মহিমময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা নবী-রাসুল (আ:)-কে জাহেরী ও বাতেনী উভয় প্রকার মু'জিযা প্রদান করে সৃষ্টি করেছেন; যা প্রত্যেকের বেলায়ই ঘটেছে। কিছু জ্ঞানী, বিশেষ করে বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক কিছু মানুষ মনে করেন, 'পবিত্র কুর'আন ছাড়া মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আর অন্য কোন মু'জিযা নেই।' তাদের সন্দেহবাতিক মনে আরও এক মারাত্মক কূ-ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যাচ্ছে, অলৌকিক মু'জিযা সম্বলিত হাদীসগুলো সব জাল! এর সূচনা তো সেই শুরুতে, সর্বযুগেই যা ছিল এবং ঘটমান চলমান; আজকের দিনেও সেই শ্রেণীর মানুষ থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু মুসলমানও বর্তমানে মি'রাজকে দিব্যদর্শন বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে; এ'টাই ভাববার বিষয়। কেমনে কি? আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার অনন্য কুদরত ও হুজুরপাক (সা:)-এর অন্যতম মু'জিযা হ'লো মি'রাজ; যার সাথে ঈমান জড়িত। যা সংঘটিত হয়েছিল নবুয়তের ১১তম বছরে, রজব মাসের ২৭ তারিখে; তখন হুজুরপাক (সা:)-এর বয়স ছিল ৫১ বছর। ঐ বছর হুজুরপাক (সা:)-এর চাচা খাজা আবু তালিব মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যে হুজুরপাক (সা:)-এর সহধর্মিণী হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-এর ওফাত হয়; ঘরে-বাইরে একই বছর প্রধান দুই প্রিয়ভাজন ও অবলম্বন হারিয়ে হুজুরপাক (সা:) খুবই বিচলিত হয়ে পরেন। তাই এ বছরকে আমুল হুজন বা ‘দুশ্চিন্তার বছর’ বলা হয়; ঐ কঠিন সময়ে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা সান্ত্বনা দেয়া এবং স্বীয় রহস্যলোক দেখানোর অভিপ্রায়ে তাঁর প্রিয় হাবিবের সাথে মি'রাজ ঘটান।
পাক-ভারত উপমহাদেশে হাদীস আনয়নকারী বিশিষ্ট শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী তাঁর বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ 'মাদারেজুন্ নবুওয়াত'-এর ষষ্ঠ খণ্ডের ১২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি হাদীস নকল করেন, "খয়বর যুদ্ধের ঘটনাবলীর মধ্যে অন্যতম ঘটনা হচ্ছে হজরত আলী (রা:)-এর আসরের নামাজ আদায়ের জন্য সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর তা আবার আসমানে ফিরিয়ে আনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'সাহবা' নামক স্থানে পৌঁছার পর হযরত সাফিনা (রা:)-র সাথে বাসর যাপন করলেন এবং ওই স্থানেই আসরের নামাজ আদায় করলেন। তারপর হজরত আলী (রা:)-র রানের উপর মাথা রাখলেন। এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সা:) ঘুমিয়ে পড়লেন। ওহী অবতীর্ণ হওয়ার আলামত পরিলক্ষিত হলো। হজরত আলী (রা:) তখনও আসরের নামাজ আদায় করেননি। ওহী নাযিলের সময় এতো দীর্ঘায়িত হলো যে, সূর্য অস্তমিত হয়ে গেলো। ওহী শেষে হজরত আলী (রা:)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আসরের নামাজ পড়েছো? তিনি বললেন, 'না। হে আল্লাহর রাসুল! আমি এখনও আসরের নামাজ পড়িনি।'
তিনি (সা:) আল্লাহপাকের কাছে বললেন, 'হে আমার প্রভূপালক! আলী যদি তোমার এবং তোমার রাসুলের আনুগত্য করে থাকে, তাহলে সূর্যকে হুকুম দাও, সে যেন ফিরে আসে আলী যেনো নামাজ আদায় করতে পারে।' সূর্য একেবারেই ডুবে গিয়েছিল; পুনরায় উদিত হলো। সূর্যের আলো নিকটস্থ পাহাড় ও টিলাসমূহে পতিত হলো; এ অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করলো সকলেই। হজরত আলী (রা:) অজু করলেন, তারপর নামাজ আদায় করলেন।"
একটি বিষয় প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্যই জেনে রাখা দরকার, মু'জিযা'র সত্যতা প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ বিদ্যমান থাকা একান্ত জরুরী; প্রত্যেকটি সহীহ মু'জিযাতের পরবর্তী সাক্ষ্য-প্রমাণ সম্বলিত রিও'আত-সমূহ এতই মজবুত ও সুদৃঢ় যে, দুনিয়ার কোন বর্ণনা এর সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম নয়; যার ফলে মু'জিযা'র অকাট্যতা এবং সহজাত প্রকৃতির বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বাস্তবতাকে কেউই অস্বীকার করতে পারে না। যে সব মুহাদ্দিসীনে কেরাম মু'জিযা এবং কোন হাদীসের বর্ণনাসমূহ নকল করেন বা করেছেন তাঁদের সত্যবাদিতা, জ্ঞান-বুদ্ধি এবং তীক্ষ্ণ ধীশক্তির কথা আসমাউর রিজাল-এর কিতাবসমূহে বিস্তারিতভাবে সুসংরক্ষিত থাকে এবং রয়েছে; উপরন্তু তাঁদের মানসপটে সর্বদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিন্মের হুশিয়ারী বারংবার ঝংকৃত হয়- " যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম" (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা : ৭)।
আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা সকল যুগের সকল নবী-রাসুলগণকেই তাঁদের নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমাণ ও নিদর্শন স্বরূপ কোন না কোন অসাধারণ, অস্বাভাবিক ও অলৌকিক কিছু বিশেষ বিষয় প্রয়োজনবোধে মানুষকে প্রদর্শনের জন্য দান করেছেন; যে'গুলোর মোকাবিলা করতে সমকালীন মানবগোষ্ঠী চরমভাবে ব্যর্থ হয়। ইসলামের পরিভাষায় এ'গুলোকে 'মু'জিযা' বলা হয়; যেমন- হযরত ইব্রাহীম (আ:)-এর উপর আগুন শীতল হয়ে যাওয়া, হযরত মূসা (আ:)-এর হাতের লাঠি সাপে পরিণত হওয়া, হযরত ঈসা (আ:)-এর হাতে মৃত জীবিত হওয়া, ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন হুজুরপাক হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহম্মদ মুস্তবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রজনীতে পবিত্র কা'বা গৃহ থেকে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস- সেখান থেকে সিদরাতুল মুনতাহা- আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার অদৃশ্য জগত পরিদর্শন; এ'সব ঘটনার মর্মোদঘাটন এবং ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ মানবিক জ্ঞান-বুদ্ধিতে একান্তই অপারগ। পবিত্র কুর'আনুল কারীমের ভাষায় এ'সব ঘটনার নাম দেয়া হয়েছে 'বুরহান', 'বায়্যিনাত'; অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা 'আয়াত' অথবা আয়াতুন বায়্যিনাত' রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ এ'সব ঘটনাকে 'দালাইলুন নূবূওয়াত' নামে অভিহিত করেছেন, আর আকাইদ বিশেষজ্ঞ মুতাকাল্লিমুন এবং দার্শনিকদের পরিভাষায় এ'সব হ'লো 'মু'জিযাত' সংক্ষেপে 'মু'জিযা'। পবিত্র কুর'আনুল কারীমা হ'লো হুজুরপাক (সা:)-এর সবচেয়ে বড় মু'জিযা, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই; যাতে অসংখ্য 'মু'জিযা'র সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন মহান রব।
বিশেষভাবে উল্লিখিত মুজিযাগুলির মধ্যে অন্যতম একটি মু'জিযা ইসরা ও মি’রাজ; অলৌকিকভাবে রাত্রিভ্রমন ও ঊর্ধ্বগমন।মহান রাব্বুল ইজ্জত সুরা বনী ইসরাঈলের প্রথম আয়াতে বলেন, سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِہٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَہٗ لِنُرِیَہٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ 'পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত - যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই; নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।' এবং সুরা আন-নাজম-এ মহান রব বলেন, 'তিনি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা দেখেছেন, তোমরা কি সে বিষয়ে তাঁর সাথে বিতর্ক করবে? নিশ্চয়ই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন। সিদরাতুল মুনতাহা-র (প্রান্তবর্তী বদরী বৃক্ষের) নিকট। যার নিকট অবস্থিত জান্নাতুল মা‘ওয়া (অবস্থানের জান্নাত)। যখন বৃক্ষটি যদ্বারা আচ্ছাদিত হবার তদ্বারা ছিল আচ্ছাদিত। তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। তিনি তো তাঁর প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখছিলেন।' এ'সব আয়াত ও বহুসংখ্যক সহীহ হাদীসই প্রমাণ করে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত অবস্থায় এবং সশরীরে মি'রাজ গমন করেছিলেন; মতোওআতীর সহীহ হাদীস থেকেও তা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়।
আলোচ্য আয়াতগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মি'রাজের প্রসিদ্ধ ঘটনা সংশ্লিষ্ট; এ আয়াতসহ অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীস এবং সাহাবা (রা:) ও তাবেঈন (র:)গণের ইজমার আলোকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্-র সুদৃঢ় ঈমান হ'লো, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা-র হুকুমে এবং বিশেষ ব্যবস্থায় একরাতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাগ্রত অবস্থায় এবং সম্পূর্ণ সশরীরে মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা গমন করেছেন, এবং তারপর আল্লাহর ইচ্ছায় উর্ধ্বজগত সফর করেছেন; এটি কোনো ভাবেই তথাকথিত যুক্তিবাদীদের বলা কাশ্ফ, দিব্যদর্শন কিংবা আধ্যাত্মিক বা অন্য কোন ধরনের কোন ভ্রমণ ছিল না। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অলৌকিক ও বাস্তব মু’জিযা এটি, আর এটাই ইসলামের সর্বসম্মত অকাট্য আকীদা। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় আমাদের মাঝে কিছু মুসলিমও আজ আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার এ কুদরত অস্বীকার করছেন; আয়াতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সশরীরের মে‘রাজকে ‘কাশ্ফী তথা আধ্যাত্মিক ভ্রমণ’ বলে অপব্যাখ্যা করছেন। এমনিভাবেই আয়াতে উল্লেখিত মসজিদুল হারাম এবং মসজিদুল আকসা ইসলামের দুটি সুনির্দিষ্ট এবং সুবিখ্যাত মসজিদ হওয়া সত্ত্বেও তারা এ শব্দ দু'টির আলাদা শাব্দিক রূপক অর্থ করছেন। এমনকি আল্লাহর রাসুলের কথিত দ্বিতীয় আগমনের ইঙ্গিতও তারা করেছে এবং করছেন; ওদের দলের নাম আহম্মদী তথা কাদিয়ানী। মুতাজিলারা হলো প্রথম সম্প্রদায় যারা ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়ের সাথে দার্শনিক বিষয় জুড়ে দিতেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সীমাবদ্ধ থাকতো পুরোপুরি বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক বিতর্ক সৃষ্টিতে; আজকের কাদিয়ানীরা ঠিক একই কাজ করছেন।
আরেকটি অন্যতম মু'জিযা 'চন্দ্র দ্বিখন্ডিত' করা। কাফিররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে অলৌকিক কিছু নিদর্শন দেখার দাবি করলে, তাঁর (সা:) আঙ্গুলের ইশারায় পূর্ণিমার চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়ে মাটিতে পরে যায়, যা পরে আবার একত্রিত হয়। এ বিষয়ে সুরা ক্বামার-এ রাব্বুল ইজ্জত বলেন, اِقۡتَرَبَتِ السَّاعَۃُ وَانۡشَقَّ الۡقَمَرُ
وَاِنۡ یَّرَوۡا اٰیَۃً یُّعۡرِضُوۡا وَیَقُوۡلُوۡا سِحۡرٌ مُّسۡتَمِرٌّ
'কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে, আর চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে; এরা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, 'এটা তো চিরাচরিত জাদু'।' বিভিন্ন সহীহ হাদীসে চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে; বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য সহীহ হাদীসের গ্রন্থে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা:), আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:), আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা:), আনাস ইবনে মালেক (রা:), জুবাইর ইবনে মুতয়িম (রা:) ও হুযাইফা ইবনুল ইয়ামেনী (রা:)- এই ৬ জন বিশিষ্ট সাহাবী থেকে প্রায় ২০টির মতো পৃথক সনদে এ বিষয়ক হাদীস বর্ণিত হয়েছে; হাদীসবিশারদগণ এ বিষয়ক হাদীসগুলোকে 'মুতাওয়াতির' বলে গণ্য করেছেন।
দু'টো মাত্র ঘটনা তুলে ধরলাম, পবিত্র কুর'আনুল কারীমায় এরূপ অসংখ্য অগণিত' আয়াত' বা 'মু'জিযা' মুতাওয়াতির ও আহাদ হাদীস রূপে বর্ণিত হয়েছে; সে'গুলোর বিস্তারিত তুলে ধরতে গেলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। তা-ও কিছু হিনস্ না দিলেই নয়- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দু‘আর বরকতে খাদ্যে অলৌকিক ঘটনা ঘটে অগণিতকবার; সামান্য কয়েকটি রুটি দ্বারা শতাধিক মানুষ তৃপ্তির সাথে আহার করেছেন, সামান্য আধ আজলা পানির মধ্যে তিনি হাত রাখলে আঙুলের মধ্য থেকে পানির ঝর্ণা বের হয়, যা দিয়ে কয়েক হাজার মানুষের এক বিশাল বাহিনীর সকলেই ওযু-গোসল ও পানি পান করেছেন, মৃত ঝর্ণায় পানির সঞ্চার হয়, মাত্র দু'পাত্র পানি থেকে হাজার হাজার পাত্র পূর্ণ করা হয়, অলৌকিকভাবে বৃষ্টিপাত হয়, ফসল অলৌকিকভাবে বৃদ্ধি পায়, বৃক্ষ তাঁর (সা:) নির্দেশ পালন করে, কথা বলে এবং সাক্ষ্য দেয়, শুষ্ক খেজুরের গুড়ি তাঁর (সা:) জন্য মানব শিশুর ন্যায় ক্রন্দন করে; তাঁর (সা:) দু‘আয় অন্ধ দৃষ্টিশক্তি প্রাপ্ত হয়; মৃত্যু পথযাত্রী রোগী আরোগ্য লাভ করে; বাকশক্তিহীন কথা বলে; পাগল সুস্থ হয়ে যায়- এমনতর অসংখ্য অগণিত মু'জিযা।
হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর সূচনাক্ষণ পর্যন্ত ইসলামী আকাইদ ও মু'জিযা সম্পর্কে বুদ্ধিবৃত্তিক কোন বিতর্কের সৃষ্টি হয়নি, কিন্তু হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যভাগে যখন গ্রীক দর্শন সম্বলিত গ্রন্থাবলীর আরবী তরজমা মুসলমানদের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করে, তখন তা ইসলামের 'ইলমে কালাম তথা আকাইদ তর্কশাস্ত্রের একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে রচিত হয় এবং এই সমস্ত যুক্তি-তর্কের গুরুত্ব এতই বৃদ্ধি পায় যে, তখন এই গ্রীক দর্শনের কষ্টিপাথরে যাচাই ব্যতীত কোন বিষয়ই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতো না।
গ্রীকের অধিবাসীরা আল্লাহ-প্রদত্ত শরী'আত সম্বন্ধে কখনও পরিচিত ছিল না; কারণ, তারা ছিল পৌত্তলিক। এ জন্য তারা নবুওয়াত, নবুওয়াতের বৈশিষ্ট্য, ওহী, ইলহাম ও মু'জিযা সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং অপরিচিত ছিল। যার জন্য গ্রীক দর্শনে এ সমস্ত বিষয়ের কোন আলোচনাই স্থান পায়নি; এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে রুশদ তাঁর গ্রন্থ 'তাহাফাতুত-তাহাফুত'-এ বিস্তৃত বিশ্লেষণ পেশ করেছেন। তবে এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক শায়খ ইয়া'কুব আল-কিন্দী। তাঁর পর দার্শনিক ফারাবীও এ সম্পর্কে যথেষ্ট লেখালেখি করে গেছেন;: মু'জিযা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, 'নবুওয়াতের অধিকারী সত্তার রূহের মধ্যে এক ধরনের পবিত্র শক্তির বিকাশ লক্ষ্য করা যায়; যেমন- আমাদের দেহের মধ্যে প্রাণশক্তি রয়েছে এবং আমাদের দেহ আমাদের রূহের অনুগত হয়ে থাকে; অনুরূপ সেই পবিত্র শক্তিসম্পন্ন রূহ সার্বিকভাবে বিশ্বের অবয়বধারী বস্তুনিচয়ের মধ্যে ক্রিয়াশীল আছে এবং সমগ্র বিশ্বজগত তাঁর প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এবং এ কারণেই পবিত্র রূহানী শক্তিসম্পন্ন সত্তা হতে সহজাত স্বভাবের অতীত কর্মকাণ্ড প্রকাশ পেয়ে থাকে; তা-ই মু'জিযা।' -(সীরাতুন্নবী, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা- ৯১৮)
"যে কোন বস্তুর সহজাত স্বভাবের অতীত কর্মকাণ্ডের নাম হলো মু'জিযা"- কথাটির ব্যাখ্যা এমন- প্রত্যেক বস্তুর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ও নিয়মতান্ত্রিকতা আছে যা তা হতে কখনও পৃথক হয় না; যেমন- আগুনের সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো ভস্মীভূত করা, সমুদ্রের সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো প্রবাহিত থাকা, বৃক্ষের সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো স্থির থাকা, পাথরের বৈশিষ্ট্য চলতে না পারা, মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো মৃত্যুর পর পুনরায় দুনিয়াতে জীবিত না হওয়া...... ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন যদি এমন হয় যে, আগুন ভস্মীভূত করেনি, সমুদ্র স্থির হয়ে রয়েছে- প্রবাহ নেই, পাথর চলতে শুরু করেছে এবং কথা বলতে আরম্ভ করেছে, মৃত জীবিত হয়ে গেছে, তা হলে অবশ্যই বলতে হবে যে, এ'সব পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়মকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে। তা ঐ বস্তুর সহজাত কার্যকরণ সম্পর্কের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে; প্রাকৃতিক নিয়মাবলীকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখন স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগবে, পৃথিবীর বস্তুনিচয়ের এই সহজাত নিয়মাবলী কি পরিবর্তনযোগ্য?
দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকদের একটি দলের অভিমত, বস্তুনিচয়ের সহজাত নিয়মতান্ত্রিকতার কোনরূপ পরিবর্তন সম্ভব নয়; এর ভিত্তিতে তারা মু'জিযার অসম্ভাব্যতা প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পায়। মুসলিম দার্শনিকদের একটি শ্রেণীও এই অভিমত সমর্থন করেছেন; ফারাবী, ইবনে সীনা, ইবনে মিসকাওয়ায়হ আরও কয়েকজন।
কিন্তু ইবনে তাইমিয়্যা তাঁর 'রাদ্দুল মানতিক' গ্রন্থে এবং ইবনে হাযাম জাহিরী তাঁর 'আল-ফিসাল ফিল-ফিলালি ওয়ান-নিহাল' গ্রন্থে ফারাবী, ইবনে সীনা প্রমুখ দার্শনিকের অভিমতকে পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত করেছেন। কারণ 'প্রকৃতির সহজাত নিয়মাবলীর পরিবর্তন সম্ভব নয়' কথাটি বাস্তবসম্মত নয়; দৃষ্টান্তস্বরূপ, কোন প্রাণীর জন্মের প্রাকৃতিক নিয়ম হলো- এক ফোটা বীর্য হতে রক্ত উৎপন্ন হয়, রক্ত হতে গোশত উৎপন্ন হয়, অত:পর পর্যায়ক্রমে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত তা মাতৃ উদরে প্রতিপালিত হয়, ফলে তা পরিণত হয় একটি পূর্ণাঙ্গ দেহাবয়বে। অত:পর তা নবজাত শিশুরূপে ভূমিষ্ট হয় এবং পর্যায়ক্রমে শিশুরূপ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং পরবর্তীতে সুস্থ, সুডৌল দৈহিক কান্তির অধিকারী একজন শৌর্য-বীর্য সম্বৃদ্ধ যুবকে রূপান্তরিত হয় এবং তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায়।
এই হলো একটি মানুষের জন্মের সহজাত প্রাকৃতিক নিয়ম। এই নিয়ম ভঙ্গ করে অর্থাৎ অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়সমূহ অতিক্রম করা ব্যতীত কারো পক্ষে সুদেহী প্রাণী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করাও সম্ভব, না কি মোটেও সম্ভব নয়? এ ক্ষেত্রে বর্তমান বৈজ্ঞানিকের বক্তব্য- এক ফোটা বীর্য রক্তে রূপান্তরিত হতে, তৎপর গোশতে, তৎপর অস্থিমজ্জা ও সুডৌল-সুঠাম হতে অন্তর্বর্তীকালীন যে পর্যায়গুলো অতিক্রম করার আবশ্যকতা রয়েছে, তা যদি কোনভাবে পূরণ করে দেয়া যায়, তা হলে উক্ত অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়গুলি অতিক্রম করা ছাড়াই এক ফোটা বীর্য একটি সুঠাম-সুডৌল দেহে রূপান্তরিত হতে পারে। আধুনিক কালে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে নানান ফসলাদি, মাছ-মুরগি-গরু উৎপাদন বিজ্ঞান কি প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গের প্রকৃষ্ট উদাহরণ নয়? বর্তমান জামানার মানুষ একটু আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের দিকে খেয়াল করলেই চতুর্দিকে আরও অসংখ্য এমনতর উদাহরণ পেয়ে যাবেন।
কতিপয় দার্শনিক মনে করেন, পৃথিবীর ঘটনাবলী কোন না কোন কার্যকারণ দ্বারাই সংঘটিত হয়ে থাকে, কিন্তু সহজাত প্রকৃতির অতীত কর্মকাণ্ডে এই কার্যকারণ অনুপস্থিত; এর ভিত্তিতেও তারা মু'জিযা অস্বীকার করার প্রয়াস পান। এর সমাধান এখানে - হ্যাঁ, যাবতীয় ঘটনার পশ্চাতে অবশ্যই কোন না কোন কার্যকারণ ক্রিয়াশীল; কিন্তু এটা জরুরী নয় যে, সকল ধরনের প্রাকৃতিক কারণসমূহ আমরা আামাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান ও মনীষা দ্বারা সার্বিকভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবো। কিছু কিছু কার্যকারণ এমনও রয়েছে, যা অতিশয় প্রচ্ছন্ন ও সূক্ষ্ম হওয়ার কারণে স্বভাবতই মানুষের জ্ঞান ও মনীষা তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয় না। এই পৃথিবীতে অসংখ্য-অগণিত সৃষ্টি রয়েছে যার সূক্ষ্ম রহস্যটির যৎসামান্যই মানুষের পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব হয়েছে এবং হয়। আবার বহু সংখ্যক জিনিস এমনও আছে, যার কার্যকারণের গূঢ় রহস্য আজও আমাদের কাছে অজানা, এবং পর্দার অন্তরালেই রয়ে গেছে। যেমন- নবী-রাসুলগণ চল্লিশ দিন পর্যন্ত একটানা সিয়াম সাধনা করেছেন; এ সময়ের মধ্যে তাঁরা সামান্যতম আহার্য-পানীয় গ্রহণ করেননি; কিন্তু তাতে তাঁদের শারীরিক শক্তির মধ্যে কোনই পরিবর্তন দেখা যায়নি। এ'সব স্পষ্টতই এক ধরনের আশ্চর্যজনক বিষয়; কিন্তু এ ঘটনাটি কোনভাবেই কার্যকারণ হতে পৃথক নয়। কেননা, আমরা যদি অনুসন্ধান করি, মানুষের ক্ষুধার তাড়না দেখা দেয় কেন, তা হলে দেখা যায় যে, মানুষের উদরস্থ হজমশক্তি ভক্ষিত খাদ্যকণাকে পরিপূর্ণরূপে হজম করার পর তা হতে উদ্ভুত রক্ত কণিকাগুলিকে দেহের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়। উদরস্থ হজম শক্তির আর কোন কাজ অবশিষ্ট থাকে না। যার ফলে তার মধ্যে তালাশ করার প্রবণতা প্রবল হয়ে উঠে; যার ফলে মানুষ ক্ষুধার তাড়না অনুভব করে থাকে।
কিন্তু হরহামেশা চলমান জীবনে আমরা এমনতর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই, কোন রোগের কারণে অথবা ভয়ভীতির কারণে অথবা গভীর চিন্তায় নিমগ্ন থাকার কারণে আমাদের দেহে এমন এক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে দীর্ঘ কয়েক দিন পর্যন্ত আমাদের পাকস্থলীর হজমশক্তি লোপ পেয়ে যায়; এর ফলে আমরা ক্ষুধার তাড়না অনুভব করি না। ঠিক এই একই নীতির ভিত্তিতে যদি কোনও ব্যক্তির মধ্যে আধ্যাত্মিকতার সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং দৈহিক অবস্থার সাথে তার সম্পর্ক শিথিল হয়ে যায়, এমতাবস্থায়ও নিশ্চয়ই তার শারীরিক শক্তির মধ্যেও স্থবিরতা বা শক্তিহীনতা দেখা দিতে পারে; এ ক্ষেত্রেও সে কয়েকদিন পর্যন্ত উপবাস করে থাকতে পারে।
মোটের উপর কথা হলো, আধ্যাত্মিক শক্তির সাথে যখন কারো গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তখন সেই ব্যক্তির দৈহিক স্বাভাবিক গতিবিধি এবং কার্যক্রমের মধ্যে নিস্পৃহ ভাব দেখা দেয়, এই নাজুক লগ্নেও মানুষ দীর্ঘদিন পর্যন্ত উপবাস করে বেঁচে থাকতে পারেন। সুতরাং এই সহজাত প্রকৃতির বরখেলাপ কার্যপ্রবাহকে যদি স্বীকার করে নিতে কষ্ট না হয়, তা হলে অতি প্রকৃত আধ্যাত্মিক শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ মু'জিযাসমূহকে অস্বীকার করার কোনই কারণ থাকতে পারে না। -(সীরাতুন্নবী, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা-৯৫০)
বস্তুত কার্যকারণ সম্পর্কের উপর সর্বাঙ্গীন অভিজ্ঞতা মানুষের নেই, মানুষ যা কিছু জানার সুযোগ লাভ করেছে তা তার তুলনায় বিশাল সমুদ্রের একফোঁটা পানি অথবা তা থেকেও স্বল্প ও ক্ষীণ। উপরন্তু মানুষ যা কিছু জানার বা অনুধাবন করার সুযোগ পেয়েছে তা পৃথিবীর কিছু বস্তুর চলমান গতি-প্রকৃতির সামান্য নিরীক্ষা মাত্র; এর হাকীকতও প্রকৃত জ্ঞান নয়। মানুষ জ্ঞানের এই সীমানায় পৌঁছাতে অক্ষম যে, বস্তুটি কেন চলছে এবং যদি বস্তুটি বিপরীত দিকে চলতো তা হলে কি কোন অসামঞ্জস্য প্রকাশ পেতো? আর এ কারণেই পৃথিবীর স্বনামধন্য সব বিজ্ঞানী একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা কেমন প্রশ্নটির উত্তর দিতে সক্ষম হলেও কেন প্রশ্নটির যথার্থ উত্তর দেয়া তাঁদের আলোচ্য বিষয়ের বাহিরে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- পানি কেমন? এর উত্তর বৈজ্ঞানিকরা তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেয়ার চেষ্টা করেছেন করেন, কিন্তু পানি কেন? এ প্রশ্নের উত্তর তাঁরা দিতে পারেননি, পরবেন কি? এমনতর প্রশ্নের আলোচনাও তাঁরা কখনও করেননি, করেন না।
প্রকৃত সত্য হলো, দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকগণ কার্যকারণ সম্বন্ধে যে মতবাদ দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরেন, বস্তুত: তার পরিণতি অজ্ঞতা ও বুদ্ধিহীনতা বৈ অন্য কিছুই নয়। কারণ তাদের বিশ্বাস, এই বস্তুটি এই কার্যকারণ ও উপাদানে সৃষ্টি হয়েছে, তা ব্যতীত ঐ বস্তুটি অস্তিত্বে আসতেই পারে না; যেমন- বীর্য হতে প্রাণের উৎপত্তি, ডিম হতে পাখির উৎপত্তি, উদ্ভিদের উৎস বীজ; তাঁদের বিশ্বাসের এ সমস্ত উপাদান ছাড়া এই সব বস্তু অস্তিত্বে আসার কথা কল্পনাও করা যায় না। এখানে তবে প্রশ্ন উঠে- দুনিয়ার প্রথম প্রাণী, প্রথম পাখি এবং প্রথম উদ্ভিদ কি বীর্য, ডিম ও বীজ ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে? এর উত্তর যদি হয় হ্যাঁ, তা হলে তো তাঁরা তাঁদের নিজেদের দাবি ও মতাদর্শের বিপরীতে সাক্ষ্য প্রদান করলেন; নয় কি? আর যিদি তা অস্বীকার করেন তা হলে অবশ্যই এ কথা তাদের স্বীকার করে নিতেই হবে যে, প্রথম বীর্য, প্রথম ডিম এবং প্রথম বীজ, প্রাণী, পাখী ও উদ্ভিদ ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে। কেমনে কি??
মোটের উপর কথা হলো, এই লক্ষ্যমাত্রাকে কখনও বিজ্ঞান তার বুদ্ধির শাণিত অস্ত্র দ্বারা নির্মূল করতে পারবে না। এমতাবস্থায় কার্যকারণ সম্পর্কিত কতিপয় দর্শন এবং মতাদর্শ তাদেরকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি তাদেরকে এ কথারও স্বীকৃতি দিতে হবে যে, এক শক্তিমানের ইচ্ছাশক্তির অস্তিত্ব অবশ্যই বর্তমান রয়েছে; যাঁর ইচ্ছা ও নির্দেশে বিশ্বজগতের এই কারখানা পরিচালিত হয়, হচ্ছে। উপরন্তু তাদেরকে এ কথাও মেনে নিতে হবে যে, কার্যকারণ সম্পর্কে সেই মহান শক্তিমান সত্তার ইচ্ছা এবং নির্দেশ বিকাশের বাহ্যিক দৃষ্টান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। বস্তুত: কার্যকারণও তাঁর সার্বভৌম ইচ্ছার অধীন; এ কথাটি আছে পবিত্র কুর'আনুল কারীমের সুরা আরাফ-এ
"اَلَا لَہُ الۡخَلۡقُ وَالۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰہُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ"
'জেনে রাখ, সৃজন ও আদেশ তাঁরই; মহিমময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ্' (৭ : ৫৪)। সুতরাং বিশ্বজগতের সব কিছুর পশ্চাতে আল্লাহর কুদরত এবং তাঁর ইচ্ছাই হলো মূল কারণ।।
মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
১৮ অগাস্ট, ২০২৩.