১.
নগর জীবনের শত দূষণ, খাদ্যে ভেজাল ও শত প্রতিকূলতা থেকেই হয়তো ইদানিং মানুষের নানান সব নতুন নতুন রোগশোক হচ্ছে এবং শারীরিক মানসিক অসুবিধা বেড়ে যাচ্ছে, শরীরে গ্যাস আটকে অনেকের জীবনে মারাত্নক বিপদ নেমে আসছে। পাকস্থলিতে ভেজাল খাদ্যের বিষ জমে তা গ্যাস হচ্ছে, পরবর্তিতে সেসবে হৃদপিন্ড চেপে ধরছে এবং হটাৎ ষ্টোক করে মানুষ মারা যাচ্ছে। কয়দিন ধরে এমন সব মৃত্যুর দুঃসংবাদই বেশি পাচ্ছি। আমার শরীরেও এইরকম ভয়ানক ভয়াবহ এক ধরনের পাজি গ্যাস উৎপন্ন হয়েছিল - যা কয়দিন আগে বেশ ভাল করে টের পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল পুরো শরীরটা একটা গ্যাস চ্যাম্বারে পরিণত হয়েছে, যে কোন সযয় ফেটে যাবে। না পারতাম শুইতে, না পারতাম বইতে। অগত্যা ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হলাম।
এক ছোটভাই ডায়াগনস্টিক ও ডক্টরস চেম্বারের ব্যবসা করে, তার কাছে বলতেই সে আমাকে একটা ট্যাবলেট খেতে বলল - তৎক্ষনাৎ খেয়ে বেশ আরাম পেলাম। কিছুটা সুস্থ্য হতেই বিকেলে তার কাছে ছুটলাম। নামিদামি সব বড় বড় ডাক্তার তার সেন্টারে বসেন। সব শুনে ভেবেচিন্তে ছোটভাই যে ডাক্তারের কাছে পাঠালো তিনি এদেশের একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্বনামধন্য একজন প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান। তাঁকে সব খুলে বললাম - আমার পেটে প্রচুর গ্যাস। মাঝেমধ্যেই মনে হয় তা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরছে, বিশেষ করে পায়ে ও পিঠে। যখন গ্যাস শরীরে ছড়ায় তখন কোমড়ের পিছন সাইট ও রান প্রচন্ড ব্যথা করতে থাকে।
কিছুটা শুনে এবং পেটেপিঠে দু-একটা টিপটাপ দিয়ে ডাক্তার সাহেব প্রেসকিপশনে লম্বা একগাদা টেস্ট লিখে দিয়ে বললেল - এইসব করে আসুন। তখন খেয়াল করিনি - প্রেসকিপশনে তিনি কোন ঔষধের নামই লেখেননি। সারা পৃষ্টা জুড়ে শুধু টেস্ট আর টেস্টের নাম। সেসবের মাঝে এমন একটা টেস্টও দিলেন যা তাঁর মনোনীত জায়গা থেকেই করাতে হবে। কোলনোস্কপি করতে বললেন তাঁর নিজেস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে - যা আমা হতে বেশ দূরে এবং তাঁর মেনশন করা নির্দিষ্ট ডাক্তার দিয়েই করাতে বললেন।
যাই হউক, ডক্টর ভিজিট দিয়ে ভাইয়ের ক্লিনিকেই অন্যসব টেস্টগুলো করতে দিলাম এবং দূরে হলেও গাড়ি টান দিয়ে কোলনোস্কপি করতে ডাক্তার মনোনীত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলাম। গিয়ে দেখি তা অতটা উন্নত নয়, সেখানকার পরিবেশ দেখে আমার মোটেও পছন্দ হলো না। তাও, যেয়ে যা জানলাম শুনলাম তাতে ঐ প্রফেসরের প্রতি আমার শ্রদ্ধাভক্তির পুরোটাই উবে গেল। শালার নটি প্রফেসর! মনে হয়, এই বেটা অযথা সব টেস্টফেস্ট দিয়ে শুধু শুধুই রোগিদের হয়রানি করেন। এত বড় শিক্ষিত ও বয়স্ক মানুষ(!) হয়েও কেন যে তাঁরা এইসব করেন বোধগম্য হলো না।
অবশ্য এরই মাঝে স্ত্রী-কে নিয়ে অন্য এক ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। স্ত্রী-র ডাক্তার তাঁর ডক্টরস ডাইগনসিস ও প্রেসকিপশন শেষে আমার শারীরিক সাময়িক অসুবিধার কথা শুনে একই প্রেসকিপশনের উল্টো পৃষ্টায় দু'টো ঔষধের নাম লিখে পনের দিন নিয়মিত তা খেতে বললেন (ডাক্তার সাহেব দশ বছর ধরে আমার স্ত্রী-র নিয়মিত চিকিৎসা করছেন)। ঐসব টেস্টফেস্টের কথা আমি আর তাঁর কাছে তুলিওনি তিনিও কিছু করাতে বলেননি। তাঁর সাজেশন মতো ঐ দু'টো ঔষধ খেতে শুরু করলাম। আল্লাহর অশেষ রহমত ও মেহেরবাণী - এখন অনেকটা সুস্থ্যবোধ করছি; সেই সমস্যা আর আপাতত নেই। ঐ নটি প্রফেসরের কাছে আর যাওয়াই হয়নি।
খুব বেশি দুঃখ লেগেছিল তখন যখন দেখেছিলাম - নটি প্রফেসর আমার প্রেসকিপশনে একটা ঔষধের নামও লেখেননি। কমপক্ষে একটা এন্টাসিড প্লাস তো তিনি তৎক্ষনাৎ আমাকে দিতে পারতেন? তাও শান্তনা থাকতো - প্রফেসর অতসব ডিগ্রী নিয়ে বুদ্ধি খাটিয়ে অন্তত রোগির ব্যাথার মুখে একটা ঔষধ দিয়েছেন; তাছাড়া আমার কাছ থেকে নেয়া তাঁর ফি-টার দাবিও নিঃশর্ত ছেড়ে দিতাম, মনে হয় তাতে তাঁর জন্য ফি-এর টাকাটাও হালাল হয়ে যেত। ভাবি - এইভাবে অনাচার করে এতসব সম্পদ কামিয়ে জমিয়ে কবরে গিয়ে কি লাভ? না কি, এরা সারাজীবন বেঁচে থাকবে, কখনো কবরে যাবে না? এমন সম্পদ দুনিয়াতে ছেলেমেয়ের জন্য রেখে গেলেই-বা লাভ কি? টেষ্ট করে যান্ত্রিক ডায়াগনসিস হলে ডাক্তারের এতসব পড়ালেখার কৃতিত্ব বা মূল্যটাই-বা কি?
ডাক্তার মানেই ডাকাত নয়, সব ডাক্তারই খারাপ নয়। এদেশের অতি সাধারণ মানুষের মাঝে জনশ্রুত কিছু বাজে উদাহরন থাকতেই পারে। সব জায়গায়ই ভাল মন্দ আছে, থাকবেও; আর থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে ঢালাওভাবে সকল ডাক্তারকে দোষারোপ করা ঠিক না। এদেশে অনেক সৎ ও ভাল ডাক্তারও আছেন। এইসব সৎ, বুদ্ধিমান ও নিবেদিতপ্রাণ ডাক্তাররাই কিন্তু আমাদের এই ছোট্ট ভূখন্ডের বিশাল জনগোষ্টির চিকিৎসা সেবা সামলাচ্ছেন, সূচারুভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যেসব দেশে এখনো অন্য দেশ থেকে ডাক্তার ইমপোর্ট করতে হয় এবং তা করেই সেদেশের সরকারকে চিকিৎসা সেবা সামলাতে হয়।
মহৎ এই সেবামূলক পেশাটার বদনাম হয়তো ঐ নটি প্রফেসরের মতো অতি অর্থলোভি লোকগুলোই করছেন। অসহায় যেসব রোগি চিকিৎসার জন্য তাঁদের কাছে আসে, তারা সবাই এইসব বাজে ডাক্তারের লালসার শিকার হন, টেস্টের নামে প্রতারিত হন। অসহায় কাতর রোগিদের অভিশাপ কিন্তু এইসব রোগীখেঁকো ধোঁকাবাজ ডাক্তারদের গায়ে লাগবেই লাগবে। সত্যমিথ্যা ডিগ্রির পান্ডুলিপি সাজিয়ে টোপ ফেলে এদেশের অতি সাধারণ অসহায় গরিব রোগিদের যারা জিম্মি করে ঠকাচ্ছেন, টেস্টের নামে হয়রানি ও নানাবিধ প্রতারণা করে টাকা কামাচ্ছেন, নিশ্চয় তারা কোন দিনও কোনখানে ভাল থাকতে পারবেন না, ব্যক্তিজীবনে সুখি হতে পারেন না। এমন অনেক মানুষকেই আমি চিনি ও জানি যারা পারিবারিক জীবনে খুবই অসুখি এবং বার্ধক্যে এসে সাহায্যহীন ও প্রচন্ড অসহায় হয়ে পরেছেন।
অবশ্য, প্রায় সব পেশায়ই আজকাল বানিজ্যিকিকরণের হাওয়া লেগেছে এবং সমাজে অতি মুনাফাখোরদের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেবা বা পূন্য মানসিকতায় এখন আর এদেশে অনেকেই কিছু করতে চায় না বা করেন না। কি চিকিৎসা, কি অন্য কোন সেবা বা ব্যবসা বানিজ্য - সবখানেই আজ অনিয়ম; কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, উকিল, ব্যারিষ্টার, শিক্ষক, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, দোকানদার, হকার, ভিক্ষুক সবার মাঝেই দেখা যায় কিছু লোকজন এখন প্রচন্ড এগ্রেসিভ বানিজ্যিক মানসিকতা সম্পন্ন, শুধু টাকা কামানোর ধান্ধা করছে; যা আমাদের কৃষ্টি কালচারের সাথে মোটেও যায় না। আমি মনে করি - কর্মের প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিটা মানুষ আন্তরিকতার সাথে সাধ্যমত প্রচেষ্টা করলে শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন পাবেই, জীবনে চলার পথ মসৃণ হবেই। শুধু অর্থপ্রাচুর্য দিয়ে সুখ কেনা যায় না।
দেশ সেবকরা এখন দেশ সেবার নামে নেমেছে ভন্ডমিতে, পেশাজীবীরা ঐক্কের নামে দেশবাসিকে করছে জিম্মি, শ্রমজীবীরা দাবীর নামে করছে বাহানা, ভিক্ষুকরা ধরেছে ছদ্দবেশ। কোথায়, কার সাথে কি করবো কার কাছে কি বলবো? ভিক্ষুকরাও আজকাল বানিজ্যিক হিসাব মিলিয়ে চলে - দু টাকা দিলে আড়চোখে তাকায়। কেউ দশজন মিসকিন খাওয়াতে ইচ্ছে করলে, সম্ভব হবে না; তাদের পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য তারা আসবে না। শহরাঞ্চলে দিনমজুর কিছুটা মিললেও গ্রামে নাকি ক্ষেতে কাজ করানোর মত কোন লোকই পাওয়া যায় না।
আপনি স্বীকার করুন আর নাই-বা করুন দেশ কিন্তু অনেক এগিয়েছে। কিছু রাজনৈতিক জটিলতা, কিছু তথাকথিত সুশীলের হীনমন্যতা-কূটচাল, বিচ্ছিন্ন কিছু সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের জীবনযাত্রার মান কিন্তু ঠিকই বেড়েছে এবং প্রতিটি সূচকে দেশের উন্নতির ধাপ তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। শত প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উন্নয়ন অগ্রগতি কিন্তু থেমে নেই, ঠিকই চলছে। এদেশের খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষ উন্নয়নের এই চাকা ঠিকই ঘুরাচ্ছে। মনে রাখতে হবে - রাতারাতি সব কিছু পাল্টে যায় না যাবে না, ইচ্ছে করলেও এমন কিছু হয় না হবে না। আমাদের ভাবতে হবে - এতো বিশাল জনগোষ্টির এই ছোট্ট ভূখন্ডটার কথা; এতো এতো মানুষের ভার বহন করা তার পক্ষে কতটা কঠিন।
২.
কয়বছর ধরে লক্ষ্য করছি নগর জীবনে রাস্তাঘাটে মারাত্মক এক উটকো ঝামেলা করছে নপুংসকরা। ওরা আগে এলাকা ভিত্তিক পাড়া মহল্লার সব দোকান থেকে দু-চার টাকা চেয়ে নিত। যে যা দিত তাই নিয়ে তারা খুশি মনে চলে যেতো, তেমন একটা গন্ডোগল পাকাত না। এখন তারা প্রতি রাস্তার মোড় দখল করে দলবলে দাঁড়িয়ে থাকে। স্ত্রী সন্তান এমন কি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথাও বের হলেও ওদের খপ্পরে পরে লজ্জা পেতে হয়। কয়দিন আগে একটা বিষয় জানতে পারলাম - ওরা নাকি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। সুস্থ সবল কিছু পুরুষও নাকি আজকাল অপারেশন করিয়ে এই নিকৃষ্ট পেশায় যোগ দিচ্ছে, তৃতীয় লিঙ্গের 'ওঁরা' হয়ে জঘন্য সব অপরাধ করছে। এইসব 'ওঁরা'-দের বাড়াবাড়ি বর্তমানে সহ্যের চরম সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আচ্ছা, আমরা সাধারণরা, অর্থাৎ সাধারণ জনগণ কি ওদের কোন কিছুই করতে পারি না? সব কিছুই কি সরকারকে করে দিতে হবে? মাঝেমাঝে ভাবি- '৭১-এ এদেশের সেই সহজসরল মানুষ, চাষাভূসা অশিক্ষিত দিনমজুর, আমাদের পূর্বপুরুষ একটা গোটা দেশ ও জাতিকে কি করে স্বাধীন করেছিলেন? এখন আমরা সব কিছুতেই ছুঁতো খুজি, সরকার খুজি, অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমরা কি আসলেই সেই বীর বাঙ্গালির বংশধর?
একটু ঘার ত্যাড়া হয়ে দলবদ্ধভাবে এখন আর আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চাই না। ঘার ত্যাড়া করে গরম চোখে ঘুরে দাঁড়ালেই হয়তো অনেক ছোটখাটো সামাজিক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যায় যাবে; উটকো কোন 'ওঁরা'-ই তখন আর আমাদের সামনে টিকে থাকতে পারবে না, জীবনযাত্রায় বাধা হতে পারবে না। সামাজিক এইসব ছোটখাটো অনাচার আমরা নিজেরাই অনেকটা দূর করতে পারি। গতকাল সোনারগাঁ মোড়ে আমি যখন ঘার ত্যাড়া করে 'ওঁরা'-র দিকে তাকিয়েছিলাম, সুবিধে হবে না বুঝে সে এমনিতেই সটকে পরে অন্য একজনের ধান্ধায়। চলতে চলতে দেখি আমার ড্রাইভারের মতো আশপাশের অন্যরাও সেইসব 'ওঁরা'-দের তামাশা দেখছে। হায়রে আমাদের অসুস্থ্য মানসিকতা!
আমাদের মূল্যবোধ, সামাজিক জীবন ও সমাজব্যবস্থার পুরো কাঠামোটাই এখন কেমন যেন ফিকে ও নড়বড়ে হয়ে গেছে, যে যার মতো ধান্ধা নিয়ে ব্যস্ত। লৌকিকতা বা লোক দেখানো বিষয়গুলো এখন কেমন যেন একটু বেশি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। অন্তঃসারশূন্য বাহ্যিক চাকচিক্য দিয়ে বধ করে অনেকে চায় পুরো জাতিকে গ্রাস করতে। মোল্লা মৌলভী শিক্ষক বুদ্ধিজীবী চাকুরিজীবী ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ সমাজ বিজ্ঞানী সবাই - প্রায় সবাই এখন সমাজ নিয়ে যে যার মতো ধান্ধাবাজিতে মেতে আছে। দেশের সামগ্রিক কল্যাণের কথা কেউ মোটেও ভাবছে না। কখন কেমন করে সবাই যেন গন্ডালিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে এক ধরণের 'ওঁরা' হয়ে গেছে।
আগে বাবা, পিছে ছেলে। ছেলে লাঠি হাতে বাবাকে তাড়া করছে, দৌঁড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বড় ক্ষেত পাড় হয়ে বাবা থেমে গেলেন, 'থাম থাম বাবা, আর পারছি না। আমি আমার বাবাকে তিন ক্ষেত আগের ঐ লাইলে এনে ঠেকিয়েছিলাম। তুই আমাকে তার তিনগুণ বেশি নিয়ে এলি - বড় ক্ষেতের শেষ সীমানায়। নিশ্চয় তোর ছেলে তোকে আরো বেশি দৌঁড়িয়ে নিয়ে যাবে; প্রস্তুত থাকিস সেদিনের জন্য। আমাকে আরো বেশি দৌঁড়ালে সেদিন তোর অনেক বেশি কষ্ট হবে, সহ্য করতে পারবি না। তাই বলছি - আজ আর বাড়িস না বাবা, থেমে যা।'
এই দুনিয়াতে যে যা বা যতটুকো করবে, একদিন তার পুরোটাই তাকে এই ইহজগতেই ফিরে পেতে হবে, বরং তিনগুণ হয়ে ফিরে আসবে। আমি বিশ্বাস করি এটাই স্রষ্টার বিধান, মানুষের কর্মের আসল হিসাবনিকাষ। আসলে, হিসাবনিকাষ কি শুধুই পরকালে? - মোটেই না। উপরওয়ালা এপাড়েও অর্থাৎ পৃথিবীতেও সুদেআসলে তিনগুণ বুঝিয়ে দেন বা পাইয়ে দেন; ভালোর ফল তিনগুণ ভাল হয়, খারাপের ফল তিনগুণ খারাপ। খোলা চোখে সাময়িকভাবে আমরা হয়তো এসব বুঝি না বা বুঝেও স্বীকার করতে চাই না, চোখ বন্ধ করে অন্তর দিয়ে নিজের জীবনের অধ্যায়গুলো নিয়ে একটু ভাবুন - নিশ্চয় মিলে যাবে, জীবনের সহজসরল হিসাব অনায়াসে মিলাতে পারবেন।
এই ক্ষুদ্র জীবনেই তো আর কম কিছু দেখলাম না। অর্থের প্রাচূর্যে মাটিতে যাদের পা পরতো না তাদের দেখেছি অন্যের করুণা ভিক্ষা করতে, সদগা যাকাতে জীবন কাটানো মানুষকেও দেখেছি অসীম সম্পদের মালিক হতে। এতো এতো ধনদৌলতের মালিক, কত কত ছিল তাদের প্রতিপত্তি ক্ষমতা - গাড়িতে কারো কারো জাতীয় পতাকাও উড়েছিল; বড় বড় সব দাগী আসামি - চিহ্নিত রাজাকার; আল্লাহর মাইর থেকে তারাও বাঁচতে পারেননি। অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পঁচেগলে শেষমেস ফাঁসিতে ঝুলে নিকৃষ্টের মতো তাদের মরতে হয়েছে।
আগের দিনে ময়মুরুব্বিরা বলতেন - এমন একদিন আসবে যেদিন আঘাট ঘাট হবে, আরাস্তা রাস্তা হবে, আমানুষ মানুষ হবে। হ্যাঁ - সব আঘাটই ঘাট হয়েছে। এক সময় যেখান দিয়ে ভয়ংকর কোন প্রাণীও যেতে সাহস করত না আজ সেখান দিয়ে মানুষ নির্ভয়ে যাতায়াত করছে, অর্থাৎ সব আরাস্তাই আজ রাস্তা। কিন্ত কই, কোন আমানুষ-ই তো মানুষ হলো না? বরঞ্চ, দেশে আমানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, বেড়েই চলছে। দলেদলে নতুন নতুনভাবে মানুষ আমানুষে পরিবর্তিত হচ্ছে, যুগের চাহিদানুযায়ি নতুন ধাচের সব আমানুষ হচ্ছে এবং ওই দল ভারি করছে।
আগের মানুষ ন্যায় অন্যায় নিয়ে খুব বেশি ভাবতেন, অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করতেন। একা না করতে পারলে সবাইকে নিয়ে একজোট হয়ে প্রতিবাদ করতেন। কিন্তু এখন? দুই জন একজোট হলে তিন জন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। সমাজে বেশিরভাগ লোক এইসব নিয়ে মোটেও এখন আর মাথা ঘামায় না। বরং কারো কারো ভাবনা এমন - করুক না, আমার তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তারা চোখের সামনে অন্যায় হচ্ছে পাপচার হচ্ছে দেখেও না দেখার ভান করে। আজকের এই সামাজিক অবক্ষয় অধঃপতনের দায় থেকে তারা মোটেও নিষ্কৃতি পাবে না। আমি তাদেরকেই বড় দোষী এবং বড় অপরাধী মনে করি।
৩.
খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। কয়দিন আগে স্মার্টকার্ড তুলতে গিয়ে দেখি লম্বা লাইন। প্রথমবার ফিরে এলাম, দ্বিতীয়বার গিয়ে দেখলাম মহল্লার ময়মুরুব্বীরা সবাই লাইনে দাঁড়ানো। অনেককে দেখলাম বয়সের ভারে ঠিকমত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছেন না, তাও অবৈধ সুযোগের প্রত্যাশা না করে নিরবে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন; লাইনের অনেক পিছনে আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। কত কি ভাবছি - এতো দিনে আমরা মানুষ হওয়ার পথে। আগের চেয়ে আমরা অনেক স্মার্ট হয়েছি; সরকারের এই স্মার্টকার্ড প্লানিং সার্থক মনে হলো।
চুপচাপ আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে কতটা ক্ষণ পার করেছি খেয়াল করিনি। কিন্তু হটাৎ মনে হলো অনেকক্ষণ ধরে আমরা যেন ঠিক একই জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, লাইন একটুও আগাচ্ছে না। সামনের জনকে জিজ্ঞেস করতেই বুঝলাম বুথের মুখে বা ভিতরে কোন কিছু ঘটছে। লাইনে আমার অবস্থান ঠিক রাখার অনুরোধ অন্যদের করে আমি এগিয়ে গেলাম। দেখি পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকা সত্তেও লাইনে থাকা স্থানীয় এক উঁচবুক নিয়ম ভঙ্গ করে লাইন না ধরাদের ফাঁক দিয়ে স্লিপ পাইয়ে দিচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না কারণ সে মহল্লার 'উঁচবুক'। এসব দেখে আমার আরো বেশি রাগ হলো, চুপ থাকতে পারলাম না। নির্দিষ্ট একটা ছোট্ট মহল্লার স্মার্টকার্ড বিতরণ করছে এখানে, কেউ কারো অপরিচিত নন। তারপরও এমন? 'উঁজবুক'-কে কিছু একটা বলতেই দেখলাম সে লজ্জা পেয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে।
চোখের সামনে অন্যায় অনিয়ম ঘটতে দেখলেই আমাদের প্রত্যেকের তার প্রতিবাদ করা উচিত, করতে হবে; সামাজিক এইসব ছোটখাটো অনাচার দূর করতে হবে, অবক্ষয় রুখতে হবে। অন্যথায় অপরাধী অপরাধ করতেই থাকবে, এক সময় অপরাধী অপরাধে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং অন্যকে অপরাধে উদ্ভুদ্ধ করবে। মনে রাখতে হবে, যে অন্যায় করে তার মন এমনিতেই ছোট হয়ে থাকে। অন্যায়কারী বাহ্যিকভাবে বুঝাতে চায় সে সবল; প্রকৃতপক্ষে অন্যায়কারী কখনো সবল হয় না, সব সময়ই দূর্বল থাকে। কেউ কিছুটা সাহস করে প্রতিবাদ করলেই দেখা যাবে - অপরাধী চুপসে গেছে। কোন বাধা না পেলে তারা লাই পায়, এক সময় মহাঅপরাধ করে বসে।
একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে অত্যন্ত লজ্জার, ঘৃণার এবং খুবই পরিতাপের বিষয় - যারা প্রজন্ম তৈরি করবে সেইসব আদর্শের প্রতীক শিক্ষকরাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত এবং ধরাও পরেছে। আমার মতে এদের দৃষ্টান্তমূলক প্রত্যক্ষ শাস্তি হওয়া উচিত; আর যেন কোন শিক্ষক এমন দৃষ্টতা না দেখাতে পারে। না বুঝে কিছু ছাত্রছাত্রী ফাঁকতালে গোল্ডেন পেয়ে যাবে। কিন্তু এতে লাভ কি হবে? প্রশ্নপত্র ফাঁস করা ও সেসব দেখে পরীক্ষা দেয়া যে মহা অন্যায়, মহাপাপ। এইসব করে জ্ঞান তো আর অর্জন করা যায় না, যাবে না। যারা এসব করছে তাদের কাছে তা সাময়িক অন্যায় অপরাধ না মনে হলেও হতে পারে, কিন্তু একটা কথা সবার মনে রাখা উচিত - জ্ঞান সৃষ্টিকর্তার এক অপার কৃপা।
অপরাধ করে ধরা খেয়েছে, তারপরও অনেকের অভিব্যক্তি দেখে মনে হয় - না তারা কোন পাপ করেছে, না তারা অপরাধ করেছে; তাদের যেন কোন অপরাধবোধ ও লজ্জাবোধ নেই। আসলেই এই শ্রেণির লোকদের মোটেও লজ্জা নেই, নেই কোন অনুসূচনা। এক কান কাঁটা গেলে নাকি ফিরে ফিরে চায়, দু কান কাঁটা পরলে উলঙ্গ হয়ে যায়। তখন আর তাদের কারো লজ্জাশরমের বালাই থাকে না। নিউজে জানলাম রাজধানির এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁস করলেন স্কুলের সমগ্র ছাত্রছাত্রীকে গোল্ডেন জোয়ারে ভাসাতে; কথাটা ভাবতেও লজ্জা লাগছে। কিছু অথর্ব আবার বিজ্ঞাপন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার চোখের সামনে সেইসব ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করেছে। ধিক্! এইসব জানোয়ার মার্কা লোকদের, শিক্ষক নামধারি দূর্বৃত্তদের।
নিজেকে চোরের সর্দার হিসেবে জাহির করাটা এখন আর তাদের কছে লজ্জা অপমানের কোন বিষয় নয়, বরং এটা এখন তাদের কারো কারো কাছে গর্বের ব্যাপার। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন পেতেও কেউ কেউ মরিয়া হয়ে উঠে। ওসব পাপ অন্যায় করতে তারা এতটুকো কুন্ঠাবোধ করে না, কোনরকম অপরাধবোধেও ভোগে না। কিন্ত এমন গোল্ডন পেয়ে লাভ কি? পথের ফকির থেকে দামি মন্ত্রী, সবখানেই কেউ কেউ এখন উল্টো পথে হাঁটতে চায়। তারা হয়তো ভাবে উল্টো পথে চলতে পারলেই দ্রুত ক্ষমতাবান হওয়া যায়, কূট-মন্ত্রনা দিয়ে মন্ত্রী হওয়া যায়। কিন্তু মনে থাকে যেন - আল্লাহর মাইর, দুনিয়ার বাইর।
৪.
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন এদেশে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা ছিল নেহায়েতই হাতেগোনা। দু-চার-দশ গ্রাম খুজলে দু-চারজন গ্রাজুয়েট পাওয়া যেতো, আর এখন গ্রাজুয়েশন করা লোকজন ডাল-ভাতের মতো। অথচ - নীতিনৈতিকতা আমাদের তলানিতে নেমেছে।
আমাদের বাপ-দাদার বেশির ভগেরই জীবন ও জীবিকা ছিল কৃষি। যার যত বেশি হাল ছিল তখনকার দিনে তাঁর ততো বেশি সম্মান ছিল। এক কথায় হাল দেখেই সেই সমজে একজনের প্রভাব প্রতিপত্তি বিবেচনা করা হতো। আর এখন চাষাদের অনেকে মানুষই মনে করে না; চাষা এখন কারো কারো কাছে গালি। ভূল, এখনো এদেশের অর্থনীতির অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছেন তাঁরা। এদেশের অর্থনীতির গাড়ির সবচেয়ে সচল চাকাটাও তাঁরা। তাছাড়া শিকড়কে যে অস্বীকার করে বা অবহেলা করে সে কখনো কোন দিনও ভালো মানুষ হতে পারে না পারবে না।
আগের দিনে গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ, ক্ষেতভরা ফসল আর গোলাভরা ধান নিয়ে তাঁরা আজকের আমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি সুখি ছিলেন। তাঁরা মোটা কাপড় পড়তেন, সাদামাটা সহজসরল জীবনযাপন করতেন। সারাদিন মাঠে কঠোর পরিশ্রয করে পেট ভরে ভাত খেতেন আর নিশ্চিন্তে নাক ডেকে ঘুমাতে পারতেন।
মেকি সুখের ফাঁনুস উড়িয়ে যতই মুখে বুলি আওড়াই না কেন আজ আর আমরা আগের মত তেমন সুখে নেই, পেট ভরে ভাত খেতে পারি না, পিঠেও সয় না; ঘুমের ঔষধ খেয়েও ঘুমাতে পারি না। সব খানেই এখন কেমন যেন এক ধরণের অসহনীয় অস্থিরতা, গুমোট যন্ত্রণা।
আজকের মত অতশত ভোগবিলাস আগের দিনে ছিল না সত্য, কিন্তু অতসব রোগশোকও তখন কারো ছিল না। অতঅত পাশকরা লোকজন ছিল না সত্য, কিন্তু আজকের মতো এত শিক্ষিত চোরও ছিল না। আগের মানুষের মনে অতশত প্যাঁচপোঁচ ছিল না, আজকের মত মানুষের অতো সন্ধেহবাতিকতাও ছিলনা; কিন্তু তখন তাঁদের সুখের এতটুকোও কমতি ছিল না। আজ আমরা যতই ভোগবিলাস অর্থবিত্ত আর প্রাচুর্যে আবৃত হচ্ছি, কেন যেন সুখ আমাদের কাছ থেকে সোনার হরিণ হয়ে যাচ্ছে।
নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাবই আজকের আমাদের এই সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ। আমরা কেউই এই দায় থেকে মুক্ত নই বা এতটুকোও মুক্ত হতে পারি না পারবো না। স্বাধীনতার এতো বছর পরও আমরা পারিনি আমাদের প্রজন্মকে একটা সুস্থ্য ও সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে, প্রায়ুরিটি বেসেজে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিতে। তাই তো আমাদের আজকের সমাজের মানুষের এই দুরঅবস্থা। যে সমাজে নেই কারো প্রতি কারো নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ; সহমর্মিতা, স্পর্ষকাতরতা, আবেগ, অনুভূতি - সে সব তো অনেক আগ থেকেই সাত সমুদ্র তের নদী পাড় হয়ে চলে গেছে। তাই, ছেলেমেয়েরা এখন প্রযুক্তি নিয়ে পড়ে থাকছে। তারা এখন আর মা-বাবাকে আগের মতো বুঝে না বা বুঝতেও চায় না। তদ্রুপ মা-বাবাও সন্তানকে কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারছেন না। অন্যসব বন্ধনের কথা নাই বা তুললাম।
আগের দিনে পারিবারিক বন্ধন ছিল খুবই সৌহার্দপূর্ণ। এক একটা পরিবার ছিল বিশাল। সেখানে বড়দের কাছ থেকে ছোটরা পেত আদর সোহাগ, বড়রা পেত শ্রদ্ধা-ভক্তি। এভাবেই সেসব শিখে প্রজন্ম বেড়ে উঠত। স্নেহ-মায়া-মমতা, প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-ভক্তির সেই বন্ধন ছিল খবই অটুট। প্রত্যেক সন্তানের কাছে তখন তার মা-বাবা ছিল স্বর্গ, নিজ ঘর ছিল মসজিদ মন্দির। এখন এইসব শুধুই স্বপ্নবিলাস আর গল্পস্বল্প। আজকের ছেলেমেয়েরা এসব এখন আর শুনতেও চায় না, বা শোনাবেই-বা কে? এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে তাই এসব শুধুই ঠুনকো আবেগি ব্যাপারস্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল, ট্যাব, ল্যাবটপ, লাভরোড এখন তাদের কাছে মূখ্য। বিশ্বায়নের ছোঁয়ায় নিওক্লিয়ার পরিবারের প্রত্যাশাই মূলতঃ এসবের জন্য দায়ী।
যান্ত্রিক সভ্যতা ও বিশ্বায়ন আমাদের আর কিছু দিতে পারুক আর না-ই-বা পারুক - লজ্জাহীন অসভ্য হৃদয়হীন করতে পেরেছে নিশ্চয়। বাস্তবতা বিবর্জিত আজকের তরুণ-তরুণীকে পথভ্রষ্টতার পাঠ ঠিকই দিতে পেরেছে। তাই তো, মা-বাবা ভাই-বোনের মায়ার বন্ধন ত্যাগ করে অনায়াসে নিঃসংকোচে আজকের সন্তানরা একাকি বেশ ভাল চলতে পারছে! ইহজগতের মায়া ত্যাগ করে পরজগতের মিথ্যে মোহমায়ায় জঙ্গি হতে পারছে। নির্দ্বিধায় মানুষ মারতে পারছে, মরতেও পারছে।
পরিশেষে- কাল আসছে সেই ভয়ঙ্কর কলো রাত। যে রাতে শুরু হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছিল। তা ঘটেছিল কিন্তু এদেশের মানুষের নিঃশর্ত আত্মত্যাগ ও তাজা রক্তের বিনিময়ে।
২৫ মার্চ ১৯৭১, মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক ভেঙে গেলে ইয়াহিয়া গোপনে ইসলামাবাদ ফিরে গেলেন এবং গণহত্যা চালানোর পর সেই রাতেই পাকিস্তানি সেনারা বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পাঁচ বিশ্বস্ত সহকারীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে বাঙ্গালি জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে যান; ঘোষণাটি - "এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।"
আমাদের এই যুদ্ধ আজও শেষ হয়নি, হয়েছে কি? আসুন আমরা সবাই - স্মার্ট কার্ডের ছোয়ায় নিজ মস্তিষ্কটাকে এবং আশপাশটাকেও স্মার্ট করে গড়ে তুলি।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
২৪ মার্চ, ২০১৭।
অসাধারণ লেখাটি।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ!
মুছুন