সামান্য জ্বর, তাই বাবা-মাকে রাস্তায় ফেলে চলে গেছে তাঁর সন্তানরা; অথচ পরীক্ষায় দেখা গেছে ওদের কেউই করোনা পজিটিভ নন! ‘মা, তুমি এই বনে এক রাত থাকো, কাল এসে তোমাকে নিয়ে যাব।’ —এ কথা বলে ৫০ বছর বয়স্কা মাকে শাল-গজারির বনে ফেলে চলে যায় তাঁর সন্তানরা! জমি লিখে নিয়ে ঈদের দিনে বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায় তাঁর তিন ছেলে! করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এক নারীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে রেখে উধাও হয়ে গেছে ছেলে! শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় মাকে রাস্তায় ফেলে চলে গেছে এক সন্তান! আত্মীয়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এক বৃদ্ধ বাবাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে গেছে তাঁর ছেলে ও ছেলের বউ! গত বাবা দিবসে ঘটেছে দেশের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনাটি কুমিল্লায়; অসুস্থ বাবাকে তাঁর সন্তানরা ডাস্টবিনের ময়লা আবর্জনার মধ্যে ফেলে রেখে চলে যায়!
উপরোল্লিখিত শিরোনামগুলোর দু'একটির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ তুলে না ধরলে হয়তো পাঠক বুঝে উঠতে পারবেন না অমানবিকতার কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে এ দেশের সন্তানদের মানসিকতা। জয়পুরহাট সদর থানার ওসি শাহরিয়ার খাঁন জানিয়েছেন, গত ঈদের দিন জয়পুরহাট-আক্কেলপুর সড়কে ছিরাতুন্নেছা (৮০) নামের এক বৃদ্ধা নারীকে আহাজারি করতে দেখে স্থানীয়রা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সেফ হোমে রেখে আসে।
উদ্ধারকৃত ছিরাতুন্নেছা জয়পুরহাট পৌর শহরের জানিয়ার বাগান এলাকার মৃত নূর মোহাম্মদ মোল্লার স্ত্রী। এতে করে গ্রেপ্তার হয় তাঁর তিন ছেলে— আব্দুর রাজ্জাক, মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোজ্জামেল হক। ওসি বলেন, 'ছিরাতুন্নেছার তিন ছেলে কৗশলে তাদের মায়ের নামের সব জমিজমা নিজেদের নামে লিখিয়ে নেন। এরপর থেকে ছেলেরা মায়ের ভরণ-পোষণে অবহেলা, গালমন্দ ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। সোমবার সকালে বৃদ্ধা মাকে ফেলে রেখে চলে যায় তারা।'
এ ঘটনায় ওই নারীর চার ছেলের মধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়। জেলা শহরের জানিয়ার বাগান মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, চার ছেলে ওই বৃদ্ধাকে সাত দিন করে পর্যায়ক্রমে নিজেদের বাড়িতে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিল। সর্বশেষ তিনি ছোট ছেলের কাছে ছিলেন। ছোট ছেলের কাছে থাকার সাত দিনের মেয়াদ শেষ হয় ঈদের দিন। ছোট ছেলে তাঁর মাকে অন্য ভাইদের কাছে নিয়ে যায়। অন্য তিন ভাইয়ের কেউই আর মাকে নিতে রাজি হয়নি। এ অবস্থায় মাকে রাস্তার ধারে নিয়ে গিয়ে ফেলে রেখে আসা হয়। বৃদ্ধাকে রাস্তায় আহাজারি করতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি জানান। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় ওই মায়ের তিন ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পরে রাতেই বৃদ্ধা ছিরাতুন্নেছাকে সাময়িকভাবে জয়পুরহাট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সেফ হোমে পাঠানো হয়।
অন্য আরেকজন বৃদ্ধলোক হলিফ্যামিলি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। তিনি মারা গেলে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে জানানো হয়, তাদের কাছে একটি বেওয়ারিশ লাশ আছে তা দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। ফাউন্ডেশনের লোকজন হাসপাতালে ওই মৃত মানুষটির কোনো স্বজনের খোঁজ পায় না। এ সময় তাদের মনে প্রশ্ন জাগে, 'এই দুর্দিনে যে লোক এখানে ভর্তি হতে পারেন, তিনি নিশ্চয় কোনো সাধারণ লোক নন; হয়তো তিনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তা না হলে এ হাসপাতালে আইসিইউ পাওয়ার কথা নয়।' এক পর্যায়ে ওই মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। কেননা, স্বজন ছাড়া লাশ দাফন করা হলে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
পরে জানা গেল, মৃত ব্যক্তি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুহিউদ্দিন খান। গত ৩ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। এর আগে ১৪ দিন আইসিইউতে ছিলেন। এরও ২৪ দিন আগে তার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ঢাকা মেডিক্যাল থেকে আট বছর আগে অবসর গ্রহণ করে তিনি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক মেডিক্যাল কলেজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর তার কোনো আত্মীয়স্বজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা তার আত্মীয়দের আর পাওয়া যাবে না মনে করে দাফনের ব্যবস্থা নেন।
বেওয়ারিশ হিসেবে কোন লাশ দাফন করতে গেলে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি ডেথ সার্টিফিকেট নিতে হয়, এবং তা দিয়ে থানায় জিডি করে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সমস্ত প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন খাঁনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এতো কিছুর পরও স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে মানতে রাজি ছিলেন না। তাই তারা লাশ দাফন স্থগিত রেখে পূণরায় হাসপাতালে যোগাযোগ করেন।
স্বেচ্ছাসেবী দলটির একজন সদস্য বলেন, আমরা জানতে পারলাম, ইব্রাহিম মেডিক্যাল হাসপাতাল থেকে এসে তিনি হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি হন। আমরা যখন সে হাসপাতালে ফোন করি তারা সাথে সাথেই ডা. মুহিউদ্দিন খাঁনকে চিনতে পারেন। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতের স্বজনদের নাম্বার দেয়। সে নাম্বারে কল করে স্বেচ্ছাসেবীরা জানতে পারেন মৃত ডা: মুহিউদ্দিনের ছেলে কানাডায় বসবাস করে।
তার সাথে কথা হলে সে জানায়, দেশে তাদের অন্য কোন আত্মীয়স্বজন নেই, পরিবারের অন্য কেউও এখন আর দেশে বসবাস করে না। তাই তিনি কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে তার বাবার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করে! আর তার বাবার নামাজে জানাজা ও দাফনের ভিডিও আর ছবি তুলে যেন তাকে স্বেচ্ছাসেবীরা পাঠিয়ে দেন! তাঁর ছেলের সাথে কথা বলে ফোন রাখার পরই আরেকটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। চট্টগ্রাম থেকে কল দিয়ে একজন ডাক্তার বলেন, লাশের গোসল দিয়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন যদি পাঠাতে পারে তা হলে তারা মিরসরাইয়ে দাফন করবেন।
কিছুক্ষণ পর আবার সেই একই ব্যক্তি কল করে বলেন, তারা সেখানে দাফন করতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে দোটানায় পড়ে যান স্বেচ্ছাসেবীরা। পরে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই চট্টগ্রামের সেই লোক কল করে লাশ ঢাকাতেই দাফনের সিদ্ধান্ত জানায়। পরে রায়েরবাজার বধ্যভূমি গোরস্থানে মরহুম ডা. মুহিউদ্দিন খাঁনকে দাফন করা হয়। দাফনের পর তার ভাই যিনি নিজেও সরকারের পদস্থ একজন কর্মকর্তা, ফোনে জানান যে, তিনি তার এক কর্মচারীকে পাঠাচ্ছেন দাফনের সাক্ষী হিসেবে। এ দিকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক মেডিক্যালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি আমিও শুনেছি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একজন সহকর্মীর এমন পরিস্থিতি কেউ কামনা করে না।’
দাউদকান্দির সুফিয়া খাতুন; তাঁর বয়স ১০০ বা তার কাছাকাছি। ভিটামাটি কিছু নেই, ছেলে মেয়ে দু’জন। তারাও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাদের সংসার চলে নিদারুণ কষ্টে। শেষ পর্যন্ত তারা তাদের মাকে রাস্তায় ফেলে গেছে। সুফিয়া খাতুনকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে উপজেলা প্রশাসন। চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য বন্দোবস্ত করেছে তারা। এখন তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়ার চার মাস পরও সুফিয়াকে তার পরিবারের সদস্যরা কেউ নিতে আসেনি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সুফিয়া সেখানে চিকিৎসাধীন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
করোনা সংক্রমণকালে বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুনের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকাটাও ঝুঁকিপূর্ণ। হাসপাতাল থেকে জানা যায়, তিনি চোখে দেখেন না, কানেও কম শোনেন। তাঁকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ফেলে যাওয়া হয় দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। প্রথমে তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। দীর্ঘ সময় আপন কাউকে কাছে না পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে বৃদ্ধা সুফিয়াকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রশাসন বৃদ্ধার ছেলের খোঁজ পায়। তাকে ডেকে এনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা বলা হয়। তখন পারিবারিক অসচ্ছলতার কথা সে জানায়। দাউদকান্দির নসরুদ্দি গ্রামে সুফিয়ার বাড়ি। স্বামী কালাই মিয়া ২০ বছর আগে মারা গেছেন। পরিবারটির এক শতক জমির ওপর বসতঘর ছাড়া আর কিছুই ছিল না; সেটিও এখন আর নেই। একমাত্র ছেলে মুখলেসুর রহমানও এখন বয়োবৃদ্ধ; সে ভিটার তার নিজের অংশটি পাঁচ বছর আগে বিক্রি করে দেয় বোনের কাছে। এরপর থেকে মুখলেসুর রহমান বসবাস করে মেয়ের বাড়িতে।
মুখলেসুর বলেন, অভাবের কারণে ৯ বছর আগে তার স্ত্রী সৌদি আরব চলে গেছে। তার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখেনি। সে বাসে চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এমন পরিস্থিতিতে মাকে নিজের কাছে রাখতে পারেনি। সুফিয়ার একমাত্র মেয়ে মিনারও বয়স হয়েছে। সে থাকে উপজেলার গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামে। সে পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে দিয়েছে। তার কাছেই এত দিন মা সুফিয়া ছিলেন। দারিদ্র্যের কারণে তিনি তার মাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে গিয়েছিলেন। তার মেয়ে মিনারও বয়স হয়ে যাওয়ায় কোনো কাজ করতে পারে না। তার স্বামী আবদুল মান্নানও বৃদ্ধ। তাদের এক ছেলের আয়ে কোনো মতে সংসার চলে।
ইউএনও জানান, সুফিয়া খাতুনের দায়িত্ব ছেলে মুখলেসুরের নেয়ার কথা থাকলেও সামর্থ্যের অভাবে কিছু করতে পারছে না। আবার এ মুহূর্তে সুফিয়াকে কুমিল্লা বা চট্টগ্রামের বৃদ্ধাশ্রমেও নেয়া যাচ্ছে না। ঢাকার আগারগাঁওয়ের বৃদ্ধাশ্রমে তার কথা হয়েছে। তবে এর আগে স্বেচ্ছায় তার দায়িত্ব কেউ নিতে চাইলে দেয়া হবে। সুফিয়া বেগমকে বয়স্ক-ভাতার কার্ড ও হুইল চেয়ার দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় কেউ তার দায়িত্ব নিতে চাইলে তাকে এক লাখ টাকার একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়াসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
সারা দেশজুড়ে এমন নির্মমতার ঘটনা যে কত, তা বলে শেষ করা যাবে না। সেসবের কয়টাই-বা আর পত্রপত্রিকা বা টিভি চ্যানেলে উঠে আসে? কিন্তু কোন বাবা-মা কি কখনও তাঁদের সন্তানকে এভাবে ফেলে দিয়েছেন বা দেন? করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামের পটিয়ার ৬ বছরের একটি বাচ্চা মারা যায়, বাবা নিজ হাতে শেষ গোসল দিয়ে কাফন পড়িয়ে দাফন করতে নিয়ে গেলেন। জানাযায় অংশ গ্রহণকারি লোকজন যেখানে পিপিই দ্বারা সুরক্ষিত, সেখানে বাবা ভুলেই গেছেন তিনি করোনাভাইরাস থেকে অরক্ষিত। তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন এ কথাটি একবারের জন্যও তাঁর মনে আসেনি। মৃত্যুর ভয়কে জয় করে বীরদর্পে নিজ সন্তানকে বুকে জড়িয়ে দাফন করেন বাবা; বাবারা এমনই হয়।
বিগত দিনে ঘটা বাংলাদেশের নির্মমতার ইতিহাস এগুলো, যা জনপ্রিয় সব জাতীয় পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে উঠে এসেছে; ফেসবুক ও বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায়ও প্রতিনিয়ত আমরা দেখতে পাই এমনতর আরো অনেক মানবতা বিপর্যয়কর সব খবরাখবর। তবে আমাদের আশেপাশে মানবতার চরম উৎকর্ষতার খবরও কিন্তু কম ঘটছে না, কম নেই। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এ বিষয়টি অনেকটা স্পষ্টই হয়ে উঠেছে— এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন বয়স্করা। নির্মমতার চরম পর্যায়ে উপনীত হয়ে ভয়াবহ ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন পৃথিবীর সব বয়োঃবৃদ্ধ মানুষ।
একদিকে মৃতের সংখ্যা গণনায় দলেদলে শামিল হচ্ছেন, অন্যদিকে পারিবারিক নির্মম-নিষ্ঠুরতা বা নির্যাতনেরও স্বীকার হচ্ছেন এই বয়োঃবৃদ্ধরাই। করোনা মহামারীর মধ্যে যখন পরিবারের বয়স্ক সদস্যটির দিকে আরও একটু বেশি দৃষ্টি দেয়ার কথা, সরকার থেকেও আরো বেশি খেয়াল রাখার তাগিদ দেয়া হচ্ছে বার বার; ঠিক সেই সময়ই বৃদ্ধ বাবা-মাকে সন্তানরা রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে বা বাসা থেকে বের করে দিচ্ছে! অথচ পবিত্র কুর'আনুল কারীমে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, 'আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কোন বস্তুকে শরীক করো না এবং মাতা-পিতার প্রতি উত্তম আচরণ কর।’ —(নিসা ৩৬)
‘আর তোমার প্রতিপালক এ আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ভিন্ন অপর কারো ইবাদত করো না। আর মাতা-পিতার প্রতি উত্তম আচরণ কর। যদি তাঁদের একজন কিংবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাঁদের উদ্দেশ্যে কখনো ‘উহ’ পর্যন্ত বলবে না। তাদেরকে ধমক দিও না, বরং তাদের সঙ্গে মার্জিত ভাষায় কথা বল। আর তাদের উদ্দেশ্যে অনুগ্রহে বিনয়ের বাহু অবনমিত কর। আর বল, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়কে অনুগ্রহ কর, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন।’ —(বনী ইসরাঈল ২৩-২৪)
‘আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতা সম্পর্কে আদেশ করেছি। তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভধারণ করেছেন। দুই বছর পর্যন্ত তাকে স্তন্য দান করেছেন। এ মর্মে যে, তোমরা আমার এবং তোমাদের মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ —(লোকমান ১৪)
পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? কিয়ামত কি তবে আসন্ন? আগামীকাল আর আমরা পাবো কি-না জানি না। তবে যদি পৃথিবী টিকে যায় টিকে থাকে সে পৃথিবী কেমন হবে? জানি না তা কেউ বলতে পারে কি-না? কিন্তু জীবন যে দিনদিন কঠিন থেকে কঠিনতম হচ্ছে তা বেশ ভাল করে টের পাচ্ছি। একদিকে বাইরের করোনাবন্দী পৃথিবী, অন্যদিকে ঘরে ঘরে পারিবারিক অশান্তি, সম্পর্কের অবনতি। কোভিড-১৯ কি তাহলে পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়ে গেল এদেশের মধুর পারিবারিক সম্পর্কের অনুষঙ্গ গুলোতেও?
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও চাকুরি চ্যুতির ভয়ে অনেকেই প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছে, চাপে থাকছে। তাই বলে কি পারিবারিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হবে? মানছি বাহিরে কাজ করা লোক ঘরে থাকলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তাই বলে কি বৃদ্ধ মা-বাবাকে ত্যাগ করতে হবে? আসলে ভোতা হয়ে গেছে আমাদের আবেগ-অনুভূতিসহ সমগ্র অনুভূতির বিষয়গুলো, সহনশীলতা সহমর্মিতা শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। হয়তো তাই সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটছে এমনসব নির্মমতা, বাড়ছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, বাড়ছে নৃশংসতা-নিষ্ঠুরতা।
'মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম পাপোস বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না'— এ ঋণ শোধ হওয়ার নয়। শোধ করার সাধ্য কার? দশ মাস দশ দিন যে মা তাঁর সন্তানকে গর্ভে নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেন; সেই মায়ের ঋণ শোধ করার সাধ্য কোন সন্তানের আছে কি? প্রতিটি সন্তানের জন্য তার মা মানে মমতা, মা মানে নিশ্চয়তা, মা মানে নিরাপত্তা, মা মানে অস্তিত্ব, মা মানে আশ্রয়, মা মানে এক রাশ অন্ধকারের মাঝেও এক বুক ভালবাসা। প্রত্যেক মানুষের জীবনে মা হলো এই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় আর সবচেয়ে আপনজন। সেই মাকে কষ্ট দিতে পারে সে কেমন জন? বউয়ের জন্য যে মাকে দূরে ঠেলে দেয়, সে'জন কেমনে মানুষ হয়?
আর বাবা মানে একটু শাসন একটু আদর, অনেক অনেক ভালোবাসা। বাবা মানে একটু কঠিন, তবে মাথার উপর ছায়া। বাবা মানে সকল চাওয়া, একটাও মিস না যাওয়া। বাবা মানে কাছের বন্ধু, দুঃসময়ের সাথী। বাবা মানে নির্ভরতার আকাশ আর একরাশ নিরাপত্তা। হ্যাঁ, বাবারা এমনই হয়। সন্তানদের চোখে বাবারা এমনিতেই একটু কেমন যেন হয়। কখনো একটু কঠোর, আবার কখনো একটু আদুরে; বাবারা আদরগুলো লুকিয়ে রাখেন শাসনের পর্দার আড়ালে। তাই হয়তো বাবাদের কেউ বুঝে না বা বুঝতে চায় না বা বুঝতে পারে না।
জীবনের গল্প লিখবো বলে মনঃস্থির করেছিলাম, কিন্তু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না জীবনের গল্প কি করে কেমন করে লিখবো? তবে এতোক্ষণে এ কথাটি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি জীবনের গল্প লেখা কোন সহজ কাজ নয়। কেউ যদি আমাকে বলতো ক্রিকেট খেলার সারা দিনের ধারাবিবরণী লিখতে, তা-ও এরচেয়ে অনেক সহজ ছিল। কে বোলিং করলো আর কাকে করলো, কে রান করলো- আর কত রান করলো, কে আউট হলো- কে করলো — এ যে রান আর আউটের এক অনবদ্য বর্ণনা! জীবনের ধারাবিবরণী কি এতোই সোজা? জীবনের গল্প লেখা আসলেই কঠিন, অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ; গল্প-উপন্যাসের চেয়েও অনেক অনেক বেশি কঠিন।
গল্প-উপন্যাসে লেখক ইচ্ছে করলে যখন-তখন কোনো চরিত্র বানিয়ে ফেলতে পারেন বা কোন চরিত্র বসিয়ে দিতে পারেন, পারেন ইচ্ছে মতো মেরে ফেলতেও। খুবই আগ্রহ নিয়ে আমরা গল্প-উপন্যাস পড়ি অথবা নাটক দেখি। কিন্তু লেখকের হাতে যার জন্ম ও মৃত্যু, তা আর কতক্ষণ স্থির রাখা যায় বা টিকিয়ে রাখা যায়? মানুষের জীবন তো প্রবাহমান নদীর মতো আঁকাবাঁকা। তা লেখার তুলিতে তুলে ধরা আসলেই অত্যন্ত দুরূহ একটি কাজ। প্রত্যেক মানুষের জীবনই বিচিত্র, যা বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভক্ত; কখনো মানুষ সন্তান, কখনো বাবা-মা, আর শেষ জীবনে পরনির্ভরশীল নির্জীব প্রাণী। তাই জীবনের কোনো অধ্যায় হয় সুখকর, আবার কোনো অধ্যায় হতে পারে অসহনীয় এবং নিরবধি দুঃখে রচিত। এখানে রচিত বলার কারণ হলো নিয়তিতে আমাদের কারো কোন হাত নেই, নিয়তি নির্ধারিত; তাই ঘটমান বর্তমানকে মেনে নেয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই।
এক জীবনেই একজন মানুষকে কত ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, মোকাবিলা করতে হয় কত ঘাত-প্রতিঘাতের। জীবনের কোনো অধ্যায় হয় অনাবিল সুখের, আবার কোন অধ্যায় হয় অত্যন্ত দুঃখের। সুখ-দুঃখের এই অনুভূতিগুলো কখনও হয় তৃপ্তিদায়ক, আবার কখনও-বা হয় অত্যন্ত বেদনাদায়ক, আবার অনেক সময় জীবন এতো বেশি ঘোলাটে হয়ে যায় যা মানুষের চিন্তায়ও কোনদিন আসে না। তাই তো জীবনের গল্পগুলো একই সাথে আনন্দ ও দুঃখ উভয়ই বয়ে নিয়ে আসে। পড়তে পড়তে কখনো মুখে হাসি আছে, আবার কখনো-বা চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানি জমে। কারণ, অন্যের দুঃখে আমরা দুঃখিত হই, আবার পরবর্তী সময়েই আনন্দিত হই। কিন্তু কোন সন্তান দ্বারা যদি কোন বাবা-মা নির্যাতিত হন বা কোন সন্তান যদি মা-বাবাকে অবহেলা করে, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না রক্তে-মাংসে গড়া কোন মানুষ।
প্রতিটি বাবা-মায়ের জীবনের পরম চাওয়া পাওয়া হলো তাঁর সন্তান। সন্তান কোলে এলে সে সন্তানের মুখ দেখলেই মা-বাবা ভুলে যান জীবনের দুঃসহ নিঃসহ সব যন্ত্রণা। সন্তানের জন্মে তার বাবা-মায়ের সে যে কি আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় বা লিখে বুঝানোর মতো কোন বিষয় নয় ; বাবা-মা মাত্রই শুধু এ আনন্দের উপলব্ধি অবগত। এক হতভাগ্য বাবা-মায়ের ঘরে এক সন্তান জন্ম নেয় ৮৮ সালের বন্যার বছর বন্যা শুরু হওয়ার ঠিক আগে আগে। জন্ম নেয়ার সময় তার মা মরতে বসেছিলেন; সে কি নিদারুণ করুণ অবস্থা! ডাক্তার বলেছিলেন গর্ভেই বাচ্চা স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে। সে কি কঠিন এক পরিস্থিতি! ভয়াবহ এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, যা আজ আর ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এ-ক্লিনিক ও-ক্লিনিক করে করে শেষমেশ মেটারনিটিতে ভর্তি করা হলো মাকে; মায়ের ব্লাডপ্রেসার তখনও অনেক হাই। কোনভাবে কোন কিছুতেই তা কমানো যাচ্ছিলো না। একদিকে মেটারনিটিতে ভর্তি মা, অন্যদিকে বাবা উদভ্রান্তের মতো পায়চারি করছেন হাসপাতালের বারান্দায়। এক পর্যায়ে ডাক্তার আপা বের হলেন অপারেশন থিয়েটার থেকে; তাঁর হাতে একটা ফাইল। বাবাকে ডেকে বললেন, 'যে অবস্থা, বাচ্চা বা বাচ্চার মা দু'জনের যে কোন একজনকে বাঁচানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হতে পারে। কিছুতেই রোগিণীর ব্লাড প্রেসার কমছে না কমানো যাচ্ছে না। আপনি ইচ্ছে করলে এখান থেকে রেফার্ড লেটার নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে বা অন্য কোন বড় হাসপাতালে যেতে পারেন। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে উভয়েরই এখন সংকটাপন্ন অবস্থা। তবে, আপনি যদি এই বন্ডে সিগনেচার করেন, আমরা শেষ চেষ্টা করে দেখতে পারি।'
কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না বাবা। অগত্যা বন্ডে সিগনেচার করেন মা বা সন্তান যে কোন একজনেকে বাঁচানোর শর্তে। সিগনেচার করেই তিনি চলে যান পাশের মসজিদে। সেজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে কাকুতী-মিনতী করে কাঁদেন। চোখের পানির দাম আল্লাহ ঠিকই দিয়েছেন। মসজিদ থেকে হাসপাতালে যেয়েই জানতে পারেন মা ও শিশু উভয়েই বেঁচে আছে এবং ভালো আছে। শুনতে পান একটি ফুটফুটে ছেলে শিশুর জন্ম হয়েছে। বাবার সে কি আনন্দ! দৌঁড়ে বাহিরে চলে যান, মিষ্টি নিয়ে ফিরে আসেন। পুরো হাসপাতালের রোগি ডাক্তার ও নার্স সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বাসায় একা মা কি করে সন্তান ও সংসার সামলাবেন এই চিন্তা করে কয়দিন পরই বাবা তাদেরকে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন; যাতে দাদা-দাদী চাচা-ফুফুর আদরযত্ন পেয়ে বড় হতে পারে সন্তানটি।
দেশের বাড়িতে মুক্ত বাতাসে শুরু হয় ছেলেটির শৈশব; ওদিকে কর্মের খাতিরে বাবাকে থাকতে হয় ঢাকায়। প্রতি সপ্তাহের ছুটিতে বাবা বাড়ি যান। এরই মধ্যে দেশে মহা প্লাবন শুরু হয়ে যায়। ৮৮-র সেই বন্যায় ঢাকা শহরসহ সারা দেশ প্রায় ডুবে যায়, পানিতে ভাসছিল সবকিছু। ঢাকা শহরের অনেক মহল্লার রাস্তায়ও সে বছর নৌকা চলত। তখন ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যেতে হতো লঞ্চে করে। একবার- শিশুর দুধের কৌটা ও কিছু খাবার-দাবার নিয়ে বাবা ছোট্ট লঞ্চে চড়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন। লঞ্চ কিছুদূর যেতেই ডুবতে শুরু করে, শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি ডুবে যায়। যাত্রীরা সবায় সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠে যায়। কিন্তু সেই বাবার হাতে দুধের কৌটা থাকায় সে সাঁতরাতে পারছেন না। পাড় থেকে সবায় বলতে থাকেন দুধের কৌটা ছেড়ে সাঁতরে উপরে উঠতে, কিন্তু তিনি তা ছাড়েন না। আবার ওটা নিয়ে সাঁতরাতেও পারছেন না, কষ্ট- অনেক কষ্ট! সেই অবস্থায়ও ভাবছেন, ওটা ছেড়ে দিলে আমার বাছাধন কি খাবে? বাড়ি যাবো কি নিয়ে বা যেয়ে লাভ কি??
আদর সোহাগে বড় হতে থাকে সেই সন্তানটি। নির্মল পারিবারিক পরিবেশে পরিবারের সবার আদর সোহাগ পেয়ে ছেলেটি বড় হয়েছে। বিশেষ করে মা ও বড় বোনের আদর তার জীবনকে করেছে ধন্য; যদিও আজ সে ভুলে গেছে সবকিছু। সংসারের কোন টানাপোড়ন আর জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখ কখনো দেখতে হয়নি ছেলেটিকে। অভাব-অনটনে বাবা-মা আর বড় বোনের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাঝ দিয়ে সেই সংসারেই একমাত্র ছেলেটি বড় হয় সুখের পরশে। এক পোয়া কাঁচা মরিসও কোন দিন কিনতে তাকে যেতে হয়নি কোথাও, যেতে হয়নি কোন কাজে বাজারে বা অন্যখানে। লেখাপড়া আর খেলাধুলা ছাড়া সংসারে তাকে আর কোন কাজই করতে হয়নি।
এমন করে বেড়ে উঠে ছেলেটি আজ অনেক বড় হয়েছে। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। কিন্তু লেখাপড়া করার সময়ই সে একটা মেয়ের পাল্লায় পড়ে; বিয়েও করে তার পছন্দের সেই মেয়েটিকেই। বিয়ের পরই ছেলেটি ১৮০ ডিগ্রি এঙ্গেলে পাল্টে যায়। দূরত্ব বাড়াতে থাকে বাবা-মার সাথে, একমাত্র বোনটাকেও সহ্য করতে পারে না! যে ছেলেটি বড় হয়েছে সব ধরনের আদর্শ নিয়ে, সেই ছেলে এমন হয় কি করে? আজ যে মেয়ের পাল্লায় পড়ে সে বাবা-মা-বোনকে অস্বীকার করছে; অস্বীকার করে বসেছে তার ৩০ বছরের অতীত! সে কি জানে, সামনে তার জন্য এর চেয়েও কঠিন বাস্তবতা অপেক্ষা করছে? তাছাড়া, কোন মানুষ কি এমন করতে পারে? আর যেসব মেয়েরা স্বামীর বাবা-মাকে সহ্য করতে পারে না, তাঁদের সাথে বসবাস করতে চায় না, তারা এতিমখানার ছেলেদের বিয়ে করে না কেন? ওদের বাবা-মা'ই-বা কেমন??
মানুষ আসলে কে? — যার 'মান' ও 'হুশ' আছে সে-ই তো মানুষ। এখন আমাদের জানা-বুঝার বিষয় হলো 'মান' ও 'হুশ' কি? 'মান' একটি বিশেষ্য পদ; যার অর্থ— মাপবার উপযোগী মাত্রা বা যা দ্বারা মাপা যায় এমন বা যোগ্যতাসূচক শ্রেণীর কোন কিছু। আর 'হুশ' শব্দটির অর্থ এক কথায় বলা যায়- চৈতন্য বা চেতন। যার মাঝে এ দুটোর সমন্বয় নেই সে কখনো কোনভাবেই মানুষ হতে পারে না বা এই নামে নিজেকে পরিচয় দিতে পারে না, অভিহিত হতে পারে না। গরুরও মাথা আছে, সে মাথায় মানুষের মাথার চেয়েও অনেক বেশি বড় মগজও আছে; কিন্তু একটু বড় হতেই সে মাকে গুতো দিতে ছাড়ে না! কারণ সেই মাথায় যে মূল সারবস্তু মান-হুশ নেই। মানহীন হুশহীন জীবন তো কেবলমাত্র পশুরই জীবন!
আমাদের চতুর্পাশে এমন অসংখ্য মানুষরূপী দো'পায়া পশুর বসবাস। ওদেরকে চিনতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে। সর্বোপরি ওদেরকে সমাজ থেকে বয়কট করতে হবে। ওদের জন্য জমা রাখতে হবে শুধুই ঘৃণা।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
৬ জুলাই, ২০২০.
Excellent writings.
উত্তরমুছুনThanks!
মুছুনখুবই অসাধারণ একটা লেখা ।
উত্তরমুছুনওদের কে আল্লাহ্ হাতে ছাড়ো তিনিতো আছেন👀
উত্তরমুছুন