Islam is the Complete Code of Life; অর্থাৎ ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। একজন মুসলিম এই জীবন বিধান অনুসরণ করে চলবে - এটাই স্বাভাবিক। ইসলামের এই পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানকে সাধারণভাবে আমরা শরিয়াহ বা শরীয়ত হিসেবে চিনি। যেগুলোকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে— আকীদাহ বা বিশ্বাস এবং আমল বা কাজ। প্রতিটি ইসলামী বিধান শরীয়ত সম্মত ও শুদ্ধ করতে অবশ্যই তা কুর'আন, হাদীস, ইজমা, কিয়াসের যে কোন একটির দ্বারা সমর্থিত ও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হতে হবে; যা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম কতৃক স্বীকৃত।
পবিত্র কোর'আনুল কারীম ও সহিহ ছিত্তাহর সংকলন, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ সম্পর্কিত ইসলামী বিধানগুলো নিঃসন্দেহে প্রাথমিক যুগের মুসলিম মনীষীদের ইজমা কিয়াসেরই ফল বা ফসল। বিজ্ঞান সভ্যতার ইতিহাস ঘাটতে গেলে দেখা যায় প্রাথমিক যুগের মুসলিম মনীষীরা আজকের এই বিজ্ঞান সভ্যতারও অগ্রদূত ছিলেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোন শাখা খুজে পাওয়া যায় না যাবে না যেখানে মুসলিম মনীষীদের প্রাধাণ্য বিস্তার ও বিচরণ ছিল না। কিন্তু বর্তমান যুগের বিজ্ঞানময় পৃথিবীর মুসলিমরা এখন এমন হয়ে গেল কেন??
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে বর্তমান পৃথিবীতে যে বিষয়গুলো মুসলমানের মাঝে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তার বেশির ভাগই অত্যন্ত তুচ্ছ ও অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানহীন কর্মকান্ড বিষয়ক; হয়তো কোন প্রপাগাণ্ডা, নয়তো পরনিন্দা পরচর্চা। সাড়া পৃথিবীর সব ধর্ম-অধর্ম বর্ণ-গোত্রের মানুষ প্রায় সবাই এখন কেমন যেন এক ধরনের নিকৃষ্ট মানসিকতার পরিচয় বহন করছে বা করে বেড়াচ্ছে। জ্ঞানের তত্ত্ব নির্ভর মৌলিক বিষয়গুলোর বিকৃত রূপ মানুষ বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে এবং সে সবেরই বেশি প্রচার প্রসার ঘটাচ্ছে!
তথ্যপ্রযুক্তিগত মাধ্যমের উন্নতি বিস্তৃতি ও পরিধি বৃদ্ধির কারণে প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হওয়ার কথাই ছিল সবচেয়ে বেশি, কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার সম্পূর্ণ উল্টো। প্রকৃত সত্য উন্মোচন ও জ্ঞান অন্বেষণ করার ইচ্ছা বা অভিপ্রায় দিনদিন মানুষের কেমন যেন কমে যাচ্ছে, কঠিন হয়ে যাচ্ছে জীবন। বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান প্রচার করা স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো ছাড়া বাকী সবগুলোই এখন কেমন যেন সস্তা বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যম হয়ে গেছে; অরুচিকর অনুষ্ঠান প্রচার প্রচারণায় মেতে উঠেছে। এমন কিছু উদ্ভট গণমাধ্যমও গজিয়েছে হটাৎ করে যেগুলোর মুখামুখি হলে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়।
অপ্রত্যাশিত ও অনিচ্ছাকৃতভাবে ইদানীং তেমনই কিছু চ্যানেল ও ইন্টারনেট সাইটের মুখামুখি আমি হয়েছি; যেগুলো হয়তো ধর্মীয় ভ্রান্তমতবালম্বীদের দ্বারা পরিচালিত, নয়তো নাস্তিকতায় বিশ্বাসী কারো দ্বারা। ইসলাম প্রচারের নামে বেশ কিছু মিডিয়া আজকাল সারাদিন আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম-সহ সকল মুসলিম মনীষীদের হেয় প্রতিপন্ন করার অকাজে ব্যতিব্যস্ত হয়েছে, বলা যায় উঠেপরে লেগেছে! আর অন্য আরেক দল তো ঈশ্বরবিহীন পৃথিবী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নাস্তিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে বেশ গর্ববোধ করছে! এসব বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে করতে এখন তারা যেন অসভ্যতার শেষ প্রান্তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বা উপনীত হয়েছে। দু'দলই আসলে তাদের নিজেদের অতি জ্ঞান বা অতি বিজ্ঞতা জাহির করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত তারা মুলতঃ তাদের অজ্ঞতা-মূর্খতারই প্রকাশ ঘটাচ্ছে।
হযরত ওমর রাদি'আল্লাহু আনহু বলেছেন - 'হে লোকসকল! জ্ঞান অন্বেষণ কর। আল্লাহ পাকের নিকট একটি মহব্বতের চাদর হলো জ্ঞান। যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের জ্ঞান তালাশ করে, আল্লাহ তা'আলা তাকে সে চাদর পরিধান করিয়ে দেন। তারপর সে কোন পাপ করলেও তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের তাওফিক দেয়া হয়। পূণরায় গুনাহ করলেও পুনরায় আল্লাহ-র সন্তুষ্টি লাভের তাওফিক দেয়া হয়। পুণরায় আবার গুনাহ করলেও আল্লাহ্ তাকে এ তাওফিক দান করেন। তৃতীয় বার গুনাহ করার পরও এরূপ করা হয়। এভাবে বার বার তাওফিক দেয়ার উদ্দ্যেশ্য হলো, তার থেকে মহব্বতের চাদর ছিনিয়ে না নেয়া, যদিও তার পাপ বাড়তে বাড়তে মৃত্যু হয়।'
শুধুমাত্র জ্ঞানের জন্যই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, অর্থাৎ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। জ্ঞানের তাপস হিসেবে শুধুমাত্র মানুষকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। জ্ঞান না থাকলে মানুষ আর পশুর মাধ্যে আর কোন পার্থক্যই থাকতো না বা মানুষ আর পশুর পার্থক্যও করা যেতো না। তাই তো জ্ঞানার্জনের জন্য জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম বলেছেন - 'দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ কর।' পবিত্র কালাম পাকে ও সহিহ ছিত্তাহ-য় এ ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত ও অসংখ্য হাদিস উল্লেখ করা আছে। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান অর্জনের কোনই বিকল্প নেই, যা সম্পূর্ণরুপে তাঁরই নূরের পরশ। এ জ্ঞান অর্জন করতে হলে চর্মচক্ষু নয়, অবশ্যই অন্তরচক্ষু উন্মোচিত করতে হবে।
কয়দিন আগে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের বিজ্ঞান সম্মত একটি লিখা পড়লাম। দশ হাজার কোটি নিউরন সমৃদ্ধ মানব মস্তিষ্ক নিয়ে অত্যন্ত বাস্তবসম্মত যুক্তিতর্কে তিনি যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন তা মোটেও ধর্মীয় জ্ঞানের বিরোধী কোন উপস্থাপনা নয়। তিনি অত্যন্ত সাবলীলভাবে বাস্তবতার সাপেক্ষে মেধাবী শব্দটি তাঁর অভিধান থেকে বাদ দিয়ে সেই স্থানে উৎসাহ শব্দটি সংযোজিত করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর এই চিন্তাচেতনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। কেননা - যদিও আল্লাহ্ রাব্বুল আ'লামিন যাকে ইচ্ছা তাকে জ্ঞান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে মুর্খতার অতল গহ্বরে তলিয়ে দেন। তদুপরি আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে নিজ বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা খাটিয়ে প্রকৃত সত্যের অন্বেষণ করলে, রাব্বুল আ'লামিন ঠিকই যে কাউকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানী হয়ে কেউ জন্মায় না বা জন্মগ্রহণ করে না, বরং অনুশীলনের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে হয়।
ইসলামের স্বর্ণযুগের মহান সাধক ইবনে মোবারক রহমাতুল্লাহ-কে কেউ একজন প্রশ্ন করেছিলেন— মানুষ কে? তিনি উত্তর করেছিলেন, 'অনাসক্ত দরবেশ (দরবেশ বলতে আবার কেউ এই জামানার ভন্ডদের মনে করবেন না, যারা সাদা দাঁড়িগোঁফ রেখে সাদা বা গেরুয়া জামা পরে দরবেশ সাজে!)।' পুনরায় প্রশ্ন করেছিলেন— নিচু কে? তিনি জবাব দিয়েছিলেন - 'যারা নিজেদের দ্বীন বিক্রি করে খায়।'
ইদানীং মুসলিম সমাজে বিদ'আত শব্দটি এতো বেশি প্রচার পেয়েছে, পাচ্ছে যা কল্পনাও করা যায় না। ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই বিদ'আত শব্দটি এখন মুসলিম সমাজে সর্বাধিক প্রচলিত। কিছু একটা বলতে গেলে বা করতে গেলে কেউ না কেউ ইসলামিক পণ্ডিত সেজে তৎক্ষনাৎ ফতওয়া দিয়ে বসে— আরে! সুন্নত নামাজ? - এটি তো বিদ'আত, পড়ার দরকার নেই; শ'বে বরাত শ'বে কদর - বিদ'আত ; তারাবী - বিদ'আত ; মিলাদ - বিদ'আত; মুনাজাত - বিদ'আত ; কবর জিয়ারত - বিদ'আত............ এমনতর অনেক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এবাদতই তাদের কাছে তাদের চোখে বিদ'আত!
বর্তমানে টিভি চ্যানেলগুলোর ইসলামিক অনুষ্ঠান বলতেই আমরা বুঝি - উপস্থাপক ও তথাকথিত মাওলানা মিলে বিদ'আত সাব্যস্ত করা ও তা নিয়ে কিছু কোর'আন হাদিস উদধৃতি করা; হউক তা প্রায়োগিক ভুল ব্যাখ্যা সমৃদ্ধ তাতে কারো কিছু যায় আসে না। শুধু বিদ'আত বিদ'আত বলে চেঁচিয়ে উঠতে পারলেই যেন বড় ইসলামীক চিন্তাবিদ হওয়া যায়! বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত মেধাবী অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে এখন মাদানী জ্বরে ভুগতে দেখছি। এই সব তরুণ-তরুণীরা মনে করে বর্তমান সময়ের এই সব তথাকথিত মাদানিরাই সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম; তাঁরা যা বলে তাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা! এর মূল কারণ— ইসলামের মৌলিক শিক্ষা তাদের মোটেও নেই; আর এই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে তথাকথিত মাদানীগুষ্ঠী।
বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েদের কাছে ফেজবুক, টুইটার, ইউটিউব ও ইন্টারনেট সম্পৃক্ত অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম। কিছুদিন আগেও আমি ইন্টারনেটের এই জটিল সমীকরণগুলো তেমন ভাল একটা বুঝতাম না, জানতাম না। মনে করতাম আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সবই বুঝি সঠিক! ইদানীং বেশ কিছু তথাকথিত আস্তিক ও স্বঘোষিত নাস্তিকের কিছু ব্লগ দেখার দূর্ভাগ্য আমার হয়েছে। এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীদের বিপদগামীতা ও এমন ধর্মীয় উগ্রবাদীতার কারণ কি? এই সব মাধ্যমে ধর্মীয় বিভ্রান্তি ও ভন্ডামী প্রচার প্রকাশ করা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আর মাদানীরা অতি কূটকৌশলে স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেট উভয় মাধ্যমেই প্রধান্য বিস্তার করে চলছে, তরুণ-তরুণীদের মনে ধরার মতো বয়ান তৈরী করে তারা যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছেড়ে দিচ্ছে। মুলতঃ তারাই বর্তমান যুগের সকল বিদ'আতের উপস্থাপক, প্রচারক ও প্রসারক।
একজন শিক্ষক হিসেবে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি—
আমাদের প্রিয় নবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম কিন্তু এসি রুমে বসে বয়ান করেন নাই, টিভি কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন নাই, কোর'আন হাদিস পড়িয়ে বা বয়ান করে টাকা পয়সা নেন নাই, বিমানে চড়ে হজ্জ করেন নাই; শুধু বলার জন্যই বলতে হয় - সেইসময় দুরে থাক ১০০ বছর আগেও এমন আলিশান বিল্ডিং মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটির অস্তিত্বও ছিল না! সর্বোপরি বলতে হয় তোমার এই মাদানীও সেইসময় ছিল না! তা হলে কি এ সবও বিদ'আত নয়?
কারো শিখানো মুখস্ত ছবক ভূলে গিয়ে সাধারণ হয়ে যদি একটু নিজ বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা খাটাও, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি তুমি হয়তো তাদের এতো সব বিদ'আত বলার আসল রহস্যটা খুব সহজেই উন্মোচিত করতে পারবে। কারণ, শিক্ষক হিসেবে আমি তোমাদের মেধা চিনি এবং জানি তোমরা কতটা বুদ্ধিমান। নতুন সব কিছুই বা সব আবিষ্কারই যদি বিদ'আত হিসেবে বর্জণীয় হয়, তবে বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে মুসলিম হিসেবে বিদ'আতমুক্ত হয়ে চলা বা থাকা কতটা দুষ্কর হবে তা তোমাদের বিবেচনায় ছেড়ে দিলাম। আর যারা বিদ'আত বিদ'আত বলে ফতওয়া দেয়, তাদের জন্য কি সবকিছু জায়েজ?
আজিজ আল সাউদের আরবের বর্তমান প্রচলিত ইসলাম সম্পূর্ণরূপে অন্তঃসারশূন্য মুসলিম তৈরীর একটি নিকৃষ্ট আবাসভূমি। মার্কিনী ছত্রছায়ায় আজকের সৌদি আরব পরিচালিত হচ্ছে। মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এবং আল সাউদের নামে বা তার বংশধরদের নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধুই ইসলামের একটি বিকৃত রূপের ছবক দেয়া হয়, যা আবদুল ওহাব নাজদীর ভ্রান্ত মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। মদিনা ইসলামীক ইউনিভার্সিটি ও সাউদের নামে গড়া ধর্মিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত শতবর্ষে প্রতিষ্ঠিত। এই সব শিক্ষাকেন্দ্র থেকে যা শিখানো হয়, তা সম্পূর্ণরূপে আবদুল ওহাব নাজদীর পরিকল্পিত ও রুপান্তরীত ইসলামিক ভ্রান্ত মতবাদ, যা ডাকাত সর্দার সাউদের বর্তমান বংশধরদের দ্বারা পরিচালিত, প্রচারিত ও প্রসারিত। আমাদের দেশের দেইল্যা রাজাকার'ও যেমন করে বিশিষ্ট তাফসীরকারক হতে পারে, ঠিক তেমনই যদু মধু স্যামও বর্তমান সৌদি আরবের ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠ নিয়ে বিশিষ্ট ইসলামিক পন্ডিত সাজতে পারে; সম্বল হতে হবে শুধুমাত্র চাপার জোর! মস্তিস্কের দশ হাজার কোটি নিউরনের পুরোটাই তাদের চাঁপা থাকে।
সস্তা জনপ্রিয়তা বা কারো প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে আমি ইসলামের কলংকিত এই সব ইতিহাস তুলে ধরছি না; আমরু বিল মা'রুফ ও নাহি অনিল মুনকারে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রকৃত সত্য জানানোর এবং তা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার অভিপ্রায়ে ইমানি দায়িত্ব থেকে এসব অপ্রিয় সত্য কথাগুলো তুলে ধরছি, যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজে কেফায়া। আমার বলা দরকার, বলছি; কেউ পড়ুক বা না পড়ক তাতে আমার কিছু আসে যায় না। বিবেক-বুদ্ধি, বিচার-বিবেচনা সম্পূর্ণ নিজেস্ব ব্যাপার, হেদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর জন্য প্রথম ও প্রধান ফরজ যাকে ইসলামের পরিভাষায় ফরজে আইন বলা হয়, তা হলো— জ্ঞানার্জন। যেমন - একজন মুসলিমকে অবশ্যই নামাজ আদায় করতে হবে, আর তা আদায় করতে হলে অবশ্যই আগে নামাজ কি করে পড়তে হয় তা শিখে নিতে হবে। বোধ-বুদ্ধিহীনের জন্য ইসলাম এক অলীক স্বপ্ন; শিশু, পাগল বা মাতালের জন্য কিন্তু নামাজ ফরজ নয়।
পৃথিবীর সব ধর্মই অনেকটা আবেগ অনুভুতি ও অন্ধ বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। ধর্মীয় ব্যাপারে অনেক সময়ই কোন ধরনের যুক্তিতর্ক খাটে না, বরং নির্দ্বিধায় মেনে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ, ঈমানের পরিচায়ক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লামের মিরাজ নিয়ে আজকের অনেকের মতো তখনও অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদি'আল্লাহু আনহুর কানে যখন মিরাজের খবর পৌঁছে, তখন তিনি শুধু জানতে চেয়েছিলেন - 'আমার প্রাণপ্রিয় নবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম কি নিজ মুখে এই কথা বলেছেন? - যদি বলে থাকেন, তবে কোন প্রশ্নের উত্তর খোজার আমার দরকার নেই, আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি - মিরাজ সত্য সত্য সত্য।' ধর্মবিশ্বাস এরকমই হয় এবং হওয়া উচিত; অযথা গোরামীর যেখানে কোন স্থান নেই।
তাছাড়া পৃথিবীর কোন ধর্মেই ধর্মবিশ্বাস নিয়ে গোড়ামী চলে না বা খাটে না। যেহেতু হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু সাল্লামই পবিত্র কোর'আনের উপস্থাপক এবং তাঁর জীবনের প্রতিটি কথা অভিব্যক্তি ও ঘটনাই এক একটি হাদিস। তাই বিবেক খাটিয়ে সঠিক ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে যুক্তিহীনভাবে এসব মেনে নিতে হবে, তদানুসারে সেসব বাস্তবায়ন করতে হবে। যিনি মুল ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা কতটা যৌক্তিক? অযথা তাঁকে বিতর্কিত করায়ই বা কার কি লাভ?
হা! ইহুদী নাসারা মুশরিক এবং নাস্তিকদের চীর শত্রু এই মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম। কারণ তিনি তাদের বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন, একত্ববাদের কথা বলেছেন, সত্য ও সুন্দরের কথা বলেছেন; ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। অতএব সেইসব মিথ্যাবাদী গোষ্ঠীগুলি তো হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লামের বিরোধীতা করবেই। কিন্তু মুসলিমের ঘরে জন্ম নিয়ে, নামের আগে সেই মহান মানুষটির নাম সংযোজিত করে আজ যারা সারা পৃথিবীতে প্রতি মুহুর্তে সেই তাঁকেই গালমন্দ করছে বা হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তারা আসলে কারা? - নিশ্চিৎ, ছদ্মবেশী ইহুদী / নাসারা / মুশরিক / নাস্তিক, নয়তো মুনাফিক; 'ইসলাম' যাদের কাছে শুধুই একটি ভীতির নাম।
এখন আসুন একটু জানার চেষ্টা করি বিদ'আত আসলে কি? বিদ'আত অর্থ হলো— নব্য আবিষ্কার। ইসলামের পরিভাষায় - যে সমস্ত আকিদা হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লামের সময় ইসলামে প্রচলিত ছিল না সেই সব আকিদা। বিদ'আত সমন্ধে হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম বলেন - 'যে ব্যক্তি ইসলামে নতুন একটি ভাল রীতি আবিষ্কার করলো তার জন্য উত্তম প্রতিদান আছে এবং যারা তা আমল করবে তারাও উত্তম প্রতিদান পাবে। আর যে ব্যক্তি একটি খারাপ রীতি আবিষ্কার করলো তার জন্য খারাপ প্রতিদান আছে এবং যারা তা আমল করবে তারাও খারাপ প্রতিদান পাবে।' —[ সহিহ মুসলিম, মেশকাত ]
সেই হিসাবে বিদ'আত দুই প্রকার; যথা— বিদ'আতে হাসানাহ ও বিদ'আতে সাঁইয়্যাহ।
বিদ'আতে হাসানাহ অর্থ ভাল কাজ:
১ম খলিফাতুন মুসলিমীন সিদ্দিকে আকবর হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদি'আল্লাহু আনহু যখন পবিত্র কুর'আন সংকলিত করার কথা বললেন তখন একদল সাহাবী (রাঃ) আরজ করলেন - 'হে খলিফাতুল মুসলিমীন! আপনি কি এমন কাজ (বিদ'আত) করবেন যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম করেননি?'
সিদ্দিকে আকবর তাঁদের জবাব দিলেন - 'আল্লাহর কসম! এটা উত্তম কাজ।' —[সহিহ বোখারী ও মেশকাত শরীফ]
২য় খলিফাতুন মুসলিমীন ফারুকে আজম হযরত ওমর ফারুক রাদি'আল্লাহু আনহু রমজানের ৩০ দিন জামাতে তারাবীহ নামাজ আদায় চালু করেন, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লামের সময় প্রচলিত ছিল না। একদিন হযরত ওমর ফারুক (রা:) হযরত আব্দুর রহমান (রা:)-কে সাথে নিয়ে রাতে বের হলেন এবং দেখতে পেলেন সাহাবী রাদি'আল্লাহু আনহুমাগণ জামাত সহকারে তারাবীহ আদায় করছেন; তিনি খুশি হয়ে বললেন— 'এটা কতই না উত্তম কাজ!' —[সহিহ বুখারী]
৩য় খলিফাতুন মুসলিমীন যিঁন্নুরাইন হযরত উসমান রাদি'আল্লাহু আনহু জুম্মার নামাজে খুতবার আযান চালু করেন, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লামের সময় ছিল না বা পূর্ববর্তী দুই খলীফার আমলে ছিল না। —[সহিহ বুখারী]
মুসলিম সমাজে এমন অসংখ্য বিদ'আত প্রচলিত হয়েছে খোলাফায়ে রাশেদীনদের সময়ে এবং পরবর্তি সময়ে। মুলত: এবাদত বন্দেগী তো সম্পূর্ণরূপে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এবং একমাত্র সে প্রত্যাশায়ই করা হয়; কোন ব্যক্তি বা গুষ্টির খুশির জন্য কেউ এবাদত করে না। ১৫ শাবান শ'বে বরাতের রাতে আমরা আহলে সুন্নাহ-র মুসলিমরা যদি সাড়া রাত জেগে এবাদত বন্দেগী করি, পূর্বপুরুষের মঙ্গল কামনান্তে তাঁদের কবর জেয়ারত করি, কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই - আপনাদের সমস্যা কি? আপনাদের কাছে তো কিছু চাচ্ছি না? আপনাদের কোন ক্ষতিও তো করছি না? এই সব নিয়ে আপনাদের এতো আঁতে ঘাঁ লাগে কেন? বার বার বিদ'আত বিদ'আত করেন কেন? ইবাদত বন্দেগী করি আল্লাহ রাব্বুল আ'লামিনকে রাজি খুশি করার জন্য , সেজদা করি তাঁর সান্নিধ্য লাভের প্রত্যাশায়। তাতে আপনাদের এতো কষ্ট লাগে কেন?
বিদ'আতে সাঁইয়্যাহ অর্থ খারাপ কাজ:
ছয় উঁশুলের নামে বর্তমানের এই তাবলীগ কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লামের জামানায় ছিল? পরিবার পরিজন ফেলে ৪০ দিনের চিল্লা কি ভাল বিদ'আত? টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে বিশ্ব এস্তেমা করা কি ভাল বিদ'আত?
গণতন্ত্রকে খেলাফতের অংশ মনে করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো ও মানুষকে জবাই করে হত্যা করা কি?
মাজারে গান-বাজনা করা, মানত করা; এসব কি?
এসব নতুন নতুন বিদ'আত তুলে ধরতে গেলে আর শেষ হবে না এই লিখা; তাই থাক।
বিবেক-বুদ্ধি বিচার-বিবেচনা খাটিয়ে আপনিই কিয়াস করে বিদ'আতে সাঁইয়্যাহ বা ইসলামের নামে খারাপ কাজগুলো এক এক করে খুঁজে নিন এবং এখন থেকেই ওসব পরিহার করতে চেষ্টা করুন; দেখবেন ফেতনা ফ্যাসাদের এই জামানায়ও আপনি সুখি। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আপনাকে মদদ যোগাবেন।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ্
১৫-০৯-২০১৪.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন