) এবং 'ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মুত্তাকীন' – আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের বন্ধু। -(সূরা জাসিয়া : ১৯)

তাছাড়া হাদীসে কুদসীতে হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহ্ তা’আলা বলেন- যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছে করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা- দ্বন্দ্বে ভুগি না, কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে, আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি। -(বুখারী: ৬৫০২)

সূরা হুজুরাত-এর ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা বলেন, 'তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্-র নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।' কিন্তু ওহাবীদের সব দলই এবাদত আমল বিদ্বেষী। মাজার/রওজা এ'সব শব্দ শুনলে তো তাদের গায়ে ঝালা ধরে; নওমুসলিম লা-মাজহাবীরা তো আরো এক ধাপ উপরে! এ'সব আহলে খবিশদের সব এবাদত আমলেই চুলকানি! শবে মেরাজ নাই, শবে বরাত নাই, শবে কদর নাই, নিয়ত/ মোনাজাত কিছুই নাই!! শুধু নাই আর নাই!!! আরো কত কি বাহানা! অলি-আওলিয়ার নাম শুনলে তো তাদের গায়ে ফোসকা পড়ে! শিরক/কুফর বলে নাক ছিটকায়! সব নাই করতে পারলেই যেন তাদের সুবিধা। 
আরে বেটা, মইরা ল; দেখবি, কত ধানে কত চাল॥

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
০৫ এপ্রিল; ২০১৯.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন