পবিত্র কোর'আনুল কারীম নিয়ে প্রথম ব্যবসা শুরু হয়েছিল সিফফিনের যুদ্ধে— তলোয়ারের আগায় কোর'আন বেঁধে ধোঁকার মাধ্যমে; যা আজও অব্যাহত। বরং পরিসর বেড়েছে অনেক, হাজার-কোটিগুণ; তারাই ইসলামকে বানিয়েছে আজ পোশাকি ধর্ম। আদর্শ ও মতবাদের বৈপরীত্য, আর আলেম সমাজের মত ও পথের বিভিন্নতায় বিশ্ব মুসলিম ঐক্যসূত্র আজ ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে; এ যেন এক অতল মহাসাগর। এই দীর্ঘ জীবনে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রায় প্রত্যেক দলের ধর্মীয় বিশ্বাস বেশ ভালো করেই পরীক্ষা করেছি; আবিষ্কার করেছি তাদের গলদ আকিদা। আবার তারাই 'লাইলাতুল নিফসে মিন সাবান' পালনকারীকে অপবাদ দেয় 'বেদাতী' বলে, মাজার জেয়ারতকারীকে অপবাদ দেয় 'কবর পূজারী' বলে! বাপ-দাদারা তো ওসব পালন করতেন; তবে কি তাঁরা সবাই জাহান্নামী?(নাউজুবিল্লাহ!) তোমরা এ'সব নতুন কথা, নতুন বাহানা, নতুন ফেতনা কোথায় পেলে?
সাধারণ মুসলমান এখন যাবে কোথায়? তারাও ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে; বিভিন্ন মতে চায়ের দোকান দাবিয়ে বেড়াচ্ছে! ভার্চ্যুয়াল এই যুগে এসে ভ্রান্ত মোল্লারা সব এখন মিডিয়ার মাঠ দখল করে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে ব্যতিব্যস্ত। আর তাই, সাধারণ মুসলমানরা ভ্রান্তদের মতবাদের অতল গহ্বরে অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে; অনেকেই এই মহাসাগরে তলিয়েও গেছে, আবার কেউবা নাক ডোবা-ভাসা অবস্থায় হাবুডুবু খাচ্ছে। মহাসাগরে ডুব দিয়ে ঝিনুক কুড়ানো যতটা কঠিন, আর চেয়েও বেশী কঠিন বিভ্রান্তির এই মহাসাগরে ডুবে জ্ঞানের আলোকে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা। আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রঃ) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কিতাব 'এহইয়াউল উলুমুদ্দীন'-এ স্পষ্টতই আমাদের জন্য দিক নির্দেশনা রেখে গেছেন— 'একমাত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত-ই হলো নাজাত প্রাপ্ত দল' বলে।
বর্তমানের এই লোভাতুর কামার্ত বস্তুবাদী দুনিয়ায় যে কোন মুসলমানের পক্ষে সত্য পথ ধারণ এবং অবলম্বন করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ, হারাম এখন আমাদের রক্তে-মাংসে মিশে গেছে; হারাম উপার্জিত পয়সা দিয়ে মসজিদ মাদ্রাসা করে, মোল্লা বানিয়ে, হজ্জ করে, নামাজ পড়ে লাভ কি? তাই তো এতো এতো বয়ান শোনার পরও মানুষের জীবনযাপনে কোর'আন-হাদিসের কোন আসর পরিলক্ষিত হয় না; বরং দিনদিন সত্য থেকে মুসলমান যোজন-যোজন দূরে সরে যাচ্ছে। মিথ্যা ও হারামের জন্যই আজ মানুষের মাঝ থেকে হেদায়েতের নূর উঠে গেছে, সিরাতুল মোস্তাকিমের পথ খোঁজা ও সন্ধান কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পথে হাঁটা ও সার্থক হওয়া ভাগ্যবানের সংখ্যা তাই দিন দিন অতি নগন্য হয়ে পড়ছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো— বাতিলরা প্রত্যেকেও নিজেকে সার্থক ও সিদ্ধ মনে করে! আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত-ই তো বলেছেন, 'প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদে খুশি '। এসব মতবিরোধ ও মতবাদ সম্বন্ধে হুজুরপাক (সাঃ) সারে চৌদ্দশ বছর আগেই ভবিষ্যৎ বাণী করে গেছেন, 'আমার উম্মত তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে; তন্মধ্যে একদলই শুধু মুক্তি পাবে।'
দুনিয়ার ক্ষমতার জন্য যারা খলিফাতুল মুসলিমিন হযরত আলী (রাঃ)-র বায়াত নিতে তালবাহানা করেছিল, কারবালার প্রান্তরে যারা ইমাম হুসাইন (রাঃ)-কে নির্মমভাবে শহীদ করেছিল, তারাও নামাজ পড়তো, তাশাহুদ শেষে দুরুদ পড়তো, রোজা রাখতো, লম্মা জুব্বা পড়তো। তাদের অনুসারীরা আজও দুনিয়াতে অধিক পরিমাণে আছে; বস্তুত ওরাই সংখ্যায় অধিক! নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা দুনিয়াটাকে জাহান্নাম বানাতে ব্যতিব্যস্ত। এ'সব মুনাফেক থেকে সাবধান মুসলমান।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
২৮ মার্চ, ২০২১.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন