মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

অসহিষ্ণু রাজনীতি সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ:


চারদিকে চোখ ফেরালেই একটি প্রশ্ন বারবার মনে উদিত হয় - সমাজের মানুষগুলো কি দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে? গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে - ধর্ষণ, খুন, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিচিত্র সব অপরাধমূলক ঘটনা। খুনের পর লাশ গুম, মেরে ঘরের খাটের নিচে মাটি চাপা দিয়ে লাশ লুকিয়ে রাখা - এসব নানান ধরনের লোমহর্ষক গা শিউরে ওঠা একেকটি ঘটনা এখনকার গণমাধ্যমের প্রতিদিনের ভয়াবহ খবর। দিনের পর দিন এসব ঘটনা হিংস্র থেকে হিংস্রতর রূপ ধারণ করছে, অপরাধ প্রবণতা এখন সমাজ থেকে একেবারে ঘরের ভেতর প্রবেশ করেছে; পারিবারিক অপরাধ বেড়েছে বহুগুণ এবং ভয়াবহতা হিংস্রতাও বেড়েছে ততোধিক। কেন যেন বারবার আমার মনে হয়, তীব্র-উগ্র-বিদ্বেষগ্রস্ত রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতাই এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

নিঃসন্দেহে পৃথিবীর যে কোন দেশ ও জাতির রাজনৈতিক সংস্কৃতি সে দেশ ও জাতির মানসিক পরিপক্কতার একটি পরিমাপ সূচক; সমাজ বিজ্ঞানীরা কোন জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি আর আচার আচরণ কিভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে এবং তার উপর ভিত্তি করে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর ভূমিকা নির্ধারিত হয় সেটা বুঝাতে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করে থাকেন। কাজেই একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনে উদ্যোগী হতে হলে সে দেশের জনগণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি জানা অত্যান্ত জরুরী। Almond এবং Verba রাজনৈতিক সংস্কৃতির বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, "The specifically political orientations - attitudes towards the political system and its various parts, and attitudes toward the role of the self in the system.‍” 

যে কোন জাতির পরিচয় নির্ধারণে একজন নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব থাকেন; যেমন - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়তাবোধ তৈরীতে জর্জ ওয়াশিংটন কেন্দ্রীয় নিয়ামক হিসেবে স্বীকৃত, রাণী ভিক্টোরিয়া ইংল্যাণ্ডের আইকন, মহাত্মা গান্ধী ভারতের জন্য যে ভাবে প্রযোজ্য - জিন্নাহ-রও ঠিক সে রকমই একটি ভূমিকা রয়েছে পাকিস্তানের রাজনীতিতে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের বাংলাদেশের জন্য তেমন কোন একক ব্যক্তিত্ব আজও গড়ে ওঠেনি। এখানে এখনো কেউ মুজিব সৈনিক, কেউ-বা জিয়ার, এরশাদ কোথাও কোথাও হামাগের পোলা, কেউ কেউ গোলাম আজমের জন্য তোলা, কারো ধমনীতে এখনো বহমান মাস্টারদা সূর্যসেনের রক্ত; প্রকৃত বাংলাদেশী বলে যেন কেউ-ই নেই!

সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচায়ক হলো  পরমত সহিষ্ণুতা; অপরের মতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, শ্রদ্ধাভাব। পশ্চিমের গণতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ হলো - পরমত সহিষ্ণুতা; 'আমি আপনার মতকে পছন্দ করিনা, কিন্তু আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে আমি আমার নিজের প্রাণ দেবো।’ -  এই মূলনীতি পশ্চিমের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আর মানসিকতাকে পরিপক্কতা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে পরমত সহিষ্ণুতা সুদূর পরাহত। এখানে কেউ রাম, কেউ বাম, আবার কেউ পাকিস্তান বা ভারতের দালাল; কেউ-বা রাজাকার-আল বদর-আল সামস, আবার কেউ-বা আমেরিকার দালাল। কেউ-বা মস্কোতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরেন, কেউ-বা একই কাজ করেন দিল্লীতে বৃষ্টি হলে। পছন্দ না হলেই যে কোন ব্যক্তির চরিত্র হননে এদেশের  রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা চরম উৎসাহী হয়ে উঠেন এবং উপহাস, গিবতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই অবস্থা বাংলাদেশের মানুষকে বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে বিভক্ত করে রেখেছে; একক জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হতে দেয়নি। সাধারণ জনগণের হৃদয়ের একটি প্রশ্ন - 'আমরা বাঙালী না বাংলাদেশী?' - তা-ই আজও পুরোপুরি মীমাংসিত হয়নি। আর এ জন্যই দেশে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতার বড় অভাব পরিলক্ষিত হয়; বরং দিনদিন বেড়েই চলছে।

১৯৭৩ সালের একটি ঘটনা, ন্যাপ-এর সভাপতি ছিলেন তখন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কট্টর একজন সমালোচক। সরকারের বিরুদ্ধে একবার তিনি রাজপথে অনশন করেন; সেই অনশনও ভাঙান বঙ্গবন্ধু নিজেই। মাওলানা ভাসানীর মুখে শরবত তুলে দিয়ে অনশন ভাঙানোর সেদিনের সেই ইতিহাস অনেকেরই জানা। আরেকটি ঘটনা, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক তখন ছিলেন কাজী জাফর আহমদ। এক ঈদে কাজী জাফর আহমদ বহু খোঁজাখুঁজি করে মওলানা সাহেবের জন্য পছন্দের একটি পোশাক কিনেন, সঙ্গে মাওলানা পত্নীর জন্যও। ঈদের আগের দিন মাওলানার বাড়িতে সেই পোশাক নিয়ে কাজী জাফর আহমদ গিয়ে নিজে উপস্থিত হন। পোশাক দেখে খুশি হয়ে মাওলানা বলেন, "তোমার দেয়া পোশাকটি আমি ঈদের দিন বিকেলেই পড়বো।" 

কথা শুনে কাজী জাফর তো থ হয়ে যান। এতো খোঁজাখুঁজি করে আনা পোশাক মওলানা ভাসানী পড়বেন বিকেলে? তা তিনি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। কাজী জাফরের ইচ্ছা, এই পোশাক পড়ে মওলানা ভাসানী ঈদের জামাতে যাবেন। একপর্যায়ে মাওলানা ভাসানীর কাছে বিকালে এই পোশাক পড়ার কারণ জানতে চান। মাওলানা সাহেব তাকে জানান, "ঈদের জামাতে যাবো মুজিবের দেয়া পোশাক পড়ে; রাতেই মুজিবের পোশাক পেয়ে যাবো।" 
তাজ্জব বনে যান কাজী জাফর আহমদ এবং বলেন, "বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আপনি রাজপথে আন্দোলন করছেন, তার সরকারের সমালোচনা করছেন, আর তার দেয়া পোশাক পড়ে আপনি ঈদের জামাতে যাবেন?" 
মওলানা সাহেব তখন কাজী জাফরকে বলেন, "শোন জাফর, শুধু কালকের ঈদই নয়, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে মুজিবের দেয়া পোশাক পড়ে আমি ঈদের নামাজ পড়ি। পাকিস্তান আমলে মুজিব জেলে থাকলেও তার স্ত্রী ঈদের পারিবারিক বাজারের সঙ্গে আমার পোশাক কিনতে কখনো ভুলতো না। যথারীতি ঈদের আগের রাতে সেই পোশাক আমার কাছে পাঠিয়ে দিতো সে।" 

১৯৯২ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনের এক অনুষ্ঠানে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের শিষ্টাচার প্রসঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে কাজী জাফর আহমদ নিজে এসব কথা তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব নিজে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছেন, ১৯৭৪ সালের দিকে আমরা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। আন্দোলনে পুলিশি হামলায় আহত হয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি হই আমি। হঠাৎ রাতে দেখি বঙ্গবন্ধু এসে হাজির। আমাকে দেখে বঙ্গবন্ধু বললেন, "কি হইছে তোর। আমি বিষয়টি দেখতেছি।" 
এমন কথাও প্রচলিত আছে, ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন মুসলিম লীগের নেতা। স্বাধীনতার পর তিনি কারান্তরীণ থাকার সময় বঙ্গবন্ধু তাকে জেলে চিঠি লিখতেন; টেলিফোন করে কথা বলতেন, খোঁজ-খবর রাখতেন। অন্যদিকে জেলে থাকা অবস্থায় মুসলিম লীগ নেতা সবুর খানের পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়মিত রাখতেন বঙ্গবন্ধু। 

এদেশের রাজনীতিতে এখন আর সেই রকম সৌহার্দ সংস্কৃতি নেই; সবকিছু কেমন যেন পাল্টে গেছে। এমন কি, একই পরিবারের সদস্য হলেও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের সদস্যের মাঝেও ব্যক্তিগত বিরোধ এখন হরহামেশা চোখে পড়ে। বিপদে পরলেও একজন আরেকজনের খবর পর্যন্ত নিতে দেখা যায় না; বরং উল্টো আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এসব কেমন সংস্কৃতি শুরু হলো এই দেশে? রাজনীতি এখন যেন অপাংক্তেয় কোন কিছু, যারা করেন তারা সবাই যেন অস্পৃশ্য-অচ্ছুত! কারণ তো রাজনীতিবীদরাই; ওনারা এখন আর সুন্দর কিছু করতে চান না। তাই, এখন দেখা যায় যতসব নিকৃষ্টতা ও জঘণ্যতা; কে কার সম্পর্কে কত বাজে কটূক্তি করতে পারেন চলছে যেন তারই এক ধরণের অসম প্রতিযোগিতা। কিন্তু একটি ভাল জিনিস আমাদের দেশে স্পষ্ট লক্ষ্যনীয় হচ্ছে দিনদিন - প্রশাসনিক ও নির্বাহী ক্যাডাররা এসবের উর্দ্ধে উঠে যাচ্ছেন। সত্যি, শিষ্টাচার ও পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে কেমনে কি?

অনেকের মতে - এদেশের রাজনীতি এখন জঘণ্য একটি বিষয়, রাজনীতি মানেই নোংরামি; তথাপি, দেশের প্রশাসনিক ও নির্বাহী পদে অসীন থাকাদের মানসিকতার মাঝে যে একটি অসম্ভব ও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, বিগত কয়েকদিন আমি বাংলাদেশ পুলিশ-এর  সাথে যোগাযোগ করতে যেয়ে তা বেশ বুঝতে পেরেছি। দেশের শিক্ষা উন্নয়নের প্রভাব তাদের মাঝেও পড়েছে, তাদের আচার-আচরণ-ব্যবহারে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে, যা বুঝতে আমাকে বেশি বেগ পেতে হয়নি। রাজনৈতিক নোংরামি যতই থাকুক না কেন, দেশের প্রশাসন ক্যাডারের দক্ষতা যে অনেক বেড়েছে এগিয়েছে, তা বুঝতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। আমার বিশ্বাস, এমন করেই একদিন এ দেশ ও এ জাতি বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ সভ্য ও ভদ্র একটি জাতিতে পরিনত হবে; প্রয়োজন শুধু রাজনীতিবীদদের মানসিকতার পরিবর্তনের।

রাজনীতিবিদদের প্রথম এবং প্রধান শর্তই হলো দেশপ্রেম; আর চরিত্রের প্রধান ভূষণ হবে সহিষ্ণুতা, শিষ্টাচার ও পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ। কিন্তু আমাদের দেশের কোন কোন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী যে ভাষায় কথা বলে থাকেন, বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে থাকেন জনগণ তা শুনে বেশিরভাগ সময়ই হতবাক হয়ে যায়। একদল আরেক দলের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি, একে অপরের প্রতি অশালীন অমার্জিত ব্যবহার এখন আমরা প্রতিনিয়তই দেখে আসছি। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রধানকে নিয়েও আমরা রাজনীতিবীদদের অনেককে অশালীন, অমার্জিত অনেকটা অশ্লীল মন্তব্য করতে শুনে থাকি; যা করা মোটেও উচিত নয়। ডেল কার্নেগীর ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, "আমার জনপ্রিয়তা, আমার সুখ নির্ভর করবে আমি কেমন করে লোকের সঙ্গে ব্যবহার করবো তার উপর।" 

বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি দিনেদিনে আরো বিধ্বংসীর দিকেই প্রবাহিত হচ্ছে; কিন্তু সেটি আমাদের কারোই কাম্য নয়। আমরা সবাই জানি এবং অনুভব করি বাংলাদেশ একটি  অপার সম্ভাবনার দেশ; তাই এখানে প্রয়োজন একটি ব্যাপক বিপ্লবের। তবে সেটা সরকার বদলে আরেকটা সরকার প্রতিষ্ঠার বিপ্লব নয়, বরং এ বিপ্লব হবে আমাদের সামজিক অবস্থান পরিবর্তনের বিপ্লব। দেশের পুরো রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমুল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সকলকে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে কেবল বাংলাদেশী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর এজন্য অবশ্যই জাতির কল্যাণের স্বার্থে তরুণদের গা ঝাড়া দিয়ে উঠা অতি জরুরী। একটা দেশকে পরিবর্তনের জন্য অনেক লোকের দরকার নেই, দরকার কেবল সিদ্ধান্ত নিতে পারার মতো সাহসী একটি অংশের; দরকার কথার চেয়ে কাজ করে দেখানোর মতো কিছু লোকের।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। দেশের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে চায়; কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে রাজনীতি পছন্দ না করা লোকের সংখ্যাই সমাজে দিনদিন বাড়ছে। অবশ্য তাদের অনেকেই আবার রাজনীতির খুঁটিনাটি বিষয়ে এমন চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য খুবই আশাব্যাঞ্জক। এদের বেশির ভাগই দেশের বড় দু'দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেও এতোটুকো পিছুপা হন না, বরং অত্যন্ত তৎপর। আমি আরো খেয়াল করে দেখেছি, তাদের অনেকেই সরাসরি রাজনৈতিক কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত নন; কিন্তু এটা বুঝা যায়, দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে তারা প্রচন্ড ভাবেন। এমনসব লোকগুলোই খাঁটি দেশপ্রেমিক এবং তারাই সর্বান্তকরণে দেশকে ভালোবাসেন, সর্বক্ষণ দেশের মঙ্গল কামনা করেন এবং দেশের প্রতিটি ব্যাপারে তারা খুবই সচেতন। 
আমার বিশ্বাস, দেশপ্রেম ও  সচেতনতা আছে বলেই তারা এসব করেন। দেশপ্রেম না থাকলে কোনভাবেই তা করতেন না বা দেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়াও কারো পক্ষে সম্ভব হতো না। একমাত্র দেশপ্রেমই একজন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে কারো খারাপ কাজের সমালোচনা করার, ভাল কাজের প্রশংসা করার। একজন দেশপ্রেমিকের পক্ষেই দেশের ভালমন্দ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে এমন করে কথা বলা সম্ভব। 

কোন কিছুর প্রয়োগ দেখার পরই তত্ত্বের সৃষ্টি হয়, প্রয়োজন পড়ে সেটি ব্যাখ্যা করার। স্যার আইজ্যাক নিউটন কি গতি সূত্রের আবিষ্কারক, নাকি ওটার সন্ধান দাতা? কিংবা ক্রিস্টোফার কলোম্বাস কি আমেরিকা খুঁজে পেয়েছিলেন, নাকি সেটা আবিস্কার করেছিলেন? - এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে নিলেই আমরা বুঝবো আমাদের অভাব কোথায়? তাহলেই ব্যাখ্যার জন্য আর আমাদের কারো দ্বারস্থ হতে হবে না, প্রয়োজন হবে না সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অন্যের কোন প্ররোচনার বা উপদেশের। পরিশেষে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর সাথে সুর মিলিয়ে আজ কেন যেন বলতে ইচ্ছে করছে - 
আমরা শক্তি আমরা বল 
আমরা রচি ভালোবাসার
                        আশার ভবিষ্যৎ,
মোদের স্বর্গ-পথের অভাস দেখায়
                        আকাশ-ছায়াপথ!
                মোদের চোখে বিশ্ববাসীর
                        স্বপ্ন দেখা হোক সফল।।

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ
১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭.

বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২

খারিজি হতে সাবধান!


'ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানু লা-তাকরাবুস্ সালা-তা ওয়া আনতুম সুকারা' -(হে মুমিনগণ, তোমরা সালাতের ধারেকাছেও যেয়ো না, নেশাগ্রস্থ অবস্থায়) এ আয়াতের প্রথম অংশ- 'লা-তাকরাবুস্  সালাতা' বলে এবং শেষের অংশ 'ওয়া আনতুম সুকারা' হাইড করে অর্থাৎ  আয়াতের আংশিক অর্থ বলে আংশিক গোপন রেখে বিভ্রান্ত করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল বিশিষ্ট বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, যার ফলে শেষ পর্যন্ত তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। 'কুল ইন্নামা আনা বাশারুম মিছ্'লুকুম (বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ) বলে যারা আয়াতের পরের অংশ 'ইউহা ইলাইইয়া' গোপন রাখার চেষ্টা করে বা পবিত্র কুর'আনুল কারীমে 'দিনাজপুর' বা 'কুমিল্লা' আছে বলে অপব্যাখ্যা করে, তারা কি সেই একই অপরাধে অপরাধী নয়?

ওহাবী-খারেজীরাই তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে 'কুফর'-এর ফতওয়া দিয়েছিল এবং জোড়ালো অবস্থান নিয়েছিল; তারা যে সেই একই অপরাধ করে যাচ্ছে, তা কি তারা একবারের জন্যও ভেবে দেখেছে? তসলিমা নাসরিনকে দেশছাড়া করা সহজ ছিল, কারণ সে একজন নারী এবং বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি, সংঘবদ্ধ ওহাবী-খারিজীরা যে অনবরত সেই একই অপরাধ করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ফতওয়া দেবে কে বা তাদেরকে দেশছাড়া করবে কে?? 

'Indeed, those who conceal Allah’s revelations in the Book, and purchase for them a miserable profit,- they swallow into themselves naught but Fire; Allah will not address them on the Day of Resurrection. Nor purify them: Grievous will be their penalty.' -(Surah Al-Baqarah : 174) 'নিশ্চয় যারা গোপন করে আল্লাহর কিতাব হতে যা নাযিল করেছেন তা এবং এর বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা তাদের নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ভক্ষন করে না। আর কেয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।' 

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা বলেন, যে ব্যক্তি ধন-সম্পদের লোভে শরিয়তের হুকুম-আহকাম পরিবর্তিত করে এবং তার বিনিময়ে যে হারাম ধন-সম্পদ গ্রহণ করে, তা যেন সে নিজের পেটে জাহান্নামের আগুন ভরে; কারণ, এ কাজের পরিণতি ভয়াবহ। তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ আছে- আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তার বিনিময়ে তারা কেবল আগুন দিয়ে আপন পেট পূর্ণ করে; শেষ বিচারের দিন আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্রও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

তাছাড়াও সুরা বাকারা'র ৪১ নম্বর আায়াত- 'আর আমি যা নাযিল করেছি তোমরা তাতে ঈমান আন; এটা তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যতা প্রমাণকারী। আর তোমরাই এর প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করো না। আর তোমরা শুধু আমারই তাকওয়া অবলম্বন কর।' আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার আয়াতসমূহের বিনিময়ে মূল্য গ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হলো, মানুষের মর্জি ও স্বার্থের বিনিময়ে আয়াতসমূহের মর্ম বিকৃত বা ভুলভাবে প্রকাশ করে বা তা গোপন রেখে টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ গ্রহণ করা; এ কাজটি সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। بِه (ওঁর) সর্বনাম দ্বারা কুর'আনকে বুঝানো হয়েছে অথবা মুহাম্মদ (সাঃ)-কে; আর উভয় মতই সঠিক। কেননা, দু'টিই আপোসে এক ও অবিচ্ছেদ্য। যে পবিত্র কুর'আনের সাথে কুফরী করল, সে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথেও কুফরী করল; আর যে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে কুফরী করল, সে  পবিত্র কুর'আনের সাথেও কুফরী করল। -(ইবনে কাসীর)। 

'আমার আয়াতের বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করো না' এর অর্থ এই নয় যে, বেশী মূল্য পেলে ইলাহী বিধানের বিনিময়ে তা গ্রহণ করো; বরং অর্থ হলো- ইলাহী বিধানসমূহের মোকাবেলায় পার্থিব স্বার্থকে কোন প্রকার গুরুত্ব দিও না। আল্লাহর বিধানসমূহের মূল্য এত বেশী যে, দুনিয়ার বিষয়-সম্পদ এর মোকাবেলায় তা খুবই তুচ্ছ, কিছুই না। উক্ত আয়াতে বানী-ইসরাঈলকে সম্বোধন করা হলেও এই নির্দেশ কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য। যে ব্যক্তি সত্যকে বাতিল, বাতিলকে প্রতিষ্ঠা অথবা জ্ঞানকে গোপন করার কাজে জড়িত হবে এবং কেবল পার্থিব স্বার্থের খাতিরে সত্য-প্রতিষ্ঠা করা থেকে বিরত থাকবে বা ত্যাগ করবে, সেও এই ধমকের অন্তর্ভুক্ত। -(ফাতহুল ক্বাদীর)

ওহাবী খারিজীদের খাসলত এমন- স্বার্থে টান লাগলেই তারা বেঁকে বসে! যেমন- তাদের দীক্ষাগুরু নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরুব্বি মাওলানা সা'দ কান্ধলবী বলেছিলেন, 'মাদরাসা মসজিদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও খারাপ; যারা কুরআন শরীফ শিখিয়ে বেতন গ্রহণ করে, তাদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও খারাপ; যে ইমাম এবং শিক্ষক বেতন গ্রহণ করেন, বেশ্যারা তাদের আগে জান্নাতে যাবে; কাওমী-খারেজি মাদরাসা গুলোতে জাকাত না দেয়া হোক, ওখানে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না; পারিশ্রমিক নিয়ে দ্বীন শেখানো দ্বীন বিক্রির নামান্তর, ব্যভিচারকারী নারীও কুরআনুল কারীম শিখিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকারীর আগে জান্নাতে যাবে৷' 

সত্য অপ্রিয় বলে বিবেচিত হলেও সত্যই সুন্দর আর সত্যই চিরন্তন। কিন্তু সত্য যখন স্বার্থপরদের স্বার্থের বিপক্ষে চলে যায় তখন তা আর তাদের ভাল লাগে না- 'গরম ভাতে বিড়াল অসন্তুষ্ট, হক কথায় স্বার্থপর রুষ্ট'- সবাই সা'দ সাবের পিছন ছেড়েছে; আজও বিরোধ চলছে। 

ওহাবী-খারিজীরা এমনই! রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর শা'ন-মান সম্পর্কিত পবিত্র কুর'আনুল কারীমের আয়াতের আংশিক বলে তারা সমাজে ফেতনা ছড়ায়, মানুষের ঈমান নষ্ট করে; এ তো জঘন্য পাপ, অপরাধ। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত-কে তারা মোটেও ভয় পায় না; তাদের বুক একটুও কাঁপে না। পবিত্র কুর'আনুল কারীম নিয়ে তাদের এ জঘন্য  প্রতারণা সাধারণ মানুষ কমই বুঝে বা মোটেও বুঝে না; তাই বুকের কষ্টটা অনুভব করতে পারে না। এমন জঘন্য অপরাধ তারা করে শুধুমাত্র কিছু দুনিয়াবি স্বার্থের প্রত্যাশায়, বিশাল দলীয় সুবিধার জন্য; হযরত হুসাইন (রা:)-কে শহীদ করা দলও কিন্তু অনেক বিশাল ছিল। তারা কখনো ভাল হয় না, ভাল থাকে না, অবস্থান স্থায়ী করতে পারে না; কারণ, তাদের উপর আল্লাহর লা'নত। 

ছলচাতুরী ও চাটুকারিতা খারিজিদের চরম এক অপকৌশল, এ'সব করে তারা আসলে তাদের  নিজেদেরকেই ধ্বংস করে এবং করেছে, করছে; একটু খেয়াল করলেই যে কেউ তা বুঝতে পারবেন— আস্তে আস্তে তাদের চেহারার নূর নষ্ট হয়ে যায়, ভাইরাল বক্তা সুপার ফ্লপ হয়ে যায়। মনে রাখবেন, রাসুলপাকের (সা:) সাথে বিদ্বেষ রেখে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না; আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না।।

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ 
১৮ নভেম্বর, ২০২২.

ইসলামী পুনর্জাগরণ অত্যাবশ্যক:


'ইন্নাদ্দীনা ইনদাল্লা-হিল ইসলাম'- 'নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম হলো ইসলাম; 'ইসলাম' শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ। আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মকে এই নামে অভিহিত করার কারণ হলো- ধর্মের অনুসারী ব্যক্তি নিজকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার হাতে সমর্পণ করবে, যাবতীয় আদেশ-নিষেধ শিরোধার্য বলে মেনে নেবে; আর কারণেই ধর্মের অনুসারীকে আত্মসমর্পণকারী বা মুসলিম বলে অভিহিত করা হয়। সৃষ্টির শুরু থেকে সকল আসমানী ধর্মই 'ইসলাম' নামে অভিহিত; কিন্তু পূর্ববর্তী ধর্মগুলোকে যেহেতু তাদের অনুসারীরা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি, স্ব-ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ধর্মগ্রন্থ বিকৃত করেছে বা বিকৃতি ঘটিয়েছে, তাই শেষ নবী (সা:)-এর আবির্ভাবের পর তাঁর শরীয়ত দ্বারা পূর্ববর্তী সকল ধর্মবিধান রহিত করা হয়েছে। সুতরাং আগের ধর্মগুলো এখন আর ইসলাম নয়; সেগুলো নামে অভিহিত হওয়ার উপযুক্ত নয় বা কোন সুযোগ নেই। বর্তমানের ইসলাম হলো- সর্বশেষ সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা:) কর্তৃক আনীত প্রচারিত অন্যতম দ্বীন, এবং শরীয়ত হলো- এই দ্বীনের শরীয়ত; যা একক, অনন্য, পরিপূর্ণ, সার্বজনীন, এবং কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। 


'ইন্নাল্লাযীনা -মানু ওয়াল্লাযীনা হা-দু ওয়ান্নাসা-রা- ওয়াসসা-বিঈনা মান -মানা বিল্লা-হি ওয়াল ইয়াওমিল -খিরি ওয়াআমিলাস সা-লিহান ফালাহুম আজরুহুম ইনদা রাব্বিহিম ওয়ালা- খাওফুন আলাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহঝানূন।' -(সুরা বাকারা : ৬২) অর্থাৎ- 'নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান, এবং যারা ইহুদী, নাসারা সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে এক আল্লাহর প্রতি, কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে পুরস্কার; আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।' - অত্যন্ত মর্তবার এবং তাৎপর্যপূর্ণ আয়াত এটি; যা পবিত্র কুর'আনুল কারীমের অন্য আরও সুরায়ও সন্নিবেশিত। উক্ত আয়াতে কারীমায়- যারা ঈমান এনেছে, তথা মুসলিম, ইহুদী-নাসারা-সাবেঈন, সবাইকে আল্লাহ তা'আলা একই কাতারে দাঁড় করিয়েছেন বা সামিল করেছেন; মানে কি? এর ব্যাখ্যাই-বা কি?? ব্যাপারটি গা শিউরে উঠার মতো নয় কি??? নামাজ রোজা হজ্জ যাকাত আদায় কারিকেও নাফরমানদের সাথে মিলানো হলো কেন????


নিঃসন্দেহে বনী ইসরাঈল আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার অনুগ্রহপ্রাপ্ত একটি অন্যতম জাতি; মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (:)-এর বংশধারা হতে জাতির বংশধারা। উক্ত আয়াতে তাদের একটি মিথ্যে ধারণাকে রদ করা হয়েছে; তাদের বিশ্বাস ছিল- কেবলমাত্র তারা এবং তাদের বংশই আল্লাহ তা'আলার খাস রহমত নিয়ামতের জন্য মনোনীত; শুধুমাত্র তারাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তাদের বংশের বাইরের অন্য কোন মানুষ আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার অনুগ্রহ লাভের উপযুক্ত নয়; আজকের ইহুদীরাও এমন বিশ্বাসই পোষণ করে থাকে। ইহুদী ধর্ম মূলত: একটি বংশভিত্তিক ধর্ম; বংশের বাইরে কোন ব্যক্তি যদি এই ধর্ম গ্রহণ করতে চায় তবে, প্রথমত: সে সুযোগ নেই, আর যদিও-বা গ্রহণ করে নেয় তবে ইহুদী বংশীয় কোন ব্যক্তি যে অধিকার ভোগ করে, সে তা ভোগ করতে পারে না পারবে না 


উক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে- 'সত্য' কোন বংশের একচেটিয়া কোন বিষয় বা ব্যাপার নয়; প্রকৃত বিষয় হলো- ঈমান সৎকর্ম। যে ব্যক্তিই আল্লাহ আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে বা সৎকাজের মৌলিক শর্তাবলী পূরণ করবে, সে- আল্লাহ তা'আলার পুরস্কারের হকদার হবে; পূর্বে সে যে ধর্মের বা বংশের সাথেই সম্পৃক্ত হউক না কেন তা কোন ব্যাপারই না। মুসলিম, ইহুদী খ্রিস্টান ছাড়াও নক্ষত্র-অগুন পূজক কিছু লোক তৎকালীন সময়ে আরবে বসবাস করতো, যাদের সাবেঈন বলা হয়; উক্ত আয়াতে তাদেরও নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে। তাওহীদ এবং রিসালাত উভয়ই মুখে স্বীকার করা, অন্তরে ধারণ করা, এবং তদানুসারে আমল করার নাম- ঈমান; শুধুমাত্র তাওহীদ স্বীকৃতিতে কোন কাজ হয় না, হবে না। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের সাথে সাথে তাঁর রাসূলগণের প্রতিও ঈমান আনতে হবে; সকল নবী রাসুলকে স্বীকৃতি দিতে হবে। বর্তমানের ইহুদী, নাসারা সাবেঈনরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-কে রাসুলই মানে না, কিছু নামধারী মুসলমানও রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর শা'-মান নিয়ে যা-তা কটাক্ষ করে; তারা সবই এই একই দলভূক্ত। সুতরাং মুক্তি লাভের জন্য অবশ্যই হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি পূর্ণাঙ্গ ঈমান আনা এবং মহব্বত করা অত্যাবশকীয় একটি বিষয়। আর কারণেই পূর্বের) ৪০-৪১ নং (সুরা বাকারা) আয়াতে সমস্ত বনী ইসরাঈলকে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান আনার আদেশ প্রদান করা হয়েছে।


আহলে কিতাবধারীদের কথা না হয় আপাতত বাদই রাখলাম, মুসলসলমানরা আজ কি শুরু করেছে? সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বে প্রকৃত মুসলিম কি তাঁর  ঈমান ধরে রাখতে পারছেন? একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করবে, কিন্ত তারা কি তা করতে পারছে? পারলেই-বা কতটা বা কতটুকু? একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে অতি সহজেই অনুধাবন করা যায়, মুসলিম জাতি আজ বড়ই কঠিন এক সময় পাড় করছে। ষড়যন্ত্র আর গভীর সব চক্রান্ত কূটচালের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে দুনিয়া আখেরাত উভয়ই হারিয়ে আমরা এখনও সুখ খুঁজি, কোনটারই কূল-কিনারা পাচ্ছি না; হয়ে গেছি সব নেহায়েত নামসর্বস্ব মুসলমান। ইসলামের মহান দায়িত্ব ভুলে আমরা গড্ডালিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে ছন্নছাড়ার মতো ভেসে বেড়াচ্ছি; চরম অবহেলা করছি প্রকৃত ইসলামকে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বাস্তব প্রয়োগ আমাদের কর্মকাণ্ডে বা চালচলনে কোনভাবেই পরিদৃষ্ট হচ্ছে না; কেন এমন হলো? উত্তর তো একটাই- হাল জামানার মুসলমান আমরা সবাই তথাকথিত মডারেট; শুক্রবার আর ঈদ-চান্দের পোষাকি মুসলিম, লম্বা কুর্তা লম্বা টুপি সর্বস্ব। মহাগ্রন্থ কুর'আনুল কারীম থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে সরে গেছি বা কাছে থাকলেও তা সুন্দর কভার দিয়ে আটকিয়ে সেলফে সাজিয়ে রাখছি, আর সময় সময় চুমু খাচ্ছি; আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা যে বলেছেন পড়তে, বুঝতে এবং কুর'আনের মতো জীবন গড়তে, তা করি আমরা কয় জন?


অবশ্য স্বল্পসংখ্যক মুসলমান, যাঁরা পবিত্র কুর'আনুল কারীমকে হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিয়ে, কুর'আনের মতো জীবন গড়েছে, তাদের সংখ্যা এতই নগণ্য যে, তাঁদেরকে দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়, তা ছাড়া শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে যায়। মুসলমাদের এমন অধঃপনের দৃশ্য অন্তরচক্ষে দর্শন করেই হয়তো হুজুরপাক (সা:) বেদনাবিধূর কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘অতি সত্বর এমন একটি সময় আসবে- যখন ইসলামের নামটুকু শুধু অবশিষ্ট থাকবে, ইসলামী জীবন ব্যবস্থা নিয়মনীতি অবলুপ্ত হয়ে যাবে; কুর'আনের লিখিত রূপটি টিকে থাকবে, কুর'আনের আইনকানুন কিছুই বলবৎ থাকবে না; মসজিদগুলো সুরম্য প্রাসাদের রূপ পরিগ্রহ হবে, কিন্তু সেখান হতে হেদায়াতের নূর বিকশিত হবে না। তখনকার সময়ে বিদ্যমান থাকবে কিছু নষ্ট চরিত্রের লোক, যাদের থেকে সম্প্রসারিত হবে শুধু ফিতনা-ফ্যাসাদ আর অশান্তি; তখন জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের অবস্থাকে সাধুবাদ জানাবে।


পৃথিবীতে ইসলাম এসেছে সমাজ পরিবর্তন করে মানুষকে মুক্ত করতে বা মুক্তি দিতে, আর একান্তই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চাইলে, সেখানটার অন্তত একটা প্রজন্মকে টার্গেট করে সামনে এগুতে হয়; প্রয়োজন পড়ে ২০-২৫ বছরের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা। আমাদের প্রিয় নবী হুজুরপাক (সা:) ধর্ম প্রচারের ২৩ বছরের ১৩ বছরই কাটিয়েছেন ইহুদী-মুশরেকদের নির্যাতন আর নিপীড়ন সহ্য করে, মদিনায় হিজরতের পর ইসলামি খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন মাত্র ১০ বছরে; যা হিজরী থেকে পর্যায়ক্রমিক হিজরী ১৩৪২ তথা ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে মার্চ পর্যন্ত প্রায় সারে তেরশ বছর টিকে ছিল; সর্বশেষ খেলাফতের রাজধানী ছিল তুরস্ক। পুঁজিবাদী বিশ্বের দুইশ বছরের প্রচেষ্টায় ব্রিটেনের নেতৃত্বে তাদের রাজনৈতিক সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তুরস্কের মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে মুসলিম খেলাফতের শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকুও তারা মুছে ফেলতে সক্ষম হয়। অবশ্য শেষের দিকে মুসলিম শাসকরা ঈমান ইসলাম থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছিল। যার ফলে মুসলমানদের যে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে, তা আর পুনরুদ্ধার করা গেল না, আজও সম্ভব হয় নি; মুসলমান এক প্লাটফর্মে দাঁড়াতেই পারছে না। সেই থেকে মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্র টালমাটাল অবস্থা; পশ্চাৎপদতার শুরু এবং আজও চলমান। এর পিছনের ষড়যন্ত্রটা করেছিল ইহুদী-খ্রিস্টানরা; প্রক্রিয়াটা ছিল দু' বছরের। জ্ঞান-বিজ্ঞানে আজ তারা উন্নত- আইন্সটাইন-হকিং-ডকিংস তাদের, তাদের দিয়েই প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, তাদের থেকেই বিংশ শতাব্দীর সব নতুন আবিষ্কার। কারণ, তারা শিক্ষায় এগিয়ে এবং উন্নত; মুসলমানের পতনের সুযোগটা তারা বেশ ভালভাবেই নিয়েছে, এবং তারা তা কাজেও লাগিয়েছে।  


সতের শতকের গোড়ার দিকের কিছু ঘটনা, যা তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ কমনওয়েলথ মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত একজন গোয়েন্দা- গোয়েন্দা হ্যামফার তার ডায়েরি 'Confessions of a British Spy and British Enmity Against Islam' বইয়ে লিখেছেন- "Our Great Britain is very vast. The sun rises over its seas, and sets, again, below its seas. Yet our state is relatively weak concerning its colonies in India, China and Middle East. These countries are not entirely under our domination. However, we have been carrying on a very active and successful policy in these places. We shall be in full possession of all of them very soon. Two things are of importance: 1). To try to retain the places we have already obtained; 2). To try to take possession of those places we have not obtained yet.

The Ministry of the Commonwealth assigned a commission from each of the colonies for the execution of these two tasks. As soon as I joined the Ministry of the Commonwealth, the Minister put his trust in me and appointed me the administrator of our company in East India. Outwardly it was a trade company. But its real task was to search for ways of taking control of the very vast lands of India. Our government was not at all nervous about India."  


সুরা মায়েদা' ৫১ নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেন, 'ইহুদী এবং নাসারারা কখনো তোমাদের বন্ধু হতে পারে না।' ইতিহাস স্বাক্ষী- সেই প্রথম থেকেই তারা ইসলামকে মুছে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে; যুগে যুগে ইসলাম থেকে খারিজ হওয়া গ্রুপগুলোও তাদেরই সৃষ্টি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে অন্যের সম্পদ লুট করে নিজেরা ধনী হওয়াই ব্রিটিশ রাষ্ট্রীয় নীতির মূল ভিত্তি। তাই ইসলামের নীতি-নিয়ম ন্যায়পরায়ণতা ব্রিটিশদের দস্যুবৃত্ততা এবং মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলশ্রুতিতে তারা ইসলামকে মুছে ফেলার জন্য নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির করতে থাকে; এবং লক্ষ্যে তারা লন্ডনে কমনওয়েলথ মন্ত্রণালয় তৈরী করে। মন্ত্রণালয় হতে তারা হাজার হাজার গোয়েন্দা বিভিন্ন মুসলিম দেশে পাঠায়; মিশনারী প্রতিষ্ঠা করে এবং সর্বশেষ সামরিক রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। 


হ্যামফার হচ্ছেন সেই সময়কার একজন ব্রিটিশ কমনওয়েলথ গোয়েন্দা; মিসর, ইরান, ইরাক, হিজাজ এবং ইসলামি খেলাফতের রাজধানী ইস্তাম্বুলে মুসলমানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য এবং খ্রিষ্টিনীটি প্রচারের কাজে তিনি নিয়োজিত ছিলেন। তার হাতেই গড়া বর্তমানের কুখ্যাত  খারিজী মতবাদ- 'ওহাবিয়াত'; ১১২৫ হিজরী তথা ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে নজদের মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নাজদী নামের এক মুসলিম যুবককে ফাঁদে ফেলে তার মাধ্যমে ১১৫০ হিজরীতে খারিজী দল ওহাবি সম্প্রদায়ের মতবাদ ঘোষণা করা হয়। হ্যামফারের লেখা ডায়েরিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কেমন করে যেন জার্মানদের হাতে পড়ে যায়; তারা তাদের দেশের 'ইসপিগল' নামক পত্রিকায় তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে। পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম বিশ্ব তা জানতে বুঝতে পারে; যা বর্তমানে বহু ভাষায় অনুদিত, বাংলায়ও পাওয়া যাচ্ছে। যাদের বিস্তারিত জানার আগ্রহ তীব্র, তারা অনলাইনেও পড়তে পারেন। আজও ইহুদী-খ্রিস্টানরা মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য চক্রান্তের পর চক্রান্ত করেই যাচ্ছে, আমরা কি তা বুঝি??   

 

মুসলিম জাতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম হলো ইসলাম; বিষয়ে কারো কোন দ্বিমত ছিলও না এবং আজও নেই। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র সবায় এক বাক্যে স্বীকার করে যে, ঈমানদীপ্ত মুসলমানকে দাবিয়ে রাখা যায় না; তারা যেমন কোমল, তেমনই কঠিন। যদিও আজকের মুসলমান তাদের বর্তমান  শোচনীয় অবস্থা দেখে হতাশ; কিন্তু একসময় তারাই ছিল বিশ্বের সর্বেসর্বা। যেখানে আজকে আমাদের ছেলেমেয়েরা পাশ্চাত্যে কামলা দিতে যায় বা যাওয়ার জন্য গভীর স্বপ্নে বিভোর; একসময় তারাই আসতো মুসলমানের কাছে সভ্যতা শিখতে, জ্ঞান নিতে, কামলা দিতে। দেশে কোন উপায় না পেয়ে আজকের প্রজন্ম আমেরিকা ইউরোপ পাড়ি জমাতে বড়ই উদগ্রীব; কাজ পেতে বা শিক্ষা গ্রহণ করতে। অথচ দুনিয়াতে এই কর্মময় জ্ঞানের প্রদীপ্ত শিখা প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন আমাদেরই পূর্বপুরুষরা। ৭৫০ থেকে ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইসলামের স্বর্ণযুগ, যা পৃথিবীতে ইসলামি রেনেসাঁ হিসেবে পরিচিত; আলোকিত এই যুগ আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে, করেছে এবং করছে। অথচ এক গভীর 'Divide and Rule' চক্রান্তে সেই আলোকিত মধ্যযুগকে আজ আমাদের মধ্যকার কেউ কেউই অন্ধকার বর্বর যুগ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে, একই সাথে বিজ্ঞানময় ধর্ম ইসলামকে জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রগতির অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়; কিন্তু কেউ চাইলেই কি সব কিছু হয়ে যায়, না কি করতে পারা যায়?

 

২০০১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসের মিনেসোটায় হিউলেট প্যাকার্ডের চেয়ারম্যান প্রধান নির্বাহী মিসেস কার্লি ফায়ারিনা ইসলামি সভ্যতাকে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তিনি 'টেকনোকজি, বিজিনেড এন্ড আওয়ার ওয়ে অব লাইফ: হোয়াটস নেক্সট' শিরোনামে যে  ভাষন দেন, তা আমি এখানে সরাসরি তুলে ধরছি- 'There was once a civilization that was the greatest in the world.  And this civilization was driven more than anything but invention. Its architects designed buildings that defined gravity. Its mathematicians created the algebra and algorithm that would enable the building of computers and the creation of encryption. Its doctors examined the human body and found new cures of disease. Its astronomers looked into the heaven, named stars and paved the way for space travel and exploration. When other nations were afraid of ideas, this civilization thrived on them and kept them alive. When sensors threatened to wipe out knowledge from past civilizations, this civilization kept the knowledge alive and passed it on others. While modern western civilization shares many of these traits, the civilization I am talking about was the Islamic world from the year 800 to 1600, which included the Ottoman Empire and the courts of Baghdad, Damascus and Cairo and enenlightened rulers like Suleiman the Magnificent. Although we are often unaware of our indebtedness to this civilization, its gifts are very much part of our heritage. The technology industry would not exist without the contributions of Arab mathematicians.'


অনুবাদ- 'একসময় পৃথিবীতে সর্বোৎকৃষ্ট একটি সভ্যতা ছিল, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিল সভ্যতার চালিকাশক্তি। সভ্যতার স্থপতিগণ এমনভাবে ভবনের নকসা প্রনয়ণ করতেন যাতে অভিকর্ষ ছিল না। সভ্যতার গণিতজ্ঞগণ বীজগণিত এলগোরিদম উদ্ভাবন করেছিলেন, যা কম্পিউটার নির্মাণ এবং সাংকেতিক বার্তা লিখনে সহায়ক হয়েছিল। সভ্যতার ডাক্তারগণ মানব দেহ পরীক্ষা এবং রোগ নিরাময়ে নতুন নতুন ঔষধ আবিষ্কার করেছিলেন। সভ্যতার জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ গ্রহ নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ এবং তারকার নামকরণ করেছিলেন। তারা মহাকাশ যাত্রা অনুসন্ধানের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। যে সময় অন্যান্য জাতি নতুন নতুন ধ্যান ধারণায় ভীত ছিল, তখন সভ্যতা তাতে সমৃদ্ধি লাভ করছিল এবং সেগুলো জীবিত রেখেছিল। যে সময় পরীক্ষকগণ অতীত সভ্যতার জ্ঞান নির্মূলের হুমকি দিচ্ছিলেন, তখন সভ্যতা জ্ঞানকে সজীব রেখেছিল এবং অন্যদের কাছে এসব জ্ঞান স্থানান্তর করেছিল। আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতায় তার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় আমি সেই সভ্যতা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। সভ্যতা হলো অষ্টম থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ব। অটোমান সাম্রাজ্য, বাগদানের রাজদরবার, দামেস্ক, কায়রো এবং মহান সুলাইমানের মতো আলোকিত শাসকগণ সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত। সভ্যতার কাছে আমাদের ঋণ সম্পর্কে আমরা কখনো কখনো অচেতন হলেও তার আশীর্বাদ আমাদের উত্তরাধিকারের অংশ। আরব গণিতজ্ঞদের অবদান ছাড়া প্রযুক্তি শিল্প টিকে থাকতো না।


'ইকরা বিছমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক' দিয়ে শুরু 'ইয়াআইয়্যু-হাল্লাযীনা -মানুত্তাকুল্লা-হা ওয়াযারু মা-বাকিয়া মিনার রিবাইন কুনতুম মুমিনীন' দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে যে ধর্মের সংবিধান, সে ধর্মের মানুষ যেদিন থেকে 'পড়া' ছেড়ে দিয়েছে, 'রিবা' বা সুদ'কে গ্রহণ করে নিয়েছে, সে'দিন থেকেই মুসলমানের পতনের সূচনা। 'পড়া' আদেশ মানা মুসলমান আজ কয়জন আছে? 'সুদ' না খাওয়া মুসলমান?? অথচ পবিত্র কুর'আনুল কারীমের নাজিল হওয়া প্রথম তাগিদ বা আদেশ 'পড়'; বারংবার আায়াত নাজিলের পরও সর্বশেষ আয়াত পুনরায় 'সুদ' নিয়েই; না পড়ার অভ্যাস আমাদের চেপে ধরেছে এবং সুদের অক্টোপাসে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে পড়েছি। কুর'আন নামের সংবিধান না পড়লে না বুঝলে বোধবুদ্ধি উদয় হবে কি করে? জ্ঞান আসবে কোত্থেকে? 'ইলম' তথা জ্ঞানের অনন্য  উৎস হলো পবিত্র কুর'আনুল কারীম; তা চর্চা না করলে 'ইলম' আসবে কি করে? 'ইলম' উঠে যাওয়া কিয়ামতের অন্যতম আলামতগুলোর একটি: পাশাপাশি তা উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে পড়া আরো ভয়াবহ ফেতনা; যা মুসলিম সমাজে ঘটমান বর্তমান। কেউ এখন আর পড়তে চায় না; শুনে শুনে ওয়াজেরিয়ান হতে চায়! পড়া এবং অনুধাবন অনুশীলন ছাড়া আলেম হয়ে যায়, শুধুমাত্র কন্ঠের সুর দিয়ে; আর সত্যিকার আলেমরা আজ মুসলিম সমাজেও অবহেলিত  অবমূল্যায়িত। ফালতু কাজ করে করে আজ যারা নিজেদের আল্লামা ভাবতে শুরু করেছে, তারা আসলে কারা? ইহুদী খ্রিষ্টান চড় নয়তো?? অবশ্য রাসুলুল্লাহ (সা:) সারে চৌদ্দশো বছর আগেই বলে গেছেন, ‘অবশ্যই কিয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসবে, যখন সব জায়গায় মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৭০৬২


ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যা জানা যায়- হযরত  ইব্রাহীম (:)-এর দুই পুত্র হযরত ইসমাইল (:) হযরত ইসহাক (:); ইসমাঈল (:)-এর মা ছিলেন বিবি হাজেরা (:) এবং ইসহাক (:)-এর মা ছিলেন বিবি সারা (:), মতান্তরে- ইব্রাহীম (:)-এর তৃতীয় স্ত্রী কান্তুরাহ- গর্ভে জন্ম নেয়া আরো পুত্র ছিলেন। তবে পুত্র হিসেবে কেবল ইসমাইল (:) ইসহাক (:) নবীদ্বয়ের বর্ণনাটিই ইতিহাসে সর্বজন স্বীকৃত এবং প্রসিদ্ধ। অন্যদের ব্যাপারে ইসলামের ইতিহাস থেকে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু প্রমাণ মেলে না; তবে ব্যতিক্রম শুধু মাদিয়ান। কান্তুরাহের গর্বে ইব্রাহিম (:)-এর পুত্র ছিলেন তিনি; মাদিয়ানের নামে তাঁর বংশধরদের দ্বারা যে শহরটি তৈরি হয়েছিল, সেখানেই বিশিষ্ট নবী হযরত শুয়াইব (:)-এর জন্ম এবং সে অঞ্চলে তিনি দীর্ঘ সময় ইসলাম প্রচার করেন বলে পবিত্র কুর'আনুল কারীমে উল্লেখ আছে। 


ঐতিহাসিক স্বীকৃত- হযরত ইবরাহীম (:)-এর ছোট ছেলে ইসহাক (:)-এর পুত্র ইয়াকুব (:), যিনি নবী ছিলেন; তাঁর অপর নাম ইসরাঈল, যার অর্থ 'আল্লাহর দাস' হযরত ইয়াকুব (:)-এর বারো পুত্রের বংশধরগণের মধ্য হতেই যুগে যুগে হাজার হাজার নবীর জন্ম; ইউসুফ (:), মূসা (:), হারুণ (:), দাউদ (:), সুলাইমান (:) ঈসা (:) ছিলেন এই বংশের সেরা নবী রাসুল। বলা চলে- হযরত আদম (:) হতে হযরত ইবরাহীম (:) পর্যন্ত, হযরত নুহ (:) হযরত ইদরীস (:)-সহ - জন নবী ছাড়া এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বরের প্রায় সকলেই বা বেশিরভাগ নবী ছিলেন হযরত ইবরাহীম (:)-এর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক (:)-এর বংশধর, অর্থাৎ বনু ইসরাইল; যাঁদের সর্বশেষ নবী ছিলেন হযরত ঈসা (:) অন্যদিকে হযরত ইবরাহীম (:)-এর জোষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাইল (:)-এর বংশে একজন মাত্র নবীর জন্ম হয়, এবং তিনি- হলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী, দো-জাহানের বাদশাহ, সর্বশেষ সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহম্মদ মুস্তবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।


হযরত ইসহাক (:)-এর পুত্র হযরত ইয়াকুব ওরফে হযরত ইসরাইল (:)-এর মাধ্যমে যে বংশধারা পৃথিবীতে বিদ্যমান সেই জাতিই বনি ইসরাইল নামে পরিচিত। হযরত ইয়াকুব (:)-এর বারোজন পুত্র-সন্তানের কথা পবিত্র  কুর'আনুল কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে এবং হিব্রু বাইবেলে বারোজন পুত্র-সন্তান কয়েক জন কন্যা সন্তানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; মেয়েদের মধ্যে শুধু একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকেরই সন্তান-সম্ভতি হয় এবং বংশ বিস্তার ঘটে। হিব্রু বাইবেল অনুসারে বারো পুত্রের নাম- রেউবেন, সিমোন, লেভি, জুদাহ (ইয়াহুদা), দান, নাফতালি, গাদ, আশের, ইসসাচার, জেবুলুন, মেয়ে- দিনাহ, জোসেফ বা ইউসুফ, এবং বেনজামিন বা বেনিয়ামিন; তাঁদের নামেই বনী-ইসরায়েলের বারোটি গোষ্ঠির জন্ম হয়। জুদাহ বা ইয়াহুদা ছেলে-মেয়েরাযুডিয়া প্রদেশের কেনানে বসবাস শুরু করে; এই শাখারই একটি অংশ পরবর্তীতে নিজেদেরকে ইহুদী নামে পরিচয় দিতে থাকে। এই জাতটা আসলে মান্না-সালওয়া খাওয়া জাত; যারা সেই শুরু থেকেই নাফরনান। 


পবিত্র কুর'আনুল কারীমে সুরা বাকারা' ৫৭ নং আয়াত-"ওয়াজাল্লালনা-‘আলাইকুমুল গামা-মা ওয়া আনঝালনা-‘আলাইকুমুল মান্না ওয়াছছালওয়া- কুলূমিন তাইয়িবা-তি মা-রাঝাকনা-কুম ওয়ামা-জালামূনা- ওয়ালা-কিন কানূআনফুছাহুম ইয়াজলিমূন।" অর্থাৎ- 'আর আমি তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি মেঘমালার দ্বারা এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছিমান্না সালওয়া সেসব পবিত্র বস্তু তোমরা ভক্ষন কর, যা আমি তোমাদেরকে দান করেছি। বস্তুতঃ তারা আমার কোন ক্ষতি করতে পারেনি, বরং নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।' - ঘটনাটি মিসর সিরিয়ার মধ্যবর্তী তীহ প্রান্তরের ঘটনা; তারা যখন আল্লাহর আদেশে আমালিকাদের জনপদে প্রবেশ করতে অস্বীকার করেছিল এবং তারই শাস্তি স্বরূপ বনী-ইসরাইল চল্লিশ বছর পর্যন্ত তীহ প্রান্তরে অবস্থান করতে হয়েছিল। সীনাই মরুভূমিতে অবতরণের পর যখন পানি খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছিল, তখন তাদেরকে গায়েবী খাবার 'মান্না-সালওয়া' দেয়া হয়েছিল। 


তাফসীরে এসেছে- বনী ইসরাইলরা জিহাদের একটি আদেশ অমান্য করেছিল, যার শাস্তিস্বরূপ তাদেরকে সিনাই মরুভূমিতে আটকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই শাস্তিকালীন সময়েও আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি নানা রকম নিয়ামত বর্ষণ করেছিলেন; এখানে তাই বিবৃত হয়েছে। মরুভূমিতে যেহেতু তাদের মাথার উপর কোন ছাদ ছিল না, প্রচণ্ড খরতাপে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল, তা থেকে বাঁচাতে আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর একখণ্ড মেঘ নিয়োজিত করে দেন, যা তাদেরকে নিরবচ্ছিন্ন ছায়া দিয়ে যাচ্ছিল। সেই মরুভূমিতে কোন খাদদ্রব্যও ছিল না, আল্লাহ তা'আলা গায়েব থেকে তাদের জন্য 'মান্না' 'সালওয়া' রূপে উৎকৃষ্ট খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। এক বর্ণনা অনুযায়ী 'মান্না' হলো তুরান্জ (প্রাকৃতিক চিনি বিশেষ, যা শিশিরের মত পড়ে তৃণাদির উপর জমাট বেঁধে যায়) সেই এলাকায় এটা প্রচুর পরিমাণে নাযিল করা হতো, আর 'সালওয়া' হলো বটের (তিতির জাতীয় পাখি) বনী ইসরাইল যেসব জায়গায় অবস্থান করত, তার আশেপাশে পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে এসে পড়তো এবং কেউ ধরতে চাইলে তারা মোটেই আত্মরক্ষার চেষ্টা করতো না। বনী ইসরাইলরা এসব নিয়ামতের চরম অসম্মান করেছিল এবং এভাবে তারা নিজ সত্তার উপরই জুলুম করেছিল।


'মান্না' রাতে কুয়াশার মতো পড়ে জমে যেত সুস্বাদু খাদ্যে পরিণত হতো, আর 'সালওয়া' ছিল এক ধরনের পাখি; সূর্যাস্তের পর যেগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে এসে তাদের কাছে ধরা দিতো; ঐসব পাখির গোশত তারা ভক্ষণ করতো। ইহুদীরা গোড়া থেকেই একটি অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিচিত; সেই খাদ্য তারা জমা করে রাখতো। আসমানি খাদ্য জমা করে রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু তারা তা মানতো না। আবার, একসময় তারা 'মান্না' 'সালওয়া' পরিবর্তে পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাকার খাবারের দাবি করে; এতে করে তারা বিনা পরিশ্রমের সেই আসমানি খাদ্য হারিয়ে ফেলে এবং আল্লাহর শাস্তির উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হয়; যা- সুরা বাকারা' ৬১ নং আয়াতে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, "আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্য্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট, সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে, যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী।"


সিনাই মরুভূমিতে তাদের দীর্ঘদিন কেটে গেল এবং মান্না সালওয়া খেতে খেতে বিতৃষ্ণা ধরে গেল, তখন বনী ইসরাইলীরা দাবী জানালো, আমরা একই রকম খাবার খেয়ে থাকতে পারব না, আমরা ভূমিতে উৎপন্ন তরি-তরকারি খেতে চাই; বলাবাহুল্য, তাদের চাহিদাও পূর্ণ করা হলো। ঘোষণা করে দেওয়া হলো, এবার তোমাদেরকে মরুভূমির ছন্নছাড়া অবস্থা হতে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সামনে একটি জনপদ আছে, সেখানে চলে যাও। তবে জনপদটির প্রবেশদ্বার দিয়ে নিজেদের কৃত গুনাহের জন্য লজ্জা প্রকাশার্থে মাথা নত করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে প্রবেশ করো। সেখানে নিজেদের চাহিদা মতো যে-কোনও হালাল খাদ্য খেতে পারবে। কিন্তু সে জালিমরা আবারও টেড়া মানসিকতার প্রমাণ দিল। শহরে প্রবেশকালে মাথা নত করবে কি, উল্টো বুক টান করে প্রবেশ করলো এবং ক্ষমা প্রার্থনার জন্য যে ভাষা তাদেরকে শেখানো হয়েছিল তাকে তামাশায় পরিণত করে তার কাছাকাছি এমন স্লোগান দিতে দিতে প্রবেশ করলো যার উদ্দেশ্য মশকরা ছাড়া আর কিছুই ছিল না; ক্ষমা প্রার্থনার জন্য তাদেরকে শেখানো হয়েছিল- حطة  (হে আল্লাহ! আমাদের পাপ মোচন কর), কিন্তু তারা এর পরিবর্তে স্লোগান দিচ্ছিল حنطة  'গম চাই, গম' 


পৃথিবীর প্রাচীনতম একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় ইহুদী; তাদের রয়েছে প্রায় সার-তিন হাজার বছরের দীর্ঘ ইতিহাস। তবে এই ইতিহাস যতটা না ধর্মকেন্দ্রিক তার চেয়েও বেশি জাত বংশ কেন্দ্রিক। জনসংখ্যায় অতি নগন্য হলেও আধিপত্য সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের দিক থেকে তারা সবসময়ই অগ্রগামী জাতি হিসাবে বিবেচিত। তাদের প্রসঙ্গ সামনে এলেই যেন বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিমের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়; অবশ্য এর পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক নানান দ্বৈরথ। গত কয়েকশো বছরের অসংখ্য ষড়যন্ত্র এবং প্যালেস্টাইনের উপর চলমান নির্মমতা নির্যাতনই প্রমাণ করে তারা কতটা আত্মকেন্দ্রিক কূট। একসময় যারা ছিল সবচেয়ে নির্যাতিত এবং নিপিড়ীত জাতি, মাত্র কয়েকশো বছরের ব্যবধানে আজ তারাই পৌঁছে গেছে নিপীড়কের নেতৃত্বে। ফরাসী বিপ্লবের সময় থেকে তাদের যে উত্থান শুরু হয়েছে, যার ধারা আজও বিদ্যমান। ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের মতো যেসব দেশ একসময় তাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত, আজ তারাই অধিকার নিরাপত্তার দায়িত্বে তাদেরকে বসিয়ে দিয়েছে। কেমনে কি? কি বা কেমন করে তাদের এমন দ্রুত উত্থান ঘটলো? কিভাবেই-বা তারা আজকের এমন ক্ষমতাধর জাতিতে পরিণত হলো? কোন সেই অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে তারা শাসন করছে পুরো বিশ্বকে?


উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিশ্বজুড়ে যখন শুরু হয় দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের উন্মাদনা, নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শিল্প-কলকারখানাগুলোর চিত্র পালটে যেতে শুরু করে, পরিবর্তনের হাওয়ায় বদলে যায় বিশ্ব অর্থনীতি এবং মানুষের জীবনধারা; ঠিক এমন সময় চলমান পৃথিবীর দিকে লক্ষ্য রেখে ইহুদীরা নতুন এক শক্তির উন্মেষ ঘটায়, যার নাম 'জায়োনিজম' অবশ্য এটি পৃথিবীর বহু প্রাচীন একটি মতবাদ। জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের স্বপ্নে ১৮৯৭ সালে 'থিওডোর হেরসেল' এবং 'ম্যাক্স নরডো' দু ইহুদীর হাত ধরে একটি নতুন সংঘটন 'World Zionist Organization' গঠিত হয়; নিজেদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হাসিল করতে কিভাবে তারা বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করা যায়, তার জন্য অসংখ্য ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করে, যার পরিধি এত বিশাল, এই ছোট্ট পরিসরে যা লিখে শেষ করা যাবে না।


১৯১৪ সালের গ্রীষ্মকাল; ইউরোপজুড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের হাওয়া বইতে শুরু করেছে, ২৮ জুন, ১৯১৪; অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তারাধিকারী আর্ক ডিউক ফ্রান্স ফারডিনান্ড সাইবেরিয়ায় আততায়ীর হাতে নিহত হলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাঙ্গেরি যখন সাইবেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়, তখন ইউরোপ পুরোপুরি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়; এক পক্ষে চলে আসে জার্মানি-হাঙ্গেরি-অস্ট্রিয়া-অটোমানিদের কেন্দ্রিয় শক্তি, অপর পক্ষে থাকে রাশিয়া-ব্রিটিশ-ফ্রান্স-সাইবেরিয়ানদের নিয়ে গঠিত মিত্র শক্তি। সে সময় জার্মানদের দাপটে মিত্রশক্তির খাবি খাওয়ার মতো অবস্থা; তারা যে প্রযুক্তির সাবমেরিন নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে আসতো, তা ছিল সেই যুগের বিষ্ময়। যুদ্ধ নিয়ে ১৯১৯ সালে প্যারিসে একটি শান্তি চুক্তির আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে উপস্থিত ছিল ১১৭ জন ইহুদী প্রতিনিধি; যাদের বেশিরভাগ ছিল জার্মান নাগরিক। 


আলোচনার এক পর্যায়ে তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্যালেস্টাইনের ভূমি দাবি করে বসে; জার্মান সম্রাট তখন মাথায় হাত দিয়ে বলেন- 'এই কি ছিল যুদ্ধের কারণ?' তিনি বুঝতে পারেন রাশিয়া থেকে বিতারিত বিশ্বাসঘাতক ইহুদীদেরকে নিজ দেশে আশ্রয় দেয়া ছিল তার চরম ভুল সীদ্ধান্ত। রাশিয়ায় ইহুদীরাই ছিল বলশেভিক বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু; সেখানে তারা জবাই করেছিল লাখো তাজা প্রাণ। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ভ্লাদিমির লেলিনের নেতৃত্বে এই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল; যার ফলে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম। জার্মান সাম্রাজ্য পতনের পেছনেও ইহুদীদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি; তারা ছিল প্রভাবক। বিষাক্ত অণুজীব হয়ে তারা জার্মান সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছিল। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে রক্তক্ষয়ী অন্ত:কোন্দলে জড়িয়ে তারা হাসিল করেছে নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। বিশ্বজুড়ে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে বানিয়েছে হাতের পুতুল; যার ফলে ব্রিটেনের কাছ থেকে তারা অতি সহজেই বেলফোর ঘোষণা নিতে পেরেছিল।


জন্মগত ইহুদি ধর্মান্তরিত ইহুদিসহ ইহুদিরা একটি নৃধর্মীয় জাতিগোষ্ঠী; ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে বিশ্বে ইহুদি জনসংখ্যা ১৪. মিলিয়ন বা মোট বৈশ্বিক জনসংখ্যার .২৫%; যাদের প্রায় ৪৬.% ইসরাইলে এবং ৩৮.% যুক্তরাষ্ট্র কানাডায় বসবাস করে, বাকিদের অধিকাংশ বসবাস করে ইউরোপে। অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বসবাস লাতিন আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে। পৃথিবীব্যাপী ১৪. থেকে ১৭. মিলিয়ন অনুসারী নিয়ে ইহুদীধর্ম বিশ্বের দশম বৃহত্তম ধর্ম। সরাসরি হিসেব থেকে যে জিনিসটি জানা যায় তা হলো- আমেরিকায় ৭০ লাখ, কানাডায় লাখ, আর ব্রিটেনে লাখ ইহুদীর বসবাস। মার্কিন জনসংখ্যার মাত্র % ইহুদী; অথচ প্রভাব প্রতিপত্তি ৯৮%! আর পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র .% ইহুদী , অথচ তারাই কলকাঠি নাড়াচ্ছে সমগ্র বিশ্বের সব কিছুর, সব বিষয়ে!


জনসংখ্যায় এতো অল্প হলেও তারা যেভাবে তাদের নিজেদের ক্ষমতা আধিপত্য বিস্তার করেছে, তা ইত:পূর্বে অন্য কোন জাতি তা করতে পারেনি। পুরোনো ছেঁড়া কাপড় সংগ্রহ করে তা বিক্রি করা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বানিজ্য অর্থনীতির সবকিছু আজ তারা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এর কারণ, শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা তাদের নিজেদের ঐক্য জাতীয়তায় বিভাজন তৈরী করতে দেয়নি, করেনি; যার ফলে কৃতিত্ব সফলতা অর্জনের দিক দিয়ে অন্য কোন সম্প্রদায় কখনোই তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি। আজকের আমেরিকা তো তারাই তৈরী করেছে। উনবিংশ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিক শাসন ক্ষমতার লড়াই নিয়ে পুরো বিশ্ব যখন ক্ষত-বিক্ষত, তখন তারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আমেরিকা পাড়ি জমায়, অধিবাসী বনে যায়।


প্রধান ধর্মগুলোর পর যে মতবাদটি পৃথিবীকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে তা হলো মার্কসবাদ, কমিউনিজম নামের এই মতবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন কার্ল মার্কস, তিনি একজন ইহুদী; বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করে রাখা যাদু শিল্পী হুডিনী বর্তমানে ডেভিড কপারফিল্ড দুজনই ইহুদী; যাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলা হয়, সেই আইনস্টাইন একজন ইহুদী; প্রফেসর নোয়াম চমস্কী- মতো শিক্ষাবিদ দার্শনিক যাকে প্রদত্ত ডক্টরেটের সংখ্যা আশিটিরও বেশি, তিনিও একজন ইহুদী। এর অন্যতম কারণ সাধারণ আমেরিকানরা যেখানে হাই স্কুল পাশকেই যথেষ্ট মনে করে, সেখানে আমেরিকান ইহুদীদের ৮৫% বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া।ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ একজন ইহুদী। ইরাকের বিরুদ্ধে আমেরিকান আগ্রাসনকে সাধারণ আমেরিকানদের কাছে বৈধ হিসেবে চিত্রায়িত করতে যে মিডিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল তার নাম 'ফক্স নিউজ', তা- ইহুদীদের; বিশ্ববিখ্যাত মিডিয়া মুগল রুপার্ট মারডকের নিয়ন্ত্রণাধীন এরকম প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই জিউশদের সমর্থন দিয়ে এসেছে। রুপার্ট মারডকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সারা বিশ্বের ১৮৫ টি পত্রপত্রিকা অসংখ্য টিভি চ্যানেল। বলা হয় পৃথিবীর মোট তথ্য প্রবাহের ৬০% কোনো না কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রুপার্ট মারডকের The News Corporation. টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে এবিসি, স্পোর্টস চ্যানেল, ইএসপিএন, ইতিহাস বিষয়ক হিস্টৃ চ্যানেলসহ আমেরিকার প্রভাবশালী অধিকাংশ টিভি- ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।


সারা বিশ্বের বিশাল এই পুঁজিবাজার এবং আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্মদাতা ইহুদীরা। সকল ধর্মেই সুদ হারাম, অথচ সুদভিত্তিক আর্থ-বাণিজ্যকে পুঁজি করেই সুকৌশলে ইহুদীরা  কেড়ে নিয়েছে সকল ধার্মীক সমাজের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং কেড়ে নিচ্ছে  মুনাফা। বিশ্বের সকল শ্রমবাজারই তাদের কন্টকময় থাবায় জর্জরিত। সমগ্র বিশ্বের লৌহ, ইস্পাত, তামা, কপার, নিকেল স্বর্ণ-রৌপ্যের খনিগুলো তারা তাদের নিজেদের কবজায় নিয়ে, কাঁচামাল শিল্পের উপর চূড়ান্ত আধিপত্য বিস্তার করছে। জনমত নিয়ন্ত্রণে চারদিকে গড়ে তুলেছে অসংখ্য পত্রপত্রিকা প্রতিষ্ঠান। বিপ্লব, আন্দোলন এবং বিভাজনের বীজ ছড়িয়ে বিশ্বময় তারা অত্যন্ত কূট-কৌশলে মানুষের মগজ বিগড়ে দিয়েছে, প্রত্যেক সমাজে ঢুকিয়ে দিয়েছে ভয়ংকর সব মতবাদ। চলচ্চিত্র শিল্পকলায় অশ্লীলতার সংযোজন ঘটিয়ে তারা যুব সমাজকে তছনছ করে দিয়েছে; মানুষের  নৈতিকতাবোধ ধ্বংস করে ফেলেছ। শিক্ষাব্যবস্থায় ঢুকিয়ে দিয়েছে নাস্তিকতার বীজ; যার ফলে বিশ্বের সকল ধর্মীয় সমাজে এতো উত্তেজনা, এতো বিভক্তি। 


আল ইমরানের ১১০ নং আয়াত- "কুনতুম খাইরা উম্মাতিন উখরিজাত লিন্না-ছি তামুরূনা বিলমারূফি ওয়াতানহাওনাআনিল মুনকারি ওয়া তুমিনূনা বিল্লা-হি ওয়া লাও -মানা আহলুল কিতা-বি লাকা-না খাইরাল্লাহুম মিনহুমুল মুমিনূনা ওয়া আকছারুহুমুল ফা-ছিকূন।" -'হে মুসলিমগণ! তোমরা সেই শ্রেষ্ঠতম দল, মানুষের কল্যাণের জন্য যাদের অস্তিত্ব দান করা হয়েছে; তোমরা সৎকাজের আদেশ করে থাক অন্যায় কাজে বাধা দিয়ে থাক এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ। আহলে কিতাবীগণ যদি ঈমান আনত, তবে তাদের পক্ষে তা কতই না ভালো হত; তাদের মধ্যে কতক তো ঈমানদার, কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান।' আজকের মুসলমানের দিকে তাকালে তাদেরকে কি আল্লাহর ঘোষিত শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে তাদের মনে হয়? খেলাফত হারিয়ে, জ্ঞান অন্বেষণের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করে, মুসলিম আজ সারা বিশ্বে চরমভাবে লাঞ্চিত নির্যাতিত অপমানিত হচ্ছে প্রতিটি পদে; প্রতিরোধহীন জুলুম নির্যাতন হত্যা শোষণ আগ্রাসন তাদের গ্রাস করে ফেলেছে। মুসলমানের সম্পদ লুটে নেয়ার উদ্দেশ্যে লুটেরা গোষ্ঠী তুলে ধরছে নানান অজুহাত। নিরপরাধ নিরীহ মুসলিমকে হত্যা-খুন-ঘুম করতে তাদের এতটুকুও বিবেকে বাধে না; মুসলমানের রক্তের যেন কোন মূল্য নেই! সাম্রাজ্যবাদীরা খুব ভালো করেই জানে- একমাত্র ইসলামই পুঁজিবাদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারে; তাই তারা মুসলিম বিশ্বকে এক হতে দেয় না, বিভক্ত করে রাখছে কূটকৌশলে। বিশ্বে মুসলিম খেলাফত যেন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হতে না পারে, তার জন্য মুসলমানদের মধ্যে আকিদা বিচ্যুতি ঘটাচ্ছে নানা রকম ষড়যন্ত্র করে; কিছু নামধারী মুসলিমই হচ্ছে তাদের দোসর। মুসলমানদের দেয়া হচ্ছে মৌলবাদী, সন্ত্রাসী, জঙ্গী, আরো কত কি তকমাকোনঠাসা করার জন্য প্রতিনিয়ত তারা তাদের বিশাল সব মিডিয়া ব্যবহার করছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে।   


১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রহসনমূলক যুদ্ধ, উপমহাদেশে আধিপত্য বিস্তার, ব্রিটিশ নীতি - 'Divide and Rule'; তখন থেকেই  মুসলমানদের উপর বিভক্তির যাঁতাকল ঘুরছে, সে যাঁতাকলের ড্রাইভার ছিল তখন হ্যামফার-উইলিয়াম হান্টার'রা, সেই যাঁতাকল এখন রূপ নিয়েছে গ্রান্ডিং মেশিনে, আর তা তারা তুলে দিয়েছে আমাদের মাঝেরই মুসলিম নামধারী কিছু কমবখতের হাতে; 'ইখতিলাফি বিষয়' নাম দিয়ে ওরা ইসলাম ধর্ম নিয়ে রীতিমতো তামাশা-ঠাট্টায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কমবখতরা আকিদাহ-আমলগত প্রতিটি বিষয়কে বিতর্কিত করে গ্রান্ডিং মেশিন দিয়ে মুসলিম সমাজকে পিষ্ট করছে; আর কত? ব্যক্তিগতভাবে একটি কোকাকোলা বর্জন বা তাদের পণ্য বর্জন বা শুধুমাত্র ঘৃণা জানিয়ে কোন লাভ হবে না, সমগ্র দুনিয়ার মুসলিমকে এক হতে হবে; জাগতে হবে, জাগাতে হবে, মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেবলমাত্র খেলাফত রাষ্ট্রই ইসলামিক জীবন ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং চতুর্দিকের অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে আলোতে ফিরিয়ে আনতে পারে। ঈমানদীপ্ত একজন মুসলমানকে দুনিয়ার সব বিরুদ্ধবাদীই ভয় পায়, ঈমানহীন কোটি বিচ্ছিন্ন মুসলমানেরও কোন দাম নেই, কেউ তাদের পরওয়া করে না। তাই বিশ্বের সকল মুসলমান, ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়াতে চেষ্টা করুন, এবং খেলাফত কায়েমে প্রত্যেকে ঐকান্তিক হউন।।  


মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ 

২৩ নভেম্বরের, ২০২২.