বাংলাদেশ ক্রিকেট একাডেমীর সন্নিকটে বাসস্থান হওয়ার সুবাদে একটি বিষয় আমাকে খুব আনন্দ দেয় - আসতে যেতে সব সময়ই ক্রিকেট একাডেমীর আশেপাশ তথা শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকার চারপাশে তরুণতরুণীদের বেশ আনাগোনা ও এক ধরনের জটলা চোখে পড়ে; বেশ ভদ্র ও চুপচাপ মনে হয় তাদের; সারা দিনরাত যেন শুধু বসেই কাটায় তারা।
অত্র এলাকার ময়মুরুব্বিরা এই পথ অতিক্রম করার সময় অনেকেই মন্তব্য করে - ওরা কত ভদ্র, চুপচাপ; কোন ধরনের হট্টগোল করে না। প্রায় সারা রাতদিনই দলে দলে ছেলেমেয়েরা আসে, যায়, বসে থাকে। আমরা যারা এ অঞ্চলে বসবাস করি তাদের কাছে এটি একটি অতি চেনা দৃশ্য। অতো ভাল ভাবে কখনো তাদের লক্ষ্য করিনি। আমার ভাবনা ছিল, ওরা ক্রিকেট ফ্যান; খেলোয়াড়দের দেখার জন্যই রাতদিন এমন জটলা। এখানে কি করছে তারা- এই নিয়ে অন্য কিছু ভাবিনি।
গতরাতে খেতে বসে ছেলের কাছ থেকে জানতে পারি ভিন্ন কথা। তার মন্তব্য - "ওরা 'বাংলাদেশের স্মার্টফোন স্টুপিড জেনারেশন'!" কথাটা বুঝতে না পেরে তার কাছে ব্যাখ্যা চাই। খেতে খেতে ছেলে বলে- বিনা পয়সায় ক্রিকেট একাডেমীর 'ওয়াইফাই' ব্যবহার করার জন্য শত শত ছেলেমেয়ে বিশেষ করে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন নিয়ে এসে ওখানে সারাদিন কাটায়। সর্বক্ষণ তারা মোবাইল বা ল্যাপটপের মাঝেই ব্যস্ত থাকে। ফেজবুক, টুইটার, গুগল ও অন্যান্য ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যম নিয়েই তারা সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে। প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সব কাজের স্টেটাস তারা ফেজবুকে বা অন্য সব যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়। বন্ধুকে ডাকতে হলেও এই সব যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হয়। মোবাইল বা ল্যাপটপই তাদের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। স্কুলের অনেক ছাত্রছাত্রীও নিয়মিত নাকি এখানে আড্ডা দেয়।
হটাৎ আমার মনে পড়লো - কিছুদিন আগে আমি সাইন্স ও গণিত ক্লাব উদ্বোধন উপলক্ষে স্থানীয় এক কলেজে গিয়েছিলাম। কথা প্রসঙ্গে একজন শিক্ষক আমার ই-মেইল এড্রেস চেয়েছিলেন; পাশে দাঁড়ানো এক ছাত্র, সম্ভবত ২য় বর্ষের- স্যারকে বললো - "স্যারের (আমার) ফেসবুক একাউন্ট আমি চিনি স্যার।" অন্য এক সময় মহল্লারই দশম শ্রেণীর এক ছাত্রকে তার মা আমার কাছে নিয়ে এসেছিল উপদেশ শোনানোর জন্য। এক পর্যায়ে ছেলেটি আমার ফেসবুক একাউন্ট জানতে চায়। কথাগুলো মনে পরতেই বুঝতে পারলাম সব।
বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। এ নিয়ে অনেকের অনেক রকম বক্তব্য থাকতে পারে, আর থাকাটাই স্বাভাবিক। অনেকে বলতে পারেন, খারাপ কি? - নতুন তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ততা রেখে বেড়ে উঠছে তারা, ভালই তো। আমার ভিন্ন মত ; আগে দরকার নিজ ব্রেইনের পরিপূর্ণতা, তারপর প্রযুক্তি সম্পৃক্ততা। মৌলিক শিক্ষা না দিয়ে ছোটদের হাতে মোবাইল, ক্যালকুলেটর বা ল্যাপটপ তুলে দেয়া মোটেও ঠিক নয়। আমার মনে হয় এ সব এক ধরনের নির্লিপ্ততা নির্জীবতা। জাতি ধবংসের নীলনকশা।
এডলফ হিটলারের শাসনামলে জার্মানিতে ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয় তাঁর নির্দেশে; সে এক অন্য রকম মজার ঘটনা! একদিন সকালে এডলফ হিটলার অফিসে যাচ্ছিলেন; পথে এক মাঠে দেখতে পান - অনেক লোক মাঠের চারপাশে বসে আছে আর কয়েকজন অভ্যন্তরে ছুটাছুটি করছে। কাজ শেষে ফেরার সময়ও একই দৃশ্য দেখতে পান। পরদিন অফিসে যাওয়ার সময়ও বিষয়টি লক্ষ্য করেন। পরপর তিনদিন একই দৃশ্য দেখে আলফনস এর কাছে জানতে চান এটা কি? কয় জনে খেলে? কি করে খেলে? কয়দিন খেলে? - তখনকার দিনে ক্রিকেট ছিল মেরাথন টেষ্টম্যাচ। যতদিন পর্যন্ত না সবাই আউট হতো ততোদিন চলতো খেলা। সব কথা শুনে এডলফ হিটলার বলেন - "বাইশ জনে খেলে, দুই জনে আম্পায়ারিং করে, দুই জনে স্কোর লেখে ; হাজার হাজার সারাদিন অলস হয়ে বসে থাকে। এই খেলা অচিরেই বন্ধ করা হউক। নয়তো জার্মান জাতি অলস হয়ে যাবে। কৌশল করে জার্মানিদের অলস করার জন্যেই ব্রিটিশরা এ দেশে এ খেলা ডুকিয়েছে।"
আইন করে সেই থেকেই জার্মানিতে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে দেন এডলফ হিটলার। সেই থেকে অদ্যাবধি জার্মানিতে ক্রিকেট খেলা বন্ধ। দেখাদেখি আশেপাশের ইউরোপীয় অনেক দেশেই আজও ক্রিকেট খেলে না কেউ। ক্রিকেটের ইতিহাস দেখলে বুঝা যায় ব্রিটিশ কলোনিয়াল দেশগুলোতেই এই খেলাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। ব্রিটিশ রাজত্ব শান্তিপূর্ণভাবে এবং বিনাবাধায় পরিচালনার অভিপ্রায়েই তারা এই খেলা ছড়িয়ে দিয়েছিল তাদের উপনিবেশ গুলোতে। যাতে রাজ্য শাসনে কোন বেগ পেতে না হয়।
অবাধ তথ্যপ্রযুক্তি প্রবাহের সুবাদে আমাদের সমাজে ব্রেইন সচলের প্রতিটি বিষয়ই কেমন যেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। মেধার বিকাশের চেয়ে প্রযুক্তি নির্ভরতা দিনদিন বেড়েই চলছে। পৃথিবীকে উন্নত দেশগুলোতে ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের মৌলিক শিক্ষার উপর বেশ জোর দেয়া হয়; আর আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীদের ছোটবেলা থেকেই নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দেয়ার পাঠে উদ্বুদ্ধ করা হয়। মস্তিষ্ক নামের বস্তুটাকে বিকশিত করার কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয় না; বরং কৌশলে সংকোচিত করা হচ্ছে সর্বত্র। আমাদের দেশের শিক্ষানীতি এক ধরনের শুভংকরের ফাঁকি।
তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একজন বুদ্ধিমান রাজা ছিলেন। দেখতে শুনতে তিনি তেমন একটা সুদর্শন সুপুরুষ ছিলেন না; কিন্তু রাজ্য পরিচালনার তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং পৃথিবী জুরে ছড়িয়ে পরেছিল তাঁর সুখ্যাতি। তিনি ছিলেন ওয়েলসের অধিবাসি। অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার জন্য এক সময় তিনি সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিপতি বনে যান। ওয়েলস থেকেই তিনি সমর্গ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন। বর্তমানের মত তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা এতো উন্নত ছিল না। তাছাড়া মানুষ শুধু রাজার নামই জানতো, লোকমুখে শুনতে পেতো রাজার সুখ্যাতি বা কুখ্যাতি। খুব কম লোকই রাজাকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারতো।
সেই রাজার রাজত্বকালে লন্ডনের থিয়েটারে এক ভূবন মোহিনী অভিনেত্রী ছিল। যার রুপের খ্যাতিও ছড়িয়ে পরেছিল সারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে এবং গোটা বিশ্বে। ওয়েলসের রাজাও তার মোহনীয় রুপের কথা লোকমুখে শুনেছেন, কিন্তু সাক্ষাত ঘটেনি তাদের কোন দিনও। ঐ অভিনেত্রী রাজার রাজ্যশাসনের সুখ্যাতি শুনে শুনে রাজার অন্ধ প্রেমে পরে যায়। রাজার সাথে সাক্ষাত লাভের আকাঙ্ক্ষায় উৎগ্রীব হয়ে অনেকের সাথেই এ ব্যপারে মত বিনিময় করতে থাকে। এক সময় কথাটা রাজার কানেও গিয়ে পৌঁছে। রাজার হৃদয়ের গহীনেও অভিনেত্রীকে দেখার সুপ্ত বাসনা লুকায়িত ছিল; কিন্তু প্রকাশ ঘটেনি কোনদিনও। রাজ্যশাসনের ব্যস্ততায় অভিনেত্রীর সুপ্ত ভালবাসার উৎগ্রীবতার কথা রাজার মনেই ছিল না। অবশ্য হৃদয়ের গভীরে ব্যাপারটি দাগ কেঁটে ছিল।
বিশেষ প্রয়োজনে একবার ওয়েলস থেকে লন্ডনে যান রাজা। রথ দেখা কলা বেচার মত সেই সফরেই ভূবনমোহিনীর সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার কথা তাঁর পারিষদদের জানিয়ে দেন। পারিষদরা অভিনেত্রীকে জানালে তিনি তো আনন্দে আত্নহারা হয়ে উঠেন। স্বপ্নের সেই রাজার সাথে বাস্তবে সাক্ষাত! সে তো এক অন্য রকম অনুভুতি।হৃদয়ের গভীরে এতোদিনের জমে থাকা সব অন্ধ ভালবাসা যেন বাঁধভাঙা জোয়ারের মত উপচে পরতে চায়। যতই দিন যায় ততোই তিনি উতলা হয়ে উঠেন। অপেক্ষার ক্ষণ যেন শেষ হতে চায় না। কখন আসবে সেই মহেন্দ্র ক্ষণ?
রাজা লন্ডন এসে পৌঁছান নির্দিষ্ট সময়ে, যথারীতি সরকারি কাজে মনোনিবেশ করেন। কর্মব্যস্ততায় সেই অভিনেত্রীর প্রতিক্ষার কথাও ভুলে যান। কোন এক ছুটির দিনে লন্ডনের বিখ্যাত এক ভোজনালয়ে সেই ভূবনমোহিনীর সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে পারিষদরা। রাজার হৃদয়ের গহীনে জমে থাকা আকাঙ্ক্ষা পুনরায় জাগরিত হয়ে উঠে। পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাত পর্ব; স্বপ্নের প্রেমদেবীর সাথে চার চোখের মিলন; সে এক অন্যরকম উত্তেজনা, অন্যরকম অনুভুতি।
অন্যদিকে অভিনেত্রীর যেন আর তর সইছে না; আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার উৎগ্রীবতা। মাস ধরে রুপচর্চা করে অপরুপ সাজে সজ্জিতা হয়ে ভূবনমোহিনী প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। অগত্যা পূর্বনির্ধারিত সময় এসে উপস্থিত, সন্ধায় ভোজসভা। অস্পরীর সাজে সেজে ভূবনমোহিনী বিকেল থেকেই ভোজনালয়ের ফটকে অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজা ভোজনালয়ে আগমন করবেন।
নির্দিষ্ট সময়ে সন্মুখে, পিছনে, ডানে, বামে আটজন সৈন্য বেষ্টিত হয়ে রাজা ভোজনালয়ের প্রবেশ পথে চলে আসেন। অভিনেত্রীর চোখ রাজাকে খুজে ফেরে। কিন্তু ছোটখাটো বেঁটেমতো রাজা যে গাড়িতে চুপটি করে বসে আছেন তাঁকে খুজে পায় না। বহুল প্রত্যাশিত আকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির দিকে চোখ না গিয়ে অভিনেত্রীর চোখ পরে গাড়ির সন্মুখে দন্ডায়মান বিশাল লম্বা সুদর্শন গার্ডের দিকে এবং পরক্ষণেই গাড়ির ডান পাশের অত্যন্ত সুদর্শন বড়সড় একজন গার্ডের পানে চোখ স্থির হয়ে যায়। গার্ডের সাথে চার চোখের মিলনও ঘটে যায়। তখনো রাজা গাড়ি থেকে বের হননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজাকে নামানো হবে। সবাই অভ্যর্থনায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে। অভিনেত্রী এগিয়ে যায় ফুলের মালা হাতে, কিন্তু রাজাকে দেখে হতাশ হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিপতির যে কল্পচিত্র তার মানসপটে আঁকা ছিল, তার সাথে বাস্তবের রাজার কোন মিলই খুজে পায় না। এক নিমিষে হৃদয়ের আকুতি হতাশায় পর্যবসিত হয়। তদুপরি মুখে তা না ফুটিয়ে কোন রকমে মঞ্চ অভিনয়ের মত রাজাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে ভোজনালয়ের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে। আর বার বার সেই বড়সড় গার্ডকে আড়চোখে দেখতে থাকে।
ভোজপর্ব শুরু হয়ে যায়। যাদের জন্যে ভোজসভার আয়োজন তাদেরকে পাশাপাশি বসার ব্যবস্থা করা হয়। যথাস্থানে রাজার সামনের চেয়ারে বসেও ভূবনমোহিনী বার বার সেই বড়সড় গার্ডের দিকেই তাকাতে থাকে। বুদ্ধিমান রাজা এরি মাঝে বুঝে গেছেন নায়িকার অভিব্যক্তি। কিন্তু, না বুঝার ভান করে আলাপ আলোচনা পর্ব চালাতে থাকেন। নায়িকাকে বার বার লক্ষ্য করে এক সময় তিনি বলেন - "মানুষের সবচেয়ে দামী ও মূল্যবান জিনিসটা কাঁধের উপরে গার - তার উপরে থাকে। চেহারা, বুকে, মুখে বা কাঁধে কিছু নেই। বলতে পারেন ঐ জিনিসটার নাম কি? - শরীর দিয়ে, সৌন্দর্য দিয়ে সব কিছু হয় না, সব কিছু করা যায় না; সব সৌন্দর্য ঐ জিনিসটার। রাজ্যশাসন, সাম্রাজ্য পরিচালনায় দরকার হয় ছোট্ট অথচ অত্যন্ত স্পর্শকাতর ঐ বস্তুটার; সর্বক্ষেত্রে ঐ বস্তুটাই আসল, বলতে পারেন নাম কি?? - 'মস্তিষ্ক'।"
লন্ডনের সেই ভূবনমোহিনীর চিন্তাচেতনার ছায়া আজ আমাদের সবার মাঝে, চাকচিক্য যেন গ্রাস করে ফেলেছে আমাদের। বাহ্যিক চাকচিক্যকেই আমরা আসল মনে করি। মস্তিষ্ক নামের বস্তুটার না করি যতন, না করি মূল্যায়ন। মস্তিষ্ক নামের জিনিসটার কদরও আজকাল আর তেমন একটা নেই। আধুনিক সব যন্ত্রপাতি এসে মস্তিষ্কের কাজ অনেকটাই হালকা করে দিয়েছে। ৫০০ টাকা কেজি মাছের আড়াই কেজির দাম বের করতে গিয়েও আমরা ক্যালকুলেটরের সাহায্য নেই। হাতের কড় গোণার দিন যেন শেষ হয়ে গেছে। মস্তিষ্ক খাটাবো, কি দরকার? - আমি অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে দেখেছি - যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ক্যালকুলেটরে করতে।
যে ছেলে বা মেয়েটি গণিতের সাধারণ জ্ঞানার্জন না করে; চার নিয়মের জ্ঞান মস্তিষ্কে না নিয়ে- যন্ত্রের সাহায্যে শিখছে, সে বড় হয়ে মাছ কিনতে তো ক্যালকুলেটর ব্যবহার করবেই। আমরা অনেক আধুনিক হয়েছি, তাই না? আমি নিশ্চিৎ করে বলতে পারি - শতকরা ৯৮% বর্তমান ছেলেমেয়ে বর্গমূল সহ অনেক কিছুই ক্যালকুলেটর ছাড়া সরাসরি বের করতে পারে না। আমি প্রায় ছাত্রছাত্রীদের মাঝেই মৌলিক শিক্ষার প্রতি এক ধরনের অনিহা ও উদাসীনতা লক্ষ করেছি। নীতি-নৈতিকতার শিক্ষাকে অভিভাকের অনেকেই অতিরঞ্জিত বলে মনে করে থাকে। 'সদা সত্য কথা বলো' - এখন শুধুই মুখস্ত পাঠ। বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। বই পড়া মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে গোল্ডেন এ প্লাসের ইঁদুর দৌঁড়ে প্রতিযোগিতা করতে আমরা সবাই যেন উন্মত্ত হয়ে গেছি। ব্রেইন বা মস্তিষ্ক নামের বস্তুটার উৎকর্ষতা সাধনের কথা আজকাল কেউ আর তেমন একটা ভাবছি না।
বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যতটা সহজসাধ্য করে দিয়েছে কেড়ে নিয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি। তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরীতেও বর্তমান বিজ্ঞানীদের অবদান অনস্বীকার্য। নিকট ভবিষ্যতে হয়তো মস্তিষ্ক নামের ঐ স্পর্শকাতর জিনিসটাও তৈরী করবে বিজ্ঞানীরা। শুধু যার যার ইচ্ছেমত সংযোজন করে নেবে। হয়তো অচিরেই এমন বিজ্ঞাপন চোখে পরবে - "এখানে মস্তিষ্ক সংযোজন করা হয়।" আমারা হয়তো সেই দিনটিরই পথ চেয়ে আছি।
অবশ্য কয়েক বছর আগেই কোথায় যেন এমন পড়েছিলাম— আমেরিকার বিখ্যাত এক মস্তিষ্ক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় - "এখানে ব্রেইন ট্রান্সফার করা হয়। যাদের প্রয়োজন চলে আসুন। "
বিজ্ঞাপন দেখে এক গৃহিণী তার গোবেচারা স্বামীকে ব্রেইন ট্রান্সফার করিয়ে আনতে ঠিকানা মত পাঠায়। বেচারা গিয়ে দেখে এক মস্ত বড় বাড়ি। সামনে অতিব সুন্দরী সুনয়না একজন অভ্যর্থনাকারিনী বসে আছে। যথাযত অভ্যর্থনার পর বেচারাকে প্রশ্ন করে, "আপনি কোন ধরনের ব্রেইন কিনতে চান? - ঘুরে ঘুরে দেখুন।"
লোকটি ঘুরে ঘুরে তার কাংখিত ব্রেনের সন্ধান করছিল। প্রথমেই দেখতে পেল, শোকেজের ভিতর ছোট্ট একটি বস্তু সাজানো; ক্যাপশনে লিখা- 'শ্রমজীবীর ব্রেইন' - মূল্য - ইউএসডি- ৩০০০। তার পাশেই রাখা আছে - 'পেশাজীবীর ব্রেইন' - দাম - ইউএসডি - ৪০০০। লোকটি আরো ভাল কোন ব্রেইনের সন্ধান করলো। তাকে অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। ওখানে স্তরে স্তরে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, শিক্ষক ইত্যাদি অনেক পেশার ব্রেইনের সন্ধান পাওয়া গেল। মুল্য মোটামুটি হাতের নাগালে ; ইউএসডি ১০০০০ থেকে ৫০০০০। আরো উন্নত ব্রেইনের সন্ধান চাইতেই দোকানী তার চেহারার দিকে লক্ষ্য করে অবস্থা পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করে। নাছোড়বান্দা ক্রেতার আগ্রহ দেখে বিক্রেতা তাকে আলাদা একটি ঘরে নিয়ে যায়। লোকটি দেখতে পায় বিশাল এক কাঁচপাত্রে ছোট্ট একটি জিনিস অত্যন্ত যত্ন সহকারে সংরক্ষিত আছে। যার ক্যাপশনে লিখা - 'রাজনীতিবিদের ব্রেইন'- মূল্য; ইউএসডি - ৫০০০০০।
এই ব্রেইনের মূল্য এত বেশি কেন, লোকটি তার কারন জানতে চায়। জবাবে বিক্রেতা বলে - সকল পেশাজীবী, শ্রমজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, শিক্ষক, বিজ্ঞানীর ব্রেইন এনালাইসিস করে নির্যাস নিয়ে রাজনীতিকের ব্রেইন তৈরী করা হয়; তাই এর দাম এতো বেশি।
আমাদের দেশের অপরাজনৈতিকায়নের নমুনা দেখে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতারাই দেশকে ধ্বংসের শেষ সীমায় নিয়ে যাচ্ছে; আর রাজনীতিবিদদের ব্রেইনই এদেশে সবচেয়ে নিকৃষ্ট।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
৩ জুন, ২০১৪.
অসম্ভব ভালো একটা লেখা ।
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ!
মুছুন