শনিবার, ২০ জুন, ২০২০

কুন ফাইয়্যাকুন-এর খেলা!

করোনাভাইরাস নিয়ে আগাগোড়াই আমার একটা স্ট্যান্ড আছে; আজ এক বন্ধু আমাকে আবারও তা স্মরণ করিয়ে দিল। অনেকেই হয়তো আমার এই স্ট্যান্ডকে মোল্লাতন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলতে পারেন; কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমার স্ট্যান্ডে আমি অটল ছিলাম, আছি এবং শেষপর্যন্তও থাকবো। আজ পাব্লিকলি তা প্রকাশও করে দিচ্ছি। 

তাই বলে আমি তথাকথিত মুফতী কাজী ইব্রাহীমের মতো মাটির নীচে লুকিয়ে রাখা 'এন্টারকটিক' মহাদেশের কথা বলবো না বা বলবো না করোনার সাথে স্বপ্নে কথা বলার কোন কল্পকাহিনী বা বলবো না চাপাবাজ তারেক মনোয়ারের মতো কোন লোকঠকানো কিচ্ছা বা তথাকথিত ধান্ধাবাজ ওয়াজেরিয়ান বা বকধার্মিকদের মতো বলবো না করোনাভাইরাস মুসলমানদের জন্য আসেনি! আমি বলি কি— করোনা এদেশে তেমন একটা চরম ক্ষতি করতে পারবে না। 

কারণ, আত্মিক ঈমানদারেরা মু'মিন মুসলিম; সুফি ওলি-আউলিয়ার অংশ। তিনশো ষাট আউলিয়ার দেশ এই বাংলাদেশ। অনেক বড় বড় দূর্যোগের সময় লক্ষ্য করেছি কেমন করে যেন রক্ষা পেয়ে গেছে এই দেশ এই জাতি। এখনো এই জমিনে এমন অনেকেই বসবাস করেন যারা আল্লাহকে অন্তর থেকেই ভয় করেন। পাপে নিমজ্জিত পৃথিবীবাসীর শেষ আশ্রয় হলেন তাঁরাই। স্রষ্টার বন্ধু তাঁরা; তাঁদের একজনও যতদিন দুনিয়ার বুকে বেঁচে থাকবেন ততদিন লয় বা তেমন কোন ক্ষতি হবে না এই ধরিত্রীর। 

আমি মোটেও কোন ব্যাকডেটেড অর্বাচীন নই! উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত একজন আধুনিক মুসলিম। বিগব্যাং থিওরিও আমি বেশ ভালো করেই বুঝি। এই থিওরি মতে— আদিতে মহাজগতের সকল বস্তুই একটি মাত্র বিন্দুতে থিতু অবস্থায় ছিল; এই বিন্দুর ঘনত্ব ছিল অসীম। বিজ্ঞানীরা একে বলেছেন সিঙ্গুলারিটি বা মহাএকত্ব। এর পর আসে সৃষ্টির মহেন্দ্রক্ষণ। একটি প্রচণ্ড শব্দের মধ্য দিয়ে এই অসীম ঘনত্বের বিন্দু হতে সব কিছু ছড়িয়ে পড়ে। কিংবা এই প্রচণ্ড শব্দের ফলেই তৈরি হয় আর যা কিছু। সকল পদার্থ এই প্রচণ্ড শব্দের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন প্রচণ্ড নিনাদ তত্ত্ব বা থিওরি অব বিগব্যাং।

পবিত্র কুর'আনুল কারীমে মহাবিশ্ব সৃষ্টির যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তার সাথে এর যথেষ্ট  সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন সৃষ্টির ইচ্ছা হলে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা বলেন, ‘কুন’ (সৃষ্টি হও) আর তৎক্ষনাৎ ‘ফাইয়্যাকুন’ (হয়ে যায়)। এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে গেলে পবিত্র কুর'আনুল কারীমে উল্লেখিত তিন ধরনের সৃষ্টি নিয়ে আলোকপাত করতে হবে, এতে করে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে, তাই ওদিকে আর গেলাম না। যদি বিগব্যাং-এর মাধ্যমেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়ে থেকে থাকে, আমার দৃষ্টিতে তা-ও এই কুন-ফাইয়্যাকুনের মালিকেরই খেলা!

তথাকথিত আধুনিকরা এসব মানতে চায় না! মানুষ কেমন করে এতো উদাসীন হয়? আজ পর্যন্ত কি কেউ মৌলিক পদার্থের একটি কানাকড়িও বানাতে পেড়েছে? এখনো কেন তারা এসব বুঝে না? অল্প কিছু পেয়েই কেন তারা স্রষ্টাকে অস্বীকার করে? কেউবা মুখে স্বীকার করেও ভুলে যায় কেন? সৃষ্টির গূঢ় রহস্য কি ভেবে দেখা উচিত নয়?? কোথা থেকে এলাম, আর কোথায়ই-বা চলে যাবো?? 
শেষ রজনীতে ঘর পুরোপুরি অন্ধকার করে একান্ত নিবৃতে নিজ মনকে প্রশ্ন করলেই পাওয়া যায় এমনসব অজস্র প্রশ্নের উত্তর! আর এর মাধ্যমেই মানুষের রুহ তাজা হয়, নফস হয় দূর্বল। 

কোভেট-১৯ নামের অতিক্ষুদ্র এই অনুজীবের কাছে হারতে বসেছে সারাবিশ্বের আধুনিক অনাধুনিক সকল মানুষ! গতকালের পত্রিকায় দেখলাম আফ্রিকার এক উপজাতিগোষ্ঠী করোনার বিলুপ্তির পথে! এই করোনা থামিয়ে দিয়েছে মানুষের সকল প্রাণচাঞ্চল্য। এতো ক্ষুদ্র একটি অনুজীবের কাছে কি করে আজ হেরে গেল একবিংশ শতাব্দীর সভ্য দাবীদার মানুষ? যাদের বন্য পূর্বপুরুষরা বিশাল ডাইনোসরকে পরাস্ত করে সার্ভাইব করেছে। আজকের পৃথিবীতে তবে কেন এতো মারণাস্ত্র, এতো অহংকার, এতো অহমিকা??? আধুনিক বিজ্ঞান নিয়ে অনেকের অনেক বড়াই! কিন্তু কি করতে পেরেছে বা পারছে বিজ্ঞান? একটা মানুষের মৃত্যু কি ঠেকাতে পেরেছে, না কি পারবে কোন দিন?? 

করোনা যুদ্ধ এখন আর শুধু  মৃত্যুতেই সীমাবদ্ধ নেই, সাথে যোগ হয়েছে অভাব! অভাব অভিযোগ এখন সারা পৃথিবীর সবখানে সবদেশে জেঁকে বসেছে। জার্মানি থেকে জাগরেব, সবখানের মানুষ এখন কমবেশি অভাবগ্রস্ত; কারো অভাব চিকিৎসা সরঞ্জামের, কারো অভাব খাদ্যের। বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত অবস্থা সারা বিশ্বের। তাই, এখন আর কেউ ঘরে থাকতে পারছে না বা চাচ্ছে না।

কারো মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ; কেমন যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্তমানও! জীবন জীবিকার অন্বেষা থমকে দাঁড়িয়েছে, স্তব্ধ হয়ে গেছে বিশ্ব। অনেকের ঘরেই অন্নের অভাব, অভিযোগ নেমে এসেছে! একমাত্র আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা ছাড়া এই মূহুর্তে অন্য আর কোন পথ খোলা নেই, গত্যন্তর নেই। আমি বিশ্বাস করি, যারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করেন বা করতে পারেন, তাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা কখনো কোনভাবেই নিরাশ করেন না, করবেন না।  

সূরা আত-তালাক-এর ৩ নম্বর আয়াতে মহান রাব্বুল আ'লামীন বলেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।' হুজুরপাক (সাঃ) বলেন, 'আল্লাহর উপর যেরূপ তাওয়াক্কুল করা উচিত তোমরা যদি তদ্রূপ তাওয়াক্কুল করতে পারো, আল্লাহ তোমাদের এমনভাবে রুযী দান করবেন যেমন তিনি পাখিদের দিয়ে থাকেন। পাখিরা প্রাতে ক্ষুদার্থ অবস্থায় বাসা ত্যাগ করে সন্ধ্যায় তৃপ্তির সাথে উদর পূর্ণ করে নিজ গৃহে ফিরে আসে।' 
আরেকবার তিনি বলেন, 'যে-ব্যক্তি আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে, আল্লাহ তার সমস্ত কাজ সমাধা করে থাকেন এবং এমন স্থান হতে তাকে জীবিকা দান করেন যা পূর্বে তার কল্পনাতেও উদয় হয়নি। আর যে-ব্যক্তি দুনিয়ার আশ্রয় নেয়, আল্লাহও তাকে দুনিয়ার নিকটই সোপর্দ করে দেন।'

আমি বিশ্বাস করি, যিনি আমাদের দন্ত নামের এই পেষণ যন্ত্র দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, তিনি নিশ্চয় এর জন্য শস্য-দানাও তৈরী করে পাঠাবেন। তাই অতো দুশ্চিন্তার কোন কিছুই নেই। শুধু ধৈর্য ধরে স্রষ্টার উপর তাওয়াক্কুল করে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ! অচিরেই তিনি সব কিছু ঠিক করে দেবেন; ওঁনার খেলা তো শুধু কুন ফাইয়্যাকুনের!  

আমার বিবেচনায়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যই তিনি এই অনুজীবটি পাঠিয়েছেন। যাতে করে মানুষ যাতনায় দগ্ধ হয়ে মিথ্যা অহংকার পরিত্যাগ করে সত্যের পথে ফিরে আসতে পারে।।   

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন