আমরা যখন ছোট ছিলাম , এমনকি বড় হয়েও একটা রজনীকে খুবই আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পালন করেছি (আমি অবশ্য এখনো পালন করি) ; সে'দিনটি হলো লাইলাতুল নিফসি মিন শা'বান বা শ'বে বরাত। কোথা থেকে কি হয়ে গেল, সৌদির তেলবেচা পয়সা আমাদের দেশে ডুকতেv থাকলো ; যে'দিন থেকে আমাদের দেশের দুনিয়াবী সুবিধাবাদী আলেমদের পকেটে সেইসব টাকা ডুকতে শুরু করলো , সে'দিন থেকেই ভ্রান্ত ওহাবীজমের আগ্রাসনে আমাদের সমাজ তছনছ হয়ে গেল । ভালোভালো এবাদত আমলগুলোরও বারোটা বাজলো; বিদ'আত আর শিরকের কবলে পড়ে দো'মনা মোসলমানরাও ঈমানহারা হলো! ভয় করছি - সে'দিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়, যখন আমার সন্তানরাও বিদ'আত শিরকের বাহানা তুলে আমার কবরের পাশে আর যাবে না, হাত তুলে মোনাজাত করবে না , দু'জন ফকির-মিসকিনকেও খাওয়াবে না !
অনেক আলেম বিতর্ক করেন, সূরা আদ-দুখান-এর ২, ৩ ও ৪ নং আয়াতের উল্লেখিত, "শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি তো ইহা অবতীর্ণ করিয়াছি এক মুবারক রজনীতে, আমি তো সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থীরকৃত হয়।" বরকতময় এই রাতকে আগেকার আলেমরা শ'বে বরাত হিসেবে ব্যাখ্যা করেন পবিত্র কালামের এই অংশটুকো নিয়ে। কিন্তু বর্তমানের কিছু স্বার্থন্বেষী আলেম এ'তে নাকি শ'বে কদরের কথা বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করে। অথচ কদরের ব্যাপারে সুরা কদরের মতো এমন স্পষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও সেইসব কানাদের চোখে পড়ে না! আমি যতগুলো তাফসীর পড়েছি, সবখানেই আমার মনে হয়েছে সুরা দুখানে মূলতঃ শ'বে বরাতের কথাই বলেছেন মহান রাব্বুল আ'লামীন।
তাছাড়া হাদিস শাস্ত্রে 'শ'বে বরাত' বলতে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো "লাইলাতুন নিসফি মিন শা'বান"; তথা "শা'বান মাসের মধ্য রজনী"। একটি হাদীসে বলা হয়েছে, আয়িশা (রাঃ) বলেন, এক রাতে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে (বিছানায়) না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি জান্নাতুল বাকিতে, তাঁর মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। তিনি বলেন, হে আয়িশা! তুমি কি আশঙ্কা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়িশা (রাঃ) বলেন, তা নয়, বরং আমি ভাবলাম যে, আপনি হয়তো আপনার কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৮৯)
অন্য আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন। -(সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৯০)
এখন আমার প্রশ্ন সেইসব আলেমদের কাছে - এ রাতে এবাদত বন্দেগী করলে আপনাদের এতো চুলকানি কেন? এবাদত-আমলে চুলকানি উঠে তো শয়তানের, তবে কি আপনারাই কোর'আনে বর্ণিত সেই ইনসান শয়তান?
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
২০ এপ্রিল, ২০১৯.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন