বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০

তাহাজ্জুদ মনকে সতেজ করে:

'হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কুর'আন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে।' -(সূরা মুয্যাম্মিল‌ : ১-৪)

'নিশ্চয়ই মুত্তাকী লোক বাগ-বাগিচায় এবং ঝর্ণার আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়ামত তাদের প্রভূ পরোয়ারদিগার তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহণ করবে। (কারণ) নিসন্দেহে  তারা এর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতো। (কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে মাগফেরাত চাইতো)।' -(সূরা যারিয়াত : ১৫-১৮)

'এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে থাক। এ তোমার জন্যে আল্লাহর অতিরিক্ত ফযল ও করম। শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে বাঞ্ছিত মর্যাদায় ভূষিত করবেন।' -( সূরা বনি ইসরাইল : ৭৯)

'বস্তুতঃ রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্যে খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুর'আন পাঠ বা যিকির একেবারে যথার্থ।' -(সূরা মুয্যাম্মিল : ৬)

তাহাজ্জুদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত। তিনি এই নামাজ নিয়মিতভাবে পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দেরকে তা নিয়মিত পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। পবিত্র কুর'আনুল কারীমের অনেক জায়গায় তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে । যেহেতু উম্মতে মুহাম্মদীকে নবী কারীম (সাঃ)-কে অনুসরণ করার হুকুম করা হয়েছে, সে জন্যে তাহাজ্জুদের এ তাগিদ পরোক্ষভাবে গোটা উম্মতের জন্যই করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ রাত্রে জাগ্রত হয় ও নিম্নের দো'আ পাঠ করে এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, তা কবুল করা হয়। আর যদি সে ওযূ করে এবং ছালাত আদায় করে, সেই ছালাত কবুল করা হয়।

'লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার; ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ; রাব্বিগফির্লী'
অনুবাদ : আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর জন্যই সকল রাজত্ব ও তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা এবং তিনিই সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী। মহা পবিত্র আল্লাহ। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত; হে আামার প্রতিপাল! আামাকে ক্ষমা করুন।' -(বুখারী, মিশকাত হা/১২১৩; অনুচ্ছেদ-৩২)

হুজুর পাক (সাঃ) বলেন, 'রাতের শেষ সময়ে আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার দিকে নাযিল হন এবং বলেন, “ডাকার জন্য কেউ আছে কি যার ডাক আমি শুনবো,  চাওয়ার জন্যে কেউ আছে কি যাকে আমি দেবো, গুনাহ মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি যার গুনাহ আমি মাফ করবো?” -(সহীহ বুখারী)।

তাহাজ্জুদের অর্থ হল ঘুম থেকে জাগা বা উঠা। পবিত্র কুর'আনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের যে তাকীদ করা হয়েছে তার মর্ম এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর জেগে উঠে নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদের মসনূন সময় - এশার নামায পর ঘুমাবে এবং তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামাজ আদায় করবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো মধ্য রাতে, কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মেসওয়াক ও অযু করে নামাজ আদায় করতেন।

তাহাজ্জুদ অন্ততপক্ষে দুই রাকাত এবং ঊর্ধতম আট রাকাত; তবে যার যা ইচ্ছে দুই দুই রাকা'আতে পড়া যায়।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেশিরভাগ সময়ের অভ্যাসগত তাহাজ্জুদ ছিল দুই দুই করে লম্বা তিলাওয়াত ও লম্বা সেজদাসহ আট রাকা'আত। অতঃপর তিন রাকা'আত বিতর; যা তিনি ইশার নামাজের সাথে পড়তেন না।

যদিও এই নামাজ বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু খুবই কার্যকর। ফরয, ওয়াযিব, সুন্নত ও বিতর নামাজে সাধারণ নিয়মের বাহিরে সিজদায় যেয়ে  নিজ থেকে কোন দোয়া করা কিংবা কোন কথা বলার নিয়ম নেই। তাহাজ্জুদ বা নফল সালাতে সিজদায় যেয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার কাছে প্রাণ খুলে দোওয়া করা যায়, চাওয়া যায়॥

তাহাজ্জুদ-এর ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা স্বয়ং পবিত্র কুর'আনুল কারীমে বলেন - 'গভীর রাতে তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমিতা দেরকে যে রুযী প্রদান করেছি,তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য কি কি নয়ন প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে।' -(সূরা আস-সেজদা : ১৬-১৭)   

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
৩ এপ্রিল, ২০১৮.

1 টি মন্তব্য: