কি এক আজিব যুগ আমরা অতিবাহিত করছি এবং মুকাবিলা করতে হচ্ছে— প্রতিটি ধর্মীয় বিষয়ে যখন চলছে অযথা হৈচৈ, দৃঢ় বিশ্বাসের প্রতিটি বিষয় নিয়ে হচ্ছে অতি মাত্রায় বাড়াবাড়ি; ঘরে বাইরে সবখানে একই অবস্থা। প্রধানত তাওহিদ, রিসালত এবং আখিরাতের বিশ্বাস সমন্বয়ে গঠিত ইসলামের মূল আকিদাহ; যার সংশোধন পরিবর্তন পরিমার্জন নিষিদ্ধ। কিন্তু এক শ্রেণির লোকজন ইনিয়ে-বিনিয়ে রিসালতের বিরোধিতায় নিয়োজিত হয়; বিরুদ্ধে চলে যায় বা রিসালতকে মেনে নিতে তাদের কষ্ট হয়! বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার দুরভিসন্ধি নিয়ে তারা কাজ করে, মাঠ গরম করছে প্রতিনিয়ত। অবশ্য তারা আদিতেও ছিল বর্তমানেও আছে; ফেরাউন কারুনরা আল্লাহকে ঠিকই মানতো, ওদবা সাঈবা মুগিরা আবু জেহেল আবু লাহাবরাও তাওহীদে ঠিকই বিশ্বাসী ছিল, কিন্তু তারা মানতে পারত না বা পারে না রিসালতকে, নবী (আঃ)/নবী করীম (সাঃ)-এর বিরোধিতা ছিল তাদের কাজ। আগের ও বর্তমানের জুল খুওয়াইছারা তামীমীরাও পারে না মেনে নিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মান ও শা'ন; তারাই করছে যতসব গন্ডগোল, ফেতনা। স্মরণ রাখতে হবে রিসালতই ঈমান; রিসালত এবং নবী করীম (সাঃ) বিষয়ক কোন কিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয় এবং তেমন কোন সুযোগও নেই।
কিন্তু কেমন করে এবং কেন যেন বর্তমানে নবী (সাঃ) বিদ্বেষের প্রচার-প্রচারণাই বেশি হচ্ছে; মিডিয়া দখল করে নিয়েছে নবী (সাঃ) বিদ্বেষী খারিজিয়াতের সোল এজেন্টরা। তারা মুসলিম সমাজকে করছে কলুষিত, ছড়িয়ে দিচ্ছে খারিজিয়াতের বিষ; এ বিষ পানে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে অধিকাংশ লোকজন, কাবু হয়ে পড়ছে। বিষবৃক্ষের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে ইসলাম কম জানা বা একেবারে না বুঝা লোকগুলা; ওদেরকে টার্গেট করেই এ বিষ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আখেরাতের ভয় তারা মোটেও করে না; আখেরাত সংক্রান্ত বিষয়ের মাহাত্ম্য অবলোকনে দিন দিন লোকজন অপারগ হয়ে যাচ্ছে, কেন এমন হচ্ছে? নবী-রাসুলগণের যথার্থ ওয়ারিস বা উত্তরাধিকার থেকে দুনিয়া শূন্য হয়ে যাচ্ছে; এখন শুধু প্রথাগত লোকজনই মোল্লা-মৌলুভী হিসেবে রয়ে গেছে। যাদের বেশিরভাগের উপরই শয়তান প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। ঔদ্ধত্য তাদেরকে পথহারা করে রেখেছে; এদের প্রত্যেকেই প্রায় নিজের সাময়িক লাভের দুরভিসন্ধি নিয়ে সরলমনা মুসলমানদের ঠকাচ্ছে। আর এ জন্যই তারা অধিকাংশ ভাল বিষয়কে মন্দ ও মন্দ বিষয়কে ভাল বিবেচনায় যা-তা বয়ান করছে। ইসলামের প্রতিটি বিষয়কে তারাই সন্দেহের বেড়াজালে আটকিয়ে দিতে চাচ্ছে; এমন কি নবুয়ত রিসালতের মতো সুস্পষ্ট বিষয়কেও তারা বিতর্কিত করে তুলতে চাচ্ছে।
'আদর্শ ও মতবাদের বৈপরীত্য আর ইমামদের মধ্যকার মত ও পথের ভিন্নতা যা বিশ্ব মানবতার ঐক্যসুত্রকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে; তা যেন একটি অতল মহাসাগর। অনেকেই জ্ঞানের এই মহা সাগের ডুব দিয়েছে, তবে সার্থক হয়েছেন এমন ভাগ্যবানের সংখ্যা অতি নগন্য। তবে মজার ব্যাপারটি এই যে, সবাই নিজেকে স্বার্থক ও সিদ্ধ বলে মনে করে— প্রত্যেক দল নিজ নিজ মতবাদে খুশি (আল-কুরআন)।' হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী(রঃ) উপরোক্ত কথাগুলো তার লিখা কিতাব 'আল-মুনকিজু মিনাদ্দালাল'-এ ব্যক্ত করেছেন আজ থেকে হাজার বছরেরও বেশি আগে; আমাদের বর্তমান মুসলিম দুনিয়ার অবস্থা তাহলে কি? ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কোথাও নিশ্চিন্তে আলোচনা করা যায় না, জ্ঞানহীন মূর্খরা তীর্যক আক্রমণের তীর ছুঁড়ে মারে! এক শ্রেণীর আলেমরা মুসলমানের ঈমান আমল এমনভাবেই নষ্ট করেছে, যা বলা বাহুল্য; তার কুফলই আজ আমরা ভোগ করছি।
ঈমানের মূল ভিত্তি যার উপর দন্ডায়মান তার নাম হলো আকিদাহ; আক্বিদা দুরস্ত বা বিশুদ্ধ না হলে তার কোন ইবাদতই আল্লাহ কবুল করবেন না; হাশরের ময়দানে অসংখ্য ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে, যারা অনেক আমল করেছেন, কিন্তু আক্বিদা বিশুদ্ধ না থাকার কারণে তাদের সকল আমল আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বাতিল বলে ঘোষণা করবেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কুর'আনুল কারীমে স্বয়ং রাব্বুল ইজ্জত বলেন— '(আর) আমি (যখন) তাদের সে সব আমলের (ইবাদতের) দিকে মনোনিবেশ করব, যা তারা (দুনিয়াতে) করে এসেছে, তখন আমি তা (তাদের সকল ইবাদত) উড়ন্ত ধুলিকণার মতই (ঈমান শূন্য হওয়ার কারণে) নিষ্ফল করে দিব।' —(সূরা ফুরকান : ২৩)। অতএব, ঈমান-আক্বিদা যদি বিশুদ্ধ না থাকে, তবে সে বান্দার সব আমল হাশরের ময়দানে ধুলার মতই উড়ে যাবে।
রাসুল প্রেমই ঈমান; আর মু'মিনের জন্য রাসুল হলো জান-প্রাণ। মুমিনের জীবনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি মহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম; মহব্বতে রাসূল (সাঃ) হলো ঈমানের রূহ। মুমিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য— এই ইশ্ক ও মহব্বত ছাড়া ঈমানের পূর্ণতা আসে না, ইবাদত আমলের স্বাদ অনুভূত করা যায় না। আর নিছক মুখের ভালোবাসা যথেষ্ট নয়, বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর উপর এ ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে হয়, হবে এবং তাঁর (সা:)-এর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। হযরত আনাস (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হবো। —(সহীহ বুখারী : ১৫)
এ শুধু কোন নীতিবাক্য নয়; বাস্তবেই মু'মিনকে পৌঁছাতে হবে নবীপ্রেমের সর্বোচ্চ স্তরে। সকলের উপর, সবকিছুর উপর প্রাধান্য দিতে হবে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল (সা:)-কে; এমনকি নিজের জানের চেয়েও। শুনুন তাহলে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর ঘটনা— আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম (রাঃ) বলেন, একদিন আমরা নবীজী (সাঃ)-এর সাথে ছিলাম। নবীজী (সাঃ) ওমর (রাঃ)-এর হাত ধরা ছিলেন। ওমর (রাঃ) বলে উঠলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, তবে আমার জান ছাড়া। তখন নবীজী (সাঃ) বললেন, না ওমর, এতে হবে না। যে সত্ত্বার হাতে আমার জান, তাঁর কসম! ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার জানের চেয়েও প্রিয় না হই। পরক্ষণেই ওমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ এখন তা হয়েছে; আল্লাহর কসম! এখন থেকে আপনি আমার কাছে আমার জানের চেয়েও প্রিয়। তখন নবীজী (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ ওমর! এখন হয়েছে। —(সহীহ বুখারী : ৬৬৩২)
অন্যদিকে আছে আরেক দল, জুল খুওয়াইছারা তামীমীরা; বর্ণিত আছে— "আমরা রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গণীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। তখন বনু তামীম গোত্রের ‘জুল খুওয়াইছারা’ নামক এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ইনসাফ করুন। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনসাফ না করি, তাহ’লে কে ইনসাফ করবে? আমি যদি ইনসাফ না করি, তাহ’লে তো তুমি ক্ষতিগ্রস্ত ও নিষ্ফল হবে। ওমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, ‘ওকে যেতে দাও। তার কিছু সঙ্গী-সাথী রয়েছে। তোমাদের কেউ তাদের সালাতের তুলনায় নিজের সালাত এবং তাদের সিয়ামের তুলনায় নিজের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিম্নদেশে প্রবেশ করে না। এরা দ্বীন থেকে এত দ্রুত বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে, কিন্তু শিকারের চিহ্ন দেখা যাবে না। কাঠের অংশটুকু দেখলে তাতেও কোন কিছুর দেখা মিলবে না। মধ্যবর্তী অংশটুকু দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। অথচ তীরটি শিকারের নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে রক্ত-মাংস অতিক্রম করে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হলো এমন একজন কালো মানুষ, যার একটি বাহু নারীর স্তনের ন্যায় অথবা গোশতের টুকরার ন্যায় নড়াচড়া করবে। তারা মানুষের মধ্যে বিরোধ কালে আত্মপ্রকাশ করবে।" —( বুখারী : ৩৬১০; মুসলিম : ১০৬৪)
"লোকটি চলে যাওয়ার পর রাসূল (সাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন কিছু লোক আসবে যারা কুর'আন পড়বে, কিন্তু কুর'আন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন শিকারের দেহ ভেদ করে তীর বের হয়ে যায়। তারা মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে দিবে এবং মুসলমানদেরকে হত্যা করবে। যদি আমি তাদের দেখা পাই তাহলে আদ জাতির মত তাদেরকে হত্যা করবো।" —(বুখারী ৭৪৩২; মুসলিম ১০৬৪; মিশকাত : ৫৮৯৪)
অন্য আরেক বর্ণনায় এসেছে, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত; এক ব্যক্তি রাসুলপাক (সাঃ)-এর কাছে জিরানা নামক স্থানে দেখা করে। এটি সেই স্থান যেখানে রাসুলপাক (সাঃ) হুনায়নের যুদ্ধে প্রাপ্ত গণীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। সাহাবী বিলাল (রাঃ)-এর কাপড়ের ওপর রূপার টুকরাগুলো রাখা ছিল। রাসুল (সাঃ) মুষ্ঠিবদ্ধভাবে মানুষকে দান করছিলেন। তখন উপস্থিত ঐ লোকটি বলল, 'হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহকে ভয় করুন ও ইনসাফ করুন!' রাসূলপাক (সাঃ) বললেন, 'ধ্বংস তোমার জন্য। আমি যদি ইনসাফ না করি তবে কে ইনসাফ করবে? আল্লাহর কসম! আমার পরে তোমরা এমন কোন লোক পাবে না, যে আমার চেয়ে অধিক ন্যায়পরায়ণ হবে।' সঙ্গে সঙ্গে ওমর (রাঃ) বলে উঠেন, 'হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই।' তিনি বললেন, 'না, আমি আল্লাহ-র কাছে আশ্রয় চাই, যদি এমন কর, তবে লোকেরা বলবে, আমি আমার সাথীদের হত্যা করি...।' —(মুসলিম : ১০৬৪; সহীহুল জামে'হা : ৫৮৭৮)। এই ব্যক্তিই ছিল প্রথম খারেজী, যে নবী করীম (সাঃ)-এর বণ্টনের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিল; যারা নিজ প্রবৃত্তির রায়কে প্রাধান্য দেয়। আজকের তামীমীরা বহু দলে বিভক্ত হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শা'ন-মান নিচু করার কাজ অব্যাহত রেখেছে।
ইসলাম ধর্মে আকিদা এমন একটি বিষয় যা সঠিক না হলে কোনভাবেই মুসলমান হওয়া বা থাকা যায় না, যাবে না; মুসলিম দাবী করা তো অবান্তর চিন্তা। আকিদার শুদ্ধ পাঠ ঈমানের জন্য ঠিক ততটুকু গুরুত্বপূর্ণ বা গুরুত্বের দাবী রাখে যা লিখে প্রকাশ করার মতো বিষয় নয়, যাবে না; তবে প্রাণীর জীবনের জন্য অক্সিজেন যেমন প্রয়োজন, একজন মুসলমানের জন্য আকিদার শুদ্ধতাও তেমনই প্রয়োজনীয়। কেননা, মুসলিম-মাত্রই নিজের পরকালীন সফলতার জন্য দুনিয়ার খড়কুটোর জমিনে যথেষ্ঠ তৎপর; কিন্তু জিন্দেগির মূল-মাকসুদ হাসিল করতে গেলে বিশুদ্ধ আকিদার কোন বিকল্প নেই। কারণ, আকিদা সেই কেন্দ্রবিন্দু, যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় গোটা মুসলিম-জীবন। কারো আকিদা যদি বিশুদ্ধ হয়, তাহলে তার জীবন হবে উঠে নির্মল ও স্বচ্ছ; আর যদি আকিদা অশুদ্ধ হয়, তাহলে তার জীবন হয়ে যায় ভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। বিশুদ্ধ আকিদার উপরই দাঁড়িয়ে আছে গোটা ইসলামের সুবিশাল বুনিয়াদের ইমারাত; তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন আকিদার বিশুদ্ধতা।
আকিদা শব্দের শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস, আর আকাইদ (আকিদা-র বহুবচন) অর্থ বিশ্বাস মালা। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর (আল্লাহ তায়ালা, নবী-রাসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, পরকাল, জান্নাত জাহান্নাম) প্রতিটির প্রতি দৃঢ বিশ্বাসকে আকাইদ বলা হয়। আর ঈমান শব্দের শব্দিক অর্থও বিশ্বাস; ইসলামি শরিয়তের যাবতীয় বিধি বিধান অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী আমল করাকে ইমান বলে। আকিদা হচ্ছে মৌলিক বিষয়গুলোকে বিশ্বাস করার নাম, আর ঈমান হচ্ছে মুখে ও অন্তরে বিশ্বাসের সাথে সাথে আমল করার প্রক্রিয়া। মুখে আমরা যতই ঈমানের বাক্য বলি না কেন বা আমল না করে যতই নিজেকে ঈমানদার ভাবি না কেন বা নিজেকে রাসুল (সাঃ) প্রেমিক দাবী করি না কেন- সবই অন্তঃসার শূন্য। মুখের কথা ঈমানের পরিচয় বহন করে না, ঈমানের পরিচয় মেলে আকিদায়।
'রওজা শরীফ' ও 'নূরে মুহাম্মদী' এ দুটো শব্দে যাদের এলার্জি, তারা আবার কোন জাতের মুসলিম? এ'রা কি নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করতে পারে?? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাফনস্থল বা কবরকে রওজা বলা হয়; আর তথাকথিত নামধারী এ'সব মুসলমানের গায়ে এতে জ্বালা ধরে! ওরা কি আসলেই মুসলিম?? তাদের যত রাগ নবী করীম (সাঃ)-এর উপর! কিন্তু কেন? জেলাস?? কি করে দাবী করে তারা, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত??? তাদের এ দাবীর পিছনে আসলে লোভ কাজ করে; ইসলামের মুখোশ পড়ে তারা ধর্মের বারোটা বাজাতে চায়; সদা তৎপর। লম্বা জুব্বা, লম্বা টুপি, লম্বা দাড়ি লাগিয়ে, ঘোমটা পড়ে তারা মাঠে আছে; ওরা যে আসলে কি তা তারা নিজেরাও জানে না!
ইসলামের বীর সিপাহসালার সালাহউদ্দিন আয়ুবী (রঃ) যেমন চিহ্নিত করে করে এমনতর বদদের ধরে কতল করছিলেন, আজ আবারও সময় হয়ে গেছে তাদের চিহ্নিত করে কতল করার। রাসুলপাক (সাঃ)-এর শা'ন-মান সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ের বিরুদ্ধে তাদের যত ফতোওয়া। তারা ফতোওয়া দিয়ে বসে আছে এটি তো একটি কবর, তার (নাউজুবিল্লাহ) কবরকে রওজা বলা যাবে না! এদের ফতোয়ায় আবার এক শ্রেণীর মূর্খ পথভ্রষ্টরা সুর মিলিয়েছে; বেয়াদবদের কথার স্টাইল দেখলে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। একজন ঈমানদার মুসলমানের স্থির থাকার কথা নয়, গায়ে তাদের চেয়েও বেশি আগুন ধরার কথা; যে আগুনে ভণ্ডদের পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়ার কথা। কিন্তু আফসোস এবং বড়ই পরিতাপের বিষয় আজকের মুসলমান না বুঝে এইসব বেয়াদবদের সাথে তাল মিলাচ্ছে; ওদের কথা শুনছে, গিলছে, হজম করছে।
হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "আমার ঘর ও মিম্বারের মাঝখানের স্থানটি রওজাতুন মিন রিয়াজিল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগিচা সমূহের একটি বাগিচা; আর আমার মিম্বার আমার হাওজের উপর অবস্থিত।" —[সহীহ বুখারি : ৭৩৩৫; সহীহ মুসলিম : ৩৪৩৬।] এখন আসুন জেনে নেয়া যাক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকে রওজা বলা যাবে কি না বা কেন বলা হয়— রওজা শব্দের অর্থ বাগান; এখানে রওজা বা বাগান দ্বারা উদ্দেশ্য— ‘জান্নাতের একটি বাগান।’ যেহেতু তাঁর (সাঃ) কবরটি জান্নাতের নেয়ামতে ভরপুর একটি পবিত্র বাগান,তাই এ অর্থে তাঁর (সাঃ) কবরকে ‘রওজায়ে আতহার’ (পবিত্র বাগান), রওজা শরিফ ইত্যাদি বলা হয়। —[সহীহ বুখারী : ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম : ১/২০১; মুসনাদে আহমদ : ২/২৪৬, ৩৬৭; কবরকে রওজা বলা : জামে তিরমিজী : ২/৭৩; সুনানে নাসাঈ : ১/২২২; সুনানে আবু দাউদ : ২/৪৬১; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৭/৪৫২-৪৫৪; রূহুল মাআনী : ৮/২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৪৩৯]
'ক্কুল ইন্নামা......' শুনতেই যারা লাফ দিয়ে উঠে তাদের জ্ঞান আসলে খুবই সীমিত; আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। এ আয়াত আমরা জানি, পড়ি এবং মানি; স্বীকারও করি। কিন্তু সুরা মায়েদা'র ১৫ নম্বর আয়াতের শেষাংশ '.....ক্বদ জা-আকুম রাসুলুম মিনাল্লাহি নূর ওয়া কিতাবুম মুবিন' শুনলে তারা লাফ দিয়ে উঠে; আমরা এ আয়াতও মানি, তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে অস্বীকার করে। স্পষ্টতই পবিত্র কুর'আনুল কারীমের যে কোন একটি আয়াত অস্বীকারকারী কাফের— এ হিসেবে তারা মুসলমান হয় কি করে??
"ক্কুল ইন্নামা আনা বাশারুম মিছলুকুম ইউহা ইলাইয়া আন্নামা ইলাউকুম ওয়াহেদ"— সুরা কাহাফ-এর ১১০ নম্বর আয়াত দিয়ে আমরা নিশ্চিত জানি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) একজন মানুষ; আয়াতের পরের অংশ নিয়ে কিন্তু তারা কেউ মুখ খোলে না! কেন? এটি খারিজিয়াতের সুস্পষ্ট নমুনা। মুলতঃ "কুল ইন্নামা আনা বাশারুম মিছলুকুম ইউহা ইলাইহা" দ্বারা হুজুর পাক (সাঃ)-কে রক্তে মাংসে গড়া মানুষ প্রমাণ করা তাদের বদ উদ্দেশ্য। তিনি যে আমার-আপনার মতো একজন মানুষ নন, তা বুঝার মতো জ্ঞান আল্লাহপাক সবাইকে দান করেন না, তাদেরকে দেননি। কারণ আয়াতটি আয়াতে মুতাশাবিহাত; যে সকল আয়াত বুঝার সীমারেখা টেনে দিয়েছেন স্বয়ং রাব্বুল ইজ্জত; এসব আয়াত তাঁরাই বুঝেন যাঁরা ঈমানদার এবং ঈমানের ধারক, সিরাতুল মুস্তাকীমের পথিক। তাছাড়া আয়াতের শেষাংশে খোদ রাব্বুল ইজ্জত-ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিচয় একেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন; কিন্তু পরিতাপের বিষয় তারা তাও গোপন রাখে বা করতে চায়। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই লোকগুলো উক্ত আয়াতগুলো নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যা বলা বাহুল্য; ওরা বড়ই উদগ্রীব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শা'ন-মান সাধারণ করার জন্য। তাই 'আনা বাশারুম' দিয়ে তারা নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা দাঁড় করে।
আয়াতের তাফসীর— ক্কুল- আমরে হাজর ওয়াহেদ, ইন্নামা হা যা কালিমায়ে হসর; এখানে কালিমায়ে হসর এসেছে একমাত্র অর্থ বুঝানোর জন্য। তাহলে "কুল ইন্নামা" এর অর্থ দাঁড়ায়- হে নবী (সাঃ) একমাত্র আপনার জবানে আপনি বলুন, আনা- আমি, বাশারুম- মানে জিন্দুন (জিন্দুন মানে চামড়া/নমুনা/সুরত অর্থাত্ আমি নকশায় নমুনায় দেখতে, উপরের কভারের দিক দিয়ে), মিছলুকুম- তোমাদের মতই মানুষ। আয়াতের পরবর্তী অংশ "ইউহা ইলাইয়া"- আমার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়। সুতরাং নবী কারীম (সাঃ)-এর স্বাতন্ত্র্য কি তোমাদের চোখে পড়ে না? এ দ্বারা আসলে প্রকাশ পায়— আমি তোমাদের মত সাধারণ কোন মানুষ নই। যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিজের মতোই সাধারণ একজন মানুষ ভাববে, তার ঈমান থাকবে কি না আমার সন্দেহ। আমি মুফতি-মুফাসসির-মুহাদ্দিস নই, এ ব্যপারে তাঁরাই রায় দেবেন; সাধারণ চোখে সুক্ষ্ণ-সরল চিন্তায় আমি যা বা যতটুকু বুঝেছি তাতে মনে হচ্ছে বিষয়টি খুবই স্পর্ষকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যে কোন ঈমানদার মুসলিমের জন্য। তাই এমন স্পর্ষকাতর বিষয়ে সচেতন হওয়া বা থাকা খুবই জরুরী।
"নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে, রাত ও দিনের পরিবর্তনের মধ্যে, যে সব জাহাজ মানুষের লাভের জন্য সাগরে চলাচল করে তাদের মধ্যে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করে মৃত ভূমিকে জীবিত করেন এবং সকল প্রকার প্রাণী তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, আর বায়ুরাশির প্রবাহের মধ্যে (গতি পরিবর্তনে) এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী (আল্লাহর আজ্ঞাধীন ভাসমান) মেঘের মধ্যে জ্ঞানী লোকের জন্য অবশ্যই (আল্লাহর মহিমার) বহু নিদর্শন রয়েছে।" সুরা বাকারা-র ১৬৪ নম্বর আয়াত নিয়ে ভাবতে গিয়ে আবিষ্কার করেছি জগতে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি বিষয়েরই সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন মহান রব। কুর'আনুল কারীম যে আসলে কি জিনিস তা যারা বুঝে পড়ে না তারা কোন দিনও অনুধাবন করতে পারবে না। পবিত্র কুর'আনুল কারীমার ২৯ টি সূরার শুরুতে হরফে মুকাত্তায়াত রয়েছে (আলিফ—লাম—মীম), এ ছাড়া আরও দুই ধরনের আয়াত আছে— মুহকামাত ও মুতাশাবিহাত; ঠিক এ রকমই থ্রি ডাইমেনশনিক আমার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনচরিত; যারা সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন তাঁরাই চিনেন, জানেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে এবং বঝতে পারেন হাকীকতে মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ)।
মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, যখন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল রাসূলাক (সাঃ)-এর আখলাক সম্পর্কে, তিনি বলেছিলেন, 'তাঁর আখলাক হলো আল-কুর'আন।' অর্থাৎ কুর'আনুল কারীম হলো রাসূলপাক (সাঃ)-এর জীবনচরিতের সংরক্ষিত ও লিখিত নমুনা; আর তাঁর (সাঃ) জীবনী হলো কুর'আন পাকের আমলী রূপরেখা, উম্মতে মুসলিমার জীবন বিধান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনচরিত হবে মুসলমানের জীবনাদর্শ। হায় আফসোস! কূটচাল আমাদেরকে রাসুলপাক (সাঃ) থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে; মুখে যতই আমরা দাবী করি না কেন- আমরা রাসুল (সাঃ) প্রেমিক, আসলে সবই কপটতা। আর কপটচারী কখনো সত্য পথের দিশা পায় না; তাই তো মুসলমান আজ করুণার জাত, পথহারা।
গণিতের শিক্ষক হিসেবে সংখ্যাতত্ত্ব বিবেচনায় আমি আবিষ্কার করেছি মহাগ্রন্থ পবিত্র কুর'আনুল কারীম এক অবিস্মরণীয় বিষ্ময়; যারা বুঝেন তাদের জন্য এ এক অসাধারণ গ্রন্থ। ১১৪টি সূরা ও ৬৬৬৬ আয়াত এ কিতাবে সুবিন্যস্ত; সুরা বলতে বুঝায় কতকগুলো আয়াতের সমষ্টিকে, যাতে আছে নিন্মতম ৩ আয়াত এবং ঊর্ধ্বতম ২৮৬ আয়াতের সন্নিবেশ; ৩ একটি বিজোড় সংখ্যা, অনুরূপভাবে ২৮৬ সংখ্যাটির একক (২+৮+৬) = ১৬, যার একক (১+৬) = ৭, ৭ সংখ্যাটিও বিজোড়। গাণিতিক হিসাবে নিশ্চিয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিজোড়, এক এবং অদ্বিতীয়; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও বিজোড়, এক এবং অনন্য। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বিজোড় পছন্দ করেন, কিন্তু পবিত্র কুর'আনুল কারীমাকে অদ্ভুত এক জোড়-বিজোড়ের সন্নিবেশে সন্নিবেশিত করেছেন। জগতের সকল নিগূঢ় রহস্যাবলি এই পবিত্র কুর'আনুল কারীমায়ই সুনিপুণভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে; কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা মুসলমানরা আজ এই বিজ্ঞানময় মহাগ্রন্থটিকে তাক-এ তুলে রেখেছি, পড়া ছেড়ে দিয়েছি। নিজে না পড়ে না জেনে তাই ভ্রান্তমতবালম্বীদের মিষ্টি মিষ্টি কথার মোহে পড়ে উদভ্রান্তের মতো পাখা গজানো উইপোকা হয়ে জাহান্নামের অনলে ঝাঁপ দিচ্ছি; দলে দলে লোকজন ঈমামহীন হচ্ছি।
জমহুর ওলামা এবং মুফাসসিরগণের অভিমত— পবিত্র কুর'আনুল কারীমের নাজিলকৃত সর্বপ্রথম আয়াত হলো সুরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত, প্রথম বাণী হচ্ছে- 'ইকরা' পরে- 'বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক' — 'পড়' তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন; এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে পড়ার নির্দেশ দিয়ে প্রকৃতপক্ষে মানব সৃষ্টিতত্ত্বের গূঢ় রহস্য তুলে ধরেছেন। সেই আমলে মানুষ কাগজ, কলম ও কালির সাথে পরিচিত ছিলেন না, কিন্তু পবিত্র কুর'আনুল কারীমায় কলম ও লেখনির শপথ সম্বলিত অনেক আয়াত আছে; কাগজ কলম কালির শপথ নিতে দেখা যায়। কি অদ্ভুত বিষয়, তাই না? 'পড়' দিয়ে শুরু, তাই পড়তে হবে বুঝতে হবে নিজ জীবনে কুর'আন বাস্তবায়ন করতে হবে; তারপর বয়ান। মানুষের জন্য জ্ঞান সবচেয়ে বড় সম্পদ বা নেয়ামত হিসেবে দান করেছেন মহান রব, এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত আমাদের প্রত্যেকের।
পবিত্র কুর'আনুল কারীমের ২৯ টি সূরার শুরুতে হরফে মুকাত্তায়াত রয়েছে, এ ছাড়া পবিত্র কুর'আনুল কারীমে দুই ধরনের আয়াত আছে— ১). মুহকামাত; যেগুলো কিতাবের আসল বুনিয়াদ; এবং ২). মুতাশাবিহাত; যাদের মনে বক্রতা আছে তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্য সবসময় মুতাশাবিহাতের পিছনে লেগে থাকে এবং তার অর্থ করার চেষ্টা করে। অথচ সেগুলোর আসল অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) ছাড়া কেউ জানেন না৷ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'আল কোরআনে ৫ প্রকার আয়াত নাজিল হয়েছে— ১). হালাল, ২). হারাম, ৩) মুহকামাত, ৪). মুতাশাবিহাত এবং ৫). পূর্ববর্তী জাতিসমূহের দৃষ্টান্ত। তোমরা হালালকে হালাল জানো, হারাম থেকে দূরে থাকো, আল্লাহর হুকুম মোতাবেক কাজ করো। মুতাশাবিহাত (যার অর্থ অস্পষ্ট) আয়াতের প্রতি ঈমান রাখো এবং পূর্বের জাতির দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো।' —(সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)।
মুহকামাত আয়াতে দ্বারা সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা সবার বুঝে আসার মতো; কিন্তু মুতাশাবিহাত আায়াতে বুঝ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বিশেষ কিছু বান্দাকে বুঝার তৌফিক দান করেছেন, তাঁরাই বুঝেন এসব আয়াতের হেকমত। 'কুল ইন্নামা.........' বা 'কাদ জা-আকুম.........' আসলে মুতাশাবিহাত আয়াত; যে'সব আয়াত দিয়ে একজন মুসলমানের জ্ঞানের পরিধি পরিমাপ করা যায়, ঈমাদার কে- তা বুঝা যায়। অতীব আফসোসের বিষয় বাতিলরা এ'সব আয়াত দিয়েই ভুল ব্যাখ্যা করে মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে; আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
পরিশেষে, জ্ঞান এমন এক জিনিস যার কোন সীমা পরিসীমা নেই। একটি বিষয় অবশ্যই আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, এ জগতে নবুয়তের চেয়ে বড় কোন মর্তবা নেই; আর নবী (আঃ)-দেরও নবী হুজুর পাক (সাঃ), ওঁনার মর্তবা কি এবং কেমন তা বলা বাহুল্য; বুঝে নিতে হয়। না জেনে না বুঝে ওঁনার বিষয়ে উদ্ভট কথা বলা এবং উদ্ধত আচরণ করা বদান্যতা। এ বিষয়ে যারা অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করে মুসলমানের ঈমান আমলে সন্দেহের বীজ বপন করে তারা নিশ্চিত শয়তানের অনুচর।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
২ নভেম্বর, ২০২২.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন