'বিদ'আত আর শিরক'- এ শব্দ দু'টো আজকাল তথাকথিত এক শ্রেণীর আলেম ও তাদের অনুসারীদের মুখে খইয়ের মতো ফুটছে! মৃত বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, আত্বীয়-স্বজন, মুমিন-মুমিনাতের কবর জিয়ারতও তারা শিরক বলে কবর পুজার সাথে সামিল করছে! অলি-আউলিয়ার মাজার জেয়ারতকে মাজার পুজা বলে শিরকের সাথে তুলনা করছে! এমন কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম-এর পবিত্র রওজা মোবারক জেয়ারতকেও শিরক বলছে!
ওদের নটরাজ দলনেতা নাসির উদ্দিন আলবানী তো আরো কয়েক ধাপ উপরে উঠে দুনিয়াতে রাসুল (সাঃ) বিদ্ধেষী হিসেবেই বেশ খ্যাতি অর্জন করে ১৯৯৯ সালে কবরে গেছেন। হোজ্জা আলবানীর পূর্বসূরি নুরুদ্দীন জঙ্গীর শাসনামলে চুরি করে হুজুর পাক (সাঃ)-এর পবিত্র দেহমোবারক রওজা শরীফ থেকে তুলে নিয়ে যেতে সুরঙ্গ পথ খুড়েছিল; আর এই বজ্জাত হোজ্জা আলবানী ফতোওয়া দিয়েছিল, মদিনা মনোয়ারার হুজুর পাক (সাঃ)-এর রওজা খুড়ে তাঁর পবিত্র দেহাবশেষ কিছু পাওয়া গেলে তা সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে, ফেলে দিতে (নাউজুবিল্লাহ!)। এতে নাকি কবর পুজা(!)-র মতো শিরক বন্ধ হয়ে যাবে!
বর্তমান মুসলমানদের মাঝে যে বিভেদ তা এই শিরকগুরু বজ্জাত আলবানী রোপিত বীজ। মুসলমানদের মাঝে এমন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার জন্যই এসব করে গেছে, যা এখন ভাইরাস হয়ে সমগ্র মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত তার অনুসারিরা মুসলমানের মৌলিক এবাদত নামাজেও হাত দিয়েছে, ঢুকে পড়েছে। 'নামাজে নিয়ত করা ফরজ; কিন্তু নিয়ত মুখে পড়া বিদ'আত!'- এই হলো তাদের বক্তব্য। তাদের যুক্তি, নাওয়াইতুআন নামক শব্দগুলো কোন দিন নবীজি (সাঃ) পড়েন নাই, তার সাহাবা (রাঃ)-গণও পড়েন নাই, তাবেঈরা পড়েন নাই, কেউই পড়েন নাই; কায়েদা বোগদাদী নামক এক ব্যক্তি নাকি এগুলো সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছেন! নামাজকে নাকি তিনি যান্ত্রিক বানিয়ে ফেলেছেন।
তাদের বক্তব্য— 'নিয়ত হলো ইচ্ছা বা আকাংখা, যখন সন্ধা বেলা মসজিদের দিকে যায় সেটাই মাগরিবের নামাজের নিয়ত। হ্যাঁ, অবশ্যই নামাজ শুরুর আগে কোন নামাজ শুরু করতেছি সেটা লক্ষ করা দরকার। কারণ ফরজ সালাতে দাঁড়িয়ে সুন্নত পড়ছি এমন নিয়ত করলে হবে না। নিয়ত করা ফরজ, নিয়ত মুখে পড়া না। মানে অন্তরে নিয়ত করা ফরজ, মুখে নিয়ত করা বিদ'আত।' - ইত্যাদি ইত্যাদি….... আরো কত কি যুক্তি!
আচ্ছা, ঠিক আছে— আমি যদি মনে মনে নিয়ত করি মুখেও বলি এতে কার কি ক্ষতি? মনে করেন আপনি আসরের নামাজ পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হলেন, মসজিদে এসে দেখলেন জামাত দাঁড়িয়ে গেছে, তখন আপনি আল্লাহু-আকবার বলে দাঁড়ালেই তো হয়ে যাবে, কারণ আপনি বাসা থেকে নামাজের জন্যেই (নিয়তে) বের হয়েছেন; এতে কোনই সমস্যা নেই। আবার আরেকজন পাওনাদার বা কাউকে দেখে তাকে এরানোর জন্য তারাতারি অজু করে নাওয়ায়তুয়ান.... বলে জামাতে শরিক হলেন; তার টার্গেট হচ্ছে ঐ লোককে এরানো। এখন সেই ব্যক্তির মনে নামাজের এরাদা না হলে তার নামাজ কি হবে? কোন ভাবেই এতে নামাজ পরিপূর্ণভাবে আদায় হবে না। নামাজে নিয়ত করা সুন্নত বলে উল্লেখ আছে ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ)-র কিতাবে। আর হোজ্জা আলবানীর যত শ্লেষ তা তো ইমামে আজমের সাথেই! কিন্তু কেন? উত্তর তো অনেক সোজা। দুনিয়াতে হানাফী মাজহাবের অনুসারি বেশিরভাগ; ওদের বিভ্রান্ত করা।
শুধু নামাযের ক্ষেত্রেই নয়, বরং যে কোন কাজের ক্ষেত্রেও নিয়ত করা জরুরি। কারণ নিয়ত সঠিক না হলে তা আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। কিন্তু প্রচলিত নিয়মে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করার মতো কোন দু‘আ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়; বরং আপনি মনে মনে যে কাজটি করবেন তার উদ্দেশ্য ঠিক করে নেওয়াটাই নিয়ত হিসেবে গণ্য হয় এবং হবে।
নামাযে আহকাম- আরকান ১৩ ফরজ; আহকাম ৭টি, আরকান ৬টি। এর একটিও অসম্পূর্ণ থাকলে নামাজ সহিহ হবে না। আহকামের ৭টি হলো : ১). শরীর পাক; ২). কাপড় পাক; ৩). নামাযের জায়গা পাক; ৪). সতর ঢাকা; ৫). কিবলামুখী হওয়া; ৬). ওয়াক্ত চিনা; ও ৭). নিয়ত করা।
অতএব, দেখা যাচ্ছে নিয়ত করা একটি ফরজ কাজ। এটা আরবীতে না করতে পারলেও সমস্যা নেই, তবে অবশ্যই মুখে ফরজ, নফল, সুন্নত যে নামাজই হোক না কেন নিয়ত করতে হবে।
নামাজের ভেতরের ছয়টি ফরজ হলো - ১). তাকবিরে তাহরিমা; ২). কিয়াম করা; ৩). কেরাত পড়া; ৪). রুকু; ৫). সেজদা; ও ৬). শেষ বৈঠক।
নামাজ শুরুর পূর্ব থেকে শুরু করে নামাজের শেষ পর্যন্ত মোট এই তেরটি কাজ ফরজ। কোনো নামাজে এগুলোর কোনো একটিও যদি ছুটে যায় তাহলে নামাজ হবে না। সেই নামাজ তখন পুনরায় আদায় করতে হবে।
নামাজে এসব ফরজ ছাড়াও কিছু ওয়াজিব আছে এবং সান্নতও আছে। নামাজের ওয়াজিবগুলো হলো—
১). ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে এবং অন্যান্য নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া।
২). উপরোক্ত রাকাতগুলোতে সুরা ফাতেহার পর অন্য কোনো সুরা কিংবা কমপক্ষে ছোট তিন আয়াত অথবা বড় এক আয়াত পড়া। বড় একটি আয়াতের অংশ যদি ছোট তিন আয়াত সমান হয় তাহলে ততটুকু দিয়েও নামাজ হয়ে যাবে।
৩). রুকুর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৪). দুই সেজদার মাঝে সোজা হয়ে বসা।
৫). তাদিলে আরকান অর্থাৎ ধীরস্থিরতার সঙ্গে রুকু-সেজদা আদায় করা।
৬). প্রথম বৈঠক অর্থাৎ তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে দুই রাকাতের পর বসা।
৭). প্রথম ও শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়া।
৮). বেতের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া।
৯). আস্তের জায়গার আস্তে পড়া, জোরের জায়গার জোরে পড়া। ফজর মাগরিব ও ইশার নামাজের প্রথম দুই রাকাতে ইমাম জোরে কেরাত পড়বেন। একাকী নামাজ আদায়কারী জোরেও পড়তে পারেন, আস্তেও পড়তে পারেন। আর জোহর ও আসর নামাজে ইমাম ও একাকী নামাজ আদায়কারী সকলেই আস্তে আস্তে কেরাত পড়বেন। মাগরিবের শেষ রাকাত এবং ইশার শেষ দুই রাকাতেও সকলকেই কেরাত আস্তে পড়তে হবে।
১০). জুমার নামাজ, ঈদের নামাজ এবং রমজান মাসে বেতের ও তারাবির জামাতে জোরে কেরাত পড়তে হবে।
১১). নামাজের শেষে ডানে-বামে সালাম ফেরানো।
১২). ঈদের নামাজের অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা। ও
১২). নামাজের আমলগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
নামাজের সুন্নতগুলো হলো— দাঁড়ানো অবস্থায়:-
১). পরিপূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ানো; মাথা সামনে বা পেছনে ঝুঁকানো যাবে না।
২). তাকবিরে তাহরিমার সময় কান বরাবর দুই হাত তুলুতে হবে।
৩). হাত তোলার সময় হাতের তালু এবং আঙ্গুলগুলো কেবলামুখী করে রাখতে হবে।
৪). হাত তোলার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবে রাখতে হবে; একেবারে মিলিয়েও নয়, আবার পুরোপুরি ছড়িয়েও নয়।
৫). জামাতের নামাজে ইমাম সাহেবের জন্যে উচ্চস্বরে তাকবির বলা সুন্নত।
৬). নাভির নীচে হাত বাঁধতে হবে (হানাফী মাজহাব মতে)।
৭). ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দিয়ে বাম হাতের কব্জি বৃত্তাকারে ধরতে হবে; অবশিষ্ট তিন আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের সোজা বিছিয়ে দিনে হবে।
৮). তাকবিরে তাহরিমার পর আস্তে আস্তে ছানা পড়তে হবে।
৯). এরপর আস্তে আস্তে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়তে হবে।
১০). সুরা ফাতেহা শেষে আস্তে আস্তে আমীন বলতে হবে।
১১). বিতির নামাজের তৃতীয় রাকাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার পূর্বে তাকবির বলতে হবে। ও
১২). দোয়ায়ে কুনুত পড়ার পূর্বে তাকবিরে তাহরিমার মতো দুই হাত উঠিয়ে তাকবির বলতে হবে।
রুকুতে:-
১). রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবির বলতে হবে।
২). রুকুতে দুই হাত দিয়ে দুই হাঁটু ধরে রাখতে হবে এবং হাতের আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে রাখতে হবে।
৩). রুকুতে হাটু পিঠ ও কোমর সোজা করে রাখতে হবে।
৪). রুকুতে পায়ের নলা ও হাঁটু সোজা করে রাখতে হবে; ওজর ছাড়া হাঁটু সামনের দিকে বাকিয়ে রাখা সঠিক নয়।
৫). উভয় বাহু পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক রাখতে হবে।
৬). কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবিহ পাঠ করতে হবে।
৭). রুকু থেকে উঠার সময় সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ এবং ওঠার পর রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে। একাকী নামাজ আদায়কারীর উভয়টিই পড়তে হবে; আর জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়লে ইমাম সাহেব শুধু সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ পড়তে পারেন, উভয়টিও পড়তে পারেন; আর মুকতাদি শুধু রাব্বানা লাকাল হামদ পড়বেন।
সেজদায়:-
১). সেজদায় যাওয়ার সময় তাকবির বলতে হবে।
২). প্রথমে হাঁটু, পরে হাত, পরে নাক ও এরপর কপাল মাটিতে রাখতে হবে।
৩). সেজদার সময় চেহারা দুই হাতের মাঝে রাখতে হবে; দুই হাত রাখতে হবে কান বরাবর।
৪). সেজদার সময় দুই বাহু মাটিতে না বিছিয়ে মাটি থেকে পৃথক রাখতে হবে।
৫). দুই হাতের বাহু পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক রাখতে হবে।
৬). উরু থেকে পেটকে পৃথক রাখতে হবে। ৭). হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখতে হবে।
৮). হাতের আঙ্গুলগুলো কেবলামুখী করে রাখতে হবে।
৯). পায়ের আঙ্গুলগুলো যথাসম্ভব কেবলামুখী করে রাখতে হবে।
১০). সেজদায় কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়তে হবে।
১১). সেজদা থেকে ওঠার সময় তাকবির বলতে হবে।
১২). সেজদা থেকে ওঠার সময় প্রথমে কপাল পরে নাক এরপর হাত তুলতে হবে।
১৩). দুই কিংবা চার রাকাতবিশিষ্ট সকল নামাজের প্রথম ও তৃতীয় রাকাতে সেজদা থেকে ওঠার সময় হাঁটুতে ভর করেই সোজা উঠে দাঁড়াতে হবে; হাত দিয়ে মাটিতে ভর দেয়া কিংবা বসা যাবে না।
বসার সময়:-
১). দুই সেজদার মাঝে এবং আত্তাহিয়্যাতুর সময় দুই হাত দুই উরুর উপর রাখতে হবে।
২). ডান পা খাড়া রাখতে হবে এবং বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসতে হবে।
৩). ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো কেবলামুখী করে রাখতে হবে।
৪). হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক করে রাখতে হবে।
৫). শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরুদ শরীফ পড়তে হবে।
৬). দোয়ায়ে মাছুরা পড়তে হবে।
৭). নামাজ শেষে সালাম ফেরানোর সময় প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে চেহারা ঘুরাতে হবে।
এখন বলছি নামাজের কিছু আদবের কথা—
১). দাঁড়ানোর সময় সেজদার স্থানে দৃষ্টি রাখতে হয়।
২). রুকুর সময় দৃষ্টি পায়ের পাতায় রাখতে হয়।
৩). সেজদার সময় নাকের ডগায় দৃষ্টি রাখতে হয়।
৪). বসা অবস্থায় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়।
৫). ডান দিকে সালাম ফেরানোর সময় ডান কাঁধে এবং বাম দিকে সালাম ফেরানোর সময় বাম কাঁধে দৃষ্টি দিতে হয়।
৬). হাই এলে প্রথমত নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করতে হয়, না পারলে বাম হাতের পিঠ দিয়ে মুখ ঢেকে দিতে হয়; আর যদি হাত বাঁধা অবস্থায় হয় তাহলে ডান হাতের তালু দিয়ে মুখ ঢাকতে হয়।
নিয়ত আসলে কি? নিয়ত আরবী শব্দ (نية বা نيَّة) অর্থ: اَلْقَصْدُ وَ الْاِرَادَة উদ্দেশ্য, অভিপ্রায়, অভিলাষ, মনোবাঞ্ছা, মনের ঝোঁক, কোনো কিছু করার ইচ্ছা, কোনো কাজের প্রতি মনকে ধাবিত করা ইত্যাদি; ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Intension। আর সংজ্ঞায়িত করতে গেলে এমন করে বলা যায়— Niyyah is an Islamic concept; the intention in one's heart to do an act for the sake of Allah.
ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, মনের মধ্যে কোনো ভাবের উদয় হলে, সে ভাব অনুযায়ী আমল করা কিংবা না করার কোনো দিকেই মন ধাবিত না হলে, মনের ভেতরে ঘুরপাক খাওয়া সে ভাবকে বলা হয় হাদসুন-নাফস বা ওয়াস্ওয়াসা। আর সে ভাবকে বাস্তবে রূপদানের জন্য মনকে ধাবিত করার নাম ‘হাম্ম’ বা নিয়ত (অভিপ্রায়) এবং মজবুত নিয়তকে বলা হয় ‘আযম তথা সংকল্প।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ মুখে উচ্চারণ করে নামাজের নিয়ত করেছেন বলে তেমন কোনো প্রমাণ নেই, তাই এটা সুন্নত বলা ঠিক হবে না; তবে অন্তরের সংকল্পের পাশাপাশি মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করায়ও আবার কোনো সমস্যা নেই। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, উচ্চারণসহ প্রচলিত আরবি বা বাংলা নিয়ত করতে গিয়ে যেন ‘তাকবিরে উলা’ ছুটে না যায় এবং অন্য মুসল্লির মনোযোগে ব্যাঘাত না ঘটে।
বর্তমান সময়ে অনেকেই বলে থাকেন, ‘মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা বৈধ নয়; কারণ হাদীসে তো মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করার কথা নেই।’ তাদের এই কথাটিও সঠিক নয়। কারণ, হাদীসে শুধু নিয়ত করার কথা আছে, মনে মনে না মুখে উচ্চারণ করে– এমন কোনো কথা নেই। মুখে উচ্চারণ করার কথাও নেই, মনে মনে পড়ার কথাও নেই। তবে হজ্জের সময় মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করার বিষয়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই হজ্জের মতো নামাজের মধ্যেও মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা যেতে পারে; তবে এটি জরুরি কিংবা সুন্নত পর্যায়ের কোনো আমল নয়।
আবার অনেকে মনে করেন, আরবিতে নিয়ত না করলে নামাজ যেন পরিপূর্ণ হয় না। তাই তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ, সুন্নত, বেতের নামাজ, ঈদের নামাজ, জানাজার নামাজ, তারাবির নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ, ইশরাকের নামাজ, আওয়াবিনের নামাজ বা যে কোন নফল নামাজের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ত মুখস্থ করেন; অথচ আরবিতে এভাবে নিয়তের সাথে নামাজ পূর্ণ হওয়া না হওয়ার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।
মূল কথা হলো, ইবাদত-আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি করা মোটেও উচিত নয় বা ঠিক নয়, আবার সবকিছুতে ছাড়াছাড়িও অত ভালো কিছু নয়। আচ্ছা বলুন তো আপনাদের পূর্ব-পুরুষ বাপ-দাদারা যে মুখেও নিয়ত করে নামাজ আদায় করে কবরে গেছেন, তারা কি তাহলে সবায় জাহান্নামী (নাউজুবিল্লাহ!)? আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং অতি বাড়াবাড়ি থেকে হেফাজত করুন॥
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
১১ জুলাই, ২০২০.
🖋🖋🖋🖋🖋
উত্তরমুছুন