শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০

সত্য শাশ্বত চীর অম্লান:


বর্তমানের এই মহাফেতনার যুগে কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক, কোনটা আসল আর কোনটা নকল, কোন পথ পঙ্কিল আঁকাবাঁকা আর কোন পথ সিরাতুল মুস্তাকিম-এর তা বুঝাই হয়ে উঠেছে এক মহা মুশকিলের বিষয়। বহু পথ হেটেছি, বহু মাঠ ঘাট প্রান্তর ঘুরে বেড়িয়েছি, কত কি দেখছি, যেখানে গিয়েছি সেখানেই অবলোকন করেছি ইসলামের নামে চলা যতসব ভন্ডামী। সুদ খাওয়া হারাম, অথচ সুদের টাকায় অবৈধ জায়গা দখল করে এদেশে গড়ে উঠছে মসজিদ, মাদ্রাসা; এ'ক্ষেত্রে ফতোওয়া দেয়ার কেউ নেই। মিথ্যে বলা সবচেয়ে বড় পাপ, অথচ এ'নিয়ে বয়ান কম; মুসলিমরাই আজ এ'দোষে সবচেয়ে বড় দোষী। হাক্কুল্লাহ্ নিয়ে কত কি মাতামাতি, অথচ হাক্কুল ইবাদ নষ্ট করে লোকজন করছে হজ্জ, দিচ্ছে যাকাত; এ'সব নিয়ে ওয়াজ নেই। মসজিদে লোক দেখানো নামাজীর অভাব নেই, নামাজ পড়তে পড়তে একেক জন কপালে টিক্কা ফেলে দিচ্ছে; কিন্তু ইমানের খবর নেই। এ'সব দেখে দেখে শেষ পর্যন্ত স্থির করলাম দুনিয়ায় যত দিন হায়াত রেখেছেন আল্লাহ্ সত্য অন্বেষণ করে সে'সব বলেই যাবো।   

কে না জানে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এ'টি একটি মীমাংসিত বিষয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম ও প্রতিষ্ঠাকালীন রাষ্ট্রপতি, এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ কারো নেই। এমনকি জিয়াউর রহমানও বঙ্গবন্ধুকে এই স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন; কিন্তু তাঁর সন্তানই কয়দিন আগে ঘোষণা দিয়ে বসলো - বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান! হটাৎ করে স্বাধীনতার এতো বছর পর নতুন করে জিয়াউর রহমান-কে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বানানোর কি প্রয়োজন ছিল, উদ্দেশ্যই-বা কি? এ'নিয়ে আহম্মকের মত তর্কও শুরু করেছিল অনেকে; নতুন প্রজন্মের দু'চার জন হয়তো বিশ্বাসও করছে। এমনও-তো হতে পারে আজ থেকে একশ বছর পর তখনকার কেউ হয়তো তারেক জিয়া'র এই রাষ্ট্রপতি তত্ত্ব নিয়েই প্রচন্ড রকমের বাড়াবাড়ি করবে; রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এটি তো আমাদের এই ছোট্ট ভূখণ্ডের মাত্র ৪৬ বছরের একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র ইতিহাসের ঐতিহাসিক একটি ফেতনার সূচনা। ইসলামের ইতিহাস তো সাড়ে চৌদ্দশ বছরের; এখানে কত কি হয়েছে, কত কি ঘটেছে, যার হিসাব মেলানোও ভার। অতএব, বিকৃত ভার্সন তো থাকবেই। 

যদিও ইসলামের ইতিহাসের সাথে একটা দেশের ইতিহাস মেলানো যায় না, তদুপরি আজ মেলালাম সহজভাবে বুঝানোর অভিপ্রায়ে; তাছাড়া মানুষ, দেশ ও জাতি নিয়েই ইতিহাস। প্রত্যেক ইতিহাসেরই একটি সুনির্দিষ্ট শিক্ষা আছে। আমাদের দেশের অনেক আলেম ওলামা ইতিহাসকে অবজ্ঞা করে শুধুমাত্র ইমান ও আমল, কবর ও হাশর নিয়ে ব্যস্ত থাকেন; এমন কি এ-ও বলেন ইতিহাস জেনে লাভ কি? আমল করেন, আমল! সঠিক পথের জন্য সঠিক ইতিহাস জানার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ও অনস্বীকার্য। এইসব জানা প্রত্যেকের, বিশেষ করে আলেম ওলামার জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি; নয়তো পথভ্রষ্টতার সম্ভাবনা থাকবেই। আর একজন আলেম পথভ্রষ্ট হলে সাধারণ মুসলিমের যে কত বড় ক্ষতি তা কল্পনারও অতীত। 

ইসলামের অনেক বিকৃত ইতিহাস আছে, যেগুলোর বেশিরভাগই ইহুদী নাসারা'রা তাদের মনগড়াভাবে তৈরী করেছে। তবে, সাম্রাজ্যবাদীদের ইতিহাস জানা থাকলে ভালভাবে বুঝা যায় কতটা বিকৃত করেছে তারা আমাদের ঐতিহ্যকে। মুসলিম বিখ্যাত মনীষীদের নামও তারা বিকৃত করে   উপস্থাপন করেছে, কোর'আনের আয়াত ৬৬৬৬ টি বলেও তারা প্রচার করেছে, আরো কত কি! মুসলিমের প্রকৃত ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত কিছুটা উঠে এসেছে বিভিন্ন কোর'আন তাফসীরকারকদের বর্ণনায়।  ইবনে কাসির, ইবনে খালদুন, ইবনে হিশাম, মুহাম্মদ ইবনে জারির আল-তাবারি, ইবনে ইসহাক, আলি ইবনে আসির, ইবনে খালিকান, মোহাম্মদ মোহর আলী, শেখ মোহাম্মদ ইকবাল এ'রকম আরো অনেক মুসলিম ইতিহাসবীদের লেখা থেকে ইসলামের ইতিহাসের সঠিক ধারাবাহিকতা পাওয়া যায়। তাই মুসলিম লেখকদের লেখা ইতিহাস থেকেই আমরা জানতে পারবো ও শিখতে পারবো অনেক কিছু এবং জেনে বুঝে সঠিক পথও অনুসরণ করতে পারবো। 

ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায় ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিল ইসলামের সোনালী যুগ। সেই যুগের পর থেকেই মুসলমানের ইমান ও আকিদাগত নতুন এক ধরা বা ফেতনার সূচনা হয়েছে। যদিও সেই প্রাথমিক যুগ থেকেই ফেতনাবাজ মুনাফিকরা ছিল, যারা মুখেমুখে ইসলাম গ্রহণ করেছিল মূলত লোভ-লালসা ও ফেতনা ফ্যসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে; কিন্তু ইমান আকিদাগত আভ্যন্তরিন এতোসব ফেতনা তখন ছিল না। যুগে যুগে ইসলামে নতুন নতুন ফেতনার সৃষ্টি হয়েছিল, তা আছে এবং থাকবে। কিন্তু ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের ফেতনা ইসলামের মূল বিষয় ইমান ও আকিদা-য় হাত বসিয়েছিল। তাই আমাদেরই অনুসন্ধান করে তাদের প্রতিহত করতে হবে। 

হুজুরপাক (সাঃ)-র উপর নাজিলকৃত পবিত্র মহাগ্রন্থ কোর'আন। ইসলামী ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট অবতীর্ণ হয়। আমরা মুসলিমরা এই পবিত্র মহাগ্রন্থকে একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলে বিশ্বাস করি। কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে, যার আয়াত সংখ্যা ৬,২৩৬ টি; কাল কেয়ামত পর্যন্ত যা অপরিবর্তিত থাকবে। কিন্তু ইহুদী নাসারাদের মদদে মনগড়া কোর'আন তাফসীর হয়েছে অনেক। যেসব তারা কোটি কোটি কপি ছাপিয়ে বিনা মূল্যে মুসলিমের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছে।  

রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নবুয়াতী জীবনের সকল কথা, কাজ এবং অনুমোদনকে হাদীস বলে। মূল বক্তব্য হিসাবে হাদীস তিন প্রকার ১) কাওলী হাদীস : রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পবিত্র মুখের বানীই কাওলী হাদীস। ২) ফিলী হাদীস: যে কাজ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) স্বয়ং করেছেন এবং সাহাবীগণ তা বর্ণনা করেছেন তাই ফিলী হাদীস। ৩) তাকরীরী হাদীস : সাহাবী (রাঃ)-গণের যে সব কথা ও কাজের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সমর্থন প্রদান করেছেন তা-ই তাকরীরী হাদীস।
হাদীস নিয়ে সে যে কত কি ঘটেছে তা বলা বাহুল্য। একজন একটা হাদিস বললে অন্যজন তা থেকে কমিয়ে বা ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে কত কি করেছে। তাই তো এক সময় হাদীস সংকোলনে ব্রতী হন ইসলামী স্কলারগণ। শেষ পর্যন্ত সহিহ্ সিত্তা বা ছয়টি নির্ভূল ও বিশুদ্ব হাদীস গ্রন্থ এক কথায় সিহাহ্ সিত্তা হিসেবে সংকোলিত হয় এবং গ্রন্থ আকারে সার্বজনীন স্বীকৃতি পায়।

কোর'আন নাজিল হওয়ার পর তা সংরক্ষিত ছিল সাহাবী (রাঃ)-গণের হৃদয়ের তাম্রশাসনে খোঁদাই করা স্মৃতিভান্ডারে। ধাপে ধাপে আয়াতগুলো লিপিবদ্ধ হতে হতে এক সময় পূর্ণাঙ্গ কোর'আন শরীফ প্রকাশ পায়। সাহাবী (রাঃ)-গণ একে অন্যকে কোর'আন শিক্ষা দিতেন, হাদিস নিয়েও একে অন্যের সাথে বলাবলি করতেন; যাচাই বাছাই করতেন। সময়ের প্রয়োজনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভাবনায় তা বাধাঁই করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় পরবর্তীতে তাবেঈগণ সাহাবী (রাঃ)-গণের শিখানো পথই অনুসরণ করেন এবং তাবে-তাবেঈগন তাবেঈদের। ইসলামের ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতার কোন বিকল্প নেই।  

আলো থেকে যত দূরে যাওয়া যায় আলোর জ্যোতি যেমন কমতে থাকে, তদ্রুপ হুজুর পাক (সাঃ) থেকে যত দিন যাবে ইসলামের দ্যোতিও ততো কমতে থাকবে - এমনটাই পড়েছিলাম ইমাম গাজ্জীলী (রঃ)-র এক কিতাবে (এই মুহূর্তে কিতাবের নাম মনে করতে পারছি না)। ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ) নিঃসন্দেহে একজন তাবেঈ; এতে কারো কোন সন্দেহ বা দ্বিমত নেই। কারণ ইমামে আজম ইরাকের কুফায় ৫ সেপ্টেম্বর ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৮০ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৪ জুন ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৫০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। সাহাবী আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত হওয়ার কারণে তিনি একজন তাবেঈ। অন্য মতে ইমাম আবু হানীফা (রঃ) অন্যুন আটজন সাহাবী (রাঃ)-র সাক্ষাত লাভ করেছেন। অতএব, এ'ব্যপারে নিশ্চিত বলা যায় যে, তিনি একজন তাবেঈ। 

ইসলামী জীবনবিধানে ফিকাহ-র কোন বিকল্প নেই। পবিত্র কোর'আনে কিন্তু কোথাও উল্লেখ নেই নামাজ কয় রাকাত, কি ভাবে তা আদায় করতে হবে - এমন অনেক বিষয়। হুজুর পাক (সাঃ)-এর নামাজ দেখে সাহাবী (রাঃ)-গণ তা শিখেছেন, সাহাবী (রাঃ)-গণদের দেখে তাবেঈগণ শিখেছেন; আর এ'টিই সহিহ্ বা সঠিক দিক নির্দেশনা। 
ইসলামী শরিয়াহ্-য় ফিকাহ এই ভাবেই ধারাবাহিকতা বঝায় রেখে আমাদের কাছে এসেছে; হটাৎ করে কেউ যদি নতুন কিছু বলে বসে ফেতনার তো উদ্ভব ঘটবেই। পর্যায়ক্রমে তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈদের সৃষ্ট চার মাযহাব হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী এসেছে। এগুলো নেহায়েত ইসলামী শরিয়াহ ও ফিকাহ-কে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতেই সৃষ্টি হয়েছে; ফেতনার জন্যে নয়। চার মাযহাবের চার স্থপতি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে কোর'আন ও সুন্নাহ্-র আলোকেই সকল ফিকাহ তৈরী করেছেন; ওনাদের ব্যক্তিগত মত থেকে নয়। চারজনই সর্বজনস্বীকৃত বিখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবীদ ও ফকিহ। বর্তমানে একদল তথাকথিত আলেম বলছে - এইসব মাযহাব নাকি ফেতনা (নাঊযুবিল্লাহ)! 
অনেকে হয়তো বলতে পারেন, বিদায়ী হজ্জের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দু'টো জিনিস অনুসরণের ঘোষণা দিয়ে গেছেন। কেমনে কি? অন্ধত্ব পরিহার করে একটু ভালভাবে বিবেক খাটিয়ে চিন্তা করুন, আপনিও নিশ্চয় কাউকে না কাউকে অনুসরণ করছেন। ইসলামের প্রকৃত ইতিহাস জানুন এবং তিনি কতটা সহিশুদ্ধ ছিলেন তার খোঁজ করুন।

জঙ্গিবাদের স্থান ইসলামে নেই; ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সন্ত্রাসী ও জঙ্গী দল খারেজী সম্প্রদায়। এর উৎপত্তির কয়েক শতাব্দী পরই সিরিয়ার অধিবাসী ইবনে তাইমিয়া আরেকটি চরমপন্থী সন্ত্রসী দল সৃষ্টি করেন। প্রথমদিকে তারা হাম্বলী মাযহাবের বলে নিজেদের পরিচয় দিলেও পরে তাদের ধর্মবিশ্বাস ও সন্ত্রাসের কারণে ইবনে তাইমিয়া ও তার অনুসারীদের মুসলিম শাসকরা ইসলাম বহির্ভুত সম্প্রদায় বা মুরতাদ বলে ঘোষণা করে। অবশ্য যুক্তি দিতে পারেন - শাসকরা কখনো ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কয়েম করতে চান না। কে বলেছে আপনাকে? সত্য প্রচারে মুসলিম শাসকদের ইতিহাস না জেনে অযথা মিথ্যা প্রচার বিশ্বাস করবেন না। বিশ্বখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা তাঁর ভ্রমন কহিনীতে লিখেছেন, "একদা দামেস্কের জামে মসজিদে ইবনে তাইমিয়া ঘোষণা করেছিল- আল্লাহ আসমান হতে জমিনে নামেন, ঠিক যেভাবে আমি নেমে যাচ্ছি বলে ইবনে তাইমিয়া মিম্বর থেকে নেমে পড়ে। (নাঊযুবিল্লাহ) আল্লাহ পাক মানবসুলভ আকৃতি বিশিষ্ট মতবাদের সে একজন দৃঢ় বিশ্বাসী হিসেবে কুখ্যাত।“

৬৬১ হিজরি তথা ১২৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ার দামেস্কে জন্ম নিয়েছিলেন এই ইবনে তাইমিয়া, যিনি ইসলামের ইতিহাসে ফেতনা সৃষ্টিকারী হিসেবে কুখ্যাত; বিশেষ করে ইমান, আমল ও আকিদাগত ফেতনা (অবশ্য তাকে নিয়ে আমি তিনটি সিরিজ লেখা প্রকাশ করেছি)। যা ১৩২৮ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুতে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। নতুনভাবে নজদ তথা বর্তমান রিয়াদ-এর মোহাম্মদ আবদুল ওহাব নাজদী (১৭০৩ - ১২৮৮)-র মাধ্যমে তা ডালপালা মেলে। যা এখন সাড়া বিশ্বের মুসলিমের জন্য এক মহাফেতনা। 
তার বিগত ও বর্তমান অনুসারীরাই আজ মাযহাবের বিখ্যাত তাবেঈ তাবে-তাবেঈ ইমামদের নিয়ে প্রচন্ড বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলছে এবং সেসব বিভিন্ন ভাষায় লিখেও ইন্টারনেট-এ ছড়াচ্ছে। গুগোল সার্চ দিলে এখন ওদের ফেতনা সর্বস্ব বয়ান ও লেখাই বেশি মেলে। তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো, কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ইমামে আজম আবূ হানিফা (রঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ তুলে ধরা পরবর্তী অংশ অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে পড়তে এবং কোন মতামত থাকলে জানাতে।

আল্লাহপাক পবিত্র কুর'আন বলেন -

ﻭﺁﺧﺮﻳﻦ ﻣﻨﻬﻢ ﻟﻤﺎ ﻳﻠﺤﻘﻮﺍ ﺑﻬﻢ

অর্থাৎ- "এই রসূল প্রেরিত হয়েছেন অন্য আরও লোকদের জন্যে, যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি।" - (সূরা আল জুমুআহ্ - ৩)

 সুরা জুমআহ্-র এই আয়াতের তাফসীরে ইমাম বুখারী, হিন্দুস্তানিয় নুসখার বুখারী শরীফের দ্বিতীয় খন্ডের ৭২৭ পৃষ্ঠায় কিতাবুত তাফসীরে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন—

ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ
 ﻗﺎﻝ : ﺣﺪﺛﻨﻲ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺑﻼﻝ
 ﻋﻦ ﺛﻮﺭ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﻐﻴﺚ ﻋﻦ
 ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ
 ﻛﻨﺎ ﺟﻠﻮﺳﺎ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
 ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺄﻧﺰﻟﺖ ﻋﻠﻴﻪ ﺳﻮﺭﺓ
 ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ : { ﻭﺁﺧﺮﻳﻦ ﻣﻨﻬﻢ ﻟﻤﺎ
 ﻳﻠﺤﻘﻮﺍ ﺑﻬﻢ } ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ ﻣﻦ ﻫﻢ
 ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻢ ﻳﺮﺍﺟﻌﻪ ﺣﺘﻰ
 ﺳﺄﻝ ﺛﻼﺛﺎ، ﻭﻓﻴﻨﺎ ﺳﻠﻤﺎﻥ
 ﺍﻟﻔﺎﺭﺳﻲ، ﻭﺿﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
 ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺪﻩ ﻋﻠﻰ
 ﺳﻠﻤﺎﻥ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ : (( ﻟﻮ ﻛﺎﻥ
 ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﺜﺮﻳﺎ ﻟﻨﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ –
ﺃﻭ ﺭﺟﻞ – ﻣﻦ ﻫﺆﻻﺀ )). ] ﻃﺮﻓﻪ
4898 ، ﺗﺤﻔﺔ 189/ 6
 12917-] 

৪৮৯৭. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে বসেছিলাম। এমন সময় তাঁর উপর অবতীর্ণ হলো সুরাহ্ জুমু‘আহ্, যার একটি আয়াত হলো - "এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনও তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি।" তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা….? তিনবার এ কথা জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না।
আমাদের মাঝে সালমান ফারসীও উপস্থিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালমান ফারসী-র উপর হাত রেখে বললেন, ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের নিকট থাকলেও আমাদের কতক লোক অথবা তাদের এক ব্যক্তি তা অবশ্যই অর্জন করতে সক্ষম। - [৪৮৯৮; আধুনিক প্রকাশনীঃ  ৪৫২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৩৩]
 
ইমাম মুসলিমও মুসলিম শরীফের কিতাবুল ফদ্বায়েলিসুস সাহাবাতে, পারস্য অঞ্চলের ফজিলত সম্পর্কে একটি অনুচ্ছেদ কায়েম করে সুরা জুমআ-র এ আয়াতের তাফসীরে বুখারীর উক্ত হাদিসটি ৬৬৬২ নং হাদিসে উল্লেখ করেছেন। তার আগে পারস্যের এক ব্যক্তির (আবূ হানিফা) ব্যাপারে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন-
ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺭﺍﻓﻊ ﻭﻋﺒﺪ ﺑﻦ
 ﺣﻤﻴﺪ ﻗﺎﻝ ﻋﺒﺪ ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ
 ﺭﺍﻓﻊ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ
 ﻣﻌﻤﺮ ﻋﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﺍﻟﺠﺰﺭﻱ ﻋﻦ
 ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺍﻷﺻﻢ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ
 ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
 ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : (( ﻟﻮ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺪﻳﻦ
 ﻋﻨﺪ ﺍﻟﺜﺮﻳﺎ ﻟﺬﻫﺐ ﺑﻪ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ
 ﻓﺎﺭﺱ – ﺃﻭ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺃﺑﻨﺎﺀ
 ﻓﺎﺭﺱ – ﺣﺘﻰ ﻳﺘﻨﺎﻭﻟﻪ .((
 অর্থাৎ- রসূল (সাঃ) বলেছেন দ্বীন আকাশের সুরাইয়া নক্ষত্রের নিকট চলে গেলেও পারস্যবাসীদের মধ্যে অথবা তিনি বলেছেন পারসী সন্তানদের মধ্যে এক ব্যক্তি সেখান থেকে তা গ্রহণ করবেন। - (মুসলিম শরীফ,হাদীস নং ৬৬৬১)
 
সুরা জুমআহ্-র উক্ত আয়াতের তাফসীরে উল্লেখিত হাদীসটি নুয়াইম শরীফে ১৬ জন সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে (সুবহানআল্লাহ)।সালমান ফারসি (রাঃ) ৩৬ হিজরী সনে ২৫০ মতান্তরে ৩৫০ বছর বয়সে মাদায়েন শহরে ইন্তেকাল করেন। পক্ষান্তরে সাহাবী (রাঃ)-গণের মধ্যে সবর্শেষ ইন্তেকাল করেন হযরত আবু তোফায়েল (রাঃ) ১১০ বা ১২০  হিজরী সনে। এ পর্যন্ত সময়কালকে সাহাবায়ে কেরামের যুগ বলা হয়।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বোঝাতে চাইলেন,
ﻭﺁﺧﺮﻳﻦ ﻣﻨﻬﻢ আয়াতের - (সূরা জুমআহ্ -৫) উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইমাম আজম আবু হানিফা (রঃ)। কেননা ইমাম মালেক (রঃ) আরবের আসবাহী বংশের, ইমাম শাফেয়ী (রঃ) কুরাইশ বংশের, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) শাইবানি বংশের; ওনাদের কেউই পারাস্যের নন। কেবল ইমাম আবূ হানিফা (রঃ)-ই পারস্যের অধিবাসী। আকাশের সুরাইয়া তারকার নিকটও যদি ইমান/ইলম থাকে পারস্যের এক ব্যক্তি/সালমান ফারসী (রাঃ)-র বংশের এক ব্যক্তি তা অবশ্যই অর্জন করতে সক্ষম বা পারসী সন্তানদের মধ্যে এক ব্যক্তি সেখান থেকে তা গ্রহণ করবেন। সুতরাং ইমাম আজম আবূ হানিফা (রঃ) হচ্ছেন হাদিসে ঘোষিত সেই ব্যক্তি।

এই মর্মে ত্বহাবী শরীফের বৈরুত (লেবানন) নুসখার প্রথম খন্ডের ৫-৬  পৃষ্ঠায়, হিন্দুস্তানীয় নুসখার ৭ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-

ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻷﻗﺪﻡ ﺍﻟﻬﻤﺎﻡ ﺍﻷﻋﻈﻢ
 ﺍﻷﻓﺨﻢ ﻧﺎﺋﻞ ﺍﻟﺪﺭﺟﺎﺕ ﺍﻟﻌﻠﻰ
 ﺑﺸﻬﺎﺩﺓ ﻟﻮ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﺜﺮﻳﺎ
 ﻓﺨﺮﺍﻷﻣﺔ ﺍﻟﻤﺤﻤﺪﻳﺔ ﻧﺎﺷﺮﺍﻟﺴﻨﺔ
 ﺍﻟﻤﺼﻄﻔﻮﻳﺔ ﻗﺮﻡ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭ
 ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﻭﻣﻌﻈﻢ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻼﺡ
 ﻭﺍﻟﺪﻳﻦ ﺇﻣﺎﻣﻨﺎ ﻭ ﺇﻣﺎﻡ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ
 ﻣﻦ ﻟﺪﻥ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ
 ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺃﺑﻮﺣﻨﻴﻔﺔ ﺍﻟﺼﻮﻓﻰ
 ﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻰ ﺍﻟﻜﻮﻓﻰ ﺭﺡ ) ﻃﺤﺎﻭﻯ
 ﺷﺮﻳﻒ ﺝ 5-6 )
 
অর্থাৎ - ইমামে আজম হযরত আবু হানিফা (রঃ) মুজতাহেদ ইমামগণের সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় ইমাম। তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ও ইমামদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভবিষ্যতবাণী - “যদি ইলম আকাশের সূরাইয়া তারকার কাছেও থাকে তবুও কেউ তা হাসিল করবেন" সেই সৌভাগ্য তিনিই অর্জন করেছিলেন। তিনি উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য গর্বস্বরূপ এবং সুন্নতের প্রচার-প্রসারকারী। তিনি সকল ফকিহ ও মুহাদ্দেসগণের সর্দার ও তাদের মাথার মুকুট। তিনি দ্বীনদার বুযুর্গগণ ও মাশায়েখগণের মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি তাবেঈগণের যুগ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের ও মুসলমানদের ইমাম। তিনি একজন সূফি এবং কুফী-তাবেঈ ছিলেন। - (তাহাবী শরিফ বৈরুত নসখা-১খ; ৫-৬পৃঃ; হিন্দুস্তানীয় নুসখা ৭পৃঃ)
 
ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী আস শাফেয়ী (রঃ), ওফাত ৯১১হি; তাঁর তাবয়িদুস সহীফা গ্রন্থের ’তাবশীরুন নবী’ অধ্যায়ে বলেন- উক্ত হাদীস দ্বারা ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ)-কে বুঝানো হয়েছে|
ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (রঃ) কোন হানাফী আলেম নয়, তিনি ছিলেন শায়েফী; সেই ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রঃ) বলেন - উক্ত হাদিস দ্বারা ইমামে আজম আবূ হানিফা (রঃ)-ই উদ্দেশ্য।

ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী (রঃ), ওফাত ৯৭৩হি.; তাঁর আল ’খায়রাতুল হিসান’ কিতাবের একটি অধ্যায়ে বর্ণনা করেন-
ইমাম আবু হানিফা (রঃ) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লামের ’সুসংবাদ বিষয়ক হাদীস’ অধ্যায়ের প্রারম্ভে তিনি বলেন-
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ দ্বারা ইমাম আবু হানিফা (রঃ) উদ্দেশ্য| কেননা, তাঁর সমসাময়িক পারস্যবাসীদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি তাঁর জ্ঞানের সীমায় এমনকি তাঁর ছাত্রদের জ্ঞানের সীমা পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়নি| -  (ইবনে হাজর হায়তামী, ১৯৮৩, পৃ. ২৪)
 কেননা চার ইমামের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা (রঃ) ছাড়া অন্য কেউ পারস্যের ছিলেন না| উল্লেখ্য, ইমাম মালিক (রঃ) মদীনায় ৯৩ হিজরীতে জন্ম লাভ করেন| - (যাহাবী, সিয়ারু, আ’লামিন নুবালা, ১৪১৩ হি, ৮/৪৮)
ইমাম শাফে’ঈ ১৫০ হিজরীতে বায়তুল মুক্বাদ্দিসের গাজায় জন্মলাভ করেন| - (নভভী, তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত,১/৬৮)
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল মাতা-পিতা উভয় দিক থেকে আরবী| তিনি বাগদাদে ১৬৪ হিজরীতে জন্ম লাভ করেন|- (মযী, তাহযীবুল কামাল, ১৯৮০, ১/৪৩৭)

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার আসক্বালানী (রঃ)-ও বলেছেন উপরের হাদিস ধারা ইমাম আবু হানিফা (রঃ) কে বুঝানো হয়েছে। ইমাম আজম আবূ হানিফা (রঃ) ’দিরায়তো হাদীসে’ যেমন সকলের জন্য অনুকরণীয়, তেমন 'রেওয়াতে হাদীসে’ও তিনি সর্বজন স্বীকৃত ইমাম  ছিলেন। কিন্তু যার ব্যক্তিত্ব যত বেশি তার বিরোধিতাও তত বেশি| ইমাম আজম-কেও বিরোধিতা ও শত্রুতার কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে বারংবার| বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে তাঁর বিরোধিতার যে প্রপাগাণ্ডা চলছে তা হলো তিনি ইলমে হাদীস সম্পর্কে অনবিহিত ও  অনভিজ্ঞ ছিলেন (নাঊযুবিল্লাহ)।
এটি তাঁর বিরুদ্ধে এক জঘন্য অপবাদ|
যেখানে কুরআন,হাদীস প্রমাণ করে, ইমাম আবু হানিফার শ্রেষ্ঠত্বের কথা। সেখানে কিছু কিছু ওলামাদের বিচ্ছিন্ন “যেরা” কে পুজি করে কুরআন,হাদীসের “তাদীলের” বিপরিত দলিল কায়েম করে ইমাম আবূ হানিফার 'দিরায়তে হাদীস' ও ’রেওয়াতে হাদীস'- কে প্রত্যাখ্যান করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আফসুস তাদের জন্য, যাদের মধ্যে ইনসাফের লেশমাত্রাও নেই। আরো আফসুস হয় তাদের জন্য , যারা ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-এর সম্পর্কিয় আয়াত ও হাদীসসমূহের উপরও ইনসাফ করতে পারেনি। জানিনা উক্ত আয়াত ও সহীহ হাদিসের বিরুধীতাপূর্বক তাদের ইমান ও আখেরাতের পরিণতি কি হবে?

ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ) এর
 মর্যাদা ইমামদের ধারা সত্যায়ন :-

১. ইমাম মালিক (রঃ) [৯৩-১৭৯ হিজরী] :
ইমাম মালিক (রঃ)-কে একবার জিজ্ঞাস করা হলো, আপনি কি আবু হানিফা (রঃ)-কে দেখেছেন?
তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ, আমি এমন এক ব্যক্তিত্বকে দেখেছি, যিনি ঘরের এই স্তম্ভকে (ইলমের যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে) যুক্তি দ্বারা স্বর্ণের স্তম্ভে পরিণত করে দিতে পারেন। - (তারীখে বাগদাদ, খন্ড-১৩, পৃষ্ঠা-৩৩৮)
২. ইমাম শাফিঈ (রঃ)  [১৫০-২০৪ হিজরী] : ইমাম শাফিঈ (রঃ) বলেন, ”যে ব্যক্তি ফিকহ এর ইলিম হাসিল করতে চায়, সে যেন ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এবং তাঁর ছাত্রদের সান্নিধ্য লাভ করে। কারণ, ফিকহের এর ব্যপারে সকলেই ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-এর মুখাপেক্ষী।" - (তারীখে বাগদাদ, খন্ড-১২, পৃষ্ঠা-৩৪৬) 
”যে ব্যক্তি আবু হানিফা (রঃ)-এর কিতাব পড়বে না, ইলমে তার গভীরতা হবে না এবং জ্ঞানও তার অর্জিত হতে পারে না। 
আবু হানিফা (রঃ)-এর কথা এবং কাজ তাঁর ফিকহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।” - (উকুদুল জিমান, পৃষ্ঠা-১৮৭ ) 
“অন্যান্য সকল ফকীহ আলিমগণ ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-এর শাগরেদ।" - (তাযকিরাতুল মুহাদ্দিসীন, পৃষ্ঠা-৬৬)
৩. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) [১৬৪-২৪১ হিজরী] : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) বলেন, “তিনজন এমন ব্যক্তি আছেন, যারা কোন মাসআলায় একমত হয়ে গেল, সেখানে আর ইখতিলাফ করার কোন সুযোগ থাকে না। তখন তাঁকে জিজ্ঞাস করা হলো, কে সেই তিনজন ব্যক্তি? তখন তিনি জাবাব দিলেন, 'আবু হানিফা (রঃ) এবং তাঁর দুই বিশেষ ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) ও ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান (রঃ)'।" - (আল-আনসাব লিস সামআনী, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-২০৪)
8.  ইব্রাহীম হারবী বলেন, ” আমি একবার ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-কে জিজ্ঞাস করলাম, ‘এত সূক্ষ্ম মাসআলাসমূহের উত্তর আপনার কাছে কোথা থেকে আসলো? 
তিনি জবাব দিলেন, "মুহাম্মদ ইবনে হাসান (রঃ) (ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-র ছাত্র) - এর কিতাব থেকে।” - (তারীখে বাগদাদ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৭৭)
৫. ইমাম খুরাইবী (রঃ) বলেন, "অজ্ঞ বা হিংসুক ছাড়া আর কেউ ইমাম আবু হানিফা (রঃ) সম্পর্কে কটুক্তি করবে না।" 
তিনি আরো বলেন, "মুসলমানদের উপর ওয়াজিব তাদের নামাজে ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-র জন্য দু'আ করা।"
৬. ইমাম বুখারী (রঃ)-র খাস উস্তাদ, মুহাদ্দেস মক্কী ইবনে ইবরাহীম (রঃ) বলেন, "ইমাম আবু হানিফা (রঃ) তাঁর যুগের সবচেয়ে বড় আলেম ছিলেন।" - (মানাকিবুল ইমাম আবু হানীফা: ২৭ পৃ.)

হে আল্লাহ! ইমামে আজম আবু হানিফা রহমতুল্লাহ আলাহি-কে না জেনে না চিনে যারা বিরুপ মন্তব্য করে, আমাদের সে ভাইদের জানার ও বুঝার তৌফিক দিন, হিংসুকদের বন্ধুতে পরিণত করে দিন; তাদের অন্তরকে প্রশস্ত করে দিন। তাদের অপপ্রচারে আমাদের সবরে জামীল ইখতিয়ার করার তাওফীক দান করুন।

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
১৬ মে ২০১৭.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন