রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১

আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না:



আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা-র কৃতজ্ঞতায় ও প্রশংসায় বান্দার নেয়ামত বেড়ে যায়; আর যদি এর ব্যতিক্রম হয় তবে কঠোর শাস্তির ঘোষণাও রয়েছে। তিনি সরাসরি ঘোষণা করেছেন— 'যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে নেয়ামত আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ —(সুরা ইবরাহিম : ৭) 

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের স্মরণ রাখা উচিত— সকল নেয়ামতের একমাত্র মালিক আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা; দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের সকল অনুগ্রহের মালিক একমাত্র আল্লাহ। সুতরাং মালিকের অনুগ্রহ স্বীকার করায়ই রয়েছে পরম আনন্দ ও চরম পুরস্কার। আর আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের অনুগ্রহকে অস্বীকার করা বা অবজ্ঞা করা কোনো ভাবেই আদব ও কৃতজ্ঞতার মাঝে পড়ে না। আল্লাহ সুবহানাহু  তা'আলা মানুষকে তাঁর অফুরন্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন— 'তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।' —(সুরা নহল : ১৮) 'তোমাদের কাছে যেসব নেয়ামত রয়েছে, তা তো আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে।' —(সুরা নহল : ৫৩) 'সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব; আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।' —(সুরা বাক্বারা : ১৫২) 

কোন বান্দা যখন শুধুমাত্র  আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলাকে ভয় করে, তখনও তিনি বান্দার সব অবস্থা দেখেন এবং জানেন; আর যখন কোন বান্দা আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও আনুগত্যের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যায়, তখন তিনি কি করেন? বান্দাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন— 'তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের পরওয়া করছ না। অথচ তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে।' —(সুরা নুহ : ১৩-১৪) অন্যত্র তিনি আরও বলেছেন— 'আর তিনি জানেন তোমরা যা গোপনে কর এবং তোমরা যা প্রকাশ্যে কর।' —(সুরা তাগাবুন : ৪) 

তাই আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার অবধ্যতা না করে তাঁর দিকে ফিরে আসাই বান্দার একমাত্র কাজ হওয়া উচিত। তিনি বান্দার উপর অসীম ক্ষমতাবান, বান্দা তাঁর অধীন। অতএব, তাঁর দিকে ফিরে যাওয়া ছাড়া বান্দার কোনোই মুক্তির পথ বা উপায় খোলা নেই। আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা স্পষ্টতই উল্লেখ করেছেন— 'এমন কোন জীব-জন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।' —(সুরা হুদ : ৫৬)' 'এবং আল্লাহর উপরই তোমরা নির্ভর কর, যদি তোমরা মুমিন হও।' —(সুরা মায়েদা : ২৩) 

মামুনুল হক প্রসঙ্গ নিয়ে কিছুই আর বলার নেই। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা যাদের অন্তরে বক্রতা দেন, তিনি তাদের থেকে সকল নেয়ামত কেঁড়ে নেন; কারো রুহানি সন্তানরা এসব বুঝে না, বুঝবে না। গতকাল শনিবার দুপুরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম নিজ কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় জানান— পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল জানিয়েছেন, প্রথম বিয়ে শরিয়ত বা আইনসম্মতভাবে হয়েছে। আর পরবর্তী যে দুটি বিয়ের কথা তিনি স্বীকার করেছেন সেগুলো চুক্তিভিত্তিক, কোনো কাবিননামা নেই। 

মামুনুল হকের পরের দুটো বিয়ের চুক্তিগুলো হচ্ছে তারা স্ত্রী থাকবে, কিন্তু কোনো মর্যাদা পাবে না। স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা করতে পারবে, কিন্তু সম্পর্কের কোনো অধিকার তারা পাবে না। একই সাথে কোনো দাবি-দাওয়া বা সন্তান ধারণ করতেও পারবে না তারা। আমরা সকলেই জানি প্রচলিত আইনের পরিপন্থী এ ধরনের বিয়ের চুক্তি, কিন্তু ইসলামি শরীয়া আইন কি বলে? আপনি কি জায়েজ মনে করেন?? 

পরিশেষে, দুটো কথা বলে শেষ করছি— জ্ঞানান্ধ-বধির কখনো আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার রহমতের চাদরে আবৃত হতে পারে না। আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আল-আদল, সর্বোত্তম ন্যায়-বিচারক। তিনি মানুষের অন্যায়ের অবশ্যই ভয়ংকর শাস্তি দেন এবং দেবেন। মনে রাখবেন—  মহান রাব্বুল আলামীন ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না; কোন মানুষেরই সাধ্য নেই অযথা খালি খালি কাউকে হয়রানি করার বা লা'নতপূর্ণ অপমান করার।।

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ 
২৫ এপ্রিল, ২০২১.

বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১

মামুনুল হক ও তার তথাকথিত দ্বিতীয় স্ত্রী:


টপ অব দ্যা কান্ট্রি— মামুনুল হক এবং তার তথাকথিত দ্বিতীয় স্ত্রী; পক্ষে বিপক্ষে কত কি হচ্ছে! প্রত্যেকেই তার ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করছে; কারো কাছে মামুনুল হক আদর্শের মূর্ত প্রতীক, আবার কারো কাছে চাক্ষুষ শয়তান। ও'দিকে মামুনুল হক চুপ! মামুনুল হক কি পারতো না এক নিমিষে এইসব জল্পনা কল্পনার অবকাশ দিতে, অবসান ঘটাতে? সব সমস্যার সমাধান করতে?? 

দেশের একদল আলেম এক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছে— মহিলাটি মামুনুল হকের বৈধ স্ত্রী। এ ব্যাপারে সারা জাতির স্বাক্ষীর দরকার আছে কি? পারিবারিকভাবে  মামুনুল হক একাই তো পারে তার  স্ত্রীকে হাজির করে একটা প্রেস ব্রিফিং করে সব জল্পনা কল্পনার পাঠ চুকাতে; তাই নয় কি? 

একান্ত ব্যক্তিগত একটি বিষয় কেন রাষ্ট্রীয় বিষয়ে রূপ নিল? মামুনুল হক যদি সাধারণ কেউ হতেন, এমনটা কখনো ঘটতো না। সে নিজেকে দাবী করেন আলেম, মানুষও তাকে মনে করে আলেম; কেউ-বা আরও এক ধাপ এগিয়ে ভাবতে শুরু করেছে— মামুনুল হক জাতীয় বিপ্লবের স্বপ্নদ্রষ্টা, এদেশের এক শ্রেণীর তথাকথিত সন্তানের রূহানী বাবা! তাই তো এতো কিছু। পুরো জাতি আজ মামুনুল হককে নিয়ে দ্বিধ-বিভক্ত। 

কারো কারো চিন্তা— শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে মামুনুল হককে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে সরকার এমন বিষয়টি সাজিয়েছে; অন্ধত্ব বড় অপরাধ,  বড় পাপ। আবার আরেকদল এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের যুক্তি দাঁড় করছে। এদের কে সঠিক আর কে বেঠিক??

গতকাল ব্যক্তিগত কাজে বাইরে বের হতেই এক নিকটজন সরকারের চৌদ্দটা বাজিয়ে আমাকেও সরকারের চামচা তকমা লাগিয়ে দিল! আমার দোষ, আমি ভণ্ড মোল্লাদের নিয়ে লিখি, স্টেটাস করেছি। তার বক্তব্য— শেষ পর্যন্ত আপনিও সরকারের কুটচালের পক্ষে, আলেমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি!!

কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে ওর কথাগুলো আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম; ভাবলাম, মানুষ কতটা নির্বোধ হলে এমনসব কথা বলতে পারে। সত্য উন্মোচন করলে, সত্যের পক্ষে কথা বললেই আজ এক শ্রেণীর লোকের কাছ থেকে দালান উপাধি পেতে হয়, সুবিধাবাদীর চক্ষুশূল হতে হয়; প্রকৃত সত্যের ধারেকাছেও আজ লোকজন যেতে চায় না। তাদের বদ্ধমূল ধারণার প্রতিউত্তর এক কথায় বা দুই কথায় দেয়া সম্ভব না, যাবেও না।  

তাছাড়া ভার্চ্যুয়াল মিডিয়ায় বেশ কয়েকজন আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে। এদিকে  ফেসবুকে আমার স্টেটাসগুলো নাকি আলেম-ওলামার বিপক্ষে গেছে; তাই হাসান দেওয়ান নামের নারায়ণগঞ্জের একজন জানাশোনা ব্যক্তি আমাকে যে  মেসেজ করেছে তার কপি পেস্ট করলাম— "আপনার জন্য দুঃখ হচ্ছে, মিথ্যাচার ছাপিয়ে, মিথ্যার পক্ষে দাড়িয়ে আলেম দের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, এতে কি আদৌ বুদ্ধিজীবী হতে পারবেন?  ভয় হয়না সেই রবের মুহুর্তের মাঝে গলাটিপে ধরতে পারেন নিঃশ্বাস বন্দ করে দিতে পারেন।  আপনি তো ইউসুফ আঃ এর জমানায় থাকলে তাকেও অপবাদ দিতেন, রাসূলে পাক সা এর সময় থাকলে আয়েশা রা এর বিরুদ্ধে অপবাদ দিতেন।  হয়তো ঈমানদার হয়ে জীবন কাটান না হলে কাফের,  মুনাফিক হয়ে না,  তাহলে কিন্তু দুনিয়া আখেরাত দুটো ই শেষ, আল্লাহ ছাড় দেন তবে ছেড়ে দেন না।"

আলেম কে? আলেম কাকে বলে?? ওসব আগে জানতে চেষ্টা করা উচিত। আলেম শব্দের অর্থ হলো জ্ঞানী। শরিয়তের পরিভাষায় আলেম বলা হয় তাঁকে, যিনি দ্বীন ও শরিয়তের গভীর জ্ঞান রাখেন এবং সেই জ্ঞান নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করেন; কোর'আন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করেন। পাশাপাশি সুন্নতের অনুসরণে নিজের জীবনকে পরিচালিত করেন, এবং আল্লাহর ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকেন। একজন আলেম হওয়ার জন্য শুধুমাত্র  সার্টিফিকেটই কি বিবেচ্য? মোটেও নয়। কেউ মাদরাসায় পড়াশোনা করলেই তাকে আলেম বলা যায় না, যাবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

বর্তমানের এই অতি ফেতনার যুগে মাদরাসাকে দ্বীনের সবচেয়ে বড় দুর্গ বিবেচনা করা হয়; অবশ্য তা অস্বীকার করারও কোন উপায় নেই। কারণ, বর্তমান সময়ে মাদরাসা থেকেই আলেমে-দ্বীন তৈরি হন এবং বের হয়। কিন্তু  আমাদের আজকের  এই অধঃপতিত সমাজের সর্বস্তরে যেভাবে পচন ধরেছে, তাতে সঠিক আলেম আছে কয় জন? এখন তো প্রকৃত দ্বীনই খুঁজে পাওয়া কঠিন। সুদ-ঘুষের টাকায় মসজিদ মাদ্রাসা হচ্ছে, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে নেতা সাহেব আশেপাশের দশ মসজিদের দশ ইমামকে হজ্জে পাঠাচ্ছে , জাকাত যাচ্ছে শো-কল খাতে! ইসলামের আর থাকলো কি? তাই তো প্রকৃত মুমিনের নাগাল পাওয়াই এখন কঠিন। তাই তো কমিনরাই এখন মমিন সেজে সমাজে ফেতনা ছড়াচ্ছে। 

আল্লাহ-র রসুল (সাঃ) আখেরী জামানা সম্পর্কে স্পষ্ট করেই অনেক কিছু বলেছেন— 'এমন সময় আসবে যখন ইসলাম শুধু নামে থাকবে, কোর’আন শুধু অক্ষরে থাকবে, মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে, কিন্তু সেখানে হেদায়াত থাকবে না। আমার উম্মতের আলেমরা হবে আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব। তাদের তৈরি ফেতনা তাদেরই উপর পতিত হবে।' —হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত উক্ত হাদিসটি বায়হাকী ও  মেশকাতে নকল হয়েছে।

মামুনুল হক নিজেকে আলেম দাবী করেন; তাই সারা দেশে এতো তোলপাড়। এক শ্রেণীর লোকজন এখনও তাকে আলেম মনে করছে! সে কি আসলে  আলেম? আপনারা কি একজন প্রকৃত আলেমের সংজ্ঞা জানেন?  আপনারা কি জানেন কেয়ামতে সকল মানুষের তুলনায় কঠোর আযাব কার হবে? যাকে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা এলেম দ্বারা কোন উপকার দেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'এলেম দু'প্রকার— মৌখিক এলেম এবং অন্তরস্থিত এলেম; একটা মানুষকে জব্দ করার এলেম, অন্যটা উপকারী এলেম।' তিনি আরও বলেন, 'শেষ জামানায় এবাদতকারী মূর্খ হবে এবং আলেম পাপাচারী হবে।' এ'সবের বাস্তব প্রমাণ পাচ্ছেন??

মামুনুল হক ৩  মার্চ শনিবার এক নারীকে নিয়ে সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে ওঠেন। তিনি দাবি করেন, সাথে থাকা ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী, তার নাম আমেনা তৈয়াবা। ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক ওই নারীকে তিনি বিয়ে করেছেন। যদিও ওই নারী নিজেকে জান্নাত আরা জান্নাত বলে পরিচয় দেন। ওই শনিবার (৩ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক দাবি করেন, বন্ধুর সাবেক স্ত্রীকে তিনি বিয়ে করেছেন এবং তাকে নিয়েই রিসোর্টে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

লাইভে মামুনুল হক বলেন, 'এ মুহূর্তে একটি বিষয় নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে, বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়েছে দেশব্যাপী। প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার জন্য আমি ফেসবুক লাইভে এসেছি। আমার সঙ্গে আছেন আমার বড় ভাই হাফেজ মাহমুদুল হক, মেজো ভাই মাহবুবুল হক এবং আমার ভাই বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। আমরা পারিবারিকভাবে যে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য এসেছি, আশা করছি আমাদের বক্তব্যের পর এ বিষয়ে বিভ্রান্তি থাকবে না এবং ভিন্ন বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।'

আরও বলেন, 'আজ যে ঘটনাটি হয়েছে, সেটি হলো আমি বেশ কয়েকদিন টানা রাত-দিন পরিশ্রমের কারণে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। একটু বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। বিশ্রামের জন্য ঢাকার অদূরে সোনারগাঁওয়ে একটি সুন্দর দর্শনীয় এলাকা, জাদুঘরে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। আমার স্ত্রীর পরিচয় নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।'  তিনি দাবি করেন, 'আমার সঙ্গে যিনি ছিলেন, তিনি আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। উপস্থিত কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। যিনি ওখানে উপস্থিত ছিলেন সম্ভবত পুলিশের সার্কেল এএসপি মোশারফ সাহেব, আমার কাছ থেকে তথ্য প্রমাণ নিয়ে যাচাই করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। যিনি আমার সঙ্গে ছিলেন, তিনি আমার একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মীর সাবেক ওয়াইফ (স্ত্রী) ছিলেন। তাদের দু’টি সন্তান রয়েছে। আড়াই বছর ধরে পারিবারিক কলহ ছিল। পরে দু’বছর আগে পারিবারিকভাবে ও আমার ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু-বান্ধবের উপস্থিতিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। তিনি শরিয়ত সম্মত আমার বিবি। আমার এই বক্তব্য শুনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সন্তুষ্ট হয়েছে।'

লাইভে তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঘটনাস্থলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে স্থানীয় যুবলীগ ও সরকার দলীয় কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছিলেন। তারা আমার সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন এবং লাইভ ভিডিও ধারণ করে সেখানে তারা সন্ত্রাসী কায়দায় কিছু হামলা ও আক্রমণ চালিয়েছেন। এ বিষয়গুলো যখন তারা লাইভ ভিডিও সম্প্রচার করেছেন, দেশবাসী জেনেছে। আমার সেখানকার বক্তব্য দেশের মানুষ শুনেছেন। আমার সেই বক্তব্য শুনে আমার পারিবারিক পরিচয়, স্ত্রীসহ পরিচয়টা স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরার পর, সেটা ভাইরাল হয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। হেফাজতকর্মীরা আমাকে উদ্ধারের জন্য সেখানে উপস্থিত হন। তারা উত্তেজিত অবস্থায় সেখানে কিছু ভাঙচুর চালায়। আমি তাদের শান্ত করার চেষ্টা করি এবং উত্তেজিত জনতাকে ওইখান থেকে নিয়ে চলে আসি।’

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, 'এই ঘটনা (দ্বিতীয় বিয়ে) আমার পরিবার জানে এবং পারিবারিক অভিভাকরাও জানেন। পুলিশের উপস্থিত কর্মকর্তা এসপি তিনিও ফোনে আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিষয়টি নিশ্চিত হন। কাজেই আমি আহ্বান করবো, এ বিষয় নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তিকর কিছু প্রচার না করে। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনারা কোনও অবস্থাতেই উত্তেজিত কোনও আচরণ করবেন না, শান্ত থাকবেন। কোনও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়, এমন আচরণ করবেন না। এটা আমার অফিসিয়াল বক্তব্য, আমার আইডি থেকে আমি এটি তুলে ধরলাম।'
কোনও ধরনের পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান নিয়ে কেউ যেন সংঘাতমূলক কোনও আচরণ না করেন লাইভে সে আহ্বান জানান তিনি।

এমন কি কোন আলেম করতে পারে, না পারবে?? বাস্তবতায় আমরা কি জেনেছি বা জানতে পারছি? তার ফোনালাপ ও তার স্ত্রী এবং বোনের  ফোনালাপ কি প্রমাণ করে? তার তথাকথিত স্ত্রী ও তার সন্তানের ফোনালাপ কি প্রমাণ করে? মামুনুল হক কি এসবের কোনটার প্রতিউত্তর করেছেন? কেন নয়?? স্ত্রী হলে তিনি এখন রাস্তায় কেন? ঘরে তুলে নিয়ে একটা প্রেস ব্রিফিং দিলেই তো সব লেঠা চুকে যায়। 

অযথা মিথ্যাবাদীর সাপোর্ট করে মিথ্যা স্বাক্ষী হয়ে দুনিয়া ও আখেরাত হারাবেন না।মিথ্যাবাদীর উপর লা'নত; কেয়ামতকে ভয় করুন।  মোহগ্রস্ত এই দুনিয়ার জীবনটা অতি ক্ষুদ্র।।  

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ 
৭ এপ্রিল,  ২০২১.

শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১

সিফফীনের যুদ্ধ ও কিছু কথাঃ


সিফফীনের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসের এক ন্যক্কারজনক অধ্যায়; এ গৃহযুদ্ধেই বদলে যায় মুসলমানদের ভাগ্য। পবিত্র  কুর'আনুল কারীম নিয়ে প্রথম বারের মতো ব্যবসা শুরু হয় এ যুদ্ধেই। কিছু নব্য মুসলিম যারা সুবিধাবাদী মুসলিম, মক্কা বিজয়ের সময় ঠেলায় পড়ে মুসলমান সেজেছে, সেইসব লোভী নামধারী মুসলমানরাই   দুনিয়াবি সুযোগ-সুবিধার লোভে পড়ে, ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে বা বিভিন্ন কূটকৌশলে সরলমনা সাধারণ মুসলমানকে ইমানহারা করেছে, ভ্রান্ত বানিয়েছে। শেষ পরিনতি— মুসলিম সাম্রাজ্যের পতন এবং ভ্রান্ত দুনিয়া লোভীদের বিজয়! 

নিন্মের দৃশ্যপটগুলো একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠবে সে সময় কি ঘটেছিল— 

১) সিফফীনের যুদ্ধের সময় হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-র সাথে যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন; কিন্তু খাবার সময় হলে তিনি মুয়াবিয়া (রাঃ)-র কাছে যেয়ে খাবার খেতেন। কারণ মুয়াবিয়া (রাঃ)-র তাবুতে অত্যন্ত দামী খাবার তৈরি করা হতো। একদিন মুয়াবিয়া (রাঃ) এ ব্যাপারে আপত্তি  করলে আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, 'আলী (রাঃ) সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই তাঁর পক্ষে যুদ্ধ করি, আর এখানকার খাদ্য উত্তম ও বৈচিত্রপূর্ণ হয়; তাই এখানে এসে খাবার গ্রহণ করি।'

২) মুসকিলার গভর্ণর আর্দশির বায়তুলমাল থেকে ঋণ গ্রহণ করে পাঁচশ দাসদাসী খরিদ করে তাদেরকে মুক্তিদান করেন। খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী (রাঃ) কঠিনভাবে এ অর্থ দাবী করলে তিনি বলেন, 'আল্লাহর শপথ! এই পরিমাণ অর্থ ছেড়ে দেয়া উসমান (রাঃ)-র জন্য কোন ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু এঁকে তো দেখছি প্রতিটি কানাকড়িরও হিসেব নিতে চায়।' এরপর তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে মুয়াবিয়া (রাঃ)-র আশ্রয়ে চলে যান। 
আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (রাঃ) এ কথা শুনে বলেন, 'আল্লাহ তার অকল্যাণ করুন। সে কাজ করেছে প্রভূর মত, কিন্তু পালিয়ে গিয়েছে কৃতদাসের মত! এবং বিশ্বাসঘাতকতা করেছে পাপীদের মত।'

৩) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-র চাচাত ভাই। সেই সময় বসরার গভর্ণর ছিলেন। তিনি বাইতুলমাল থেকে ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। খেলাফতের বায়াত গ্রহণ করে হযরত আলী (রাঃ) সেই ঋণের অর্থ দাবী করলে তিনি বসরা থেকে মক্কায় চলে যান; হিসাব চুকিয়ে দেয়ার পর তিনি বসরায় ফিরে আসেন।

৪) একবার হযরত আলী (রাঃ)-র ভাই হযরত অকীল (রাঃ) তাঁর কাছে এসে বায়তুলমাল থেকে কিছু অর্থ দাবী করলেন। হযরত আলী (রাঃ) বললেন, 'থামো! যখন অন্যদেরকে দেব তখন তোমাদেরকেও তাদের সমান দেব।' তিনি অনেক অনুরোধ ও কাকুতিমিনতি করলে হযরত আলী (রাঃ) বললেন, 'তুমি বরং বাজারে গিয়ে তালা ভেঙে মানুষের মাল চুরি করে নিয়ে যাও, সেটাই ভাল।' 
অকীল (রাঃ) বললেন, 'আপনি আমাকে চোর বানাতে চাচ্ছন?' আমিরুল মুমিনীন বললেন, 'তুমি তো আমাকে মানুষের কাছে চোর বানাতে চাচ্ছো। তুমি চাচ্ছো মুসলমানদের মাল মুসলমানদের না দিয়ে তোমাকে দিয়ে দেই।' এতে অসন্তুষ্ট হয়ে অকীল (রাঃ) সিরিয়া গিয়ে সিরিয়ার গভর্ণর মুয়াবিয়া (রাঃ)-কে তাঁর প্রয়োজনের কথা বললেন। মুয়াবিয়া (রাঃ) ততৎক্ষণাৎ বায়তুলমাল থেকে এক লাখ দিহরাম তাকে দিয়ে বললেন, 'মিম্বরে উঠে ঘটনাটা একটু বর্ণনা করুন।' অকীল (রাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, 'আমি হযরত আলী (রাঃ)-র কাছে এমন জিনিস চেয়েছিলাম যা তাঁর দীনের ক্ষতি করতো; তাই তিনি তাঁর দীনকেই আঁকড়ে থাকলেন। আমি মুয়াবিয়া (রাঃ)-র কাছে সেই একই জিনিস প্রার্থনা করলাম। তিনি তাঁর দীনের চাইতে আমাকে বেশি অগ্রাধিকার দিলেন।'
  
আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রাঃ) খেলাফত গ্রহণ করার পর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ফারুকে আযম হযরত ওমর (রাঃ)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তাই তিনি লোভী গভর্ণরদের প্রথমেই ক্ষমতাচ্যুত করে নতুন ভালো নির্লোভ  মানুষদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন  পদে নিয়োগ দেন। সবায় খলিফাতুল মুসলিনের আদেশ মেনে নিলেও একটিমাত্র বাহানা দাঁড় করিয়ে মুয়াবিয়া (রাঃ) মুসলিম খেলাফতের বিরুদ্ধে তলোয়ার ধরে পুরো মুসলিম জাহানকেই তছনছ করে দেয়। সর্বজন স্বীকৃত খলিফার বায়াত গ্রহণ না করা তো সবচেয়ে বড় অপরাধ, তার উপর খেলাফতের বিরুদ্ধে তলোয়ার ধরা; কতটা যৌক্তিক?  

সবচেয়ে দুঃখের বিষয়— সেই মুয়াবিয়া (রাঃ)-র অনুসারীর সংখ্যাই আজকের দুনিয়ায় সংখ্যায় বেশী; তারা শুধু দুনিয়াবি লাভের কথাই চিন্তা করে। আমার প্রশ্ন — তবে ইসলাম কেন, অন্য কিছু দিয়ে তো আরও অনেক বেশী দুনিয়াবি সুবিধা ভোগ করা যায়! তাই নয় কি? মুনাফেকি তো জঘন্য পাপ; আর মুনাফেকের জন্য নির্ধারিত রয়েছে সবচেয়ে ভয়াবহ জাহান্নাম।।  

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ 
৩ এপ্রিল, ২০২১.