বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২

খারিজি হতে সাবধান!


'ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানু লা-তাকরাবুস্ সালা-তা ওয়া আনতুম সুকারা' -(হে মুমিনগণ, তোমরা সালাতের ধারেকাছেও যেয়ো না, নেশাগ্রস্থ অবস্থায়) এ আয়াতের প্রথম অংশ- 'লা-তাকরাবুস্  সালাতা' বলে এবং শেষের অংশ 'ওয়া আনতুম সুকারা' হাইড করে অর্থাৎ  আয়াতের আংশিক অর্থ বলে আংশিক গোপন রেখে বিভ্রান্ত করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল বিশিষ্ট বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, যার ফলে শেষ পর্যন্ত তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। 'কুল ইন্নামা আনা বাশারুম মিছ্'লুকুম (বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ) বলে যারা আয়াতের পরের অংশ 'ইউহা ইলাইইয়া' গোপন রাখার চেষ্টা করে বা পবিত্র কুর'আনুল কারীমে 'দিনাজপুর' বা 'কুমিল্লা' আছে বলে অপব্যাখ্যা করে, তারা কি সেই একই অপরাধে অপরাধী নয়?

ওহাবী-খারেজীরাই তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে 'কুফর'-এর ফতওয়া দিয়েছিল এবং জোড়ালো অবস্থান নিয়েছিল; তারা যে সেই একই অপরাধ করে যাচ্ছে, তা কি তারা একবারের জন্যও ভেবে দেখেছে? তসলিমা নাসরিনকে দেশছাড়া করা সহজ ছিল, কারণ সে একজন নারী এবং বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি, সংঘবদ্ধ ওহাবী-খারিজীরা যে অনবরত সেই একই অপরাধ করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ফতওয়া দেবে কে বা তাদেরকে দেশছাড়া করবে কে?? 

'Indeed, those who conceal Allah’s revelations in the Book, and purchase for them a miserable profit,- they swallow into themselves naught but Fire; Allah will not address them on the Day of Resurrection. Nor purify them: Grievous will be their penalty.' -(Surah Al-Baqarah : 174) 'নিশ্চয় যারা গোপন করে আল্লাহর কিতাব হতে যা নাযিল করেছেন তা এবং এর বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা তাদের নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ভক্ষন করে না। আর কেয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।' 

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা বলেন, যে ব্যক্তি ধন-সম্পদের লোভে শরিয়তের হুকুম-আহকাম পরিবর্তিত করে এবং তার বিনিময়ে যে হারাম ধন-সম্পদ গ্রহণ করে, তা যেন সে নিজের পেটে জাহান্নামের আগুন ভরে; কারণ, এ কাজের পরিণতি ভয়াবহ। তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ আছে- আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তার বিনিময়ে তারা কেবল আগুন দিয়ে আপন পেট পূর্ণ করে; শেষ বিচারের দিন আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্রও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

তাছাড়াও সুরা বাকারা'র ৪১ নম্বর আায়াত- 'আর আমি যা নাযিল করেছি তোমরা তাতে ঈমান আন; এটা তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যতা প্রমাণকারী। আর তোমরাই এর প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করো না। আর তোমরা শুধু আমারই তাকওয়া অবলম্বন কর।' আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার আয়াতসমূহের বিনিময়ে মূল্য গ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হলো, মানুষের মর্জি ও স্বার্থের বিনিময়ে আয়াতসমূহের মর্ম বিকৃত বা ভুলভাবে প্রকাশ করে বা তা গোপন রেখে টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ গ্রহণ করা; এ কাজটি সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। بِه (ওঁর) সর্বনাম দ্বারা কুর'আনকে বুঝানো হয়েছে অথবা মুহাম্মদ (সাঃ)-কে; আর উভয় মতই সঠিক। কেননা, দু'টিই আপোসে এক ও অবিচ্ছেদ্য। যে পবিত্র কুর'আনের সাথে কুফরী করল, সে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথেও কুফরী করল; আর যে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে কুফরী করল, সে  পবিত্র কুর'আনের সাথেও কুফরী করল। -(ইবনে কাসীর)। 

'আমার আয়াতের বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করো না' এর অর্থ এই নয় যে, বেশী মূল্য পেলে ইলাহী বিধানের বিনিময়ে তা গ্রহণ করো; বরং অর্থ হলো- ইলাহী বিধানসমূহের মোকাবেলায় পার্থিব স্বার্থকে কোন প্রকার গুরুত্ব দিও না। আল্লাহর বিধানসমূহের মূল্য এত বেশী যে, দুনিয়ার বিষয়-সম্পদ এর মোকাবেলায় তা খুবই তুচ্ছ, কিছুই না। উক্ত আয়াতে বানী-ইসরাঈলকে সম্বোধন করা হলেও এই নির্দেশ কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য। যে ব্যক্তি সত্যকে বাতিল, বাতিলকে প্রতিষ্ঠা অথবা জ্ঞানকে গোপন করার কাজে জড়িত হবে এবং কেবল পার্থিব স্বার্থের খাতিরে সত্য-প্রতিষ্ঠা করা থেকে বিরত থাকবে বা ত্যাগ করবে, সেও এই ধমকের অন্তর্ভুক্ত। -(ফাতহুল ক্বাদীর)

ওহাবী খারিজীদের খাসলত এমন- স্বার্থে টান লাগলেই তারা বেঁকে বসে! যেমন- তাদের দীক্ষাগুরু নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরুব্বি মাওলানা সা'দ কান্ধলবী বলেছিলেন, 'মাদরাসা মসজিদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও খারাপ; যারা কুরআন শরীফ শিখিয়ে বেতন গ্রহণ করে, তাদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও খারাপ; যে ইমাম এবং শিক্ষক বেতন গ্রহণ করেন, বেশ্যারা তাদের আগে জান্নাতে যাবে; কাওমী-খারেজি মাদরাসা গুলোতে জাকাত না দেয়া হোক, ওখানে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না; পারিশ্রমিক নিয়ে দ্বীন শেখানো দ্বীন বিক্রির নামান্তর, ব্যভিচারকারী নারীও কুরআনুল কারীম শিখিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকারীর আগে জান্নাতে যাবে৷' 

সত্য অপ্রিয় বলে বিবেচিত হলেও সত্যই সুন্দর আর সত্যই চিরন্তন। কিন্তু সত্য যখন স্বার্থপরদের স্বার্থের বিপক্ষে চলে যায় তখন তা আর তাদের ভাল লাগে না- 'গরম ভাতে বিড়াল অসন্তুষ্ট, হক কথায় স্বার্থপর রুষ্ট'- সবাই সা'দ সাবের পিছন ছেড়েছে; আজও বিরোধ চলছে। 

ওহাবী-খারিজীরা এমনই! রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর শা'ন-মান সম্পর্কিত পবিত্র কুর'আনুল কারীমের আয়াতের আংশিক বলে তারা সমাজে ফেতনা ছড়ায়, মানুষের ঈমান নষ্ট করে; এ তো জঘন্য পাপ, অপরাধ। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত-কে তারা মোটেও ভয় পায় না; তাদের বুক একটুও কাঁপে না। পবিত্র কুর'আনুল কারীম নিয়ে তাদের এ জঘন্য  প্রতারণা সাধারণ মানুষ কমই বুঝে বা মোটেও বুঝে না; তাই বুকের কষ্টটা অনুভব করতে পারে না। এমন জঘন্য অপরাধ তারা করে শুধুমাত্র কিছু দুনিয়াবি স্বার্থের প্রত্যাশায়, বিশাল দলীয় সুবিধার জন্য; হযরত হুসাইন (রা:)-কে শহীদ করা দলও কিন্তু অনেক বিশাল ছিল। তারা কখনো ভাল হয় না, ভাল থাকে না, অবস্থান স্থায়ী করতে পারে না; কারণ, তাদের উপর আল্লাহর লা'নত। 

ছলচাতুরী ও চাটুকারিতা খারিজিদের চরম এক অপকৌশল, এ'সব করে তারা আসলে তাদের  নিজেদেরকেই ধ্বংস করে এবং করেছে, করছে; একটু খেয়াল করলেই যে কেউ তা বুঝতে পারবেন— আস্তে আস্তে তাদের চেহারার নূর নষ্ট হয়ে যায়, ভাইরাল বক্তা সুপার ফ্লপ হয়ে যায়। মনে রাখবেন, রাসুলপাকের (সা:) সাথে বিদ্বেষ রেখে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না; আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না।।

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ 
১৮ নভেম্বর, ২০২২.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন