স্যার, এই করোনায় চাকরিজীবী যেগুলি শয়তান.....তারা তো দেশের উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎ করে করে কোটিপতি হয়ে গেলো.....মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটুখানি ঝাঁকি দিলেই লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বের হয়ে আসতো....যা দিয়ে বাংলাদেশ ১০০ বছর এগিয়ে যেতো.....যত করোনা তত আত্মসাৎ.... কিছু অজাতের হাতে অফিস আদালত জিম্মি হয়ে যাচ্ছে......যে কর্মকর্তা/কর্মচারী, তারাই আবার ঠিকাদার.....একই স্কুলের বেঞ্চের বিল কতবার যে উত্তোলন হচ্ছে...... আমার চোখ কামড়ায়...... কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারিনা.....
কোন রাখঢাক না করে সরকারি অফিসে চাকুরী করা আমার এক বোনের কিছু অসমাপ্ত কথা দিয়েই আজ লিখার সূচনা করলাম। নিশ্চয় এতটুকুতেই পুরো বাংলাদেশের অফিস-আদালতের দুর্নীতির সার্বিক চিত্র সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। শুধুই কি অফিস-আদালতে দুর্নীতি হয়? দুর্নীতি এখন কোথায় নেই, কোথায় হচ্ছে না? আমার তো মনে হয় আমাদের অস্থিমজ্জা সব সবকিছুই এখন দূর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মাছওয়ালা মাছে ভেজাল করে মাছ বেচে শাক কিনে, শাকওয়ালা তার শাকে ভেজাল করে শাক বেচে চাল কেনে, চালওয়ালা চালে ভেজাল করে চাল বিক্রি করে ঔষধ কেনে, ঔষধওয়ালা ঔষধে ভেজাল করে ঔষধ বেচে জামা কিনে, জামাওয়ালা জামায় ভেজাল করে......... আসলে কে কাকে ঠকাচ্ছি আমরা? দিন শেষে সবাই ঠকছি! দুর্নীতি করছি সবাই, সবাই আমরা দুর্নীতিবাজ!
দার্শনিক ধর্মতাত্ত্বিক নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতি বা ব্যত্যয় মানেই দুর্নীতি। বৃহৎ পরিসরে বলতে গেলে বলতে হয়— ঘুষ প্রদান, সম্পত্তির আত্মসাৎ এবং সরকারি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার নাম দুর্নীতি। দুর্নীতি শব্দটি যখন বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন সাংস্কৃতিক অর্থে 'সমূলে বিনষ্ট হওয়াকে' নির্দেশ করে। এই শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ –৩২২), তাঁর পরে মার্কাস টুলিয়াস সিসারো (খ্রীস্টপূর্ব ১০৬— ৪৩); সিসারো এর সাথে নীতিহীন আদানপ্রদান অর্থাৎ ঘুষ এবং সৎ অভ্যাস ত্যাগ প্রত্যয়ের যোগ করেছিলেন। রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক মরিস লিখেছেন, দুর্নীতি হলো ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার।
অর্থনীতিবিদ আই. সিনিয়র একে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন— দুর্নীতি এমন একটি কাজ যেখানে (১) গোপনে প্রদানের কারণে, (২) তৃতীয় কোনো পক্ষ সুবিধা পায়, (৩) যার ফলে তারা বিশেষ ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার নিশ্চিত করে, যা (৪) দুর্নীতির সাথে যুক্ত পক্ষটি এবং তৃতীয় পক্ষ উভয়ই লাভবান হয়, (৫) এবং এই কাজে দুর্নীতিগ্রস্ত পক্ষটি থাকে কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাফম্যান দুর্নীতির ধারণাটিকে আরো বিস্তৃত করেন 'আইনানুগ দুর্নীতি' শব্দদ্বয় যোগ করার মাধ্যমে যেখানে আইনকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ করা হয়, যাতে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের ক্ষমতা আইন প্রণেতার নিকট রক্ষিত থাকে।
ট্রান্সপারেন্সির এক জরিপে দেখা যায় যে, দুর্নীতিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এ হিসাব করা হয় ১০০ পয়েন্ট এর ভিত্তিতে। যে দেশ যত দুর্নীতি মুক্ত সে দেশের তত পয়েন্ট। হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে, এদিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে সোমালিয়া; এ দেশের পয়েন্ট ১০০-তে মাত্র ১০। এরপর কয়েকটি দেশের পরে আছে সিরিয়া; এর পয়েন্ট মাত্র ১৩। এরপর ১৪ পয়েন্ট নিয়ে অবস্থান করছে লিবিয়া, সুদান ও ইয়েমেন; এরপর ইরাকের আছে ১৭, লেবাননের আছে ২৮।
প্রথম আলোর তথ্যমতে, আরব বিশ্বের নয়টি দেশ ও ভূখণ্ডে (ফিলিস্তিন) গত বছর দুর্নীতির পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করে সেখানকার সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে গভীর সংকটে পড়া লেবানন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের অবস্থা আরও বেশি খারাপ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, প্রায় ১১ হাজার অংশগ্রহণকারীর মতামতের ভিত্তিতে পাওয়া জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে যে, এ অঞ্চলের দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া অন্য দেশ ও ভূখণ্ড হলো আলজেরিয়া, মিসর, জর্ডান, মরক্কো, ফিলিস্তিন, সুদান ও তিউনিসিয়া। অংশগ্রহণকারীদের ৬১ শতাংশ এসব দেশে গত বছর দুর্নীতি বেড়ে গেছে বলে তাদের ধারণা ব্যক্ত করেছেন।
টিআই বলছে, 'আরব বসন্ত শুরুর পর প্রায় অর্ধদশক পেরিয়ে গেলেও বিশ্বব্যাপী আমাদের দুর্নীতির পরিমাপকে দেখা গেছে, সরকারি খাতের দুর্নীতি কমাতে বিভিন্ন সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে এখনো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।' দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, আরব দেশগুলোর অধিকাংশ নাগরিক মনে করেন, সম্প্রতি এসব দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। আবার অনেকে মনে করেন, সরকারি কর্মকর্তা ও পার্লামেন্ট সদস্যরা ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে লেবাননের ৯২ শতাংশ, ইয়েমেনের ৮৪ শতাংশ, জর্ডানের ৭৫ শতাংশ মনে করছেন দেশগুলোতে দুর্নীতি বেড়েছে।
বিপরীতে মিসরের ২৮ শতাংশ ও আলজেরিয়ার ২৬ শতাংশ মনে করেন তাঁদের দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। জরিপে যাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ইয়েমেনি ও প্রায় অর্ধেক মিসরীয় বলেন, সরকারি সেবা পেতে তাঁদের ঘুষ দিতে হয়েছে। একই কথা বলেন তিউনিসিয়ার ৯ শতাংশ ও জর্ডানের ৪ শতাংশ সাক্ষাৎকার প্রদানকারী। জরিপ প্রতিবেদনের রচয়িতা কোরালাই প্রিং বলেন, তাঁরা লেবাননের দুর্নীতি পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন। গভীর রাজনৈতিক বিভক্তির মধ্যে দেশটি ২০১৪ সালের মে থেকে কোনো প্রেসিডেন্ট ছাড়াই চলছে। কোরালাই আরও বলেন, বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জনগণ যে শুধু দুর্নীতি রোধে সরকারি প্রচেষ্টাতেই তাঁদের প্রচণ্ড অসন্তোষ জানিয়েছেন তা-ই নয়, বরং সরকারি খাতজুড়ে দুর্নীতির উচ্চহারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমাদের দেশের কি অবস্থা?
তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সচিবালয়ে গিয়ে প্রথমদিনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স'। মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে তিনি বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সুশাসন খুবই জরুরি। সাথে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কর্মকর্তাদের; এবং বলেছিলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হয়েছে, ফলে এখন আর দুর্নীতির প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাস্তবতায় ঘটেছে কি?
অবশ্য দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতিতে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে এক মাত্র এবং একজন মাত্র ব্যক্তিকে, আর তিনি হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দেরিতে হলেও তাঁর নির্দেশনায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান। আশার বিষয় হলো আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যত প্রভাবশালী আর ক্ষমতাসীনই হউক বা সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলের যত ঘনিষ্ঠজনই হউন না কেন, ছাড় পাচ্ছে না কোনো অপরাধীই। হয়তো কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নিতেও নারাজ সরকার। সরকারের এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সুশীল সমাজসহ সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে হচ্ছে। আমরা আশান্বিত।
সাম্প্রতিককালের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা-বিবৃতিগুলোতে আবারও সেই অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ গত ৯ জুলাই জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। কে কোন দলের তা বড় কথা নয়, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের আমরা ধরে যাচ্ছি, ধরে যাব।' এর আগের দিন সংসদে আরেক বক্তৃতায় করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণায় যুক্ত রিজেন্ট হাসপাতাল ও এর চেয়ারম্যান মো. সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ওই হাসপাতালের এই তথ্য আগে কেউ দেয়নি, জানাতে পারেনি। সরকারের পক্ষ থেকেই খুঁজে বের করেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি।'
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, করোনা সংকট শুরুর পর থেকে বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি কঠোরহস্তে তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি দমনে জোর দিয়েছেন। তার নির্দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগে থেকেই চলে আসা অভিযান নতুন মাত্রা পেল বলে মনে হচ্ছে। এরই মধ্যে মানব পাচারে অভিযুক্ত স্বতন্ত্র এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলের কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়াসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে দলের কয়েকজন নেতা ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
গত রোববার দুর্নীতির ফাইলের খোঁজে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই দিন দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) তিন কর্মকর্তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অন্যদিকে অনুমতি ছাড়া করোনা ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অভিযোগে গতকালই রাজধানীর সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তাকে আটক করা হয়।
করোনাকালে এখন পর্যন্ত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে আলোচিত দুটি ঘটনা হচ্ছে করোনার সনদ জালিয়াতিসহ নানা প্রতারণায় জড়িত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম এবং জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা। সাহেদের বিরুদ্ধে করোনা পরীক্ষা ছাড়াই ছয় হাজার এবং আরিফ-সাবরিনা দম্পতির বিরুদ্ধে ১৫ হাজার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ ছিল। এ দুই প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে করোনা পরীক্ষার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেই এমন প্রতারণা চালিয়ে আসছিল।
অভিযানকালে শুধু সাহেদ ও আরিফ-সাবরিনাই নন, তাদের অনেক সহযোগী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বন্ধ হয়েছে অনিয়মে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা করার পাশাপাশি ব্যাংক হিসাব জব্দ ও অন্যান্য আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতারক সাহেদ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে সরকার ও দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিল। মন্ত্রী ও নেতানেত্রীদের সঙ্গে ছবি তুলে অপব্যহারের মাধ্যমে প্রতারণার জাল বিস্তার করে আসছিল।
অবৈধভাবে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে যায় এই মহাপ্রতারক সাহেদ। আশাজাগানিয়া বিষয়টি হলো দলীয় পরিচিতি কিংবা এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে 'ঘনিষ্ঠতা'- কোনো কিছুতেই তার শেষরক্ষা হয়নি। সাঁড়াশি অভিযানের মুখে ৯ দিন আত্মগোপনে থাকার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে সাতক্ষীরা সীমান্তে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। ঠিক তার মতোই নানা অসাধু উপায়ে অবৈধভাবে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছিল সাবরিনা-আরিফও; পরিশেষে তাদেরও শেষরক্ষা হয়নি।
এদিকে, করোনা পরীক্ষা, পিপিই ও কিট সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া স্বাস্থ্য খাতের কয়েকজন হর্তাকর্তার বিরুদ্ধেও নানা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। করোনাকালে ত্রাণ তৎপরতায় যেসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদেরও তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করে কঠোর বার্তা দিয়েছে সরকার। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছে। এসব জনপ্রতিনিধির বেশিরভাগ ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত।সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলও মানব পাচারে অভিযুক্ত হয়ে কুয়েতে গ্রেপ্তারের ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান, ব্যাংক হিসাব এবং স্ত্রী-শ্যালিকাসহ অনেকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ওদের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংসদে বলেছেন, 'ওই সংসদ সদস্য (পাপলু) কুয়েতের নাগরিক কিনা, তা নিয়ে কুয়েতের সঙ্গে কথা বলছি। বিষয়টি দেখব। যদি এটা হয়, তাহলে তার ওই আসনটি (লক্ষ্মীপুর-২) খালি করে দিতে হবে। যেটা আইন আছে, সেটাই হবে। আর তার বিরুদ্ধে এখানেও তদন্ত চলছে।'
পাপুল-সাহেদ-সাবরিনা ছাড়াও অনিয়ম-দুর্নীতিতে যুক্ত আরও অনেকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে হচ্ছে। তদবির-বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে যাওয়া পাপিয়া নামের এক যুব মহিলা লীগ নেত্রীকে গ্রেপ্তার ও জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে এমন কঠোর অবস্থানে আগে থেকেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং মনে হচ্ছে একাই তিনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন; দেশের বাকী আমরা সবায় তামাশা দেখছি। সারা বিশ্ব যখন করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন আর আমরা তখন উদ্বিগ্ন দুর্নীতি নামক বিষফোঁড়া নিয়ে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে, তা রোখা কি একা একজনের পক্ষে সম্ভব?
দুর্নীতির বিষবৃক্ষটি এতটাই মহিরুহ আকার ধারণ করেছে, যা বলা বাহুল্য। এর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে, সমগ্র জাতির সমস্ত প্রক্রিয়ায়। দুর্নীতির ব্যাপকতা কতটা বেড়েছে তা করোনাকালে আমরা কিছুটা হলেও টের পেয়েছি, প্রকাশ হয়েছে বলে। বিশেষ করে আমাদের স্বাস্থ্য খাত যে কতটা ভঙ্গুর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত, তা স্পষ্ট হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করেছিল; যন্ত্রপাতি কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলিসহ আরও বিভিন্নভাবে এ মন্ত্রণালয়ে যেসব দুর্নীতি হয়ে থাকে সেসবের; কিন্তু তদন্ত কার্যক্রম কেন থেমে ছিল? বুঝে আসে না।
এদেশে অনেকেই জিরো টলারেন্স জিরো টলারেন্স বলে চিল্লায়, এই 'জিরো টলারেন্স' কি শুধুই কথার কথা? এর আগে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা শুনেছি, এখন যুক্ত হয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, মন্ত্রী-সচিবেরা সৎ হলে ৫০ শতাংশ দুর্নীতি কমে যাবে, কিন্তু এখন তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক এবং দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী; দিনশেষে তিনি কতটা কি করেছেন বা করতে পারলেন?!
প্রধানমন্ত্রী হয়েই মাননীয় শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া তাঁর প্রথম ভাষণে দুর্নীতিগ্রস্তদের শোধরানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন; মনে করেছিলাম শুভসূচনা। দুর্নীতি উচ্ছেদের সংকল্পের পাশাপাশি তিনি স্বীকারও করেছিলেন— দুর্নীতি নিয়ে সমাজে অস্বস্তি রয়েছে। এবারের কথা তো আগেই বলেছি। তাঁদের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না বা কার্যকর হচ্ছে না কেন? বরং দিনেদিনে দুর্নীতি কমার বদলে বহুগুণ বেড়েছে!
এবারের মন্ত্রিসভার নতুন মন্ত্রীদের মুখে প্রথমেই আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় বড় নানা কথা শুনেছিলাম; স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক '১০০ দিনের কর্মসূচিতে' দুর্নীতিগ্রস্ত কাউকেই সরকার রেহাই দেবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয় না দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ভূমিতে দুর্নীতির ক্ষেত্রে 'জিরো টলারেন্স' ঘোষণা করেই শুধু ক্ষান্ত হননি ভূমিমন্ত্রী, তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হিসাব চেয়েছিলেন। ওনাদের কথার কোন বাস্তবতা কি আমরা দেখেছি, না-কি পেয়েছি??
পরিকল্পনামন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রীও বলেছিলেন— এখন আর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা কোনো ছাড় পাবে না, 'চরম শাস্তির' মুখোমুখি হতে হবে। রাজউকসহ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই 'সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত' করার ঘোষণা দিয়েছিলেন গণপূর্তমন্ত্রী। রেলমন্ত্রী এতটুকু অনিয়ম ছাড় না দেওয়ার কথা বলেছিলেন। পরিবেশমন্ত্রী, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর মুখেও শোনা গিয়েছিল একই সংকল্পের কথা। আর দুদকের চেয়ারম্যান সবাইকে টপকে বলেছিলেন— 'দুর্নীতির গন্ধ' পেলেই তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু বাস্তবতায় ঘটেছে উল্টো! সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি আজ মহিরুহ; জাতির অভিশাপ হয়ে পুরো দেশকে গ্রাস করে ফেলেছে।
শতাব্দীর শুরুতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে টানা পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এতকাল পর ২০২০ সালে এসে আজ আবারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা শুনতে হচ্ছে; আফসোস! তাহলে এত দিন আমরা তবে কোন নীতিতে চলেছি এবং কেন? কেন এখনো পারিনা আমরা বুক ফুলিয়ে বাঁচতে? আর একটি কথা— সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি আমাদের কী দিয়েছে? কিছু সাফল্য অবশ্যই আছে, কিন্তু তা-ই-বা কতটুকু? এবং কি-ই-বা মূল্যে তা পেয়েছি??
না-কি আবারও সব কিছুই আগের মতো ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যাবে???
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
৫ অগাস্ট, ২০২০.
ঘরের ইঁদুরে যদি বানকাটে তবে কি বাধ দিয়ে রাখা যায়,সুন্দর করে লিখার জন্য ধন্যবাদ🌺👍
উত্তরমুছুনশুভেচ্ছা!
মুছুন