একদল মনে করছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে উছিলা করে দোওয়া করা যাবে না; বিগত তিন দিন ধরে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির একজন বিজ্ঞ রেজিস্টার ডক্টরেট বন্ধুর সাথে আমার এ নিয়ে কথাবার্তা তথা তর্ক হচ্ছে। আমি তাঁকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম'আত-এর আকিদাগত বিশ্বাস ও পবিত্র কুর'আনের বেশ কিছু আয়াত দিয়ে বুঝাতে অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমার ব্যর্থতা - তাঁকে বুঝাতে পারিনি। হে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আপনি তাদেরকে এবং আমাদের সবাইকে এসব বুঝার মতো তৌফিক দান করুন।
একজন সুন্নী হিসেবে আমি কিছুতেই ওদের এ কথাটা মানতে পারছি না— হুজুরপাক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে উসিলা করে ইবাদত করা শিরকের পর্যায়ে পড়বে! তাই গতরাত থেকে এটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলাম; তাদের ইমামদেরই কিতাব নিয়ে। যা জানতে ও বুঝতে পারলাম তার সারাংশ হচ্ছে— আধুনিক ওহাবীরা এই তথ্যটি প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করে মুসলিম সমাজে একটা নতুন ফেতনা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে! মুসলিমের ঈমান-আমল নষ্ট করতে চাইছে!
ইদানীং লক্ষ্য করছি তারা এটাকে বিদা'ত বলে চিহ্নিতও করতে চাইছে! কিন্তু আমরা পবিত্র কুর'আনুল কারীমেই স্পষ্ট দেখতে পাই যে, হযরত ইয়াকুব (আঃ) অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি তাঁর সুস্থতা ফিরে পেতে ছেলে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর জামার উসিলায় মুনাজাত করেছিলেন; ঘটনাটি পবিত্র কুরআনুল কারীমেই বর্ণিত। সূরা মায়েদা-র ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (35)
ইয়া~আইয়্যুহাল লাযীনা আ-মানুত্তাকুল্লা-হা ওয়াব্তাগূ~ইলাইহিল ওয়াসীলাতা ওয়া জ্বা-হিদূ ফী সাবীলিহী লা'আল্লাকুম তুফলিহূন।
"হে মুমিনগণ! আল্লাহর প্রতি কর্তব্য কর, তাঁর সান্নিধ্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর এবং সর্বশক্তি দিয়ে তাঁর পথে সংগ্রাম কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।" (৫:৩৫)
বা,
"হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের উছিলা/উপায় অনুসন্ধান কর ও তাঁর পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। - (সুরা ৫/৩৫)
বা,
"O you who Believe! Do your duties to Allah and fear Him seek the means of approach unto him, and strive (with might and main) in His cause so that you may prosper." (Surah Mai’dah verse 35, Surah 5)
সুতরাং হুজুরপাক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চাইতে আমাদের জন্য আর ভালো উসিলা কি হতে পারে? এ নিয়ে ওহাবীদের গুরু ইবনে তাইমিয়া (রঃ)-এর দুটি উদ্বৃতি নিন্মে তুলে ধরছি—
Hafidhh Ibn Taymiyyah writes: When Adam (Alay hissalaam) made a mistake, he made Du'a like this: ' O Allah forgive my mistake with the Waseela of Muhammad, (May Allah bless him and grant him peace). Allah asked the Prophet Adam peace be upon him, (rhetorically) how he knew about Muhammad, (May Allah bless him and grant him peace)
Adam, peace be upon him, answered “when you created me, I lifted my head and saw: (LA ILA HA ILLALLAHU MUHAMMDUR RASU LULLAH) written on the throne. Therefore I knew that this person must be of a very high status. Other wise you would not have written his name with yours. Allah Ta'ala then said I have forgiven you. He will be the last Messenger in your children and I have created you because of him. The second narration is when Allah Ta'ala created the Sky, and the Earth. He wrote our Prophet Muhammad's, (May Allah bless him and grant him peace) name on the pillars of the throne and on the doors of paradise, and on the leafs of the trees in Paradise. It was written that Muhammad (My Allah bless him and grant him peace) would be the last Prophet. In addition to both of these narrations, are counter proofs for one another. They have the status as authentic narrations.
["Fatawa Ibn Taymiyya vol. 2 page 150" also Tareekh Ibn Kathir in Story of Adam]
Our Prophet is our Waseela even after his Death.
Hafidhh Ibn Taymyya writes: A person came to Uthman Ghani RadhiAllahu 'anhu with regards to seeking some assistance, but he was unable to attract the attention of the Khalifah on every attempt. The same person met Uthman bin Haneef, RadhiAllahu 'anhu, and told him his problem. Uthman bin Haneef gave him some advice which was: 'Perform Wudhu, pray two rak'at Nawaafil and then supplicate in this way: " Ya Allah, I ask You through the Waseela of Your Messenger Muhammad [May Allah bless Him and grant Him peace]. The person again went to Uthman bin Affan RadhiAllahu 'anhu who helped him with his work and also said 'If you ever need my help in future, I will help you (with regards to work). [Qay’da jaleelah Hafidhh Ibn Taymiyah page 96 Tabraani, Bayhaqi, Hakim]
ওহাবীদের স্থপতি মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব নাজদী বলেছেন - Scholars have different opinion about making supplication du’a with the Waseela of the pious people. Some permit it, while the others, do not. So it is not right to say some one is Kafir who goes to the grave of a pious person and make Waseela. (Majmooah ul Mu’allifat Al Qism ul Salith pg 68 by Muhammad Bin Abdul Wahaab ul Najdi)
ওহাবীদের আরেক প্রিন্সিপাল আল্লামা আশ্রাফ আলী থানভী (রঃ) “নশরুত্তিব” কিতাবের ৩০ নং পৃষ্ঠার ২য় অধ্যায়ের দ্বিতীয় বিবরণীতে মুসতাদরীকে হাকিম কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। হাদিসটির উর্দু অনূবাদ তাঁরই ভাষায় এরূপ-
ﺩﻭﺳﺮﯼ ﺭﻭﺍﯾﺖ: ﺣﻀﺮﺕ ﻋﻤﺮﺑﻦ ﺧﻄﺎﺏ ﺭﺽ ﺳﮯ ﺭﻭﺍﯾﺖ ﮨﮯ ﮐﮧ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﻧﮯ ﺍﺭﺷﺎﺩ ﻓﺮﻣﺎﯾﺎ: ﺟﺐ ﺁﺩﻡ ﺳﮯ ﺧﻄﺎ ﮨﻮﮔﺊ ﺗﻮ ﺍﻧﮩﻮﮞ ﻧﮯ ﻋﺮﺽ ﮐﯿﺎ ﺍﮮ ﺍﻟﻠﮧ! ﻣﯿﮟ ﺁﭖ ﺳﮯ ﻣﺤﻤﺪ ﮐﮯ ﻭﺍﺳﻄﮯ ﺩﺭﺧﻮﺍﺳﺖ ﮐﺮﺗﺎ ﮨﻮﮞ ﮐﮧ ﺁﭖ ﻣﯿﺮﯼ ﻣﻐﻔﺮﺕ ﮐﺮﺩﯾﺠﮱ. ﺗﻮ ﺣﻖ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻧﮯ ﺍﺭﺷﺎﺩ ﻓﺮﻣﺎﯾﺎ ( ﻳﺎ ﺁﺩﻡ ﻭ ﻛﻴﻒ ﻋﺮﻓﺖ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﻭ ﻟﻢ ﺃﺧﻠﻘﻪ؟ ﻛﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺘﺪﺭﻙ ٢/ ٦١٥ ) ﺍﮮ ﺁﺩﻡ! ﺗﻢ ﻧﮯ ﻣﺤﻤﺪ ﮐﻮ ﮐﯿﺴﮯ ﭘﮩﭽﺎﻧﺎ؟ ﺣﺎﻻﻧﮑﮧ ﺍﺑﮩﯽ ﺗﻮ ﻣﯿﮟ ﻧﮯ ﺍﻧﮑﻮ ﭘﯿﺪﺍ ﺑﮩﯽ ﻧﮩﯿﮟ ﮐﯿﺎ .
অর্থাৎ— হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, যখন আদম (আঃ) এর দ্বারা ভুল হয়ে গেল তখন তিনি আল্লাহপাকের মহান দরবারে আরজ করলেন-“হে পরওয়ারদিগার! আপনার নিকট মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উছিলায় দরখাস্ত করছি যে, আমাকে ক্ষমা করুন।” তখন আল্লাহপাক এরশাদ করলেন, “হে আদম তুমি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পরিচয় কী ভাবে লাভ করলে? অথচ আমি এখনও “তাঁকে সৃষ্টি করিনি।”
{সূত্রঃ হাদিসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ) দালায়িলুন নবুওয়াত কিতাবে বর্ণনা করেছেন, হাকেম (রঃ) একে মুসতাদরিক কিতাবে এবং ইমাম তিবরানী একে বর্ণনা করে বলেছেন যে হাদিসটি সহীহ।}
উপরোক্ত হাদিস থেকে শিক্ষা ও ইংগিত-
১) হযরত আদম (আঃ) নবীজির (সাঃ)-এর উছিলায় আপনা ভুলের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
২) হযরত আদম (আঃ) এর সাথে আল্লাহপাকের যখন কথাবার্তা চলতেছিল, তখনো পর্যন্ত হাবিবুল্লাহ হুজুরপাক (সাঃ) এর অস্তিস্ত না থাকা। অর্থাৎ— আল্লাহপাক তখনো পর্যন্ত হুজুরেপাক (সাঃ)-কে সৃষ্টি করেননি। তবে হ্যাঁ আল্লাহপাক আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার অনেক আগ থেকেই মহান আরশের খুঁটির উপর নিজের নামের সাথে “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এ বাক্যটি লিপিবদ্ধ করে রাখেন।
৩) হাদিসটির শেষাংশে যে কথাটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য তা এই, “আল্লাহপাক (আদম (আঃ)-র প্রতিউত্তরে) বলেন, হে আদম তুমি সত্য বলেছ। সে আমার নিকট সমগ্র সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয়। আর যখন তুমি আমার কাছে তাঁর উছিলায় দরখাস্ত করেছো, অতএব আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। আর মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সৃষ্টি করার ইচ্ছা না হলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।” {নশরুত্তিব ৩০-৩১ পৃষ্ঠা।}
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
ইন্নাল্লা-হা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলান নাবীয়্যি; ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আ-মানু সাল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমূ তাস্লিমা (সূরা: আহযাব, আয়াত, ৫৬) অর্থাৎ— "নিশ্চয়ই মহান আল্লাহতা’লা এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবী কারীম (সাঃ)-এর মহব্বতে ও সম্মানে দরূদ-সালাম পেশ করছেন এবং অব্যাহতভাবে করতে থাকবেন; হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবী কারীম (সাঃ)-এর সম্মানে ও মহব্বতে আদবের সাথে দরূদ ও সালাম পেশ করো।"
আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা প্রতিটি মানুষকেই আলাদা বিবেক-বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; তাই বিবেচনা আপনা।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
১৬ মার্চ, ২০১৮.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন