মানুষ আজ খাঁচায় বন্দী, অবাধ বিচরণ বন্যদের। গোটা বিশ্বের মানুষ আজ স্তব্ধ নিথর, মুক্তি পেয়েছে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি। কমছে দূষণস্তর, আস্তে আস্তে সজীব হচ্ছে পৃথিবী। দূষণের ক্ষত সারিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তরও। বরফে ঢাকা উত্তর মেরুর আকাশে ওজন স্তরে একটি বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছিল। এ দেখে পৃথিবীর ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। যা দক্ষিণের দিকে মোড় নিলে সরাসরি হুমকির মুখে পড়তো পৃথিবীবাসী।
এরই মধ্যে কপারনিকাস অ্যাটমসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস (সিএএমএস) এবং কপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি৩এস) নিশ্চিত করেছে— নিজের ক্ষত নিজেই সারিয়ে তুলেছে পৃথিবী। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরাও নিশ্চিত করেছেন, আর্কটিকের ওপর যে বিশাল এলাকায় ওজন স্তরে গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল, তার মধ্যে এক মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে গেছে।
সৃষ্টিজগত নিয়ে আল্লাহর নীতি হলো— প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সামগ্রিক পরিবর্তন। সব কিছুকে গতিশীল, সুস্থির ও শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখার এই কার্যক্রম সৃষ্টির শুরু থেকেই চলে আসছে। জগতের কোনো কিছুই এই নিয়মের বাইরে নয়। 'মানুষের কৃতকর্মের ফলে জলে ও স্থলে বিপর্যয় ঘটে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।'-(সূরা রুম, আয়াত: ৪১)
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর ভর করে মানুষ অস্বাভাবিক রকম বাড়াবাড়ি করছিল। চরম আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। এই আত্মবিশ্বাস থেকে বিশ্বনেতারা অহমিকায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ধ্বংস করে চলছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ। একের পর এক চাপ সৃষ্টি করছিল ভূপৃষ্ঠের ওপর; জল ও স্থলে। তাতে করে পরিবর্তন হয়ে গেল জলবায়ুসহ পুরো বাস্তুসংস্থানের।
ক্রমশই সঙ্কুচিত হয়ে আসছিলো সবুজ, ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছিলো বন। গলে যাচ্ছিলো বরফ, সাগর ভরছিলো প্লাস্টিকে। বনের পশুরা হারিয়ে যাচ্ছিলো, বিলুপ্ত হচ্ছিলো পাখি। কোন ভাবে কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছিলো না ব্যস্ত পৃথিবীবাসীকে।
আচমকা মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো করোনা! করোনা বনাম মানুষ লড়াই চলছে! কিভাবে করোনাকে মোকাবিলা করবে মানুষ? আপাতত ঘরে বন্দী! সেই সুযোগে প্রকৃতি মেলেছে পাখা। প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে নিজের ইচ্ছে মতো। ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে তার হারানো রূপ। পুষিয়ে নিচ্ছে সকল ক্লান্তি, সারিয়ে নিচ্ছে গায়ের সব দগদগে ঘা।
শেষ কবে মানুষ আকাশে স্পষ্ট সপ্তর্ষিমন্ডল দেখতে পেয়েছে তা অজ্ঞাত। করোনা আশীর্বাদে বিশ্ব অনেকটাই দূষণমুক্ত হয়েছে। আজকাল মেঘমুক্ত আকাশে ধ্রুবতারা, সপ্তর্ষিমণ্ডলরাও স্পষ্ট হয়ে উঠে। মিট মিট উঁকি দেয় ঝাঁকে ঝাঁকে তারা। কত অনিন্দ্য সুন্দর এই দৃশ্য!
করোনাকে মানুষ হয়তো অচিরেই পরাজিত করবে; কিন্তু তার মধ্যেই ঝরে যাবে অনেক প্রাণ। পৃথিবীর বিষাক্ত বাতাস বিষ মুক্ত হচ্ছে; মানুষ যা প্রত্যাশা করে। যারা বেঁচে থাকবে, তারা নিতে পারবে প্রাণভরে শান্তির নিঃশ্বাস। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা তারই ব্যবস্থা করছেন।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
২৮ এপ্রিল, ২০২০.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন