রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক; একজন কাপড় ব্যবসায়ী। বয়োবৃদ্ধ মানুষ কয়দিন যাবত ঠান্ডা-জ্বরে ভুগছেন, সাথে কাশি। করোনা সিম্পটম নিয়ে গতকাল ছেলের সহায়তায় বিএসএমএমইউতে এসেছিলেন করোনা টেস্ট করাতে। দু'ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর বিকেলে তিনি জানতে পারেন, আজকের মতো করোনা টেস্টের নমুনা গ্রহণ শেষ; আগামীকাল আবার নেওয়া হবে। এ কথা শোনার কিছুটা সময় পরই মাথা ঘুরে পড়ে যান ওই বৃদ্ধ। তার ছেলের চিৎকারে অন্য মানুষজন ছুটে এসে দেখতে পান তিনি মারা গেছেন!
আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল, তবে তিনি করোনায় মারা গেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ তার করোনা টেস্টই করা হয়নি। মৃত্যুর পর আজ (সোমবার) তার করোনা টেস্ট হবে! কি অুদ্ভত চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের!
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা নির্দেশকারী গ্রাফটি যখন কেবল ঊর্ধ্বমুখী, ঠিক সেই সময়েই বন্ধ থাকা কলকারখানা, দোকানপাট, অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে! দেশের আনাচে-কানাচে আব্দুর রাজ্জাকের মতো কত রোগী যে করোনা সিম্পটম নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে তার হিসাব কে রাখে? এ সংখ্যা যে নেহায়েত কম নয় তা এখন হলফ করে বলা যায়।
বিগত কয়দিন ধরে সংক্রমণের কাউন্ট ঊর্ধ্বগতি, উঠেই চলেছে। আর এদিকে দোকানপাট খোলার পায়তারা চলছে! মনে হচ্ছে দেশজুড়েই চলছে ঈদের আয়োজন! ঈদ জামাতেও হয়তো দেখা যাবে কাতারের মাঝ থেকে দু'চারজন আব্দুল রাজ্জাক মুখথুবড়ে পড়ে গেছেন! আশঙ্কাটা আমার অমূলক হলে খুবই খুশি হতাম, কিন্তু আজানা এক আতঙ্কে কে যেন বুকটা চেপে ধরেছে।
প্রতিদিন কতজনকে টেস্ট করা হচ্ছে? তারমাঝেই সংক্রমণের সংখ্যা ৬০০-এর উপরে ৭০০ ছুঁইছুঁই। আর এই পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ঢাকা শহরে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশিরভাগ। আমরা ঢাকাবাসীরা যে একটা পারমাণবিক বোমার উপর দাঁড়িয়ে আছি তা বুঝতে এখন আর বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না।
অনেক আগে থেকেই সর্বমহল থেকে হুশিয়ার করা হচ্ছে বাংলাদেশে মার্চ এবং এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যে ব্যবস্থাগুলো নেয়া হয়েছিল, সেগুলোর একটি প্রভাব দেখা যাবে মে মাসে। মে মাসের প্রথম দিকে সংক্রমণের পিক (সর্বোচ্চ সংক্রমণের সংখ্যা) পাওয়া যাবে না, বরং এটি আরও প্রলম্বিত হবে। সবারই আশঙ্কা, মে মাসটি বাংলাদেশের জন্য 'ক্রিটিক্যাল' হতে পারে। এ দিকে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
বিগত এক মাস ধরে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার, তাতো 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' টাইপ। বাঙালি লকডাউন বুঝতে চাইবে কেন? লেগডাউন দিয়ে ঘরে বসানোর দরকার ছিল। সরকার জেনেবুঝেও তা করেনি কেন আমার বুঝে আসে না। হেলায় খেলায় পুরো দেশটাকে যেদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বা ঠেলে দেয়া হচ্ছে, সরকার কি তা সামাল দিতে পারবে??
কিছুতেই আমার বুঝে আসে না এতো সতর্ক করার পরও কেন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, হচ্ছে না! তবে কি কোন একটা গোষ্ঠী চায় দেশে লক্ষ লক্ষ লাশ??
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
৪ মে, ২০২০.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন