বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করে চলছে কোভেট-১৯। সারা বিশ্বকে নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। যে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করেছে, তার একটি হলো— স্বাস্থ্য সংকট, অন্যটি অর্থনৈতিক সংকট। পুরো বিশ্বকে বিধ্বস্থ পর্যদুস্ত করে দেয়ার জন্য উপরোক্ত যে কোন একটি সংকটই যথেষ্ট। অস্ট্রেলিয়া থেকে আফ্রিকা, সারা বিশ্বে এখন এমন আর কোন দেশ বা অঞ্চল খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কেউ সংক্রমিত হয়নি। অথচ কিছু মানুষের এ তাল নেই! এখনো তারা ধান্দা করছে করোনা বিতর্ক করে বিখ্যাত হতে!
এমন অনেক লোকই ফেসবুকে এখন লাইভ করছে! কাজী শামীম আহসান নামের এক ভদ্রলোককে দেখছি এ করে হটাৎ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে। বিবেকহীন বে-বুঝরা তার বক্তব্য শেয়ার করছে দেদারসে! তিন-চার সপ্তাহ আগে মেসেঞ্জারে কেউ একজন আমাকে তার বক্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিও পাঠিয়েছিলেন। খুব মনোযোগ দিয়ে ভদ্রলোকের কথাগুলো শুনেছিলাম। কিন্তু তখন তেমন একটা পাত্তা দেইনি।
মেসেঞ্জারে সাধারণত রাজনৈতিক গুজব, ধর্মীয় মিথ্যাচার বা নাস্তিকের বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা ও নানান প্রপাগাণ্ডা চালাচালি হয়। আমি গবেষণা করে দেখেছি, যারা এ কাজটি করে তাদের বেশিরভাগই এক ধরনের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, হীনমন্যতায় ভোগা মানুষ। এ মন্তব্যটি হয়তো অনেককেই আহত করতে পারে। কিন্তু বাস্তব সত্য বলতে আমি কখনো দ্বিধাবোধ করি না এবং কোন ধরনের বনিতাও আমার মাঝে নেই। একটু খেয়াল করলেই যে কেউ বুঝে যাবেন, যারা আত্মকেন্দ্রিক বেশিরভাগ তারাই হরহামেশা মেসেঞ্জারে ডু মারে। আজেবাজে ফালতু ভিডিও বা নগ্ন ছবি, ধর্মীয় মিথ্যাচার, রাষ্ট্রীয় গুজব শেয়ার করাই তাদের কাজ!
তাদের মানসিকতা আসলে অনেকটা বাদুড়ের মতো। বাদুড় যেমন সূর্য সহ্য করতে পারে না, আলোতে চোখে দেখে না, ওরাও ফেসবুকের নিউজফিড দেখে না, প্রকাশ্যে বের হতে পারে না! ওরা সাধারণত নিজেরা কোন পোস্ট দেয় না, তাই অন্যের পোস্ট তাদের চোখেও পড়ে না! অনবরত তারা আছে শুধু মেসেঞ্জারে অন্যকে বিরক্ত করার তালে! প্রতিদিনের মতো আজএ বেশ কয়েকটি উল্টাপাল্টা ভিডিও এসেছে আমার মেসেঞ্জারে। খেয়াল করে দেখলাম তিন-চারজন কাজী শামীম আহসান সাহেবের কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করে প্রশ্ন করেছেন— ঘটনা কি সত্য? তাই আর চুপ থাকা গেল না। এ'সব বিভ্রান্তি নিয়ে কিছু লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
ফেসবুক আসলে এমন একটি মাধ্যম যেখানে ফেক নিউজ বা উদ্ভট বক্তব্য সম্বলিত লেখার খুব কদর। বেশিরভাগ মানুষ ওসবই খায়! কাজী শামীম আহসান সাহেব কি উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-কে চ্যালেঞ্জ করে বসার বদান্যতা দেখাচ্ছেন অনবরত, তা আমার বুঝে আসে না। বাংলাদেশ সরকার ও সাধারণ মানুষকেও তিনি বেশ তাচ্ছিল্য করেই কথা বলছেন! যতটুকু জানতে পেরেছি তিনি এক্সপ্লোর গ্রুপ অব কোম্পানীর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। বর্তমানে বসবাস করেন কাতারে। ওখান থেকেই তিনি নিয়মিত লাইভে আসছেন এবং সবজান্তা ভাব দেখিয়ে করোনাভাইরাস মানব সৃষ্ট বলে সবার বিরুদ্ধে তীর্যক আক্রমণ করে কথা বলছেন। এমনসব উদ্ভট তথ্য উপাত্ত তিনি দাঁড় করছেন, যা শুনে যে কেউ আতঙ্কিত হয়ে যাবে। বাক স্বাধীনতা সবারই আছে, তারও আছে। কিন্তু সে স্বাধীনতা যখন অন্য মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তখন তা হয়ে যায় অপরাধ। তিনি বলছেন— করোনাভাইরাস মানব সৃষ্ট!
তাছাড়া দেশ-বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। সব বিষয়গুলোই যে মিথ্যা তা কিন্তু নয়। তবে, করোনাভাইরাস যে কোনভাবেই মানব সৃষ্টি নয়, তার দু'একটি সাধারণত যুক্তি এখানে তুলে ধরছি। অবশ্যই মানব সৃষ্ট ভাইরাসের নির্ধারিত সময় বা ডিউরেশন অব টাইম থাকে, যে সময়ের মধ্যে তা বিস্তার লাভ করবে বা ছড়াবে এবং তা ছড়াবে বাতাসের মাধ্যমেই। মানব সৃষ্ট ভাইরাস ৯৯%-ই বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। এবং এটাও সত্য যে, মানব সৃষ্ট যে কোন ভাইরাসের একটা নির্ধারিত সময় থাকে, যে সময়ের মধ্যে ওটা ধ্বংস হয়ে যাবে।
আপনাদের কাছে কি মনে হয় কোভেট-১৯ বাতাসে ছড়াচ্ছে? যদি তাই হতো তাহলে এতোদিনে পৃথিবীর ৯০% মানুষ নিশ্চিত আক্রান্ত হয়ে যেতো। তাছাড়া আপনাদের কারো কি মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসের শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে বা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে? আমার তো মনে হচ্ছে এ ভাইরাসটির শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং যে যত কথাই বলুক না কেন, এটি মোটেও মানব সৃষ্ট ভাইরাস নয়।
লক্ষ্যনীয়, ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী যখন জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর মানব সৃষ্ট 'লিটল বয়' নামের নিউক্লীয় বোমা ফেলে এবং এর তিন দিন পর নাগাসাকি শহরের ওপর 'ফ্যাট ম্যান' নামের আরেকটি নিউক্লীয় বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, তখন অনুমান করা হয় ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে প্রায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোক মারা যায়, নাগাসাকিতে প্রায় চুয়াত্তর হাজার লোক মারা যায়। এবং পরবর্তীতে এই দু শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আরও দুই লক্ষ চৌদ্দ হাজার মানুষ। জাপানের আসাহি শিমবুন-এর করা হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় ধরে হিরোশিমায় দুই লক্ষ সাইত্রিশ হাজার, এবং নাগাসাকিতে এক লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে। এর সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়িয়েছিল কি?
যারা করোনাভাইরাসকে মানব সৃষ্ট বলে দাবী করেন, তারা আসলে মহামারি বিশ্বাস করেন না। মহামারি বিশ্বাস না করে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে অস্বীকার করছেন। এটা অপরাধ, পাপ।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
১৮ এপ্রিল, ২০২০.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন