সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

করোনাভাইরাস নিয়ে কিছু সোজা কথা:

দিন দিন করোনা আক্তান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। আমাদের অসচেতনতাই এর একমাত্র কারণ। তাছাড়া, বিশাল জনসংখ্যার অতি ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে এমন হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তারপরও যতটা পারি নিজের থেকে আমাদের নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করা উচিত এবং অন্যকেও সচেতন করা আমাদের কর্তব্য। 

এরই মধ্যে ৪২ লাখ রোগী যোগাযোগ করার পর ৩০ হাজারেরও কম পরীক্ষা এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে এবং এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু, এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর যে ধরণের চিকিৎসা সুবিধার প্রয়োজন তার প্রচণ্ড অভাব আমাদের দেশে। তাই নিজ থেকে সতর্ক হওয়া এবং এ ভাইরাস থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করা ছাড়া কোন উপায় নেই; বরং তা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 

কোভিড-১৯ কি, কিভাবে ছড়ায়, এ থেকে নিজেকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় এবং এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কি করা উচিত ইত্যাদি বিষয়ে এখনো আমরা অনেকেই অজ্ঞ। অললাইন অফলাইনে এ নিয়ে প্রচুর ভুল তথ্য ঘুরপাক খাচ্ছে, আছে অনেক গুজবও। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের বিভিন্ন আর্টিকেল ঘেটেঘুটে করোনাভাইরাস সম্বন্ধে সঠিক কিছু তথ্য আপনাদের সামনে আজ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করি এতে করে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। আপনারা একজনও যদি এ থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হন, তবেই আমার শ্রম সার্থক হবে। 

নভেল করোনাভাইরাস আসলে কি? এ হলো করোনাভাইরাসের একটি নতুন প্রজাতি। এরই মধ্যে আমরা জেনে গেছি যে এ রোগটি প্রথম চীনের উহানে চিহ্নিত হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক সময় এ রোগটির নামকরণ করে— 'কোভিড-১৯'। করোনা থেকে ‘কো’, ভাইরাস থেকে ‘ভি’, ডিজিজ থেকে ‘ডি’ এবং ২০১৯ থেকে '১৯' নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয় 'কোভিড-১৯'। আগে এর নাম ছিল 'নভেল করোনাভাইরাস’ বা ‘২০১৯-এনসিওভি’।

কোভিড-১৯ একটি নতুন ভাইরাস, যা অতীতের সার্স ভাইরাস ও সাধারণ সর্দি-জ্বর জাতীয় নানান ভাইরাসের পরিবারভুক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে কোভিড-১৯-কে মহামারী হিসাবে উল্লেখ করেছে। এর অর্থ কি?কোভিড-১৯-কে মহামারী হিসাবে চিহ্নিত করার অর্থ এই নয় যে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা বেড়েছে। মূলত এর ভৌগলিক বিস্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ একে মহামারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেহেতু সারা বিশ্ব লক হয়ে গেছে, অতএব সামনে হয়তো অভাব অভিযোগ থেকে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়া অস্বাভাবিক কোন চিন্তা নয়। তাই বিশ্বের সচেতন মানুষ মাত্রই সংকিত।

কোভিড-১৯ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়? সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্রের ফোঁটার (কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমে তৈরী) সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাস দ্বারা দূষিত অংশ স্পর্শ করার মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়। কোভিড-১৯ ভাইরাস বেশ কয়েক ঘন্টা ভূপৃষ্ঠে বেঁচে থাকতে পারে, তবে সাধারণ জীবাণুনাশক এটিকে মেরে ফেলতে সক্ষম।

করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো কী? করোনভাইরাসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট। আরও মারাত্মক ক্ষেত্রে, এই সংক্রমণের ফলে নিউমোনিয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হতে পারে। তবে, খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ প্রাণঘাতী হয়। 
এসব লক্ষণগুলো ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) বা সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর, যা কোভিড-১৯ এর চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ। এ কারণেই কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে নেয়া দরকার। এটি মনে রাখা প্রয়োজন যে, মূল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো একই রকম। 

সংক্রমণের ঝুঁকি কীভাবে এড়িয়ে চলবেন?
• আপনার হাত ঘন ঘন অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও জল দিয়ে ধুয়ে নিন অথবা অ্যালকোহল আছে এমন স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার করুন।
• কাশি এবং হাঁচি হলে নিজের নাক ও মুখ টিস্যু দিয়ে ঢাকুন এবং ব্যাবহৃত টিস্যু ফেলে দিন অথবা কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে নিন।
• অসুস্থ ব্যাক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে (১ মিটার বা ৩ ফুট) চলুন।
• বাড়িতে থাকুন এবং যদি অসুস্থ বোধ করেন নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রাখুন।
• হাত পরিষ্কার না থাকলে চোখ, নাক অথবা মুখ একদম স্পর্শ করবেন না।

নিরাপদ দূরত্বে থাকুন, সুস্থ থাকুন।।

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
২১ এপ্রিল, ২০২০.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন