বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১

আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরকে নিয়ে কিছু কথা :


কুপি-হারিকেনের আলোতে লেখাপড়া শিখা মানুষ ভাইরালের জামানায় উপনীত হয়ে কত কি যে দেখলাম আর দেখছি শিখলাম আর শিখছি তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না! ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ)-এর বিখ্যাত কিতাব আল-ফিকহুল আকবর-এর হার্ডকপি আমার কাছে আছে; এ'টা মূলতঃ আকিদার কিতাব। যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের জন্য অন্যন্য ও অদ্বিতীয় একটি  আকিদার কিতাব; ঈমানের মূল দিকনির্দেশনা। অনলাইনে এর পিডিএফ কপি খুঁজতে যেয়ে পড়লাম এক মহা বিপদে! সার্চ দিতেই গুগল যে ফিকহুল আকবর লিঙ্ক সাপ্লাই দিল তা দেখে আমি হতবাক! এ'টা এতো বড় কেন? ইমামে আজমের ৪৯ ধারা গেল কই?? যে বইটা অনুবাদ করেছে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, সে বইটা পড়ার পর জেনে বুঝেই মন্তব্য করছি— ঈমানদারকে বেইমান করার জন্য বইটি তৈরী করা হয়েছে, এবং ইমামে আজমের নাম ব্যবহার করে কূটচালে বাংলাভাষী মুসলমানদের ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে এতো ব্যাপকভাবে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। 

আমি যে অনুবাদ খুঁজছি তা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান অনুদিত ও সম্পাদিত 'আল-ফিকহুল আকবর'। যে বইয়ের সাথে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের বইয়ের কোন মিল নেই; বিশ্বাস না হলে মিলিয়ে দেখুন। দশবারের চেষ্টায়ও আসল বই পেলাম না, বারবার গুগল ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কতৃক সম্পাদিত বইটিই দিল। অবশেষে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের বইটিই ডাউনলোড করে এটার পরিসর দেখে অবাক হলাম; এটি একটি বিশাল বই। বইটি ডাউনলোড করে বেশ কয়দিন লাগিয়ে পড়লাম। এ বইটিতে মূলতঃ ইমামে আজমের প্রতি অবিশ্বাসের তীর ছোড়া হয়েছে; নিশ্চিত একটি জঘন্য কাজ, প্রতারণা! ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ)-র নাম করে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর যে অকাজ-আকাম করে গেছে এবং পৃথিবীতে স্বাক্ষী রেখে গেছে, যা হাজার হাজার মানুষকে পথভ্রষ্টতার অতলে তলিয়ে দিচ্ছে; নিশ্চয় তার প্রতিদান সে ওপারে পাচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানতে পাড়লাম মৃত্যুর পর অনলাইন বাজারে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর প্রচণ্ড রকমের ভাইরাল! কিন্তু ওপারে তিনি কেমন আছেন? হায়রে মুসলমান! মরে নেন, সবই টের পাবেন! আসল আর নকল না দেখে না চিনে না বুঝে জাহান্নামের রসদ আর কত কিনবেন? ভাইরাল মিজান, মামুনুল, ত্বহা....  তারপর কে এবং কি?? ইসলামের নামে তথাকথিত আলেমদের এসব ভণ্ডামি আর কত? ভণ্ডামিপূর্ণ এসব কর্মকাণ্ডে পুরো জাতি আজ হতবাক হতভম্ব! তারপরও মুসলমানের জ্ঞানোদয় হয় না, হবে না; কারণ সেই একই— অন্ধত্ব। মুসলমান যতদিন পর্যন্ত 'ইকরা' বা পড়ায় অভ্যস্ত না হবে, ততদিন এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে না।

'রব্বুল আ’লামীন সর্ব প্রথম কি সৃষ্টি করেছেন?'— এ প্রশ্নটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে আমাদের বর্তমান সমাজে; কারণ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর নামের এই তথাকথিত আলেমই উস্কে দিয়ে গেছে ইস্যুটিকে। তার মতো আলেমরাই সৃষ্টি করে গেছে জগতে এতো মতপার্থক্য। 'সর্বপ্রথম সৃষ্টি  কি কলম, না কি নূরে মুহাম্মাদী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম?'— এ নিয়ে বর্তমান মুসলমানরা পুরাপুরি দুইভাবে বিভক্ত। এমন কেন? আমার গবেষণা বলছে— যারা মনে করে প্রথম সৃষ্টি কলম, তাদের চোখে নিশ্চিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদ্বেষী একটি পর্দা আছে। এ কথায় হয়তো অনেকে রাগ করবেন বা করতে পারেন। দুঃখিত! এক কথায় এর চেয়ে আর ভালো কিছু লিখতে পারলাম না। তারপরও আপনাদের অনুরোধ করবো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে।  

হযরত উবাইদা ইবনে ছামিত (রাঃ) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত; 'নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম ‘কলম’ সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর কলমকে বললেন, লিখ। কলম বললঃ হে প্রভূ! কি লিখবো? আল্লাহ বললেনঃ লিখ ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।' 
হাদিসটি যেসব কিতাবে উল্লেখ আছে— মুসনাদে আবু দাউদ তায়লাসী : হাদিস নং— ৫৭৮; মুসনাদে ইবনে জা’দ : হাদিস নং— ৩৪৪৪; মুসনাদে আহমদ : হাদিস নং— ২২৭০৭; তিরমিযী শরীফ : হাদিস নং — ২১৫৫; মান : সনদ সহীহ।

উক্ত হাদিসের প্রথম অংশ দ্বারা বুঝা যায় 'কলম' প্রথম সৃষ্টি। কিন্তু শেষ অংশটি দ্বারা কি বুঝা যায়?  নিশ্চয় 'কলম' প্রথম সৃষ্টি নয়; কারণ হাদিসটির শেষ অংশে রয়েছে 'আল্লাহ তা'আলা বললেন, 'লিখ ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।' যা দ্বারা স্পষ্টতই বুঝা যায়, কলম সৃষ্টির পূর্বেও অনেক কিছু ছিল; কারণ, আরবি এবারতে 'মা কানা' আছে, যা দ্বারা অতীতকালের ঘটনা বুঝায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় 'কলম'-কে প্রথম সৃষ্টি বলা হয়েছে কলমের সম্মানার্থে; মূলত প্রথম সৃষ্টি ‘কলম’ নয়। আমাদের দেশের কিছু আলেম আছে যারা হাদিসের শেষের অংশ বাদ দিয়ে শুধু প্রথম অংশ বর্ণনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, এবং বলে— দেখ প্রথম সৃষ্টি কলম! অথচ হাদিসের পরের অংশ পড়লেই বুঝা যায় প্রথম সৃষ্টি কলম নয়; অন্য কিছু। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্তবা, শা'ন-মান ও মু'জেজা সম্পর্কিত যে কোন হাদিস আলবানী মেশিনে ফেলে আজকাল একদল জাল/জয়ীফ বলছে; ওই মেশিনে পড়লেই যে কোন হাদিস জাল/জয়িফ হয়ে যায়; কোন সনদের প্রয়োজন পড়ে না! এই মেশিনের স্রষ্টা নাসিরুদ্দিন আলবানীকে আমাদের দেশের মানুষ তেমন একটা ভালো চিনে-জানে না, কিন্তু এক্সিডেন্টে মৃত তথাকথিত বিশিষ্ট আলেম ফেসবুক/ইউটিউব মাওলানা মরেও যে অনবরত জগতে ঘুরছে, সেই ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার বিতর্কিত কিতাব— 'হাদীসের নামে জালিয়াতি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিষয়ক জাল হাদীস'-এ নূরে মুহাম্মাদীই (সাঃ) প্রথম সৃষ্টি নয় বলে যে ব্যাখ্যা দাঁড় করেছেন, তা পড়ে ও জেনে-বুঝে এ দেশের মুসলমান আজ গোমড়াহীতে ডুবে যাচ্ছে। অথচ পূর্ববর্তী বিখ্যাত সব আলেম এ হাদিসটি সহীহ্ বলেছেন; যা পরে তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ। একজন মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমি কলম ধরেছি শুধুমাত্র ঈমানি দায় থেকে। ইমামে আজমের ফিকার কিতাব 'ফিকাহুল আকবর'কে তিনি বিকৃত করেছেন এবং 'হাদিসের নামে জালিয়াতি' বলে মুসলিম সমাজকে খণ্ডিত করেছেন, তাই তার বিরুদ্ধে আজকের কলম ধরা। 

আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের লেখা অনলাইন কিতাব থেকে কিয়দংশ আমি হুবহু তুলে ধরছি — "নূর মুহাম্মাদী প্রথম সৃষ্টি" অর্থে নিম্নের হাদীসটি সমাজে বহুল প্রচলিত:

أّوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِيْ

‘‘আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন’’। সুদীর্ঘ হাদীসটির সার সংক্ষেপ হলো, জাবির (রা) রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রশ্ন করেন, আল্লাহ সর্বপ্রথম কী সৃষ্টি করেন? উত্তরে তিনি বলেন:

أوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرَ نَبِيِّك مِنْ نُوْرِهِ....

‘‘সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূরকে তাঁর নূর থেকে সৃষ্টি করেন।’’ এরপর এ লম্বা হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ নূরকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে তা থেকে আরশ, কুরসী, লাওহ, কলম, ফিরিশতা, জিন, ইনসান এবং সমগ্র বিশ্বকে সৃষ্টি করা হয়।....

এ হাদীসটির অর্থ ইতোপূর্বে উদ্ধৃত সহীহ মুসলিমের হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ, তাতে বলা হয়েছে: ফিরিশতাগণ নূর থেকে, জিনগণ আগুন থেকে এবং মানুষ মাটি থেকে সৃষ্ট। আর এ হাদীসে বলা হচ্ছে যে, ফিরিশতা, জিন, ইনসান ও মহাবিশ্বের সব কিছুই নূর থেকে সৃষ্ট। তারপরও এ হাদীসটির বক্তব্য আমাদের কাছে আকর্ষণীয়। যদি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নামে মিথ্যা বলার বা যা শুনব তাই বলার অনুমতি থাকতো তবে আমরা তা নির্দ্বিধায় গ্রহণ করতাম ও বলতাম। কিন্তু যেহেতু তা নিষিদ্ধ তাই কুরআন ও সুন্নাহ-এর নির্দেশ অনুসারে আমরা সনদ অনুসন্ধান করতে বাধ্য হই এবং নিম্নের বিষয়গুলি জানতে পারি:
(ক) বিশ্বে বিদ্যমান কোনো হাদীস গ্রন্থে হাদীসটি সনদ-সহ পাওয়া যায় না। আমরা বলেছি, একটি হাদীস সাধারণত অনেকগুলি হাদীসের গ্রন্থে সনদ-সহ সংকলিত থাকে। কিন্তু এ হাদীসটি কোনো হাদীস গ্রন্থেই সংকলিত হয় নি।

(খ) আমরা দেখেছি যে, ইতিহাস, সীরাত, আকীদা, তাসাউফ, ওয়ায ইত্যাদি বিষয়ক গ্রন্থগুলিতেও বহুসংখ্যক সহীহ, যয়ীফ ও জাল হাদীস সনদবিহীন বা সনদ-সহ সংকলিত। ইসলামের প্রথম ৫০০ বৎসরের মধ্যে এ সকল বিষয়ক কোনো একটি গ্রন্থেও এ হাদীসটির কোনো উল্লেখ নেই।

(গ)..............
সবগুলো পয়েন্ট তুলে ধরতে গেলে লেখা বিশাল হয়ে যাবে, তাই ওদিকে না গিয়ে.......... 

ইনিয়েবিনিয়ে আরও অনেক ব্যাখ্যা আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর দাঁড় করেছে উক্ত হাদিসটি জাল সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্যে; অথচ তাবে-তাবেঈন যুগের ইমাম— ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রঃ) এবং হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর মুজাদ্দেদ ইমাম গাজ্জালী (রঃ)-সহ আরও ৩৬ জন জগৎবিখ্যাত মনীষী তাঁদের কিতাবে সহীহ্ সনদে উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। একজন আলেম কি করে এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করতে পারে? কাকে বিশ্বাস করবো/করবেন??  

সত্যতা যাচাই:

অনেক উদাহরণ দেয়ার দরকার নেই, সর্ব প্রথম আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা যে তাঁর প্রিয় হাবীব হুজুরপাক (সাঃ)-এর নূর সৃষ্টি করেন তার প্রমাণে নিন্মের হাদিসটিই যথেষ্ট—

عن جابر رصي الله عنه قال قلت يا رسول صلي الله عليه و سلم بابي انت و امي اخبرني عن اول شييء خلق الله تعالي قبل الاشياء قال يا جابر ان الله تعالي قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذالك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالي ولم يكن في ذالك الوقت لوح ولا قلم ولا جتة ولا نار ولا ملك ولا سماء ولا ارض ولا شمس ولا قمر ولا جني ولا انسي ….الي اخر
অর্থাৎ— হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্নিত; তিনি বলেন, আমি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবানি হউক, আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন?
তিনি বলেন, হে জাবের! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম সব কিছুর পূর্বে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেই নূর আল্লাহ পাকের ইচ্ছা অনুযায়ী কুদরতের মাঝে ঘুরছিলো; আর সে সময় লওহে মাহফুজ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ ও জ্বিন কিছুই ছিলো না।

উল্লেখিত হাদিসটি নিন্মলিখিত কিতাবসমূহে নকল করা হয়েছে—

১. মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক; ১/৯৯, হাদীস নং ১৮
২. দালায়েলুন নবুওয়াত ১৩/৬৩
৩. মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া ১/৯
৪. মাদারেজুন নবুওয়াত ২/২
৫. যুরকানী ১/৪৬
৬. রুহুল মায়ানী ১৭/১০৫
৭. সিরাতে হালবীয়া ১/৩০
৮. মাতালেউল মাসাররাত ২৬৫ পৃ:
৯. ফতোয়ায়ে হাদীসিয়া ১৮৯ পৃ:
১০. নি’মাতুল কুবরা ২য় পৃ:
১১. হাদ্বীকায়ে নদীয়া ২/৩৭৫
১২. দাইলামী শরীফ ২/১৯১
১৩. মকতুবাত শরীফ, ৩য় খন্ড, ১০০ নং মকতুব
১৪. মওজুয়াতুল কবীর ৮৩ পৃ:
১৫. ইনছানুল উয়ুন ১/২৯
১৬. নূরে মুহম্মদী ৪৭ পৃ:
১৭. আল আনোয়ার ফি মাওলিদিন নবী ৫ পৃ:
১৮. নশরুতত্বীব ৫ পৃ:
১৯. তারীখুল খমীস ১/২০
২০. নুজহাতুল মাজালিস ১ম খন্ড
২১. দুররুল মুনাজ্জাম ৩২ পৃ:
২২. কাশফুল খফা ১/৩১১
২৩. তারিখ আননূর ১/৮
২৪. আনোয়ারে মুহম্মদীয়া ১/৭৮
২৫. আল মাওয়ারিদে রাবী ফী মাওলীদিন নবী ৪০ পৃষ্ঠা 
২৬. মজমুয়ায়ে ফতোয়া ২/২৬০
২৭. দেওবন্দী আজিজুল হক অনুবাদ কৃত বুখারী শরীফ ৫/৩
২৮. আপকা মাসায়েল আওর উনকা হাল ৩/৮৩
২৯. শিহাবুছ ছাকিব ৫০
৩০. মুনছিবে ইছমত ১৬ পৃ :
৩১. রেসালায়ে নূর ২ পৃ:
৩২. হাদীয়াতুল মাহদী ৫৬পৃ :
৩৩. মা’ য়ারিফে মুহম্মদী
৩৪. আনফাসে রহীমিয়া
৩৫. আফদ্বালুল ক্বোরা
৩৬. তাওয়ারীখে মুহম্মদ

হাদিসের সনদ—
১. হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
২. হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
৩. মুহাম্মাদ বিন মুনকাদার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৪. মা’মার বিন রাশীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৫. আব্দুর রাজ্জাক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।

বর্ণিত হাদিসের রাবীদের সম্পর্কে মুহাদ্দীসগণের মন্তব্য—

ক) হাফেজে হাদিস, তাবে-তাবেঈন ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে:
আহমাদ ইবন সালীহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, 'আমি একবার আহমাদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি হাদিস শাস্ত্রে আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে নির্ভরযোগ্য আর কাউকে পেয়েছেন কি? আহমাদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন— না'। —(তাহজিবুত তাহজিব লি হাফিয ইবনে হাজর আসক্বলানী; ২/৩৩১)

খ) অপর রাবী মা’মার বিন রাশীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে:
ওনার সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, 'আমি বাসরার সকল হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞের থেকে মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাকে মা’মার বিন রাশীদ এর সূত্রে পাওয়া হাদীসগুলো পছন্দ করি'।
ইবনে হাজর আসকলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহিও ওনাকে প্রখর স্মরণশক্তি সম্পন্ন এবং নির্ভরযোগ্য বলেন। —(তাহজিবুত তাহজিব; ১/৫০৫, আসমাউর রেজাল।)

উক্ত মা’মার বিন রাশীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সূত্রে বর্ণিত বুখারী শরীফের হাদীস সংখ্যা প্রায় ২২৫ এবং মুসলিম শারীফে বর্ণিত হাদীস সংখ্যা প্রায় ৩০০।

গ) হাদিসটির আরেক রাবী মুহাম্মাদ বিন মুকদার রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে:
ইমাম হুমায়দি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুকদার রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন হাফিজ, ইমাম জারাহ তাদীলের ইমাম ইবন মা’ঈন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উনি নির্ভরযোগ্য।—(তাহজিবুত তাহজিব; ০৯/১১০৪৮,
আসমাউর রেজাল।)

হযরত মুকদার রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা বুখারী শারীফে ৩০টি এবং মুসলিম শারীফে ২২টি।

ঘ) আর মূল বর্ণনাকারী হলেন হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, যিনি একজন সুপ্রসিদ্ধ সাহাবী (রাঃ)। বুখারী ও মুসলিম শরীফে ওনার থেকে বর্ণিত অসংখ্য হাদিস আছে। 

দেখা যাচ্ছে যে, হাদিসটির সকল রাবীই নির্ভরযোগ্য এবং ওনাদের সূত্রে বোখারী ও মুসলিম শরীফেও অসংখ্য হাদীস বর্ণিত আছে; সুতরাং এ কথাটি বলার এখন আর কোন অপেক্ষা রাখে না, দ্বিধাহীন ভাবেই বলা যায়— ইমাম বুখারী ও মুসলিম-এর সংজ্ঞা ও শর্তানুসারে হাদীসটি সহীহ্। পরিশেষে একটি প্রশ্ন— আমরা কি পূর্ববর্তী জামানার বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দেসদের বিশ্বাস করবো, না কি শেষ জামানার দুনিয়াবি সুযোগ-সুবিধা নেয়া ঘড়ি মেকার নাসিরুদ্দিন আলবানী আর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরকে বিশ্বাস করবো??

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ 
২২ জুন, ২০২১.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন