রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

ভূমিকম্প:


ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো সিলেট, খবরে জানানো হচ্ছে দুটো বাড়ি হেলে পড়েছে; গতকাল লাগাতারের পর আজও পর পর তিনবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে গোটা সিলেট। বাংলাদেশের জন্য সিলেট বরাবরই একটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা; ওখানে ভূমিকম্প অনুভব হওয়া কিছুটা স্বাভাবিক ব্যাপারই। জাপানের বিভিন্ন শহরে এবং আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রায় প্রতি দিনই কয়েকবার করে ভূমিকম্প হচ্ছে; ওখানে এটা নাগরিক জীবনের খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এ নিয়ে ওরা এতটুকুও চিন্তিত নয়, শুধু আর্থকোয়েক সক্ষমতা সম্পন্ন বাড়ি-ঘর/স্থাপনা নির্মাণ করে তারা বসবাস করছে। আর্থকোয়েক নিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার কিছু নেই; শুধু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ভূমিকম্প আসলে কি? বিজ্ঞান কি বলে ভূমিকম্প নিয়ে?— ভূতত্ত্ববিজ্ঞান বলে, ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়; এমন আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প (Earthquake) বলে। সাধারণত তিনটি কারণে ভূমিকম্পের উত্পত্তি ঘটে— ভূপৃষ্ঠজনিত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও শিলাচ্যুতিজনিত কারণে; অর্থাৎ  ভূমিকম্পনের কারণ—ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়া ও ভূ-অভ্যন্তরে শিলাচ্যুতি। 

ইসলাম কি বলে? ভূমিকম্প নিয়ে পবিত্র কুর'আনুল কারীমে 'যিলযাল' নামে পূর্ণাঙ্গ একটি সুরা আছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগের উপর পবিত্র কুর'আনুল কারীমে অসংখ্য আয়াত আছে; যেমন— মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, 'আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।' —(সুরা বনি ইসরাইল; ৫৯) তিনি আরও বলেন, 'বলে দাও, আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।' —(সুরা আনআম; ৬৫) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, 'যখন তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম' আয়াতটি নাজিল হলো, তখন রাসুল (সা.) বললেন, 'হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।' —(বুখারি)

মহান রাব্বুল আলামীন বলেন  'যে বিপদ-আপদই তোমাদের উপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।' —(সুরা শুরা : ৩০) প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলাম আমরা, অর্থাৎ মানুষ, মানুষের অপকর্ম। আর মানুষের অপকর্মের ধারাবাহিকতায়ই একদিন কিয়ামত নেমে আসবে; পৃথিবী সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে । এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী হুজুর পাক (সা.) বলেন, 'যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না)। জাকাত দেখা হবে জরিমানা হিসেবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে, আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্ত) হবে। যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রূপে আবির্ভূত হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো— রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য।' —(তিরমিজি; ১৪৪৭)

ভূমিকম্প আসলে কেয়ামতের অন্যতম আলামতের একটি; এ ব্যাপারে হুজুর পাক (সাঃ) এক দীর্ঘ হাদিসে বলেছেন, 'যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং খুনখারাবি বাড়বে, তোমাদের সম্পদ এতো বাড়বে যে, উপচে পড়বে।..........' —(বোখারি; ৯৭৯)

করোনা ঘূর্ণিঝড় ভূমিকম্পসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দূর্যোগ একের পর এক ধেয়ে আসছে, বিধস্ত করে দিয়েছে মানুষের  জীবনের গতি; তারপরও আমাদের হুশ হচ্ছে না! সবার উচিত মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কাছে অতি দ্রুত লুটিয়ে পড়া, তাওবা করা; মহান রাব্বুল ইজ্জত-কে বেশি বেশি স্মরণ করা এবং ক্ষণে ক্ষণে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কালক্ষেপণ না করে নিজেদের শুধরে নেওয়া এবং একমাত্র রব-এর কাছে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় চাওয়া।।

মুহাম্মদ ওয়ালিউল্যাহ 
৩০ মে, ২০২১.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন